Quantcast
Channel: প্রজন্ম ফোরাম
Viewing all articles
Browse latest Browse all 15150

সেন্ট মার্টিন দ্বীপে কয়েক ঘন্টা

$
0
0


২০১০ সালে আমার ইউ:পি: ’র সচিব পদ হতে অবসর গ্রহনের কয়েক বছর পূর্বে আমি সেন্ট মার্টিন দ্বীপে ভ্রমনে গেলাম,সংগে বালিঘাটা ইউ:পি: সচিব আ: ওহাব ও মোহাম্মদপুর ইউ:পি: সচিব আতাউর রহমান সহকর্মীদ্বয় সফর সঙ্গী হলেন। প্রথমে আমরা কক্সবাজার ও টেকনাফে কয়েক দিন ভ্রমন করলাম। আমার সফর সঙ্গীদ্বয় সমুদ্রের উত্তাল তরঙ্গ দেখে, ভয়ে তারা আর টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিন দ্বীপে যাবেন না। আমি বললাম, আমার দেহ যদি মহান আল্লাহ সমুদ্রের মাছের খাদ্য করে থাকেন, তবে কেহ তা রোধ করতে পারবে না। আমি সেন্টমার্টিন দ্বীপ দেখতে যাবই। তারা আমার দৃঢ় মনোভাব দেখে, শুধু কক্সবাজার ও টেকনাফ সফর শেষ করেই তারা বাড়ীতে চলে আসলেন। আমি মহান আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করলাম এবং আমার মনোবল দৃঢ় থাকলো। আমি একাই সেন্টমর্টিন দ্বীপে যাবার জন্য টেকনাফে আরও এক রাত থেকে গেলাম।
আগামীকাল সকালে যে ট্রলার সেন্টমার্টিন দ্বীপে যাবে, বিকালে টেকনাফ ইউ:পি:’র এক গ্রাম পুলিশের সাহায্যে ট্রলারের অফিসে গেলাম এবং সে ট্রলারের টিকেট কাটলাম। পরের দিন সকালে সে অফিসে যেয়ে ঢাকার বুয়েটের শেষ বর্ষের টগবগে ৯জন ছাত্রের সংগে পরিচয় হলো,(পরীক্ষা শেষ করেই পাশ করলে তারা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে নামকরা ইঞ্জিনিয়ার হবে) তারাও সেন্টমার্টিন দ্বীপে বেড়াতে যাবে। অফিসে চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যলয়ের অর্থনীতি বিভাগের  প্রধান, তাঁর স্ত্রী ও তাঁদের ১০/১২ বছরের ২ছেলেসহ ৩০ জন প্রফেসার ও অন্যান্য কর্মকর্তাগনও সেন্টমার্টিন দ্বীপে ভ্রমনে যাচ্ছেন। নাফ নদীর মাঝে আমাদের ট্রলার লঙ্গর ফেলে অপেক্ষা করতেছে। নাফ নদীর তীরে ছোট ছোট নৌকায় ১০/=টাকার বিনিময়ে আমাদেক নির্দ্দিষ্ট ট্রলারে পৌছে দিচ্ছে। আমি ও বুয়েটের ৯ জন ছাত্র সহ ১০জন ১টি নৌকায় প্রথমে ট্রলারে উঠে একদিকে ১০ চেয়ারে বসলাম,পরে চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের প্রধান, তাঁর স্ত্রী, ২ ছেলে,
                                                                                      ২
