প্রথম পর্ব এখানে
পাহাড়ি আঁকাবাঁকা রাস্তা প্রকৃতি বিদ্বেষীদেরও মন খানিক আচ্ছান্ন করে। রাঙামাটি, বান্দারবান, খাগড়াছড়ির রাস্তাগুলোয় যে একবার গেছে সেই বুঝতে পারবে আঁকাবাঁকা আসলে কত প্রকার ও কি কি কক্সবাজার থেকে টেকনাফ যাবার পথে তেমনই আঁকাবাঁকা রাস্তা পড়ছে। দু ধারে পাহাড়ও আছে কিন্তু নেই বিসাল খাড়াই উতরাই। তাই অপেক্ষাকৃত নিরাপদ মনে হয় রাস্তাটা। তখনো সূর্য মামা আলো ফোটায়নি। আকাশ কেবল আলো হয়েছে। জানালার বাইরে বেশি দূর চোখ যায় না। কুয়াশা ঢেকে দিয়েছে সব। হঠাৎ হঠাৎ দুই একটা ঝোপ সাঁই সাঁই করে পাস কাটানোর সময় দৃষ্টিগোচর হচ্ছে তাও কুয়াশার চাদরে পুরোপুরি ডুবে থেকে। সামনে নজর দিয়ে দেখলাম হেডলাইটের আলো রাস্তা বেশিদূর আলোকিত করতে পারছে না। পুরো বাসের সবাই একেবারে চুপ। খানিক আগে বাচ্চা কাচ্চার দল চ্যাঁচামেচি করছিল। তারা যদিও প্রকৃতি বুঝে না তবুও নিজে থেকেই চুপ হয়ে গেলো। একটানা শুধু এঞ্জিনের ক্রুদ্ধ গর্জন ।
হঠাৎ সূর্যের একটা ছোট্ট ঝলক দেখা গেলো পাহাড়ের মাথায়। গাছগাছালির দুর্ভেদ্য লতাপাতা ভেদ করে এক ফালি সোনালী কিরণ কুয়াশা আলো করে আমাদের চোখে ধরা দিলো। যেন গাছপালার আড়াল থেকে কেউ একাধিক টর্চ ধরিয়েছে । পুরো বাসের সবাই এক সাথে চেচিয়ে উটলো এই দৃশ্য দেখে। সত্যি বলতে আমার তখনই উপলব্ধি হল যে "ট্যুরে বেরিয়েছি" এতক্ষন বুঝতে পারিনি
একে একে কিছু ব্রিজ, নদী পেরল। মুগ্ধ হয়ে দেখছিলাম সব। এক সময় বাস টেকনাফ পৌঁছুল। নাফ নদীর জেটিতে। জেটি বললে ভুল হবে। তবে সবাই এটাকে এই নামেই চেনে। একটা মাঠ মত যায়গায় একটা ছোট ছাপরা দেয়া হোটেল । আলু পরোটা সিঙ্গারা ডিম এই সব ভাজি হচ্ছে। সামনে একটা গেট । গেট পেরলে ধানখেতের উপর দিয়ে সরু রাস্তা চলে গেছে । রাস্তার শেষ মাথায় বাঁশ দিয়ে বানানো নড়বড়ে সেতু যার শেষ মাথায় একটা জাহাজ মত কিছু দেখা যাচ্ছে। নাম কুতুবদিয়া । জানা গেলো এটাই আমাদের নাফ নদী পার করে সেন্টমার্টিন পৌঁছে দেবে।
এটাই সেই গেট আর দূরে কুতুবদিয়া ...
আপাতত অন্য কিছু ভুলে আমরা হোটেলে নাস্তা করতে ঢুকলাম । তখনই আমাদের দ্বিতীয় বাস এসে থামল। আমরা পরোটা মুখে দিতে দিতে ওই বাসের লোকজন দের দেখতে লাগলাম। বাস থেকে যারা নামলো সবাইকে স্বাভাবিক অর্থাৎ বাঙালিই মনে হচ্ছিল কিন্তু শেষের দিকে কয়েকজন হাতে করে সার্ফ বোর্ড নিয়ে নামলো। অন্ধকারের মত নিকষ কালো তারা। আমাদের অনুমান এরা "পম গানা" র লোক তেমনই কোঁকড়ানো চুল আর খেলোয়াড়দের মত হাফপ্যান্ট পরে আছে।
আমি, আবির, ফাহিম এবং ভ্রমন সঙ্গীদের কিছু অংশ। অনেক খুজেও পম গানা দের কোন ছবি পেলাম না
খাওয়া দাওয়ার পর মাইনাস দেবার জন্য একটু আড়ালে গেলাম। আমাকে চমকে দিয়ে লুঙ্গি পরা এক লোক উদয় হল। গলা নামিয়ে বলল "মামা বিদেশী পানি আছে। একেবারে অজ্জিনাল যে। আপনাকে দেব যে ?" আমি কইলাম বাথরুম দেবার পর দেশি ডিপ টিউবওয়েলের পানি ব্যাবহার করাই উত্তম যে । আপনে ভাগেন যে
বেটা তাও ভাগে না। আসে পাসে ঘুরঘুর করতে থাকলো। কি যন্ত্রণা !! একটু শান্তিতেও প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে দেবে না যে
ইয়ক !!! আমার মুখ থেকেও "যে" বের হচ্ছে কেন
