টপিকটি পড়তে শুরু করার আগে কিছু কথাঃ
১. এটা বেশ বড় একটা টপিক, শুরু করার আগে তাই সতর্কতা জানিয়ে দিলাম। পুরোটা পড়তে পড়তে বিরক্ত
লাগতে পারে, তবে আড়ালে আবডালে হয়তোবা মজার কিছু খুঁজে পেতেও পারেন।
২. সত্যিকারের কথোপকথনটি হয়েছিল ইংরেজীতে, সেটি বাংলায় অনুবাদ করা হয়েছে, লেখার খাতিরে সেখানে
হালকা কিছু পরিবর্তন করা হয়েছে।
৩. খানিকটা গল্পের মত আবেশ দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে, তবে মূল ঘটনাটি অবিকৃত রাখার সবধরনের চেষ্টা
করা হয়েছে পুরো লেখায়।
৪. এটি সম্পূর্ণ নিজের এবং বাস্তব অভিজ্ঞতা। ঘটনার তারিখঃ ২০ মার্চ, ২০১১
মূল গল্পে ফেরা যাক তাহলে,
পরিচয়
লিফটের দরজা খুলে যেতেই দেখলাম লিফটের ঠিক পাশের রুমের সামনে আমাদের অপেক্ষায় একজন ভদ্রলোক বসে আছেন। ভদ্রলোক কি ঠিক বলা যায় ? প্রৌঢ় বলাটা বরং বেশী মানায়, যদিও চলাফেরা বেশ ইয়াং এখনও। “জাস্ট ইন টাইম” বলে হাত বাড়িয়ে দিলেন ভদ্রলোক। নাহ, জাস্ট ইন টাইম না, ৫ মিনিট আগেই এসেছি, হ্যান্ডশেক করতে করতে মনে মনে বলেই ফেললাম। লোকটির উপর গতকাল থেকে কিঞ্চিৎ মেজাজ খারাপ হয়ে আছে। বাংলাদেশীরা নাকি কথা দিয়ে সেটা ঠিকমত রাখে না, কথাটি খানিকটা সত্য হলেও সেটা আমি একজন বিদেশীর মুখে শুনতে একদমই নারাজ। বাড়তি প্যাচাল না পেরে লেগে গেলাম কাজে। “তো, কি সমস্যা হয়েছে তোমার ল্যাপটপে, খুলে বলো” ইংরেজীতেই বললাম। যদিও গতকালকেই জেনে গেছি কি সমস্যা হয়েছে উনার, তাও ভূমিকা ছাড়া শুরু করতে পারছিলাম না ক্যান জানি। “আমার ব্লুটুথ টা কুইক বাটন থেকে এই ছেলেটা ডিজ্যাবল করেছিল, তার পর আর কোনভাবেই এনাবল করা যাচ্ছে না। আর আমি কিছুতেই হোটেলের ওয়াইফাই তে কানেক্ট করতে পারছি না। ”। ছেলেটা বলতে আমার বন্ধুটিকে বুঝানো হয়েছে, আমি আড়চোখে তাকালাম আমার বন্ধুটির প্রতি। গতকাল সে এই ভদ্রলোককে বাংলালায়নের কানেকশন দিয়েছে, কিন্তু কিছু একটা করতে গিয়ে ব্লুটুথ টা ডিজ্যাবল করে ফেঁসে গিয়েছে। বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন থাকায় তাদের টেকনিশিয়ানও আসতে রাজী হয় নি। শেষমেষ সে আমাকেই ফোন দিয়ে সবকিছু বলেছে সবকিছু, এই বন্ধুটি কোন কিছু চাইলে কখনো নিরাশ করার চেষ্টা করিনি সম্ভব হলে, তারউপরে সবকিছু শুনে আর না করতে পারলাম না। সকালে বন্ধুদের সাথে গ্রুপ স্টাডি করতে বসার বদলে চলে গেলাম এই সমস্যার সমাধানে, ওখানে পড়ে যাবো জানিয়ে দিয়েছি।
