বাজার করতে গেলেই সব পণ্যের সাথে পলিব্যাগ দিচ্ছে। বাজার করে বাসায় নিয়ে আসার পর সেগুলো একটির পর একটি খুলে খুলে একসঙ্গে জমিয়ে পাশের কোন ডাস্টবিন কিংবা ফাঁকা স্থানে ফেলে দেয়া হয়। তারপরে কোথায় যায় সেই পলিথিনগুলো? এভাবে প্রতিদিন শত শত, হাজার হাজার, লাখ লাখ, কোটি কোটি পলিথিন জমা হচ্ছে ভূ-উপরিভাগে। তারপর সেগুলো আবার বাতাস, বৃষ্টির পানির স্রোত, বন্যা ইত্যাদির মাধ্যমে স্থানান্তরিত হয়। আর সেভাবে ভূপৃষ্ঠময় একটি পলিথিনের স্তর জমে গেছে। পলিথিন একটি অপচনশীল দ্রব্য। বৈজ্ঞানিক গবেষণায় প্রাপ্ত তথ্যমতে এটি প্রায় সাড়ে চারশ’ বছর অপচনশীল অবস্থায় অবিকৃত থাকে। মাটিতে কিংবা পানিতে একটি পলিথিন পড়ার পর তা এত দীর্ঘদিন অবিকৃত থাকার কারণে তা পরিবেশের জন্য নানারকম বিপর্যয়কর পরিস্থিতির সৃষ্টি করে থাকে। পলিথিন কতভাবে যে মানুষ, জীবন্ত অন্যান্য উদ্ভিদ, প্রাণীকুল এবং পরিবেশের জন্য মারাত্মক বিপর্যয়কর পরিস্থিতির সৃষ্টি করে থাকে, তা স্বল্প পরিসরে আলোচনা করে শেষ করা যাবে না। তারপরও উল্লেখযোগ্য কিছু বিষয় অলোচনা না করলে মানুষের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি হবে না। দীর্ঘদিন যাবত পলিথিনের ব্যবহার হওয়ায় এখন কৃষি জমির উপরিস্তর পলিথিনে ছেয়ে গেছে। সেখানে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ পলিথিনের স্তর জমে রয়েছে। এতে আধুনিক কৃষিকাজের অনেক সমস্যা হচ্ছে। সেখানে চাষ দেওয়া, ফসল আবাদ করা, ফসলের আবাদজনিত আন্তঃপরিচর্যা করা, সেচকার্য করা ইত্যাদি প্রতিটি কাজে সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। জমিতে সার, কীটনাশক, সেচের পানি দিলে সহজে তা নিষ্কাশিত হয় না। পানি প্রয়োজনের তুলনায় বেশিদিন মাটিতে আটকে থাকছে। সেখানে ফসলের গাছগুলোর শিকড় মাটির গভীরে যেতে পারছে না। সেজন্য গাছও মাটির গভীর থেকে পানি এবং প্রয়োজনীয় অত্যাবশ্যকীয় খাদ্যগুলো গ্রহণ করতে পারছে না। কোন স্থানের পরিবেশ সুন্দর ও স্বাস্থ্যকর রাখতে হলে সেখানকার পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থাটা সঠিকভাবে করতে হয়। কিন্তু দেখা গেছে বিভিন্ন জায়গায় পানির পরিচলনের পথগুলো যেমন, ছোট-বড় ড্রেনের মুখ বন্ধ হয়ে থাকছে পলিথিন জমা হয়ে। সেভাবে নদী-নালা, খাল-বিল, হাওড়-বাওড় ইত্যাদির পানির স্রোতধারা পর্যন্ত বন্ধ কিংবা গতিপথ পরিবর্তিত হয়েছে এ পলিথিনের কারণে। আর এসব পানির পরিচলনের মাধ্যমে পলিথিনের স্রোতধারা সাগর মহাসাগরে গিয়ে জমা হয়ে কয়েক ফুট পলিথিনের একটি স্তর সৃষ্টি করেছে বলে পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে পরিবেশ বিজ্ঞানীগণ শনাক্ত করতে সক্ষম হয়েছেন। এটি সত্যিই একটি ভয়াবহ বিপর্যয়। আশার কথা, এরই মধ্যে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের পাট মন্ত্রণালয় নিয়ে এসেছে একটি সুখবর। আর সেটি হচ্ছে গতানুগতিক ধারার ক্ষতিকর সিনথেটিক রাসায়নিক পলিথিনের পরিবর্তে পাট দিয়ে তৈরি করছে পরিবেশবান্ধব পলিথিন। এ পলিথিন তিন থেকে সর্বোচ্চ ছয়মাসের মধ্যে মাটির সঙ্গে পচে মিশে যাবে। এটি যে পলিথিনের জগতে কী এক বিরাট সফলতার খবর, তা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। কারণ আমরা জানি এখন পলিথিনের ব্যবহার এত ব্যাপকভাবে বেড়ে গেছে, যা আর কোন অবস্থাতেই একেবারে নির্মূল করা সম্ভব নয়, বড়জোড় একটু আধটু কমানো যেতে পারে।
↧