প্রফেসার ও কর্মকর্তাগন ট্রলারে উঠলেন এবং নিজ নিজ আসন গ্রহন করলেন। আমার একেবারেই সামনের চেয়ারগুলিতে অর্থনীতি বিভাগের প্রধান, তাঁর স্ত্রী, ২ ছেলে বসলেন। আমার এক কাঁধে ডিজিটাল ক্যামেরা ও অন্য কাঁধে রাশিয়ান ভাল মানের দূরবীন দেখে বুয়েটের ৯জন টগবগে যুবক খবুই অবাক হলো। তারা সবাই আমাকে অনুরোধ করলো, বড় ভাই, আপনার দূরবীনটি আমাদেক দেন আমারাও দূরের দৃশ্য দেখতে চাই। আমি বললাম, আমার দূরবীনটি তোমাদেক দিচ্ছি, তবে সাবধানে দূরবীন দিয়ে দেখো, নদী বা সাগরে না পড়ে। তারা একে একে সকলেই মিয়ানমারের ও সাগরের দূরের দৃশ্য দেখতে লাগলো। তাই দেখে আমার সামনে বসা অর্থনীতি বিভাগের প্রধানের ২টি ছেলে দূরবীনটি দেখার জন্য বাবা মাকে অতিষ্ঠ করে তুলছে, তিনারা গম্ভীর ভাবে ছেলেদের আবদার সহ্য করছেন। আমি তা দেখে চুপ করে থাকতে পারলাম না। পিছন থেকে বললাম, হ্যালো ভাইজান, তাঁরা পিছন ফিরে যখনি আমার দিকে তাকালেন, আমি সালাম দিয়ে বললাম, ভাইজান বাড়ীতে আমারও নাতী ও নাতনীরা আছে। তারা এতোক্ষন অনেক আগেই আমার গলা থেকে দূরবীনটি ছিনে নিয়ে দূরের দৃশ্য দেখতো। আপনি কেন সংকোচ করতেছেন, তিনি বললেন, আমি যদি আপনার দূরবীনটি চেয়ে না পেতাম, তবে তা আমার পক্ষে খুবই অপমান জনক হতো। আমি দূরবীনটি আপনাকে দিচ্ছি, আপনাদের  ছেলেদেক দূরের দৃশ্য দেখান। এখানে আমরা সকলেই একই পরিবারভ’ক্ত, এটা আমি মনে প্রানে বিশ্বাস করি। আমি যখন দূরবীনটি তাঁর হাতে দিলাম, তাঁর ছেলেদের কি আনন্দ ও আমিও আনন্দ পেলাম। তাঁর ২ ছেলে, স্ত্রী ও নিজেও  অনেকক্ষন দূরের দৃশ্য দেখে খুবই আনন্দ পেলেন। তাঁর প্রফেসার ও কর্মকর্তাগন আমার নিকট এসে বললেন, ভাইজান আমরা কি দূরের দৃশ্য দেখার জন্য আপনার দূরবীনটি কি পেতে পারি? অবশ্যই, দূরবীনটি নিয়ে সকলেই দেখেন। এর পর অর্থনীতি বিভাগের প্রধান আমার নিকট খুবই সহজ হলেন এবং বিভিন্ন প্রশ্ন করলেন। আপনার বাড়ী কোথায়, নাম কি, কি করেন এবং ভাবীকে কেন সফরে আনেন নাই ইত্যাদি। আমি তাঁর সব প্রশ্নে উত্তর দিলাম।
                                                                                      ৩
কিছুক্ষনের মধ্যে আমরা গভীর সাগরের মধ্যে আসলাম, এখানে সাগরের পানি খুবই সবুজ-নীল ধরনের পানি। দূর দিগন্ত জুরে শুধু নীল জলরাশি সেএক অপূর্ব দৃশ্য।এখানে আসতেই শান্ত সাগর অশান্ত হয়ে উঠল, উত্তাল তরঙ্গে আমাদের ট্রলারটি একবার উপরে উঠতেছে আবার পরক্ষনে নিচে আছড়ে পরতেছে। সে এক ভয়াবহ দৃশ্য, ঐ সময় শরৎ বাবুর সুমুদ্রের ঝড়ের কথা মনে পরলো। আমরা সবাই ভয়ে কলেমা,তওবা,দোয়া দরুদ জোরে জোরে পড়তে লাগলাম, এভাবে অনেকক্ষন চলতে লাগল। এক সময় আমাদের ট্রলারটি যখন সেন্ট মার্টিন দ্বীপের উপকুলের কাছাকাছি আসলো, তখনই অশান্ত সাগর শান্ত হলো। আমরা সবাই মহান দয়ালু আল্লাহর নিকট শুকুর করলাম।   