একবার চোখ বুলিয়ে নিলাম কম্পিউটারে, এইচপি কম্প্যাক ল্যাপটপ, ৪গিগা র্যাম, ৩২ বিট এক্সপি, এএমডি প্রসেসর। এটা আমার শখ, কনফিগারেশন চেক করে আইডিয়া নেয়া। এবার কাজে নামলাম, ব্লুটুথ আইকন আছে, কিন্তু ডিজ্যাবলড, ডিভাইস ম্যানেজারে ড্রাইভার রয়েছে দেখা যাচ্ছে, বায়োসে গেলে ব্লুটুথ এনাবল করাও দেখাচ্ছে কিন্তু সিস্টেম কিছুতেই ব্লুটুথ হার্ডওয়্যার খুঁজে পাচ্ছে না। নিজের এইচপির সাথে মেলানোর চেস্টা করলাম। কি কি জিনিস আছে সিস্টেম কন্ট্রোল করার। হঠাৎ করেই মাথায় একটা সল্যুশন এলো। কন্ট্রোল প্যানেলে গিয়ে HP Wireless Manager চালু করতেই আমার হাত উপরে উঠে এলো, বিংগো !!! সাধারন ভাবে সিস্টেম ও বায়োস থেকে ব্লুটুথ ও ওয়াইফাইকে ম্যানেজ করা ছাড়াও এইচপি একটা বাড়তি এপ্লিকেশন দেয়, HP Wireless Manager, এটা দিয়ে ব্লুটুথ আর ওয়াইফাই আলাদা করে অফ করে ফেলা যায়। আমার ফ্রেন্ড ব্লুটুথ অফ করার পর ওখান থেকেই ডিজ্যাবল হয়ে গিয়েছিল। যাইহোক, এনাবল করে দিতেই ব্লুটুথ কাজ করতে শুরু করলো। আমার বন্ধুর মুখে হাসি ফুটে উঠলো। "এতো খুশি হয়ো না, যে জায়গায় ঝামেলা হয়েছিল, সেটি তোমার টেকনিশিয়ান কখনোই ঠিক করতে পারতো না, আমি মোটামুটি শিওর" একটু বাঁকা হাসিটা দিয়েই নিলাম চান্স পেয়ে। বাকি সমস্যাটি সহজ, LAN/WLAN সুইচিং ফীচারটির কারনে ল্যান কানেক্ট করলে ওয়াইফাই ডিজ্যাবল হয়ে যায় অটোমেটিক, ল্যান খুলে ফেলামাত্রই হোটেলের ওয়াইফাইতে কানেক্ট হয়ে গেল। পুরো ব্যাপারটি তাকে বুঝিয়ে দিলাম। এবার ছোটখাট দিকে হাত দিলাম, ইন্টারনেট এক্সপ্লোরার কেন ইউজ না করে ফায়ারফ্ক্স কেন ব্যাবহার করবে সেটা ব্যাখ্যা দিলাম, ছোটখাট একটা সিস্টেম টিউন আপ করে দিলাম। ভদ্রলোক কম্পিউটারের ব্যাপারে খুব বেশী কিছু জানেন না। পানি পরিশোধন প্রকল্পে কোন একটা পোষ্টে কাজ করতে এসেছেন বাংলাদেশে মাস দেড়েক আগে।
কথোপোকথন
কাজ করার ফাঁকে ফাঁকে হালকা পাতলা গল্প হচ্ছিল তার সাথে। ভদ্রলোক মাস দেড়েক আগে এসেছেন, যে হোটেলে থাকেন সেটি গুলশানের ভিতরের দিকে একটা মাঝারি (তার থেকেও খারাপ বলা যায়) ধরনের হোটেলে। ভদ্রলোক আমাকে বললেন, এই হোটেলে থাকার জন্য প্রতিদিন তাকে ৫০ ইউরো করে গুনতে হয় (প্রায় ৫০০০ টাকা), উনার কথা মতে এই খরচে প্যারিসেও একটা ভাল হোটেলে তার থাকা সম্ভব। আমি একটু অবাক হলাম, শুধু অবাক না, ভদ্রলোক যে রুমে থাকেন তার রুম আমার রুমের থেকেও ছোট, বাড়তি সুবিধা বলতে এসি। ওই রুমে প্রতিরাত থাকার জন্য ৫০০০টাকা করে গুনতে হয়। আর তার থেকে বড় রুমে থেকে প্রতিমাসে আমাকে গুনতে হয় ৫০০০ টাকা। কি আজব দেশ রে ভাই !
