Quantcast
Channel: প্রজন্ম ফোরাম
Viewing all articles
Browse latest Browse all 15150

আমার সব শিক্ষকেরা, পর্ব-১

$
0
0

সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরণঃ এটা কোন রম্য নয়।

স্কুলের শিক্ষকেরাঃ
  সারাজীবনে একটা স্কুলেই পড়েছি। ক্লাস ওয়ান থেকে টেন। মিরপুর বাংলা উচ্চ বিদ্যালয়। প্রাইমারী স্কুলের শিক্ষকদের কথা তেমন মনে নেই। তবে হাই স্কুলের শিক্ষকদের কথা বেশ মনে আছে। বড় দুই ভাইও একই স্কুলে পড়ায় আমাকে মোটামুটি সব শিক্ষকই চিনতেন। স্কুলের হেভীওয়েট শিক্ষকদের মধ্যে রনজিত স্যার, নিখিল স্যার, দত্ত বাবু স্যার, মকবুল স্যার, মোস্তাফিজ স্যার, আমিনুল স্যার, হুমায়ুন কবীর স্যার, মাহবুবুল হক স্যার প্রমুখ ছিলেন অন্যতম।

রণজিৎ স্যার ক্লাস নাইনে আমাদের পড়াতেন ইংরেজী। বয়স্ক মানুষ। মাথায় টাক। স্যারের বেশ মোটা একটা বেত ছিলো। স্যার ক্লাসে এসে ইংরেজীতো পড়াতেন, সেই সাথে রবীন্দ্রনাথের কবিতাও পড়াতেন। স্যারের বদৌলতে “সোনারতরী” কবিতাখানা কলেজে ওঠার আগেই পড়া হয়ে গিয়েছিলো। স্যারের একটা অভ্যাস ছিলো হঠাত করে তিন-চারদিন আগের লেকচারের পড়া ধরা। স্যারের লেকচার সবসময় ভালোমতো আলাদা খাতায় তুলে রাখতাম। কারণ দুই-তিনজনকে জিজ্ঞেস করার পরে যখন দেখতো যে তারা পড়া পারে নাই, তখন পালা আসতো আমার। সেই দুই-তিনজনকে পড়া ধরার সময় খাতা খুলে পড়া দেখে নিতাম। তারপর বীরদর্পে পড়া বলতাম। আমি উত্তর দেয়ার পরে স্যার মুচকী হেসে বলতেন, “ ‘এ’ সেকশন হচ্ছে দুধ। আর ফার্স্ট, সেকেন্ড, থার্ড বয় হচ্ছে দুধের সর।”

নিখিল স্যারও ইংরেজী পড়াতেন। আমার অত্যন্ত প্রিয় শিক্ষকদের একজন হলেন নিখিল স্যার। স্যার গায়েগতরে ছিলেন পুরা কুংফু-পান্ডার মতন। একবার সহপাঠী ফরহাদ, স্যারের ক্লাস শুরু হবার একটু আগেভাগে পালানোর জন্যে দৌড়ে বাইরে বের হয়ে যাচ্ছিলো। কিন্তু হঠাত দরজার ওপাশে উদয় হওয়া পাহাড় সমান ভুড়িতে ধাক্কা খেয়ে বাউন্স-ব্যাক করে আবার ক্লাসের ভিতর ছিটকে পড়লো। স্যার মেঝেতে পড়ে থাকা ছোটখাটো সাইজের ফরহাদের মায়া মায়া চেহারা দেখে দয়াপরবশ হয়ে আর কিছু বলেননি। স্যার কোন কারণে আমাকে একটু বেশি আদর করতেন। কিন্তু এ আদরের ঠেলায় আমার হয়েছিলো ত্রাহীমধুসদন অবস্থা। কারণ স্যার আদর করতেন তার চিকন বেত দিয়ে আস্তে আস্তে মার দিয়ে। সবাইকে একটা করে প্রশ্ন ধরলেও, আমাকে কোন প্রশ্নের উত্তর না পারা পর্যন্ত প্রশ্ন করে যেতেন। আমিও নানাভাবে স্যারকে পেইন দেবার চেষ্টা করতাম। স্যার প্রতি কলামে আলাদা আলদা প্যারাগ্রাফ লিখতে দিতেন। এক কলামে দিলেন ট্রাফিক-জ্যাম, আর আরেক কলামে দিলেন লোড-শেডিং। দুটোই পারি। তারপরও ইচ্ছে করে নিজের কলাম ছেড়ে অন্য কলামে গিয়ে বসতাম। স্যার ঠিকই স্টেজ থেকে দেখে আমাকে উদ্দেশ্য করে হুংকার ছাড়তেন, “তুই যেইখানেই যাস না কেন, তুই লোড-শেডিং ই লিখবি।” একবার ডোডো পাখির ব্যাপারে পড়াচ্ছিলেন। এই পক্ষী মরিশাস নামক দ্বীপে থাকতো। পরে বিলীন হয়ে যায়। এজন্যে একটা ফ্রেইজ আছে, “ডেড লাইকে ডোডো।” সবই বুঝলাম। কিন্তু স্যার আমাকে প্রশ্ন করে বসলেন, “ক দেখি মরিশাস কোথায়?” কি আশ্চর্য্য! এইটা কি ভূগোল ক্লাস? তারপরও আন্দাজে বললাম, “মনেহয় মাদাগাস্কারের বামে।” আর যায় কোথায়? স্যার দিলেন মাইর। তারপর হুংকার ছেড়ে বললেন, “বাম-ডান আবার কি? ম্যাপে খালি উত্তর,দক্ষিণ,পূর্ব,পশ্চিম হয়। কালকে দেখে আসবি। এইটাই শুধু তোর পড়া।” স্যারের কল্যাণে এখন জানি মরিশাস কোথায় এবং  কখনই তা ভুলবো না। 

