Quantcast
Channel: প্রজন্ম ফোরাম
Viewing all articles
Browse latest Browse all 15150

শিবুদা বিগিনস - পার্ট ২ (দ্যা গ্রেট শিবুদা সিরিজ)

$
0
0

প্রথম পর্ব এখানে

--------------------------------------------------------------------------------------------

১.

যেরকমটা ধারণা করেছিলাম সেরকমই হল। আমরা সবাই হাজির ছিলাম কিন্তু শিবুদা আসেনি। অবশ্য যেরকম রেগেমেগে মাঠ থেকে চলে গেল শিবুদা সেখানে আসবে যে না এটা আগেই বুঝেছিলাম আমরা। ছোটবেলা থেকেই ভীষণ রাগী আর জেদী শিবুদা। তবে অকারণে কোনটাই করেন না। আর এদিকেও তেমন বিশেষ কিছু ঘটেনি তাই আমরাও তাকে আর আসার জন্য জোর করিনি। যাইহোক শেষমেষ ঘটনা মোটামুটি এরকম দাড়াল যে- সাধুবাবা নানান রকমের মন্ত্রটন্ত্র পড়ে, আগরবাতি জ্বালিয়ে, ধুপধুনো ছিটিয়ে অশুভ আত্মা তাড়ানোর বন্দোবস্ত করলেন। তারপর সাগরেদসহ জম্পেশ ভূড়িভোজন করে, রনির মায়ের আলমারী খালি করে নিজের ট্যাকখানা পূর্ণ করে বিদায় নিলেন। আর যাওয়ার সময় বলে গেলেন- অব্যার্থ মন্ত্র পড়ে অশুভ আত্মাদের চৌদ্দগুষ্টি তাড়িয়ে দিয়ে গেছেন। ওরা আর এই জন্মে এই বাড়িমুখো হবে না। তারপর আমরাও রনিদের বাসা থেকে ভরপেট খেয়ে যার যার বাড়িমুখো হলাম।
তখন ঘুণাক্ষরেও বুঝতে পারিনি যে আসল ঘটনা মাত্র শুরু হয়েছে!

২.

সকালবেলায় হন্তদন্ত হয়ে রনি আমার বাসায় আসলো। আমিতো ওই সময়ে ওকে দেখে অবাক। বুঝলাম কিছু একটা ঘটেছে।
- “কালরাতে মা আবার কীসব দেখেছে। এবার শুধু ভয়ই পায়নি, রুম থেকে বের হতে যাওয়ার সময় কিছুতে পা বেধে পড়ে গিয়ে মাথায় আঘাতও পেয়েছে।” কোনরকমে ভেতরে ঢুকেই হরবর করে বলল রনি।
- “বলিস কী! এত কান্ড হয়ে গেছে রাতে!” আমি তো পুরোই অবাক। “কাকীমার অবস্থা ভালোতো?”
- “তা মোটামুটি আছে কিন্তু এবার তো প্রেতাত্মা হোক আর যাই হোক এর একটা বিহিত না করলেই নয়।” চোয়াল শক্ত করে বললো রনি।
- “হুম, তাতো বটেই। তবে এখন কেউ যদি কিছু একটা করতে তাহলে সেটা শিবুদাই।” আমি বিজ্ঞের মত বললাম।
- “আর বলিস না, কাল শিবুদার সাথে বাদড়ামোটা একটু বেশিই হয়ে গেছিল। কে জানে শিবুদা এখনো রাগ করে আছে কিনা!” অনুতপ্ত গলায় বললো রনি। “চল এখনই শিবুদার বাড়িতে গিয়ে শিবুদাকে ধরি।”
- “ আচ্ছা তুই গিয়ে শফিক আর মামুনকে ডেকে নিয়ে আয়। আমি এখনই রেডি হয়ে আসছি। সবাই মিলে ধরলে শিবুদা আর রাগ করে থাকতে পারবে না।”
- “ঠিক আছে। দেরী করিস না।” এই বলে রনি শফিক আর মামুনকে ডাকতে চলে গেল। আর আমি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ভাবতে লাগলাম আসলে হচ্ছেটা কী রনিদের বাড়িতে!

৩.

