চিকুনগুনিয়া রোগটি ভাইরাসজনিত। শব্দটি আফ্রিকান যার অর্থ ‘ধনুকের মতো বেঁকে যাওয়া।’ এই রোগটির প্রাদুর্ভাব আফ্রিকা এবং দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার দেশে বেশি হলেও আমাদের দেশের কিছু কিছু এলাকায়ও পাওয়া যাচ্ছে। আমাদের অতি পরিচিত ডেঙ্গুর সঙ্গে এর অনেকটাই মিল রয়েছে। ডেঙ্গু জ্বরের মতোই এই ভাইরাসটি এডিস ইজিপ্টাই ও এডিস এ্যালবোপিক্টাস মশার কামড়ের মাধ্যমে মানব শরীরে প্রবেশ করে। চিকুনগুনিয়া মানবদেহ থেকে মশা এবং মশা থেকে মানবদেহে ছড়িয়ে থাকে। মানুষ ছাড়াও বানর, পাখি, তীক্ষ্ণ দন্তবিশিষ্ট প্রাণী যেমন ইঁদুরে এই ভাইরাসের জীবনচক্র বিদ্যমান। চিকুনগুনিয়ার মূল উপসর্গ হলো জ্বর এবং অস্থিসন্ধির ব্যথা। জ্বর অনেকটা ডেঙ্গু জ্বরের মতোই। দেহের তাপমাত্রা অনেক বেড়ে প্রায়ই ১০৪ ডিগ্রী পর্যন্ত উঠে যেতে পারে, তবে কাঁপুনি বা ঘাম না দেওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। জ্বরের সঙ্গে সঙ্গে মাথা ব্যথা, চোখ জ্বালা করা, গায়ে লাল লাল দানার মতো র্যা শ, অবসাদ, অনিদ্রা, বমি বমি ভাব ইত্যাদি দেখা দিতে পারে। এছাড়া শরীরের বিভিন্ন স্থানে বিশেষ করে অস্থিসন্ধিতে তীব্র ব্যথা হয়, এমনকি ফুলেও যেতে পারে। জ্বর সাধারণত ২ থেকে ৫ দিন থাকতে পারে এবং এরপর এমনিতেই ভাল হয়ে যেতে পারে। তবে তীব্র অবসাদ, পেশিতে ব্যথা, অস্থিসন্ধির ব্যথা ইত্যাদি জ্বর চলে যাওয়ার পরও কয়েক সপ্তাহ থাকতে পারে। কোন কোন ক্ষেত্রে এমনকি মাসের পর মাসও অস্থিসন্ধিতে ব্যথা বা প্রদাহ থাকতে পারে, যা অনেক ক্ষেত্রেই রোগীকে স্বাভাবিক কাজ করতে অক্ষম করে তোলে। রোগী ব্যথায় এতই কাতর হয়ে যেতে পারে যে হাঁটতে কষ্ট হয় এবং সামনের দিকে বেঁকে বেঁকে হাঁটে। স্থানীয়ভাবে কোথাও কোথাও তাই একে ‘ল্যাংড়া জ্বর’ বলা হয়ে থাকে। চিকুনগুনিয়া সন্দেহ হলে রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে তা নিশ্চিত হওয়া যায়। এক্ষেত্রে রোগীর রক্তে ভাইরাসের বিরুদ্ধে তৈরি হওয়া এন্টিবডি পরীক্ষা করে দেখা হয়ে থাকে। এতে ২ থেকে ১২ দিন লাগতে পারে। আরটি-পিসিআর এবং সেরোলজির মাধ্যমে পরীক্ষাগারে ভাইরাস শনাক্ত করা যায়। রোগীর আর্থিক সামর্থ্য না থাকলে শুধু শুধু এই পরীক্ষা করার কোন দরকার নাই, কেননা এতে চিকিৎসার ক্ষেত্রে কোন লাভ হয় না।
চিকুনগুনিয়া রোগ সম্পর্কে কিছু প্রয়োজনীয় টিপস :
১. চিকুনগুনিয়া রোগটি এডিস মশার কামড় থেকেই হয়। তাই মশা থেকে দূরে থাকুন।
২. সন্তান মায়ের স্তন্য পান করলে সাধারণত চিকুনগুনিয়া হয় না। তাই আক্রান্ত মায়েদের চিন্তিত হওয়ার তেমন কোন কারণ নেই।
৩. চিকুনগুনিয়া হয়েছে এটা বোঝার উপায় হলো জ্বর, মাথায় যন্ত্রণা, সারা শরীরে ব্যথা এবং গিরায় গিরায় খুব বেশি ব্যথা হয়। ডেঙ্গুর মতোই গায়ে এলারজি বা ঘামাচির মতো র্যা শ হয়। তবে রক্তক্ষরণ একেবারেই হয় না, রক্তের প্লাটিলেটও কমে না, রক্ত দেয়ার কোন প্রয়োজন পড়ে না।
৪. ডেঙ্গুর চিকিৎসা এবং চিকুনগুনিয়ার চিকিৎসা প্রায় একই রকম এবং এতে রোগীর কোন সমস্যা হবে না। বরং ভাইরাস সুনিশ্চিতভাবে নির্ণয় করে চিকিৎসা করতে গেলে যেসব ব্যয় বহুল পরীক্ষা করতে হবে তা অনেক দরিদ্র রোগীই করতে পারবে না, তার প্রয়োজনও নেই। এতে চিকিৎসার ক্ষেত্রেও কোন অতিরিক্ত সুফল পাওয়া যায় না।
শুধু মনে রাখতে হবে রোগটি নতুন হলেও এতে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। এতে কেউ মারা যায় না। হয় তো বা কিছুদিন ভোগান্তি বাড়ায়। একটু সচেতন হলেই এ রোগ মোকাবেলা করা সম্ভব।