কনকনে শীত ছাড়াই বিদায় নিতে চলেছে মাঘ মাস। অবশ্য এবার দেশে কনকনে শীত পড়বে না বলে অনেক আগেই পূর্বাভাস দিয়ে রেখেছেন আবহাওয়াবিদরা। তাঁদের পূর্বাভাসই বাস্তবে রূপ নিতে চলেছে। এখন পর্যন্ত ‘স্থিতাবস্থা’ বজায় রেখেছে শীত! কনকনে শীতে কাঁপতে হয়নি দেশবাসীকে। মাঝারি ধরনের শীত পড়লেও স্বাভাবিকের কাছেই ঘোরাফেরা করেছে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। এ বছর শীত মৌসুমের গোড়াতেই বার বার হোঁচট খেয়েছে উত্তুরে হাওয়া। ভরা ডিসেম্বরেও শীত-শীত ভাবটা উধাও হওয়ার অবস্থা হয়েছিল। ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে শীতের মাত্রা কিছুটা বৃদ্ধি পেলেও গত বছরের মতো মানুষের হাড় কাঁপাতে পারেনি। জানুয়ারিতেও পুরো বৈশিষ্ট ফুটিয়ে তুলতে পারেনি শীতকাল! মাঘ মাসে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩২ ডিগ্রী সেলসিয়াস। আর এক সপ্তাহ পরই বিদায় নেবে মাঘ। এবার হাড় কাঁপানো মাঘের দেখা মিলেনি! তাপমাত্রা আর কয়েক ডিগ্রী সেলসিয়াস বৃদ্ধি পেলেই শুনতে হবে মৃদু তাপপ্রবাহের কথা। ‘মাঘের শীতে বাঘ পালায়’ প্রবাদটি মিথ্যে হতে চলেছে! ঢাকার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩১ ডিগ্রী সেলসিয়াস অতিক্রম করেছে। ফেব্রুয়ারি মাসে তীব্র শীতের পূর্বাভাস নেই। ঢাকাসহ বেশ কিছু এলাকায় দিনের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে। এবার তীব্র শীত ছাড়াই মাঘ মাসের বিদায় ঘটবে বলে মনে হচ্ছে। শীতের এই অকাল-বিদায়ের জন্য পশ্চিমা ঝড় এবং সাগরে সৃষ্ট লঘুচাপের যৌথ আবির্ভাবই দায়ী। ভারতের উত্তর প্রদেশের ওপর দিয়ে একটি পশ্চিমা ঝড়, ভূমধ্যসাগরীয় এলাকা থেকে বয়ে আসা ঠান্ডা, ভারি হাওয়া বয়ে যাচ্ছে। আর বাংলাদেশের উপরে রয়েছে একটি লঘুচাপ। তার প্রভাবেই জলীয় বাষ্প ঢুকেছে। সেই জলীয় বাষ্প ঘনীভূত হয়ে তৈরি করছে মেঘ। আর তার ফলেই উত্তুরে হাওয়া আটকে গেছে। তৈরি হয়েছে গুমোট আবহাওয়া। পুরো ব্যাপারটাই শীতের স্বভাববিরুদ্ধ। শীতকালে সাধারণভাবে আকাশ মেঘমুক্ত থাকে। ফলে দিনে ঝকঝকে রোদ পাওয়া যায়। মাটি গরম হয়। রাত হলেই সেই তাপ দ্রুত বিকিরিত হয়ে ঠান্ডা হয় মাটি। তার সঙ্গে উত্তুরে হাওয়ার যুগলবন্দীতে কনকনে ঠান্ডা পড়ে। কিন্তু শীতের সেই স্বাভাবিকতা এবার ধাক্কা খেয়েছে পদে পদে। সূচনা পর্বে দফায় দফায় ঝড়, ঘূর্ণিঝড় তার রাস্তায় কাঁটা বিছিয়ে দিয়েছিল। তারপরও মাথা তোলার চেষ্টা করেছিল ঠান্ডা তিন-চার দিন ঠান্ডা ছড়ানোর চেষ্টা হয়েছিল। কিন্তু সেই পথও কার্যত বন্ধ করে দিয়েছে পশ্চিমা ঝড় আর লঘুচাপ। হিমাচলে যতই বরফ পরুক ঝড় ও লঘুচাপের দ্বারা ঠান্ডা বাতাসের রুদ্ধ হওয়া পথ এবার আর সরানো সম্ভব হবে না বলে মনে হচ্ছে। অর্থাৎ মাঘের বিদায়ের আগেই শীতকে বিদায় নিতে হচ্ছে।
↧