বর্তমান প্রেক্ষাপটে আমাদের সামাজিক অবস্থান কোথায়? আর আমাদের সমাজের সামাজিক বিচিত্রই বা কোথায় গিয়ে দাড়িয়েছে? বিত্ত বৈভবের পিছনে ছুটছি আমরা পরিবারে দিকে খেয়াল নেই আমাদের। সন্তানদের মানবিকতা, সামাজিকতা, মনুষত্বতা, দায়বদ্ধতা পরিবার থেকেই সেই শিক্ষা পেয়ে গড়ে ওঠার কথা। কিন্তু বর্তমান প্রেক্ষাপটে আমরা তার উল্টা চিত্র দেখছি। পাড়া বা এলাকায় কিশোরদের মধ্যে দলাদলি এমনকি মারপিট আমাদের সমাজে নতুন নয়। কিন্তু রাজধানীর উত্তরায় এর জের ধরে স্কুলছাত্রকে যেমন নৃশংসভাবে নিহত হতে হলো, তা নিকৃষ্টতম নজির হয়ে থাকবে। নাইন স্টার ও ডিসকো নামে দুটি গ্রুপের মধ্যে 'আধিপত্য' বিস্তার নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই রেষারেষি চলে আসছিল। সম্প্রতি তা রক্তারক্তির রূপ গ্রহণ করে। কিছুদিন আগে 'নাইন স্টার' গ্রুপের ওপর 'ডিসকো' গ্রুপের হামলায় গুরুতর আহত হয় তিনজন। একজন সংকটাপন্ন অবস্থায় হাসপাতালে। পাল্টা হামলার ফল হচ্ছে নৃশংস হত্যাকাণ্ড। এই হত্যাকাণ্ডের দায় কে নেবে? পুলিশ ইতিমধ্যে অপরাধী কিশোরদের আটক করেছে। কথা হচ্ছে, কিছু কিশোরের দলাদলি যখন হত্যাকাণ্ডে গড়ায়, তখন সেটা কি নিছক আইন-শৃঙ্খলার প্রশ্ন? যে বয়সে পড়াশোনা, খেলাধুলা ও বিনোদনমূলক কর্মকাণ্ডে নিয়োজিত থাকার কথা, সেই বয়সের কিশোররা কেন মানুষ খুন করতেও দ্বিধা করছে না? সুষ্ঠু সামাজিক ব্যবস্থার স্বার্থেই এ বিষয়ে গভীর চিন্তা-ভাবনা জরুরি। বিবাদমান দুই গ্রুপের দুটি ফেসবুক পেজ ও সেখানে নানা আপত্তিকর পোস্ট রয়েছে। এ আশঙ্কা অমূলক হবে না যে, দুই গ্রুপে নেশাদ্রব্যের প্রচলনও ছিল। জান্তব ক্রোধ ও জিঘাংসা মাদকাচ্ছন্নতারই লক্ষণ নয় কি? এই হত্যাকারীদের আইনের আওতায় আনার পাশাপাশি গ্রুপ দুটির আদ্যোপান্ত খতিয়ে দেখতে হবে। উত্তরা এলাকা বা অন্যত্র এমন আরও গ্রুপের অস্তিত্ব থাকা অস্বাভাবিক নয়। বড় কথা, পরিবর্তিত এই সময়ে অভিভাবকদের আরও দায়িত্বশীল হতে হবে। সন্তানরা কোথায় যাচ্ছে, কার সঙ্গে মিশছে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কী করছে এ ব্যাপারে সতর্ক থাকা উচিত। আগে থাকতে সতর্ক হলে এই করুণ মৃত্যু দেখতে হতো না। বিলম্বে হলেও এ ব্যাপারে সবার সতর্কতা ও সচেতনতা অতিজরুরী। দায়িত্বশীলতা, সতর্কতা, পারিবারিক বন্ধন সর্বোপরি সামাজিক সহমর্মিতা শিশু-কিশোর-তরুণদের এমন আত্মঘাতী প্রবণতা ও সঙ্গ থেকে দূরে রাখবে। আমরা আমাদের যার যার অবস্থান থেকে একটু সচেতন হয়ে সামাজিক বন্ধনকে সুদৃঢ় করি।
↧