ছাগল!
নাম শুনে অনেকের গা ঘিন ঘিন বা ছম ছম কিংবা নাক সিঁটকাতে পারে।অথচ ছাগল একটি গৃহপালিত পোষা প্রাণী। গ্রামে যারা বড় হয়েছে তারা ছাগলের বাচ্ছাকে কোলে নিয়ে আদর করেনি এমন মানুষ খুব কম পাওয়া যাবে। ছাগল একটি উপকারী জন্তু। ছাগলের বিবর্তন সম্পর্কে ভালো করে জানা জায় না। তবে বর্তমান ছাগলের গঠনা শৈলী অনুযায়ী ছাগলের পুরো শরীল পশম দ্বারা ঢাকা থাকে। ছাগলের পশম বিভিন্ন রংয়ের থাকলেও কালো পশম ওয়ালা ছাগলের আধিক্য বেশী। এই কালো ছাগলের আধিক্যের কারণে অন্য বর্ণের ছাগলেরা কালো বিড়ালের সাথে ষড়যন্ত্র করে বাংলা অভিধানে নতুন আরেকটি শব্দ যোগ করেছে “কালো বিড়াল” । বাঙালিদের গরুতে যখন অরুচি আসে তখন ছাগল কে বিকল্প ভাবে। ছাগলের দুধের রং সাদা। যা খেলে মানুষের মনও সাদা হয়ে যায়। গরীবের ছাওয়ালরা যখন তী্ব্র জ্বরে আক্রান্ত হয় তখন আরোগ্য লাভের আশায় ছাগলের দুধ পান করতে দেয়া হয়।
প্রবাদ বাক্যে ঘোড়ার ডিম থাকলেও ছাগলের ডিম নাই।তবে ছাগলে ডিমের মত আকৃতির কালো ল্যাদা পাড়ে। ব্লগে মাঝে মাঝে একে অপর কে কাঁদা ছোড়া ছুড়ির বিকল্প হিসেবে ল্যাদা ছোড়াছোড়ি হয়। অনেকে ছাগুর বাচ্ছা বলার পরিবর্তে শুধু “ছাগু” বলে ডাকে।
বিজ্ঞান বইতে পাগলের সাথে ছাগলের সম্পর্ক প্রমাণিত না হলেও বাংলা সাহিত্যে কোথাও কোথাও পাগল আর ছাগলকে এক বাক্যে প্রকাশ করতে দেখা যায়।
মানুষ সাধারণত খারাপভাবে গালি দেয়ার জন্য “ছাগল”, “ছাগলের বাচ্চা”, “তুই একটা ছাগল”, “তুই একটা ”রামছাগল” বলে থাকে। বিশেষ করে বন্ধু মহলে ছাগল বলে গালি দেওয়াটা কমন ব্যপার। গালিশিল্পে বিশেষ অবদান রয়েছে ছাগলের।
তবে, “রাম ছাগল” গালি আবিস্কারের কারণে হিন্দুরা ধর্মীয় অবমাননার অভিযোগ উত্থাপন করতে পারে।
বাঘ-সিংহ কে মানুষ ভয় পায়। হিংস্রতা বোঝাতে এই প্রাণীকে বোঝানো হয়। তবুও মানুষ অতিরিক্ত তোষামোদ করার জন্য বাঘের বাচ্চা, সিংহশাবক বলে পিঠ চাপড়ানো হয়। অথচ সুলভ, গৃহ পালিত উপকারী প্রাণী ‘ছাগল উপাধি’ নিতে কেউ রাজি নয়। কাউকে ‘ছাগলের বাচ্চা’ বললে রাগের পারদ একশো অতিক্রম করে। তাহলে কি বুঝব ছাগলের একটাই অপরাধ, সে বাঘের মতো হিংস্র আক্রমণ করতে পারে না। মহিষের মতো গুতাতে পারে না। সিংহের মত ঘাড় মটকাতে পারে না!
আমাদের দেশে চাটুক্যবাজ কিংবা চালবাজ অথবা সু-চীলরা একে অপর কে ‘ছাগু’ বলে গালি দিয়ে আত্মতৃপ্তি লাভ করে।
মহাত্মগান্ধী, ছাগল ও নোয়াখাইল্লাদের ঐতিহাসিক ঘটনাঃ
মহাত্মা গান্ধীর ছাগল নোয়াখালীর মানুষরা একবার চুরি করে খেয়েছে।
সেটা ১৯৪৬ সালের ঘটনা, নোয়াখালীতে দাঙ্গার গুজব রটানো হয়। এই গুজবের জেড়ে ১৯৪৬ সালের ১০ অক্টোবর কোজাগরি লক্ষ্মী পূজার দিন এই দাঙ্গা সংগঠিত হয়। প্রায় চার সপ্তাহ ধরে এই দাঙ্গা অব্যাহত ছিল। এতে অনেক মানুষ নিহত হয়। দাঙ্গার খবর মহাত্ম গান্ধীজীর নিকট পৌছায়। খবর পেয়ে তিনি ৭ নভেম্বর নোয়াখালীর চৌমুহানীতে আসেন। আসার সময় তিনি
একটি ছাগল ভারত থেকে নোয়াখালীতে নিয়ে এসেছিলেন। গান্ধীজীর ছাগলের উপর চোখ পড়ল নোয়া খাইল্ল্যা দুষ্টা পোলাপাইনের। তারা সেটি চুরি করে জবাই দিয়ে ভুরিভোজ সারেন।
গান্ধীজী নোয়াখালিতে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে ব্যর্থ হয়ে মিশন অর্ধ সমাপ্ত রেখেই বাংলার মুসলিম লীগ নেতাদের অনুরোধে ১৯৪৭ সালের ২ মার্চ বিহারের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে চলে যান। কিন্তু নোয়াখাইল্লাদের নিকট হারাতে হয় অতি প্রিয় ছাগল কে।
গান্ধীজী সেদিন বুঝেছিল আসলে নোয়াখাইল্লারা কি জিনিষ!
তবে যা হউক, ছাগল কিন্তু বোকা প্রাণী নয়।
গবেষকরা গবেষণা করে দেখেছেন, পোষা কুকুরের মতোই ছাগল মানুষের সঙ্গী হওয়ার যোগ্যতা রাখে। অন্য পোষা প্রাণীর মতো ছাগল মানুষের সঙ্গে ভাব বিনিময়ের যোগ্যতা রাখে। এমনকি কুকুরের মতোই ছাগল মানুষের সঙ্গে হৃদ্যতা গড়তে সক্ষম এবং এই প্রাণীটি কুকুরের মতোই বুদ্ধিমান।
ছাগলের সবচেয়ে বড় অর্জন এটি পাকিস্তানের জাতীয় পশু।
↧
মহাত্মা গান্ধী ও নোয়াখাইলা দুষ্ট পোলাপাইন এবং ছাগল কাহন।।
↧