সোনারগাঁও হোটেলে অবরোধ ছিল না। তবে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্রিকেটারদের জন্য স্বআরোপিত একটা অবরোধ বোধ হয় ছিল। নইলে দুপুর ১২টা পেরিয়ে গেলেও দলের কোনো ক্রিকেটার কেন সকালের নাশতা সারতে নিচে নামবেন না?
সিরিজের একমাত্র টি-টোয়েন্টি ম্যাচের আগের দিন হোটেলবন্দী শুধু নয়, নিজেদের পারলে রুমবন্দীই করে রাখে ক্যারিবীয়রা। কে জানে, অনুশীলনবিহীন দিনে হয়তো ভেতরের জ্বলুনিটা আরও ভালো করে উপলব্ধি করতে চেয়েছে তারা। ওয়ানডে সিরিজ হারের সব ক্ষোভ উগরে দিয়ে যদি টি-টোয়েন্টিতে ছারখার করে দেওয়া যায় বাংলাদেশকে! আগের রাতে ম্যাচ শেষে অধিনায়ক ড্যারেন স্যামিও সাবধান বাণী শুনিয়েছিলেন, ‘আমরা টি-টোয়েন্টির বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন। কাজেই সোমবার (আজ) আমরা ফিরে আসব এবং চ্যাম্পিয়নের মতোই খেলব। ওয়ানডে সিরিজের চেয়ে অবশ্যই অনেক ভালো খেলব আমরা।’
ওয়ানডে সিরিজের হার ক্যারিবীয় দলকে কতটা শোকস্তব্ধ করেছে সেটা মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে পরশু রাতেই দেখা গেছে। সংবাদ সম্মেলনে স্যামির মুখে স্বভাবসুলভ হাসি ছড়ানো থাকলেও তার আগে তাদের যেন মাঠ ছাড়তেও কষ্ট হচ্ছিল। আর মাঠ থেকে হোটেলে ফেরার পর তো নাকি সবার মন-মেজাজ এতটাই খারাপ ছিল যে, অটোগ্রাফ-শিকারি এক কিশোরকে পারলে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয় পথ থেকে। আমন্ত্রণ পেয়েও কেউ যোগ দিল না বাংলাদেশ দলের কেক কাটার উৎসবে। রাত পেরিয়ে যাওয়ার পরও সেই মন-মেজাজ ভালো হয়েছে বলে মনে হয়নি কাল। হোটেলে সংবাদকর্মীদের ভিড় সহ্য হলো না পোলার্ড-পেরমলদের। নিরাপত্তাকর্মীদের কাছে এ নিয়ে অভিযোগ জানিয়ে বসলেন তাঁরা।
হতাশা-ক্ষোভ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলকে আজ কতটা জাগিয়ে তুলবে কে জানে, তবে বাংলাদেশ দল জেগেই আছে। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পারফম্যান্স খুব ভালো না হলেও বিশ্বকাপ এবং বিশ্বকাপের আগে আনুষ্ঠানিক-অনানুষ্ঠানিক মিলিয়ে ১৯টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছে তারা। তা ছাড়া বাংলাদেশে ওয়েস্ট ইন্ডিজের আগের সফরে বাংলাদেশ দল মিশন শুরুই করেছিল তাদের টি-টোয়েন্টিতে হারিয়েই। এবার তো তার চেয়েও বড় সাফল্য নিয়ে মুখোমুখি হওয়া যাচ্ছে ক্রিস গেইলদের। ওয়ানডে সিরিজ জয় থেকে পাওয়া আত্মবিশ্বাস টি-টোয়েন্টিতে নিশ্চিতভাবেই বাড়তি অনুপ্রেরণা হবে মুশফিকুর রহিমের দলের। পরশু ম্যাচ শেষে এই ধারাবাহিকতা ধরে রাখার প্রতিজ্ঞাই শুনিয়েছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক, ‘আমরা ওয়ানডেটা টেস্ট ও টি-টোয়েন্টির চেয়ে ভালো খেলি। তবে এক বছর ধরে আমরা ধারাবাহিকভাবে ভালো খেলছি। পরের ম্যাচেও সে ধারা অব্যাহত রাখতে চাই।’
মুশফিকের এই লক্ষ্য পূরণে ছোট্ট একটা বাধা মাশরাফি বিন মুর্তজার চোট। ঊরুর মাংশপেশির চোটের কারণে শেষ ওয়ানডেটা খেলেননি মাশরাফি। মুশফিকের দেওয়া তথ্যমতে বিশ্রাম প্রয়োজন অন্তত তিন সপ্তাহ। এর আগে খেলার ঝুঁকি নিলে চোটটা আরও বাড়ার শঙ্কা থাকে। তবে ম্যাচটা টি-টোয়েন্টি বলে আজ ঝুঁকিটা নিতেও পারে টিম ম্যানেজমেন্ট। কাল রাতে মাশরাফিই বলছিলেন, ‘ব্যথা এখন কম। জানি না ঝুঁকিটা নেব কি না। কাল (আজ) ম্যাচের আগেই ঠিক হবে সবকিছু।’ শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে আজ ম্যাচ শুরু হবে সন্ধ্যা ছয়টায়। টিম মিটিংটা হবে তার আগে হোটেলে। ম্যাচের একাদশ ঠিক হওয়ার কথা ওই মিটিংয়েই।
অবশ্য মাশরাফি না খেলেও দলের জয়ে রাখতে পারেন বড় ভূমিকা। ড্রেসিংরুমে সতীর্থদের অনুপ্রাণিত করার অসাধারণ এক গুণ আছে তাঁর। পরশুর ম্যাচে সেটা দেখে রীতিমতো বিস্মিত ভারপ্রাপ্ত কোচ শেন জার্গেনসেন। সে জন্য নাকি মাশরাফিকে আলাদা করে ধন্যবাদও দিয়েছেন। জার্গেনসেন নতুন দেখলেও মাশরাফির জন্য ব্যাপারটা নতুন নয়। মাঠের উজ্জ্বল পারফরম্যান্স ঐক্যের এই মন্ত্র ছড়িয়ে দিচ্ছে পুরো দলের মধ্যেই।
↧
আজও কি জয় দেখবে বাংলাদেশ ?
↧