ঈদ মানে খুশি। আনন্দ। বন্ধুত্ব। মানবতাবোধে জাগরিত হওয়া। ঈদ মানে অসাম্প্রদায়িকতা। শৃঙ্খলা, শান্তি। মানুষে মানুষে নেই ভেদাভেদ। নেই ভ্রান্তি। ঈদ মানে প্রতিবেশীর প্রতি দায়িত্ব পালন। ভাল কাজে থাকবে না কোন ক্লান্তি। তাই ঈদ-উল-ফিতরের কথা মনে এলেই কাজী নজরুল ইসলামের কবিতার কথা মনে পড়ে, ‘ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ/ আপনাকে আজ বিলিয়ে দে শোন আসমানী তাকিদ।’ এখানে আসমানী তাকিদ শুনতে বলা হয়েছে। এই শব্দের অর্থ খুঁজতে পারলেই ইসলামের সুমহান আদর্শ ও ঈদের মর্মার্থ বোঝা যাবে। শেষ নবী হযরত মোহাম্মদ (সা) এর সময় কাফেররা বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পালন করত। সাহাবীরা মোহাম্মদ (সা) কে এ বিষয়ে বলেন, আমাদের ধর্মীয় অনুষ্ঠান না থাকায় সাংস্কৃতিক চর্চা থেকে মুসলিমরা দূরে সরে যাচ্ছে। তখন আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে দুটি ঈদ পালনের নির্দেশ আসে। ইসলামের বিধান সবার জন্য উন্মুক্ত। জাকাত প্রতিবেশীর হক। প্রতিবেশী যদি অমুসলিম দরিদ্র হয় তাহলে কি তার হক নেই! অবশ্যই আছে। ধর্ম কত উদার! আর আমরা কত অনুদার! তবে গুরুভক্তি থাকতে হবে। গুরুর শিষ্যত্বও নেব, আবার গুরুকে গালিও দেব এই স্ববিরোধিতা চলবে না। আল্লাহকে মানব না। কোরান-হাদিসে বিশ্বাস নেই। কোনদিন পড়বও না। আবার ঈদ এলে আনন্দের সীমা থাকবে না। এটি অগ্রহণযোগ্য। চরম ভন্ডামি। ফেতনা সৃষ্টিকারীর বৈশিষ্ট্য। অশান্তি সৃষ্টিকারী। এরাই এক সময় জঙ্গী হয়। মানুষ মারে। সমাজ ধ্বংস করে। দেশের উন্নয়নের পথে প্রাচীর হয়ে দাঁড়ায়। জঙ্গীবাদী চিন্তা-চেতনা ইসলামের সঙ্গে সম্পূর্ণভাবে সাংঘর্ষিক। জঙ্গীরা ইসলামের শত্রু। মানবতার শত্রু। বাংলাদেশের শত্রু। কেউ কেউ আবার আত্মঘাতী হামলা চালিয়ে শহীদ (?) হচ্ছে। মনে হয়, আত্মঘাতী হামলা যারা চালায় এরা আত্মহত্যা করছে। এরা শহীদ হচ্ছে, না কাফের হচ্ছে তা বিজ্ঞ পাঠকের বিচারের ওপর ছেড়ে দিলাম। তৎকালীন আবু জেহেল মোহাম্মদ (সা) কে জেল খাটিয়েছে। বারংবার হত্যার ষড়যন্ত্র করেছে। হিজরত করতে বাধ্য করেছে। তায়েফের ময়দানে রক্ত ঝরিয়েছে। নিজ হাতে পিটিয়ে আহত করেছে। মক্কার লোকেরা তো আবু জেহেলকেই তখন সহযোগিতা করেছে। মক্কা বিজয়ের পর নবী তো সব মাফ করে দিয়েছেন। অথচ সামান্য প্রতিশোধ নিলেও তো সব নিশ্চিহ্ন হয়ে যেত! তায়েফের ময়দানে নবীকে রক্তাক্ত করা হলো। জিব্রাইল (আ) আল্লাহর নির্দেশে হাজির হয়ে বললেন, আপনি বলুন ‘আমি দুই পাহাড়কে এক করে তায়েফবাসীকে নিশ্চিহ্ন করে দিই।’ নবী(সঃ) বলেছিলেন, ‘তাহলে আমি ইসলামের দাওয়াত কাকে দেব। মানুষই যদি না থাকল তাহলে আমার ধর্মে কে দীক্ষিত হবে?’ এজন্যই মানবতার ধর্ম ইসলামে মানুষ হত্যার বিধান নেই। এই ধর্মে মানুষে মানুষে নেই কোন ভেদাভেদ। নেই সাম্প্রদায়িকতার এতটুকু ছোঁয়া। এরপরও যারা ধর্মের দোহাই দিয়ে মানুষ হত্যা করে, সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প ছড়াতে চায়, তারা যেন নবীর চেয়েও ইসলাম বেশি বোঝে! আর জঙ্গীরা যদি সবাইকে এভাবে মেরেই ফেলে তাহলে ধর্মের আর প্রয়োজন হবে কোথায়? মানুষ না বাঁচলে ধর্ম কি গাছপালা, জীবজন্তু‘কে শাসন করবে? এ সব নালায়েক মূর্খ, ধর্মান্ধ, গোঁড়াদের জানা উচিত, পৃথিবীতে আগে মানুষ এসেছে, এরপর ধর্ম। ধর্ম হচ্ছে মানুষকে পরিচালনার একটি গাইডলাইন। মানুষ না থাকলে ধর্মের কোন প্রয়োজন হবে না। তাই জঙ্গী নিয়ে সরকারও ভাবছে। এধরনের বিশৃঙ্খলকারীদের ব্যাপারে সরকারের পদক্ষেপ অত্যন্ত কঠোর, প্রশংসনীয় এবং ধর্মানুগ। তবে এটাকে কাজে লাগিয়ে কোন স্বার্থান্বেষী গ্রুপ যাতে ফায়দা না লোটে, সে ব্যাপারে সতর্ক থাকা দরকার। দেশ ধর্ম ও মানবতার নিকৃষ্টতম শত্রু জঙ্গীবাদ। এই জঙ্গীবাদকে কঠোর হাতে দমন এখন সময়ের দাবি। ঈদের প্রকৃত শিক্ষা যেন এবার বাংলার ঘরে ঘরে পৌঁছায়। অসাম্প্রদায়িক একটি সমাজ, মানবতাবোধে সমুজ্জ্বল একটি সমাজ? আমাদের স্বপ্ন। সেই সমাজ প্রতিষ্ঠিত হোক এই কামনা আমাদের সবার। আসুন সবাই মিলে সুন্দর সোনার বাংলা গড়ে তুলি।
↧