যাই হোক। আমাদের কে লঞ্চের দিকে যেতে বলা হল। বাঁশের সেতুতে উঠে ম্যানগ্রোভের সামান্য ঝলক দেখতে পেলাম। নিচে হাটু পানিতে বিশাল বিশাল গাছ আর তাদের মুল বের হয়ে আছে চোখা হয়ে। এগুলার ছবি তোলার টাইম কই। পিছন থেকে জনতার গুতা। গ্যাঞ্জাম ঠেলে নিজেদের সিট খুজে পেতে ব্যাকপ্যাক রেখে উঠে গেলাম ডেকে। তারপর এক কোনায় যায়গা পেয়ে বসে পড়লাম। কুতুবদিয়া চালু হল। আসতে আসতে মুল নদীতে এসে পড়লাম। অবাক হলাম কোন ঢেউ নেই বলে। মাছ ধরার নৌকা , সবুজ পাহাড়, পাড়ে ছোটছোট বাড়ি, মানুষ কত কিছুই পেরচ্ছিলাম। লঞ্চের পেছনে পেছনে দেখা মিলল এক ঝাক গাংচিলের। মহাউৎসাহে পাক খেয়ে খেয়ে উড়তে উড়তে কখনো সামনে কখনো পেছনে চলে যাচ্ছিল। যাত্রীরা কেউ কেউ চিপস ছুড়ে দিচ্ছিল ওগুলোর জন্য। পানিতে পড়ার আগেই বেটারা কপ কপ করে লুফে নিচ্ছিল। এক যাত্রী দেখলাম সিগারেটের শেষ অংশ ছুড়ে দিল। একটা গাংচিল সেটাও গপ করে গিলে ফেলল অবাক করা বিষয় চিল টা দেখলাম কোন অনুভূতি দেখালো না। কিছুই হয়নি এমন ভাবে পরের ছোড়া চিপসের দিকে ছুটে গেল
পাহাড়ের একটা ছবি। বাঁশের সাকো মত যেটা দেখা যাচ্ছে এটার সামনে লঞ্চ দাঁড়িয়ে থাকে যাত্রী নেবার জন্য। এইরকম সাকো অনেক গুলো আছে একটু পরপর
চিপসের আশায় কয়েকটা গাঙচিল
এই রকম নৌকা অনেক ছড়িয়ে আছে। ছবিটা ভালো আসে নি তবু শেয়ার করলাম কারন দেখতে ভালো লাগছে।
লঞ্চে করে যাবার পথের আরো কিছু শুধু ছবির টপিক করেছিলাম। এখানে দেখুন যারা মিস করে গেছেন।
টেকনাফে "পানি" বিক্রেতার মত এখানেও একজনের আবির্ভাব হল। এদিকওদিক চেয়ে গলা খাদে নামিয়ে বলল - বাবা আছে যে... নেবেন?
মানিক বুঝতে পারলো না কিসের কথা হচ্ছে । সে বলল কি ! কি আছে! লোকটি আবার বলল "বাবা, বাবা আছে।"
আমি বললাম খালি বাবা আছে? আম্মা নাই
কে শোনে কার কথা। গলা আরো নামিয়ে বলল , পিস ৩৭০ টাকা। শুধু আপনার জন্য ১৫০ টাকা!
মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো। ইতরটার আমি দুলাভাই হৈ নাকি ? শুধু আমার জন্য
বেটার আমি কোন জন্মের দুলাভাই লাগি সেটা প্রুভ দেয়ার জন্যই সে আমাদের বাবা লাইভ দেখা তে চাইলো। সার্টের ভেতর হাত দিয়ে এক টুকরা টিস্যু পেপারে মোড়া কি যেন বের করল। সে বস্তু দেখার সৌভাগ্য হল না। পেছন থেকে বিকট স্বরে ফাহিম একটা দাবড়ানি দিল। বেটা বুঝলো সুবিধা হবে না। সে নিরাপদ দুরত্বে মানে ২ হাত দূরে গিয়ে শেষ ভরসা হিসেবে মিন মিন করে বলল , আমি আছি। লাগলে আওয়াজ দেবেন যে।
সবাই ছবি তুলে তুলে ক্লান্ত হয়ে গেলো এক সময়। ডেকের উপর হাত পা ছড়িয়ে বসেই পড়লাম। দূরে ছোট্ট ডাঙ্গামত কি দেখা গেল এক সময়। এটাই নারিকেল জিঞ্জিরা
নারিকেল জিঞ্জিরার প্রথম ছবি
লঞ্চ থেকে নামলাম । এই জিনিসটা নজরে এলো। এগুলোয় করে নৌকা বা স্পীডবোটে নামতে হয়।
নামার সাথে সাথে বিভিন্ন হোটেল / রিসোর্টের লোক জন ঘিরে ধরল আমাদের। এমন ভাবে হোটেল / রুম বলে চিল্লাতে লাগলো যেন " সায়দাবাদ/ মিরপুর/ যাত্রাবাড়ী সিটিং টিকিট বিক্রি করছে তবে নেমে সবার আগে যেটা করলাম সেটা হল ডাব খেলাম
ডাবের ছবি আগের পর্বে দেয়া আছে।
পাড়ে নৌকা আছে অনেক । বেশিরভাগ মাছ রাতে ধরা হয়। তাই মনে হয় জিরিয়ে নিচ্ছে
একটা HDR ...
টপিক বিশাল হয়ে যাচ্ছে। কেউ পড়বে বলে মন হয় না। এই পর্ব এখানেই শেষ করি