আজ মা দিবস। একটা বিজ্ঞাপনে দেখেছি, বলা হচ্ছে, আমাদের কাছে প্রতিটা দিনই মা দিবস। আজকে মা দিবসের বিশেষ লেখাগুলো পড়ব, মাকে নিয়ে আরেকবার আবেগাপ্লুত হব, মায়ের কাছে যাব! বোনের কাছে যাব! দয়িতার কাছে যাব! কোন মুখ নিয়ে যাব আমরা আমাদের বোনদের সামনে, সহকর্মীদের সামনে?মনে হচ্ছে আমা দের নারীরা আমাদের মুখের ওপরে ছুড়ে মারবেন সংবাদপত্রগুলো, আর বলবেন, এই দেখো, কেমন রেখেছ তোমরা আমাদের, কোন মুখে তোমরা মা দিবসের কথা বলো, নারী দিবসের কথা বলো! মনে হচ্ছে এখনই আমার কন্যা বলে উঠবে, কোন মুখে তোমরা কন্যাশিশু দিবস পালন করো!!!!!!
প্রতিদিনের সংবাদ পত্র খুললেই চোখে পড়ে ৬ মাসে শিশু ধর্ষণ, ৩ বৎসরের শিশু ধর্ষণ, শিশূ থেকে আরম্ভ করে বৃদ্ধা প্রতিদিন ধর্ষিত হচ্ছে, কোনটি প্রকাষ পাচ্ছে কোনটি প্রকাষ পাচ্ছে না, ধর্ষকের দল দাঁত বের করে হাসে, তারা ধরা ছোয়াঁর বাহিরে, বিচার চেয়েও পায়না, অনেকে ভয়ে বিচার চাওনা, কন্যার ধর্ষণের অপমান সহ্য করতে না পেয়ে পিতা আর কন্য মিলে রেল লাইনে আত্নাহুতি, বিচারহীনতাই অপরাধ প্রবনতাকে আরো বাড়িয়ে দিচ্ছে, আমরা শিশু ধর্ষণের বিচারের চেয়ে বেশী নজন দিচ্ছি, বনানীর ছাত্রী ধর্ষণের বিচার নিয়ে, তাদের জন্য টক শো হচ্ছে প্রতিটি চ্যানেলে, সকল মিডিয়া লাইভ টেলিকাস্ট করছেন সংবাদ, মানববন্ধন হচ্ছে, সেমিনার হচ্ছে, কিন্ত দিনাজপুরের শিশু ধর্ষণের, ময়মনসিংহের নান্দাইলের শিশু ধর্ষণের অভিযুক্তদের কথা আমরা বলিনা, তাদের নিয়ে টক শো হয় না, গাজিপুরে শিশু ধর্ষণের বিচার না পেয়ে পিতা তার শিশু কন্যাকে নিয়ে আত্নহত্যা করে, এই ঘটনা পর কি হলো? আমরা বনানীর ঘটনা নিয়ে যতটুকু আবেগ দেখাচ্ছি, সারারাত টক শো করছি, নেতা নেত্রীদের আলোচনা শুনি, কিন্ত অন্যদের ক্ষেত্রে আমারা আমাদের আবেক বিবেক ঘুমিয় পাড়িয়ে রাখি, কারন এটা কি যারা ধর্ষিত হয়েছে তারা সমাজের গরিব শ্রেনীর লোক, কিংবা যারা ধর্ষিত হয়েছে তারা নিরীহ, নিরীহ মানুষের পক্ষে কে থাকতে চায়, আর তাই অত্যাচারিত হয় তারাই বেশী, প্রভাবশালীদের ভয়ে ধর্ষিতারা ভয়ে মামলাও করেনা অনেক ক্ষেত্রে, অপরাধীরা হয়তবা ধরা পড়ে আবার আইনের ফাঁক দিয়ে আবার বেরিয়েও পড়ে, আবার করে আরেকটি অপরাধ।
ধর্ষক একদিনে তৈরী হয় না - তারা ধাপে ধাপে ধর্ষক হয়, হাত বাড়ালেই আন্টার নেট, বাসায় ইন্টার নেই, সবার হাতে হাতে ইন্টারনেই, মোবাইলে ইন্টারনেই, সবাই ব্যাস্ত ইন্টারনেট নিয়ে, আমরা খুশী আমাদের সন্তানরা ইন্টারনেই নিয়ে ব্যাস্ত তাদের মেধার বিকাশ ঘটছে, একবারের জন্যও কি খবর নিয়েছেন বা দেখেন, তারা ইন্টারনেটে কি করছে?