কতদিন ধরে আছো এদেশে ? “লং টাইম, অলমোস্ট সিক্স উইক” বেচারা হতাশ কন্ঠে বললো। আমি হেসে দিলাম, মাত্র ৬ সপ্তাহ থেকেই টায়ার্ড হয়ে গেছো ?” বিছানায় হেলান দিয়ে বসে উত্তর দিলো “ কি করবো ? এখানে কোন কিছু ঠিক নেই, আমাদের দেশে যেসব কাপড় চোপড় পাওয়া যায়, তার সবকিছুই আসে বাংলাদেশ থেকে, আমি এখানে আসার আগে ভাবলাম, জামা কাপড় নিয়ে ব্যাগ ভারী করে কি লাভ, ওখানে গিয়েই কিনে নিবো, কিন্তু এখানে এসে তো আমি আরো বেশী অবাক হয়ে গেছি, আমাদের ওখানে যে দাম, তার থেকেও বেশী দাম তোমাদের এখানে, কি করে সম্ভব এটা ? ” কি বলবো, গুলশান, বনানীর মার্কেট গুলো কি জিনিস সেটা তুমি বিদেশে থেকে তো আর বুঝবে না কখনো, আর বিদেশী দেখলে তো কথাই নাই, মনে মনেই বললাম কথাটা। “তারপর কি কাজ তোমার এখানে ?” প্রসঙ্গ পাল্টানোর চেস্টা করলাম। “আমাকে প্রতিদিন যেতে হয় হাজারীবাগ, ওখানে পানি পরিশোধন (সম্ভবত এটাই বলেছিল) প্ল্যান্টে কাজ থাকে” বলতে বলতে খুক খুক করে উঠলেন, “এই দেখো, সারাদিন রোদে পুড়ে কাজ করতে হয়, তারপর অফিসে ঢুকলেই এসির তাপমাত্রা ১৫ ডিগ্রী তে নামিয়ে রাখে, আমার অবস্থা খারাপ হয়ে গেছে” আবারো আক্ষেপ। দুঃখ প্রকাশ করলাম, মনে মনে বললাম, তুমি তো বুঝবা না চাচ্চু, এই দেশে যে অফিসে তাপমাত্রা যত কম, সেই অফিসের তত ভাব। ব্যালেন্স করতে হবে না ? আমি চুপ করে গেলাম, এভাবে কথা চালানো পসিবল না। এবার সে নিজেই খাবারের কথা তুলে ফেললো, খাবারের অনেক দাম, যথারীতি মনে মনেই বললাম ‘তোমার দেশে খাওয়া হলেই হলো, আমাদের দেশে শো-অফ বলতেও একটা ব্যাপার থাকে, ব্র্যান্ডেড রেস্টুরেন্টগুলোর ব্র্যান্ডনেম গুলোর দাম দিবা না, আবার খাইতেও চাও ?”
নাহ, প্রসঙ্গ পাল্টাতেই হয়, বললাম, "তোমার কম্পিউটার আগে কখনো চেকআপ করাও নি ?" এবার মনে হয় একটু ক্ষেপে গেল। “নিউ ইয়র্কে থাকার সময় একবার ঠিক করালাম, ওরা আমার পুরো হার্ডডিস্কটাই ফরম্যাট করে দিলো, আমার সমস্ত ডাটা শেষ, পরে পাকিস্তানে থাকতে একবার ঠিক করানোর জন্য ডাকলাম, ওরা এসে কি কি সব করলো, তারপর বললো কম্পিউ্টার ঠিক” আমি খুশি, পরে দেখি আমার পাসওয়ার্ড দেয়া একটা ফাইল যেটাতে আমি আমার ব্যাক্তিগত জীবনী লিখে রাখতাম সেই ফাইল টা নাই। ওদের ডাকতে বললো, ওটার তো পাসওয়ার্ড আমরা জানি না, তাই অকাজের মনে করে ডিলিট করে দিয়েছি। আমি আর কিছু বলার ভাষা খুঁজে পেলাম না”। আমি জিগেষ করলাম “কেন, তোমার ব্যাকআপ ছিল না ?” “আগে ছিল না, কিন্তু শেষবারের পরে শিক্ষা হয়ে গেছে, এখন একটা পোর্টেবল