মালিবাগ-মগবাজার হচ্ছে ঢাকা শহরের সবচেয়ে যানজটপূর্ন এলাকা। এখানে এক তলা ফ্লাইওভারে কাজ হবে না তাই তিনতলা ফ্লাইওভার করা হচ্ছে। আশা করবো এটা যেন নির্মানের মাঝপথে ভেঙ্গে না পড়ে চট্রগ্রামের ফ্লাইওভারের মতো।
মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভার নির্মাণ শুরু ডিসেম্বরে
মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভারের কাজটি শুরু হবে আগামী ডিসেম্বরে। ১৮ নবেম্বর এ বিষয়ে দুটি নির্মাণ কোম্পানির সঙ্গে চূড়ান্ত চুক্তি হবে। চুক্তির পর পরই কার্যাদেশ দেয়া হবে। ৭৭৩ কোটি টাকা ব্যয়ে ফ্লাইওভারের কাজটি বাস্তবায়ন করবে এলজিইডি। আগামী দুই বছরের মধ্যে ফ্লাইওভারের কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। ফ্লাইওভারটি নির্মিত হলে রাজধানীর যানজট অনেকাংশে কমে যাবে। দুটি রেলক্রসিংয়ের ওপর দিয়ে ফ্লাইওভারটি নেয়া হবে। এতে রেলক্রসিংগুলোতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকতে হবে না। তবে প্রকল্প শুরু হওয়ার আগেই মৌচাক অংশে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। এই অংশে ২৬ কোটি টাকার বেশি দরের তৃতীয় সর্বোচ্চ দরদাতাকে নির্মাণ কাজ দেয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। এই প্রতিষ্ঠানটি এক বিএনপি নেতার।
মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভারের পিডি নাজমুল আলম জনকণ্ঠকে জানান, ফ্লাইওভারটি কয়েকটি ভাগে নির্মাণ করা হবে। প্রথম পর্যায়ে তেজগাঁও সাত রাস্তা থেকে শুরু হয়ে এফডিসি ঘুরে মগবাজার রেলক্রসিং পার হবে। এর একটি ‘লুপ’ হলি ফ্যামিলি হাসপাতালের কাছে নেমে যাবে। দ্বিতীয় পর্যায়ে বাংলামোটর থেকে মগবাজার, মৌচাক, রাজারবাগ পুলিশ লাইনে গিয়ে শেষ হবে। আরেকটি ধাপে রামপুরা রোড থেকে মৌচাক হয়ে শান্তিনগর গিয়ে শেষ হবে। তিনটি ভাগে নির্মাণ হওয়া এই ফ্লাইওভারের দৈর্ঘ্য হবে ৮ দশমিক ২৫ কিলোমিটার। মগবাজার ও মালিবাগ রেলক্রসিংয়ের ওপর দিয়ে ফ্লাইওভারটি চলে যাবে। ফলে দুটি রেলক্রসিং যানবাহন পারাপারে যে সময় নষ্ট হয়, ফ্লাইওভারটি নির্মিত হওয়ার পর এই সমস্যা থাকবে না। ফ্লাইওভারটি নির্মাণে সৌদি ফান্ড ফর ডেভেলপমেন্ট দেবে ৩৭৩ কোটি, ওপেক ফান্ড ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট (ওএফআইডি) দেবে ২শ’ কোটি টাকা এবং বাকি ২শ’ কোটি টাকা দেবে বাংলাদেশ সরকার। গোটা ফ্লাইওভার নির্মাণে দুই বছর সময় লাগবে।
তিনি বলেন, আগামী ১৮ নবেম্বর ভারতের সিনেপ্লেক্স ও বাংলাদেশের নাভানা, চীনের এমসিসি-৪, এসিএল ইউসি কোম্পানির সঙ্গে এলজিইডির চুক্তি সই হওয়ার কথা রয়েছে। কোম্পানিগুলোর সঙ্গে চুক্তি হওয়ার পর অল্প দিনের মধ্যেই কার্যাদেশ দেয়া হবে, যাতে সঠিক সময়ের মধ্যে কাজটি শেষ করা যায়। ফ্লাইওভার নির্মাণের জন্য জনদুর্ভোগ যাতে কম হয় সে দিকেই খেয়াল রাখা হবে। এই ফ্লাইওভারটি মগবাজার এলাকায় গিয়ে তিনতলা বিশিষ্ট হবে। ফ্লাইওভারের ৮টি লুপ থাকবে। বিভিন্ন দিক থেকে যানবাহন ফ্লাইওভারটি ব্যবহার করতে পারবে। এভাবেই ফ্লাইওভারটির ডিজাইন করা হয়েছে। বেশি যানজটপূর্ণ এলাকা দিয়ে ফ্লাইওভারটি নির্মাণ করা হচ্ছে। এ সব এলাকায় মানুষকে ঘণ্টার পর ঘণ্ট যানজটে বসে থাকতে হয়। এ কারণেই এলজিইডি মগবাজার-মৌচাক নামে ফ্লাইওভার প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছে।
এদিকে একটি সূত্র জানিয়েছে, মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভার প্রকল্পের মৌচাক অংশের নির্মাণ কাজ শুরুর আগেই অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। সর্বনিম্ন দরদাতাকে বাদ দিয়ে ২৬ কোটি টাকা বেশি দরের তৃতীয় সর্বোচ্চ দরদাতাকে নির্মাণ কাজ দেয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। গত বছরের ২৬ সেপ্টেম্বর ফ্লাইওভার প্রকল্পের দরপত্র আহ্বান করে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর (এলজিইডি)। এতে মৌচাক অংশের ডব্লিউ ফাইভ প্যাকেজের জন্য ছয়টি প্রতিষ্ঠান অংশ নেয়। একই বছরের ২৩ নবেম্বর ছিল দরপত্র জমার শেষ দিন। এর মধ্যে সর্বনিম্ন দরদাতা তমা কনস্ট্রাকশন লিমিটেড ভারতীয় কোম্পানি হরিশচন্দ্র ইন্ডিয়া লিমিটেডের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে টিসিএল-এইসিআইএল জেভি কোম্পানি নামে দরপত্রে অংশ নেয়। তারা ৩০৩ কোটি ৯৮ লাখ টাকা দর প্রস্তাব করে। এটি সর্বনিম্ন দর হিসেবে বিবেচিত হয়। এলজিআরডি মন্ত্রণালয় ও এলজিইডি কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে গঠিত দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে টিসিএল-এইসিআইএল জেভির নামে কার্যাদেশ দেয়ার সুপারিশ করে। এই সুপারিশের ফলে সৌদি ফান্ড ফর ডেভেলপমেন্টের (এসএফডি) বেশিরভাগ টাকাই এখানে খরচ হয়ে যাবে। তবে এসএফডি প্রকল্পের কনসালট্যান্ট নিয়োগ না করে দরপত্র মূল্যায়নের ব্যাপারে আপত্তি জানায় এবং কনসালট্যান্ট নিয়োগ করে দরপত্র পুনর্মূল্যায়নের প্রস্তাব পাঠায়। প্রকল্পের জন্য কনসালট্যান্ট নিয়োগ দেয় এলজিইডি।