Quantcast
Channel: প্রজন্ম ফোরাম
Viewing all articles
Browse latest Browse all 15150

কাবাঘরের সংষ্কারের ইতিহাস।

$
0
0
দ্যা ডেডলক লিখেছেন:

কাবা শরীফের ছাদ কি দিয়ে ঢালাই/বানানো হয়েছে ? যার জন্য ২০০০ হাজার বছরেও কিছু হয় নাই। আর কাবা শরীফের আয়তন কত স্কয়ার ফিট ?


ডেডলক ভাইএর "ঈশ্বর ও ধর্ম' এবং আপনার বিশ্বাস" টপিকে করা একটা কমেন্টের পরিপেক্ষিতে এই টপিকের অবতারনা।আমারও প্রশ্ন ছিল কাবা শরীফ কিভাবে তৈরী যে ইহা ২০০০ বছর ধরে একই রকম আছে কোন রকম আছে। কিছুটা গুগলিং করে দেখি আমরা যে কাবাