‘করমজল’ নামটার মধ্যেই আছে একটি আকর্ষণ। আবার এর সঙ্গে যদি সুন্দরবন নাম জুড়ে থাকে তাহলে তো কথাই নেই। যারা একদিনে সুন্দরবন ঘুরে আসতে চান তাদের জন্য ভালো উপায় হলো করমজলে যাওয়া। মংলা সমুদ্রবন্দর থেকে পশুর নদী দিয়ে ট্রলারে ঘণ্টাখানেক ।দীর্ঘযাত্রা পথের ধকল যেন করমজলেন যাত্রা প্রশান্তি এনে দেয়। বোট মংলা ফেরিঘাট এলাকা থেকে ছাড়ার পর মৃদু বাতাস গায়ে লাগতে থাকবে। বোটের ছাদে গিয়ে বসে নদীর দুই পাশের দৃশ্য সত্যিই মনোরম। নদীর পারে গোলপাতার ছাউনির ঘরে সোলার প্যানেল। ঘণ্টাখানের মধ্যেই বোর্ট পৌঁছে যাবে করমজলে। নামতেই চোখে পড়বে সুন্দরবনের বড় একটি মানচিত্র যা কাঁচ দিয়ে ঢাকা। এখানে সুন্দরবন সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা দেয়া আছে।সুন্দরবনের পূর্ব বনবিভাগ এখানে ‘ইকো ট্যুরিজম কেন্দ্র’ গড়ে তুলছে। রাস্তার পাশে পসরা সাজানো বিভিন্ন অস্থায়ী দোকান। সেখানে পাওয়া যাবে সাহেবি ক্যাপ, বানর, কুমিরের আকৃতির খেলনা, বিভিন্ন ধরনের খাবার ও মধু। রাস্তা ধরে একটু সামনে এগোলেই চোখে পড়বে বিশাল খোলা জায়গা খাঁচায় ঘেরা। যার ভেতরে রয়েছে অনেকগুলো চিত্রা হরিণ। একটু সামনে এগোতেই চোখে পড়বে কুমিরের প্রজনন কেন্দ্র। কোনোটিতে ছোট ছোট কুমির, কোনটা আবার মাঝারি। দেয়াল ঘেরা বড় পুকুরে দেখা যাবে বিশাল বিশাল কুমির। কুমিরের ডিম দিয়েও কুমির প্রজনন করা হয়। পুকুরের সামনে দিয়ে এগিয়ে যেতেই কাঠের তৈরি হাঁটার পথ। মাটি থেকে প্রায় চার হাত উপরে। পথটি এঁকেবেঁকে নিয়ে যাবে বনের ভেতর। দুই পাশে সবুজের সমারোহ। দেখা মিলবে বানরের। বনের ভেতরে এঁকেবেঁকে গিয়েছে খাল। খালের দুই ধারে ঘন গাছ। বেশিই বাইন গাছ। শাসমূলও চোখে পড়বে। বেশ একটু হাঁটলে ওয়াচ টাওয়ার সেখানে উঠে এক পলকে দেখা যাবে সুন্দরবনের প্রাকৃতিক দৃশ্য।যারা এখনো সুন্দরবন যাননি তারা একবার ঘুরে আসতে পারেন। ঢাকার সায়দাবাদ বাস স্টেশন থেকে সরাসরি মংলা যায় বিভিন্ন বাস। মংলা ফেরি ঘাট এলাকা থেকে ইঞ্জিন নৌকায় চড়ে যেতে পারেন করমজল। সারাদিন করমজল ঘুরে থাকতে পারেন মোংলায় বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের মোটেল ‘পশুরে’। এছাড়াও মংলা শহরে কিছু হোটেল আছে।বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ আমাদের জাতীয় সম্পদ সুন্দরবন। বিশ্বের সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল এই সুন্দরবন। বাংলাদেশে সুন্দরবনের আয়তন ৬০১৭ বর্গ কিলোমিটার। সুন্দরবনে বাংলাদেশের মোট সংবক্ষিত বনাঞ্চল ৫১শতাংশ। বনে আছে ৩৩৪ প্রজাতির উদ্ভিদ, ৪২ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী, ৩৫ প্রজাতির রেপটাইল, ২৯১ প্রজাতির মাছ এবং ৩১৫ প্রজাতির পাখি।বন্যপ্রাণীর মধ্যে বাঘ ১০৬টি, হরিণ এক লাখ থেকে দেড় লাখ। বানর ৪০ হাজার থেকে ৫০ হাজার। বন্য শূকর ২০ হাজার থেকে ২৫ হাজার। কুমির ১৫০ থেকে ২০০টি।সুন্দরবনের উল্লেখযোগ্য ভ্রমণের স্থানগুলো হলো করমজর ইকোট্যুরিজম ও বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্র (চাঁদপাই রেঞ্জ), হারবাড়িয়া ইকোট্যুরিজম কেন্দ্র (চাঁদপাই রেঞ্জ), কটকা ও কচিখালী ট্যুরিস্ট স্পট (খুলনা রেঞ্জ), কলাগাছিয়া ইকোট্যুরিজম কেন্দ্র (সাতক্ষীরা রেঞ্জ)। নিজ দেশের এই প্রাকৃতিক সম্পদ নিজ চোখে একবার দেখে আসতে পারেন আপনিও।
↧