সোশ্যাল নেটওয়ার্কিংয়ের পরে যে ওয়েবসাইটগুলো ইন্টারনেটে মানুষকে আসক্ত করে তুলেছে তা পর্নোগ্রাফি। বিশ্বের মোট ওয়েবসাইটের ১২ শতাংশ (৪.২ মিলিয়ন) পর্নোসাইট। অ্যালেক্সার মতে, নেট ব্যবহারকারীদের ৬৫.৫ শতাংশ লোক পর্নো দেখে এবং চারশ মিলিয়ন ওয়েবসাইটের উপর করা জরিপে মানুষের প্রতি আটটি ক্লিকের একটি যৌন সাইট। গবেষণায় আরো পাওয়া যায়, পর্নাসক্তির কোনো বয়সসীমা নেই, কিশোর থেকে শুরু করে বয়স্ক পর্যন্ত সবাই এতে আসক্ত, যার মধ্যে পুরুষের তুলনায় নারীদের সংখ্যা বেশী। ওয়েবসাইটের চেয়ে মোবাইলে পর্নোসাইট ভিজিট আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে, শুধু ২০১৫ সালে মোবাইল পর্নো থেকে ২.৮ বি.মা.ড. আয়ের সম্ভাবনা রয়েছে। সংখ্যায় পর্নোসাইট ভিজিট করা দেশগুলোর শীর্ষে আমেরিকা (৪০ মিলিয়ন, যাদের প্রতি তিন জনের একজন মহিলা), দ্বিতীয় ব্রাজিল, তৃতীয় পাকিস্তান এবং চতুর্থ চীন। শতকরা হিসেবে সবচে’ বেশী পর্নো ভিজিটকারী দেশ পোল্যান্ড (প্রতি ১০,০০০ লোকের মধ্যে ৮৫ শতাংশ) ও মিশর। ভারতীয়দের মধ্যে ৪৭.৫ শতাংশ ডেস্কটপ, ৪৯.৯ শতাংশ মোবাইল ফোন এবং ২.৬ শতাংশ ট্যাবলেটের মাধ্যমে পর্নোসাইটে প্রবেশ করে। ”পর্নহাব.কম” নামক ওয়েবসাইট তাদের পরিসংখ্যানে বলেছে ২০১৫ সালে তাদের ওয়েবসাইট ভিজিট হয়েছে ২১.২ বি. বার-প্রতি মিনিটে ৪০,০০০ ভিজিট বা প্রতিঘণ্টায় ২.৪ মিলিয়ন বার। ঐ সাইটে ঐ সালে সবচেয়ে বেশী ভিজিট করেছে আমেরিকা, বৃটেন ও ভারত। দেশী-বিদেশী পর্নোর বাংলাদেশে পসার যে খুব ভাল নয় তা বলা যায় না। বাসসে’র প্রকাশিত এক রিপোর্টে (জুলাই, ২০১৩) বলা হয়েছে ঢাকার বিভিন্ন সাইবার ক্যাফেতে প্রতি মাসে যে পরিমাণ পর্নো ডাউনলোড করা হয় তার আর্থিক মূল্য ৩ কোটি টাকা। এ সকল পর্নোর ৭৭ শতাংশ দর্শকই স্কুল-কলেজ পড়ুয়ারা।
কয়েকটি দৈনিক ও অনলাইন নিউজ পোর্টালে তারানা হালিমকে উদ্ধৃত করে এ সংবাদও প্রকাশ হয় যে বাংলাদেশে পর্ন সাইটে প্রবেশকারী ব্যক্তিদের পরিচয় প্রকাশ করার কথা ভাবছে সরকার, পর্ণ সাইট গুলো বন্ধ করে দিলে সমস্যা কোথায়?