সকলের সংগে আমি সেন্ট মার্টিন দ্বীপে পা রাখলাম। সাগরের একদিকে তীর দিয়ে দ্বীপটি দেখতে দেখতে পাগলের মত ছবি তুলতে লাগলাম। এক সময় আমার প্রিয় লেখক হুমায়ুন আহম্মেদ এঁর বাড়ীতে আসলাম সেখানেও অনেক ছবি তুললাম। তাঁর বাড়ীটি যতেœর অভাবে জরাজীর্ণ হয়েছে এবং তা দেখে আমি খুবই দু:খ পেলাম। সাগরের পশ্চিম তীর দেখে একমাত্র পাকা রাস্তায় উঠে দ্বীপের মাঝে এসে ওখানকার ইউ:পি:’র চেয়ারম্যান সাহেবের সংগে দেখা করলাম, সালাম বিনিময়ের পর আমার পরিচয় দিলাম। প্রথমেই তিনি বললেন, আপনার ব্যাগেজ কোথায়? আপনি অবশ্যই কয়েকদিন আমার বাড়ীতে মেহমান হবেন, আরও বললেন ভাবীকে কোথায় রেখে এসেছেন? তিনি আমাকে কোন কথা বলার সুযোগ না দিয়ে এতো গুলো কথা বললেন। আমি পরে ধীরে ধীরে তাঁর সব প্রশ্নের উত্তর দিলাম। বললাম, আমি একাই এসেছি, আপনার ভাবীকে সংগে আনতে পারিনি, আর যে ট্রলারে এসেছি সে ট্রলারে টেকনাফে ফিরে যাব, সে ভাবে আমি টিকেট কেটেছি। তাঁর আন্তরিকতা দেখে আমি মুগ্ধ হলাম। তিনি মসজিদের আঙ্গিনায় অন্যান্য মুসুল্লিদের সংগে তবলিগ জামাতের কথা বলতেছিলেন, তিনি তবলিগ জামাতের একনিষ্ঠ কর্মী। আমি তাঁকে আর বিরক্ত না করে তাঁর নিকট থেকে বিদায় নিলাম। দ্বীপের পূর্ব দিকে এসে সেন্ট মার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের অফিস দেখতে পেলাম, সেখানে ইউ:পি: সচিবের খোঁজ নিয়ে জানতে পেলাম, তিনি ছুটিতে আছেন, তাই তাঁর সংগে দেখা হলো
                                                                                        ৪
না। সাগরের তীর ঘেঁসে অনেক গুলো খাবার হোটেল, সেখানে সাগরের অনেক রকম মাছ রান্না করে রেখেছে। আমি এক হোটেলে রান্না করা রুপচাঁন্দা মাছের এক টুকরা ও ১টি বড় সাইজের চিঁংড়ী মাছ নিলাম, সত্যিই টাটকা রান্না করা মাছগুলি স্বাদে আমার কাছে অপূর্ব লেগেছে। সেখানে সকলের সংগে দেখা হলো এবং সেন্ট মার্টিন দ্বীপে কয়েক ঘন্টা বেড়ানোর অভিজ্ঞতা জেনে নিলাম। তারা সকলে এক বাক্যে বলেছে, অপূর্ব সেন্ট মার্টিন দ্বীপ, বেড়ানোর স্মৃতি সারা জীবন মনে থেকে যাবে। তাদের সংগে আমারও এক মত, তাই, এতোগুলো বছর পরেও সেন্ট মার্টিন দ্বীপের বেড়ানোর স্মৃতি লিখতে পারছি। বিকালে একই ট্রলারে কোন দুর্ঘটনা ছাড়াই আমরা সকলেই আল্লাহর রহমতে টেকনাফে পৌছিলাম।
টেকনাফ ইউ:পি:’র গ্রাম পুলিশের সহযোগিতায় যে আবাসিক হোটেলে ছিলাম,সেখানে আমার ব্যাগেজ রেখে সেন্ট মার্টিন দ্বীপে বেড়াতে গিয়েছিলাম। সেই আবাসিক হোটেলে রাত্রি যাপন করলাম। পরের দিন সকালে উক্ত গ্রাম পুলিশ এসে হাজির, তাকে রাত্রিতে সকালেই আসতে বলেছিলাম। আমরা দুজনে নাস্তা করে, তাকে বললাম টেকনাফে কি বেড়ানো ভাল জায়গা আছে? এইখানেই থানার আঙ্গিনায় একটা ঐতিহাসিক কূপ আছে, তা দেখতে পারেন। সে আমাকে নিয়ে থানার আঙ্গিনায় লোহার জালি দেওয়া ঘেড়া একটি কূপের নিকট নিয়ে গেল। কূপের নিকটে একটি বিজ্ঞপ্তি পড়ে জানা গেল, বৃটিশ আমলে একটি মর্মান্তিক ব্যর্থ প্রেমের কাহিনী। এতো বছর পর আমার সব কথা মনে নেই,তবে ঘটনার সারাংশ মনে আছে তা আমি পাঠকের কাছে তুলে ধরলাম। বৃটিশ আমলে থানায় এক বাংগালী অবিবাহিত পুলিশ দারোগাবাবু চাকুরি করতে আসেন। থানার আঙ্গিনায় অত্র এলাকায় এক মাত্র গভীর ইন্দিরা বা কূপে খাবার পানি নিতে আসতো উপ-জাতির মেয়েরা। উপ-জাতির মেয়েদের মধ্যে অত্র এলাকার জমিদারের একমাত্র সুন্দরী যুবতী মেয়ে সখীদেক সাথে নিয়ে উক্ত কূপে কলস নিয়ে পানি নিতে আসতো। উক্ত জমিদারের রুপসী যুবতী কন্যা কলসে পানি নিয়ে আসা যাওয়া করতে করতে উক্ত বাংগালী যুবক দারোগা বাবুর সংগে প্রথমে চোখাচখি হয়। পরে তাদের মধ্যে
                                                                                        ৫
গভীর প্রেমের জন্ম হয়। এই অসম প্রেমের কথা জমিদারের কানে যায় এবং জমিদার খুবই রেগে যায়। প্রথমে নিজের মেয়েকে সখীদের সংগে উক্ত কূপ হতে পানি আনা বন্ধ করে দেন, এর পর মেয়েকে একটা ঘরে বন্দী করে রাখেন। তিনি উক্ত দারোগা বাবুকে মেরে ফেলার জন্য ষড়যন্ত করেন। এই ষড়যন্তের কথা থানার লোকেরা জানতে পারে, দুপক্ষের রক্তের হানাহানি বন্ধের জন্য এবং উক্ত দারোগা বাবুর প্রান রক্ষার্থে বাধ্যগত ভাবে উক্ত দারোগা বাবুকে বাড়ীতে পাঠাইয়া দেন। এদিকে জমিদারের কন্যা মায়ের সহযোগিতায় মুক্ত হয়ে থানায় এসে দেখে যে , তার প্রানপ্রিয় প্রেমিক নাই। সে তখন দিশাহারা হয়ে উক্ত কূপে ঝাঁপ দিয়ে নিজের প্রান বিসর্জন দেয়। তাই তার মত ব্যর্থ প্রেমিক বা প্রেমিকা উক্ত কূপে ঝাঁপ দিয়ে যাতে প্রান বিসর্জন দিতে না পারে , তার জন্য থানা কতৃপক্ষ লোহার জাল দিয়ে উক্ত কূপের মুখ বন্ধ করে দিয়েছেন।
আমার জীবনের শেষ প্রান্তে এসে অনুরোধ, যে ৯জন টসবগে ছাত্র, না তারা এখন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের  নামকরা কর্মকর্তা হয়েছেন এবং চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের প্রধান( তিনি এখন হয়তো বা অবসর নিয়েছেন), তার স্ত্রী, ২জন ছেলে(তারা এখন অনেক বড় হয়েছে), উক্ত বিভাগের প্রফেসারগন ও কর্মকর্তাগন( তাঁরা এখন অনেকে অবসর নিয়েছেন) যাঁরা আমার সংগে ট্রলারে করে সেন্ট মার্টিন দ্বীপ ভ্রমন করেছেন,যাঁরা আমার স্মৃতি চারন ভ্রমন কাহিনীটি পড়বেন, তাঁদেক আমার মোবাইলে যোগাযোগ করতে অনুরোধ করলাম। ইতিÑ
                                                 হাজী মোহাম্মদ আলী আকন্দ
           গ্রাম : পিয়ারা, পো : ছাতিনালী,   উপ-জেলা : পাঁচবিবি, জেলা : জয়পুরহাট।     
                       তারিখ : ১২Ñ৪Ñ১৭ইং      মোবাইল নং ০১৭১৮-৪৮৪১১১


Viewing all articles
Browse latest Browse all 15150

Trending Articles



<script src="https://jsc.adskeeper.com/r/s/rssing.com.1596347.js" async> </script>