শিবুদার বাসায় আমরা সবাই মিলে মিটিংয়ে বসলাম। যেভাবেই হোক এই পীড়াদায়ক সমস্যাটা থেকে মুক্তি পাওয়াই আমাদের লক্ষ্য। সব ঘটনা শুনে শিবুদার চোখ উজ্জ্বল হয়ে ওঠা দেখেই যা বোঝার বুঝে নিলাম আমি। কাকীমার দুরবস্থার কথা শুনে কিছুটা মর্মাহত হলেও ভূত-প্রেতের ব্যাপারে যে শেষপর্যন্ত তার কথাই ঠিক হওয়ার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে এজন্য ভেতরে ভেতরে শিবুদা মহা খুশি। শিবুদার এই ব্যাপারটাকে ঠিক নার্সিসিজম বলা যাবে না, তবে হ্যা নার্সিসিজমে মাসতুতো ভাইয়ের খুড়তুতো দাদার পাড়াতো ভাই বলা যেতে পারে! তিনি জানেন যে তিনি ঠিক আর অন্যরা বড়াই করার পরে যখন তার কাছে ভুল স্বীকার করে তখন তিনি একটা অদ্ভুত আত্মতৃপ্তি পান। অবশ্য এটা আমার কাছে মোটেও খারাপ কিছু মনে হয়না।

- “এখন বল রনি ভূত, অশরীরি প্রেতাত্মা এগুলোর ব্যাপারে তোর কি আর কিছু বলার আছে?” মুখ শক্ত করে রনিকে জিজ্ঞাসা করলেন শিবুদা।
- “স্যরি শিবুদা, তোমার কথাই ঠিক। যে জিনিস নেই সেগুলো তো আসলে তাড়ানোর তো প্রশ্নই ওঠে না। এসব ভূত-প্রেত তাড়ানো সবই বুজরুকি। আর যদি থেকেও থাকে তাহলে ঐ সাধু ব্যাটা ভন্ড। ভন্ডামী করে এতগুলো টাকা নিয়ে গেল।” আমতা আমতা করে বললো রনি।
- “আবার বেলাইনে যাচ্ছিস, মারবো এক থাবড়া”। শিবুদা একটু বিরক্তই হলেন রনির উপর। তারপর আমাদের দিকে তাকিয়ে বললেন “যাইহোক, এখন তোরা আমাকে কী করতে বলিস তাই বল।”
- “দেখো শিবুদা, আমার মনে হচ্ছে এখন তুমি ছাড়া এই প্রেতাত্মা রহস্যের উদঘাটন আর কেউ করতে পারবে না।” সবার হয়ে আমি বললাম শিবুদাকে। “এখন তুমি যেটা ঠিক মনে হয় সেটা কর।”
- “হুমম। আচ্ছা ঠিক আছে, এই দায়িত্ব তাহলে আমিই নিলাম। আর এই রহস্যের সমাধান না হওয়া পর্যন্ত রাতে আমি রনিদের বাড়িতেই থাকবো। আর বাবু তুইও আমার সাথে থাকবি।” আমাকে বললেন শিবুদা।
- “শিবুদা আমরাও তোমাদের সাথে থাকবো।” এবার শফিক আর মামুন হইহই করে উঠলো।
- “নাহ সবাই থাকলে কাকীমার উপরে বেশি চাপ পড়ে যাবে। তোরা বাইরে থেকেই আমাদের সাহায্য করবি।” বুঝতে পারলাম শিবুদা অলরেডি সব প্ল্যান করে ফেলেছেন।
একথা শুনে শুনেই শফিক আর মামুনের মুখ কালো হয়ে গেল। তাই দেখে শিবুদা কী জানি ভাবলেন একটু। তারপর বললেন,
-“তাহলে আমরা এখন সবাই গিয়ে কাকীমাকে দেখে আসি। আর গতকালের পিকনিকটাও আজকে হয়ে যাবে কি বলিস রনি?” শিবুদার কথায় এবার শফিক আর মামুনের মুখে হাসি দেখা গেল।

রনির এখন কোন কিছুতেই আপত্তি নেই। বাসার থমথমে পরিস্থিতি স্বত্তেও ও একবাক্যে রাজি হয়ে গেল। কারণ আমাদের মত ও ব্যাটাও বুঝতে পেরেছে যে দাবার ঘুটি চালা হয়ে গেছে, এবার শুধু শিবুদার কিস্তিমাতের অপেক্ষা। এখন পিকনিকের আনন্দটা মাটি করে লাভ নেই তাই আমরাও হইহই করতে করতে রনিদের বাসার দিকে রওয়ানা হলাম।


(চলবে)


Viewing all articles
Browse latest Browse all 15150

Trending Articles



<script src="https://jsc.adskeeper.com/r/s/rssing.com.1596347.js" async> </script>