Quantcast
Channel: প্রজন্ম ফোরাম
Viewing all articles
Browse latest Browse all 15150

মানুষ কি মানুষের জন্যে? সত্যি?

$
0
0

মানুষ মানুষের জন্যে,
জীবন জীবনের জন্যে।
একটু সহানুভুতি কি,
মানুষ পেতে পারে না?

গানটা শুনতেই ভালো, কিন্তু বাস্তবে গানের শেষের লাইনের জবাব কি? জবাব হচ্ছে না। মানুষ সহানুভুতি পেতে পারে না। কত সহানুভুতি দেখাবো রে ভাই? তলা বিহীন ঝুড়ির মতন এ দেশে যতই সহানুভুতি দেখাই না কেন, সেটাকে পূর্ণ করতে পারি না। প্রতি বছর শীত আসলেই এ জিনিসটা উপলব্ধি করি। কিন্তু তারপরও উত্তরবঙ্গের শীতার্ত মানুষগুলোর আকুতি উপেক্ষা করতে পারি না। অবশ্য সবাই আমার মতন আহাম্মক নয়। অনেকেই অনেক আগেই এসব ব্যাপার বুঝে গিয়েছেন। তাইতো তারা এই শীতের মধ্যে ফ্যাশন শোর আয়োজন করেন, যেখানে শীতের মধ্যে শাড়ি আর পাঞ্জাবী পরে ড়্যাম্পে মডেলরা হাটাহাটিও করে। এনাদের দেখে আমার বেশ মজাই লাগে। আমার দেশের বাড়ির কামলা আর বেটিদেরকে নিয়ে আসলেইতো হতো। মডেলদের মতন কষ্ট করে শীত সহ্য করতে হতো না। কারণ বাই-ডিফল্ট তাদের গায়ে শীতের দিনেও পাতলা জামাকাপড় থাকে। ব্যাটাদের চামড়া মনেহয় গন্ডারের মতন হয়ে গিয়েছে। তা না হলে সেই পাতলা কাপড়-চোপড় পরেই শীতের মধ্যে কাপতে কাপতে কিভাবে হাসিমুখে বলে যে, “ভাইও, একনা কম্বল দিলে ভাল হইল হয়! ”

আবার একদল লোক আছেন, যারা শীতকাল এলেই হলো, সওয়াব কামানোর জন্যে ওয়াজ মাহফিল আয়োজনের হিড়িক লাগিয়ে দেন। শীতকালে নাকি গা গরম করা ওয়াজ হয়, তাই ঠান্ডা লাগে না। আরে ভাই, মাহফিল আয়োজনের খরচ দিয়ে গরীব মানুষগুলোকে কিছু কম্বল কিনে দেন না। তারা তাহলে তাদের বাসায় বসেই গা গরম রাখতে পারবে। গা গরম করার জন্যে ঠান্ডার মধ্যে মাঠে ওয়াজ শুনতে আসতে হবে না।

সেদিন একটু বুদ্ধিমান হয়ে গিয়েছিলাম অন্যদের মতন। ভাবলাম একটা বারবিকিউ পার্টির আয়োজন করি। শীতের মধ্যে ভালোই লাগবে। একদিন পরে আবার আহাম্মক বনে গেলাম। আসলে ২০১০ এ কুড়িগ্রাম থেকে ঢাকা আসার সময় নাইটকোচে পাশে বসা এক দাদা আর নাতনীর কথা মনে পরে যাওয়ায় এই অবস্থা। নাতনীটা ছিলো অনেক ছোট। আমার বড় ভাতিজি টিনটিনের বয়সী হবে হয়তো। দেখলাম দাদা, নাতনীকে চাদর দিয়ে মুড়ে রেখেছে যাতে ঠান্ডা না লাগে। কিন্তু পিচ্চির পায়ে কোন মোজা নাই। পা খালি। আমি দাদাকে বললাম, “ছাওয়ার পাত ঠান্ডা লাগি যাবেতো। তোমার ওড়োন নাই?” দাদা কিছুটা শঙ্কিত আর কিছুটা লজ্জিত হয়ে জবাব দিয়েছিলো, “না লাগে ঠান্ডা।” সেদিন ছিলো মারাত্বক শীত। বাস ছাড়ার মিনিট পনেরো পরে পিচ্চি বমি করে অস্থির। পরে বাস থেকে নেমে অ্যাভোমিন কিনে খাওয়ানোর পরে পিচ্চির অবস্থা কিছুটা ভালো হয়েছিলো। দাদাটি অশ্রুসজল চোখে বলেছিলো, “কি করিম? পার মোজা কিনি দেবার পারং নাই। ” ঐ দাদা-নাতনীর কথা মনে পড়ে যাওয়ায় আবারও বুদ্ধিমান থেকে আহাম্মক বনে গেলাম। বারবিকিউ আয়োজনে যে খরচ হবে, তা দিয়ে কোন পিচ্চি নাতনী যদি তার পায়ের গরম উলেন মোজা পায় তাতে খারাপ কি?

সবাই যে বুদ্ধিমানদের দলে তা বলবো না। আমার ব্লগের “জাগো” (আরিফ ভাই), সিরাজুল লিটন সহ বেশ কয়েকজন আছেন যারা ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানোর মতন আহাম্মকদের দলে আছেন। “চাইলেই পারি” নামক একটা আহাম্মক গ্রুপ আছে, যারা আরিফ ভাইদের মতই একইভাবে ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়িয়ে বেড়ায়। এরকম অনেক আহাম্মকই আছেন, যাদের কারণে প্রতি বছর কিছু ফুটফুটে বাচ্চার পায়ের মোজা হয়, কিছু গরীব মায়ের গায়ে সোয়েটার চড়ে, কিছু দুঃস্থ বাবার হাতে যায় তার পরিবারের জন্যে কম্বল। আরিফ ভাই আর ‘চাইলেই পারি’ এদের কথা আলাদাভাবে বললাম, কারণ হচ্ছে এরা বনের মোষ তাড়াতে তাড়াতে, কুড়িগ্রামে আমার গ্রামের বাড়ির মতন প্রত্যন্ত এলাকাতেও হাজির হয়েছিলো। আরও কিছু নতুন মানুষ ইচ্ছা পোষণ করেছেন, আমাদের এই সহানুভুতি দেখানোর আহাম্মকিতে যোগ দেয়ার জন্যে। চাইলে আপনারাও পারেন আমাদের এই আহাম্মকিতে সামিল হতে। এ বছরে আমরা কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ি থানার অধীনে থাকা প্রত্যন্ত চরাঞ্চলে অভিযানে নামবো। চাইলে আসতে পারেন আমাদের সাথে শীতার্ত মানুষগুলোর পাশে দাড়াতে। না চাইলেও সমস্যা নাই। হতাশ হবো না। কারণ,
‘ যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে, তবে একলা চলো রে......


Viewing all articles
Browse latest Browse all 15150

Trending Articles



<script src="https://jsc.adskeeper.com/r/s/rssing.com.1596347.js" async> </script>