কিনে নিয়েছি, সবকিছুর ব্যাকআপ থাকে” পিছন থেকে হার্ডডিস্কটা বের করে দেখালেন। “বাহ! স্মার্ট হয়ে গেছ তাহলে” মজা করেই বললাম। হেসে ফেললো ক্রোয়েশিয় ভদ্রলোকটিও, “আরে বোলো না, আমার বউ আমার থেকে অনেক ইয়াং, সে অনেক কিছুই জানে, আমি সে তুলনায় কিছুই জানি না, কম্পিউটার দিয়ে কিভাবে টাইপ করতে হয় সেটা শিখেছি কোনভাবে কাজের তাগিদে, বিদেশে থাকতে হয় বলে মেয়ের চাপে পড়ে একটা ফেসবুক একাউন্টও হয়েছে বৈকি, সেটাও এখনও পুরোটা বুঝে উঠিনি। কিন্তু সে তুলনায় তোমরা অনেক এগিয়ে গিয়েছ, কোন সমস্যা হলেই কি সুন্দর ইন্টারনেট ঘেঁটে সমাধান বের করে ফেলো, আচ্ছা ইন্টানেট আসলেই এতটা পাওয়ারফুল ???” এই শতাব্দীতে এটা নিতান্তই হাস্যকর প্রশ্ন, আমি শব্দ করেই হেসে ফেললাম, “দেখো তুমি কোন বই খুঁজে সমাধান বের করো, সেখানে একজন বা দুইজন বা সর্বোচ্চ তিনজনের সম্মিলিত আইডিয়াই তুমি পাবে, কিন্তু ইন্টারনেটে তুমি অসংখ্য মানুষের সমাধান পাবে, সমস্যাটার ধরন, কারন, কি কি হতে পারে সবকিছুই পাবে মূহুর্তে, যে কোন সমস্যা হোক, শুধু একবার টাইপ করে দেখো, সমাধান পাও কিনা” এবার ভদ্রলোক হেসে ফেললো, “ঠিকই বলেছো, আমার বউ তো রান্নার রেসিপি পর্যন্ত দেখি ইন্টারনেট থেকে খুটখাট করে বের করে ফেলে, আমি কিছুই বুঝিনা, সেজন্যই বললাম তোমরা এগিয়ে যাচ্ছো। আমাদের দিয়ে কোন বিপ্লব আর হবে না। তোমরা, এই প্রজন্মই আমাদের নতুন কিছু উপহার দিতে পারবে সামনে” “তোমার কথা যেন সত্যি হয়, আমি চেস্টা করবো কিছু করার, যাহোক, তোমার সবধরনের সমস্যার সমাধান মোটামুটি হয়ে গেছে, নিজে একবার চেক করে নাও, পরে আমি চলে যাওয়ার পরে কোন সমস্যা বের হলে আমাকে দুষো না আবার”। “ কি আর সমস্যা হবে, তুমি তো সবকিছু একদম করার সাথে সাথে বর্ননাও দিয়ে দিলে, তোমার উপর আস্থা হয়ে গেছে আমার” হাত দুটো বাতাসে নাড়িয়ে উত্তর দিলো ক্রোয়েশীয়। “এত তাড়াতাড়ি আস্থা জন্মিয়ে গেলে তো সমস্যা, তোমাকে আরো স্মার্ট হতে হবে বুঝলে” হেসে জবাব দিলাম। “নাহ, ঠিকই আছে” খুটখাট নেড়ে জবাব দিলো। “বেশ এবার তাহলে আসি, তোমার বাংলাদেশে বাকিদিন গুলো শুভ হোক” ব্যাগ কাধে নিলাম আমি। “বেশ, কেমন টিপস চাও তুমি?” মানিব্যাগ বের করলেন ভদ্রলোক। আমি অপ্রস্তুত হয়ে গেলাম, কখনো প্রোফেশনালী টাকার চিন্তা করে কাজ করি নি আমি। “তোমাকে কিছু দিতে হবে না, আমার বন্ধুটি গতকালকে তোমার সমস্যাটি আমাকে জানিয়েছে, আমি স্রেফ আমার বন্ধুটির জন্য তোমার এখানে এসেছি, বন্ধুটির সমস্যা মিটে গেছে