পটুয়াখালীর কলাপাড়ার নীলগঞ্জ ইউনিয়নের পাখিমারা গ্রাম। সেই গ্রামেই আছে এশিয়া মহাদেশের একমাত্র ‘পানি জাদুঘর’। এ জাদুঘরের এক কক্ষে দাঁড়িয়ে অবলোকন করা যায় আন্তর্জাতিক ও বাংলাদেশের ৮৭টি নদ-নদীর পানি! স্বচ্ছ কাচের জারে সংরক্ষণ করা হয়েছে এ পানি। শুধু ৮৭ নদ-নদীর পানি দেখাই নয়, ওই সব নদ-নদীর ইতিহাস ও ঐতিহ্যেরও ধারণা মেলে ওই জাদুঘরে। ২০১৪ সালের ২৯ ডিসেম্বর স্থাপিত হয় এ ‘পানি জাদুঘর’। এরপর যতই সময় গড়িয়েছে ততই এ জাদুঘরে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের ব্যাপ্তি বেড়েছে। ঢাকা-কুয়াকাটা সড়কের পাশেই নির্মিত পানি জাদুঘরে সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, দোতলা টিনের ঘরের সামনে **ুর ওপর স্থাপন করা রয়েছে একটি নৌকা। এতে মানবসৃষ্ট নানা প্রতিবন্ধকতার কারণে প্রায় শুকিয়ে যাওয়া নদ-নদীতে নৌকা আটকে থাকার বাস্তব ছবি ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। ঘরটির দোতলায় প্রায় ৫০০ বর্গফুটের পানি জাদুঘরের বিভিন্ন স্থানে সারি সারি সাজানো রয়েছে বাংলাদেশের অভ্যন্তরের বিভিন্ন নদ-নদীর পানি ও গ্রামীণ বাংলার মানুষের জীবিকা অর্জনের নানা উপকরণ। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে—মাছ শিকারের ঝাঁকি জাল, খুচনি জাল, নৌকা, চাঁই, পল্লা, কাঁকড়া শিকারের চাঁই ও তাঁত বোনার মেশিন। কৃষিজমির উৎপাদিত ফসল সংরক্ষণের জন্য মাটির তৈরি মাইড, বাঁশের তৈরি ডোলা, মুড়ি ভাজার তলছা এবং ঝারড়া, মাটির তৈরি খাদ্য রান্নার হাঁড়ি-পাতিল, খাবারের থালা ও বাসন, পিতলের তৈরি থালা, বাটি, বদনা, মগিসহ নানা উপকরণ। দেয়ালে শোভা পেয়েছে দেশীয় খাল, নদ-নদীর ছবি, বিভিন্ন প্রজাতির মাছ, জেলে এবং কুমার, তাঁতিসহ সব স্তরের মানুষের জীবনধারণ ও জীবিকা অর্জনের নানা দৃশ্য। জাদুঘরটি সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য খোলা থাকে। জাদুঘর পরিদর্শন বাবদ শিক্ষার্থীদের জনপ্রতি ১০ টাকা। স্থানীয় জেলার এবং বাংলাদেশি জনগণ জনপ্রতি ২০ টাকা। দেশি পর্যটকদের জনপ্রতি ১০০ টাকা। এ জাদুঘর স্থাপনের পর পর্যটকদের আগমন বাড়ছে। প্রতিদিন জাদুঘর পরিদর্শনে কমপক্ষে দেড় শতাধিক পর্যটক আসে। দেশি-বিদেশি সর্বস্তরের মানুষ নদ-নদীর সৃষ্টির ইতিহাস থেকে শুরু করে নদী সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করবে। এই পানি জাদুঘরটি যদি সরকার নিজস্ব উদ্যোগে কুয়াকাটায় স্থানান্তর করে, তবে দর্শণার্থীর সংখ্যা আরো বাড়বে বলে আশাবাদি সুশীল সমাজ।
↧