দত্ত বাবু স্যারও ছিলেন আমার অত্যন্ত প্রিয় শিক্ষক। কাচাপাকা চুলের মাঝারী গড়নের দত্ত বাবু স্যারকে পোলাপান আড়ালে, কোন অজানা কারণে ডাকতো দৈত্য বাবু স্যার বলে। বৃত্তি কোচিং ক্লাসে উনি পড়ানোর পাশাপাশি আমাদেরকে মেডিটেশন করাতেন। সে বছর আমাদের ব্যাচ থেকে রেকর্ড পরিমাণ ছাত্র বৃত্তি পেলো। হয়তো স্যারের মেডিটেশন করানোর ফল। বায়োলোজী ভালো পারতাম না জন্যে স্যারের কাছে কিছুদিন প্রাইভেট পড়েছিলাম। আমার বায়োলোজীর অবস্থা দেখে স্যার আমাকে বলেছিলেন, “ডাক্তার হবার ইচ্ছে আছে?” আমি বললাম, “না।” স্যার বললেন, “তাহলে ইন্টারে বায়োলজী নেয়ার দরকার নাই।” স্যারের কথা মেনে ইন্টারে বায়োলজী নেইনি।   

মকবুল স্যার ছিলেন আমাদের ইসলামিয়াত শিক্ষক। দাড়িওয়ালা ছোটখাটো গড়নের মকবুল স্যারকে পোলাপান ডাকতো চুটুক বলে। চুটুকের যে কি মানে আল্লাহ জানে। স্কুলের সাথেই ছিলো স্যারের নিজস্ব দোকান। সেখান থেকেও স্যার ছেলেদের উপর নিরবিচ্ছিন্ন পর্যবেক্ষণ চালাতেন। কোন ছেলে মাক্কু-পাড়ায়(তাতের কাজ হয় যেখানে। পোলাপান যেতো বিড়ি টানতে) গেলে, সেগুলোকে আইডেন্টিফাই করে পরবর্তীতে স্কুলে গিয়ে দিতেন রামধোলাই। ক্লাস সেভেনে আমাদের একটা বই পড়তে হতো। নাম ছিলো মনিরাতুল-আদব। কিন্তু আমার মতো বেয়াদবের পক্ষে সেই বইয়ের বিদ্যা আহরণ খুবই কষ্টকর ছিলো। কারণ আরবী পড়তে পারতাম না। মকবুল স্যারের উত্তম-মাধ্যমের ভয়ে বুড়ো বয়সে মাদ্রাসায় গিয়ে আরবী শিখতে বাধ্য হয়েছিলাম। সেখানে কায়দা পড়ে, বেয়াদবী ছেড়ে, মনিরাতুল-আদব আত্মস্থ করতে সমর্থ হয়েছিলাম। যদিও একদিন ক্লাস মিস করার কারণে স্যার বলেছিলেন আমি এসএসসিতে ইসলামিয়াতে লেটার পাবো না। কিন্তু কিভাবে যেন পেয়ে গিয়েছিলাম। আল্লাহর অশেষ মেহেরবানী। স্যার দারুণ দারুণ সব গল্প ক্লাসে বলতেন। একাত্তর সালে নাকি স্যারের মাথার এক ইঞ্চি দূর দিয়ে মর্টারের গোলা গিয়েছিলো। আল্লাহর নেক দৃষ্টি ছিলো জন্যে নাকি স্যার বেচে গিয়েছিলেন। স্যার জোয়ান বয়সে নাকি মারাত্মক শক্তিশালী ছিলেন। দশ ইঞ্চি থান-ইট দিয়ে নাকি নিয়মিত ডাব গাছ থেকে ডাব পাড়তেন। আমি এখনও অবশ্য নিশ্চিত নই সেটা কিভাবে। ইট হাতে নিয়ে গাছে উঠে , তারপর সেটা দিয়ে বাড়ি মেরে ডাব পাড়তেন। নাকি নিচে থেকে দশ ইঞ্চি থান-ইট ছুড়ে মেরে সেটা করতেন। আরও একটা গল্প করতেন মাঝে মাঝে। সেটা অবশ্য ছাপার অযোগ্য হওয়ায় লিখতে পারলাম না।     
(চলবে)


Viewing all articles
Browse latest Browse all 15150

Trending Articles



<script src="https://jsc.adskeeper.com/r/s/rssing.com.1596347.js" async> </script>