তের বছর বয়সী নাঈম মারা গেলো ঢাকা আরামবাগের একটি ছাপাখানায়। প্রথম আলো পত্রিকায় বড় বড় কলামে লেখা শুধু তার মরনের কথাটাই। সেখানে বলা হয়েছে দুর্ঘটনাবশত ছাপা খানার শিশু শ্রমিক নাঈম মারা গেলো। সবার কাছে দুর্ঘটনা মনে হলেও আমার কাছে মনে হচ্ছে এটা একটি খুন।
আমাদের সমাজ ব্যবস্থা কেমন? আমাদের রাজনৈতিক নেতারাই বা কেমন। কিছুদিন আগে যখন রাংগামাটিতে পাহাড় ধসে শত মানুষের মৃতু হলো, কিছু অসাধু ব্যবসায়ী এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে চালের কেজি একশো টাকা, আলু আশি টাকা। যেখানে মানুষের ঘর বাড়ি টাকা পয়সা সব কিছু মাটির তলে বিলিন হয়ে গেছে সেখানেও তাদের ব্যবসা হরদম চলছে, কেউ না কিনতে পেরে অনাহারেই কাটিয়ে দিয়েছে এই রমজানের পবিত্র দিন গুলোকে।
আমি যে দেশে বসত করি, সে দেশে আইন তো রয়েছে পুর্নবয়স্ক না হলে কোন শিশু কর্মসংস্থান এ যোগ দিতে পারবে না। কিন্তু আজো পথের প্রতিটি অলিগলিতে দেখা যায় শিশু শ্রমিক। হাতুরি দিয়ে ইট ভাংগে, রয়েছে গার্মেন্টস এ, রয়েছে পথে ধারে কাগজ কুড়ানোর মত শিশু শ্রমিক। আইন সংবিধান এ রাশি রাশি আইন লিখে দিলেই কি আমাদের দেশ সচল হয়ে যাবে? না আইন যদি থাকে তার যথাসাধ্য ব্যবহার হওয়া উচিত।
সৌদি আরব, দুবাই, কাতার এসব মুসলিম দেশে রমজান আসলে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের দাম কমে যায়, আর আমাদের দেশে দ্বিগুণ, তিনগুন দাম বেড়ে যায়। ব্যবসায়ীরা লক্ষ টাকার পুজি খাটিয়ে দশ টাকা দরে আলু কিনে রমজানে ৪০-৫০ টাকায় বিক্রি করে। কেননা আলুরচপ কিন্তু দারুন মজাদার, আর মজাদার জিনিসের দাম তো একটু বেশিই।
খোজ খবর নিলে দেখা যেত নাঈমের ঘরেও ঠিকমত চুলা জলতো না। অভাব অনটনের দায়মুক্তি নিতেই কিশোর বয়সী নাঈম নেমে ছিলো কর্মজগতে। কোন বাবা মা কি চায়, আমার সন্তান বড় না হয়ে, সমাজে মাথা উচু করে না দাড়াতেই আমাকে রাশি রাশি টাকা এনে দিক?
ছেলেটির স্কুল ব্যাগ কাধে নিয়ে স্কুলে যাবার সময় ছিলো, বন্ধু বান্ধব নিয়ে খেলার মাঠে থাকার সময় ছিলো কিন্তু সে বেছে নিয়েছিলো পেট বাচানোর রাস্তা।
আমার দেখা আরেকটি নাঈম আছে, একটু কান্না করলেই তার বাবা বাহারী ধরনের খাবার এনে দেবার প্রতিজ্ঞা করে। যখন যা চায় তখন তাই পায় সে। ১৪ বছরের বড়লোক বাবার একমাত্র ছেলে নাঈমের কাছে এখনি রয়েছে একটি পালসার, বাই সাইকেল, কম্পিউটার, ল্যাপটপ, আর জানি কত কি।
আমাদের দেশের অভাব কোনদিন মেটে না, আসলে মেটার রাস্তা থাকেনা। এই করে দিবো সেই করে দিবো বলে বলে ভ্যাটের উপর ভ্যাট যুক্ত হচ্ছে। গরীবের রক্ত পানি করা টাকায় বড় বড় নেতা মশাইরা করছেন আমোদ ফুর্তি। আর দেশের নিম্নবর্তী মানুষ রয়েগেছে অবহেলিত হয়েই।
আজো যদি খোজ নেওয়া যায়, অধিকাংশ গ্রাম্যবাসী তাদের ফসলের উপর ভিত্তি করে জীবন চালায়। যদি ক্ষেতে ফসল না উগে তারা ভেবেই নেয় এবার আমাদের মরনের দিন আসছে।
যে দেশে একটি সরকারী চাকুরী নেবার কথা ভাবলে আগে ভাবতে হয় কত টাকা ঘুষ দিতে পারবো? বাপের জায়গা জমি বন্ধক রেখে কি চার পাচ লাখ টাকা হবে? তাহলে একবার রিস্ক নেওয়া যায়।
হাজার হাজার শিক্ষিত রয়েছে কর্মহীন। আমাদের দেশে শিক্ষার সুফল থেকে কুফল টাই বেশী। শিক্ষিত হয়ে নিজেদেরকে সমাজের ঝামেলা মনে হয়। শিক্ষিত না হলে রিক্সা চালানো যেত, কুলির কাজ করা যেত কিন্তু এখন কিছুই করতে পারিনা।
খুন, লুটপাট, চুরি ডাকাতি এমনিতেই আর বেড়ে যায়নি, পেটের জালা বড় জালা। এই জালাতেই সব হয়। আজকে নাঈমের খবর পত্রিকায় বেড়িয়েছে এটাই তার সাত জনমের ভাগ্য। আর কিছু না হোক মরার পর তার কথা কিছু মানুষ তো জানতে পারছে এটাই বেশী।
এভাবে দেশ চলেনা। আমাদের দেশে সব কিছুই আছে, তারপরেও কিছু নেই। সবকিছু জিম্মি হয়ে গেছে বড় বড় ব্যবসায়ী, কোম্পানীর কাছে। নিজের দেশেও ভিক্ষুকের মত থাকি, তারা দিলে আমরা খাই, ব্যাপার টা এমন হয়ে দাড়িয়েছে।
বিচার চাই, বিচার চাই বলেই ক্লান্ত হয়ে চুপসে যাই, কোন মর্মান্তিক দুর্ঘটনা দেখলে ভাগ্যের উপর চাপিয়ে দিয়ে কেটে পড়ি। আজ হবে সোনার দেশ, নয়ত কাল, শুধু ক্যালেন্ডার এর পাতা ঘুরে, বছর শেষে নতুন বছর, মাস দিন ঠিকই আসে। শুধু ঘুরে না বাংলাদেশীদের ভাগ্য।
।
লেখা: Tashriq Intehab