গোয়েন্দা কাহিনী - "অপ্রত্যাশিত" : পর্ব-১
এক মুহূর্তের জন্য একেবারে থমকে গেল সুমি। নিজের কানকেও সে বিশ্বাস করতে পারছে না যেন। ঠাস করে হাত থেকে মুঠোফোনটি পড়ে গেল মেঝেতে।
ইন্সেপেক্টর কেন আমাকেই কল দিলো, দাড়িয়ে সেই কথাটিই ভাবছে সে এখন। আর তার কথা বলার ভঙ্গিও ছিল কেমন যেন সন্দেহজনক। আমি কিছুই বুঝতে পারছি না। তাহলে কি আমি জড়াতে যাচ্ছি বড় ধরনের কোন অসুবিধায়? না, তা কেন হতে যাবে, নিজের মনেই প্রশ্ন করে সে নিজেকে। বাঁকা মনটি আবার বলে ওঠে অন্য কথা : হতেও পারে, সাকিব খুন হলে তোর উপর সন্দেহটাই সবচেয়ে আগে আসবে। সে নিজেও এবার ভাবতে থাকে অবচেতন মনের কথাগুলো। তাকে কেনই বা কেউ সন্দেহ করবে না? সেই তো সাকিবের সবচেয়ে কাছের বন্ধু। এতো বন্ধুত্ব না বরং এর চেয়ে অনেক বেশী কিছু। গতরাতেও অনেকক্ষন কথা হয়েছে তার সাথে। মাথা গরম করে ওভাবে ফোনটা না রেখে দিলেই ভাল হতো।
এখন সে কি করবে, কি করা উচিত কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না সে। বিপদ ঘনিয়ে আসছে। এক্ষুনি বাড়ি থেকে বের হতে হবে। আগেভাগে পরিস্হিতি সামাল না দিতে পারলে অনেক বড় বিপদে পড়তে হবে। সে ঘাড় ঘুরিয়ে ঘড়ির দিকে তাকালো। ঠিক রাত ১২টা ১ মিনিটে বন্ধ হয়ে আছে। চমকে উঠে কেঁপে উঠলো তার সারা শরীর। কি রহস্য আছে এই ঘড়িটার মধ্যে? বাবা যেদিন সকালে মারা গিয়েছিলেন সেদিনও ঠিক রাত ১২টা ১ মিনিট থেকে ঘড়িটা ঠিক এভাবেই বন্ধ হয়ে ছিল।
সে আর এক মুহূর্তও দেরী করতে চায় না এখানে। যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব বাড়ি থেকে বের হতে হবে। এক দৌড়ে সে বাথরুমে গিয়ে ঢুকলো। কি আশ্চর্য! এক ফোঁটা পানি নেই ট্যাপে। এরকম তো আগে কখনও ঘটেনি। এখন কি করবে সে? ভাবতে ভাবতেই আয়নাটার দিকে তাকালো সে। খুব অগোছালো দেখাচ্ছে তাকে। একেবারে ঝড়ের কবলে পরা কাকের মতো। বিদ্ধস্ত সৈনিকের মতো চোখ দুটি আনমনে বন্ধ করলো সে। কিছুটা সময় এভাবে পাড় করলে মন্দ হয় না। কিছুটা সময়ের জন্য সাকিবের কথা ভাবতে ভাল লাগবে তার। কেন জানি পরোক্ষনেই খুলে গেল চোখ দুটি আবার। আয়নায় চোখ পড়তেই চিৎকার দিয়ে পেছনে ঘুরলো সে। নিজের চোখকেই সে এখন বিশ্বাস করতে পারছে না। না, এটা কিভাবে সম্ভব, কিভাবে সাকিব তার পেছনে এসে দাড়াতে পারে? এক মুহূর্তের জন্য সে দেখেছে সাকিবকে। একি তার অবচেতন মনের খেলা। সাকিব কোথায়? কি তাহলে তার খবর? তাকে তা জানতেই হবে।
খুব অল্প সময়ের মধেই নিজেকে গুছিয়ে সামলে নিয়েছে সে। আগে সাকিবের বাড়িতেই যাবে বলে ঠিক করলো। ওর বাড়িটা শহরের একদম শেষ সীমানায়। মাঠের পাশে জঙ্গল ঘেরা একটা পড়ো-বাড়ি। জায়গাটা পৈত্রিক সূত্রে পেয়েছে সে। একবারই সে বন্ধুদের সাথে নিয়ে গিয়েছে সেখানে। তারপরও গা ছমছম করছিল। তাই পরে আর কখনও যেতে ইচ্ছা করেনি। আজ বাধ্য হয়ে তাকে সেখানে যেতেই হবে।
মেঝেতে পড়ে থাকা মুঠোফোনটি তুলে নিল সে। না ভাঙ্গেনি, শুধু কেসিংটা খুলে গেছে। ব্যাগটা ঘাড়ে ঝুলিয়ে মুঠোফোনের কেসিং লাগাতে লাগাতে বাইরের ঘরের দিকে হাঁটতে থাকে সে। ঠিক সেই মুহূর্তে বিকট শব্দে কলিং বেলটা বেজে উঠলো।
.....................................................................................................(চলবে)