সেটাই অনেক, দুজনে এখন বের হয়ে কোক খাবো, সেটাই আমার জন্য যথেষ্ঠ” মনে একটা রাগ চেপে রেখে হেসেই উত্তর দিলাম। “এটাতো হবে না, কিছু নিতেই হবে, আমার কাছে এখন এদেশী টাকা নেই এই মূহুর্তে, তবে আশা করি এটা নিতে তোমার আপত্তি নেই” ভদ্রলোক ২০ ইউরোর একটা নোট বের করে দিলেন। প্রমাদ গুনলাম আমি, ২০ ইউরো মানে প্রায় ২,০০০ টাকা। যে কাজ করেছি সেটাতে বড়জোর কেউ চা কিংবা কোক খাওয়াতে রাজী হবে, এদেশে পুরো কম্পিউটার রিইন্সটল করে দিলেও বোধহয় সর্বোচ্চ ৫০০ টাকা চার্জ করে। “মজা করো না, আমি টাকার জন্য আসি নাই, তোমার কথা শুনে তোমাকে দেখার ইচ্ছে হয়েছিল আর কম্পিউটার সম্পর্কে আমার আগ্রহ বেশী, সমস্যাটা সমাধান করতে পারবো ভেবেই আমার বন্ধুটি আমাকে ডেকেছিল” আমি পিছিয়ে এলাম। ভদ্রলোক আরো ১০ ইউরো বের করে হাতে ধরিয়ে দিলো এবার, “তোমার নিশ্চয়ই বউ আছে, বাচ্চা কাচ্চা আছে, ওদের জন্য চিপস আর খাবার দাবার কিনে দিও”। আমি হতভম্ব হয়ে গেলাম, আমার বউ, বাচ্চা মানে ?? “তুমি হয়তো ভুল করেছো কোথাও, আমি এখনো ছাত্র, এর বাইরে একটা প্রতিষ্ঠানের অধীনে কাজ করছি, কিন্তু বউ বাচ্চা তুমি কোথায় পেলে ? আমাকে দেখে কি অতটা বড় মনে হয় তোমার ?” “এতকিছু বুঝিনা, এটা তোমাকে নিতে হবে” নাছোড়বান্দা। (টাকা মনে হয় এর গাছেই ধরে)। “শুনো, তোমার সাথে পরিচয় হয়ে ভাল লাগলো, তবে তোমার টাকা আমি টিপস হিসেবে নিচ্ছি না, এই ২০ইউরো তুমি রেখে দাও, তোমার মেয়ের জন্য দেশে ফিরে চিপস কিনে দিও, আর এই ১০ ইউরোটা আমি তাহলে তোমার কাছ থেকে গিফট হিসেবে রেখে দিচ্ছি, একটা স্মারক হিসেবে” থামানোর চেষ্টা করলাম। ভদ্রলোক হেসে দিলো “তোমার ইচ্ছে, ভাল লাগলো পরিচিত হয়ে, আবারো যদি কোন সমস্যা হয়, আমি তোমাকে ডাকবো”। “অবশ্যই, যদি হাতে সময় থাকে, আমার চেহারা আবার দেখতে পাবে, চিন্তা করোনা, এখন তাহলে যাই” হ্যান্ডশেক করে বের হয়ে আসলাম।
"এরপরের ঘটনা খুব ছোট্ট। নীচে নেমে রিকশা নিয়ে দুই বন্ধু গুলশান ১ এ। ওখান থেকে ও চলে গেল অফিসে, আর আমি বন্ধুর বাসায়, পড়াশুনা করতে হবে, সামনে মিডটার্ম। বাসায় ফিরে ব্যাপারটা নিয়ে একটু ভাবলাম, একটু অন্যরকম এবং মজার একটা অভিজ্ঞতা হলো। আর একটা কথা, ভদ্রলোক আমার ইংরেজী বেশ ভালই বুঝতে পেরেছে কিন্তু তার ইংরেজী শুনে বেশী মজা পেয়েছি। তার ইংরেজীটা সরাসরি খাটি ইংরেজী না। রাশিয়ানরা যেভাবে ইংরেজী বলে ঠিক সেরকম। যাকগে, এই প্রথম একজন বিদেশীর সাথে এত দীর্ঘ সময় ধরে আলাপচারিতা হলো, এবং সেটা কোন সমস্যা ছাড়াই।"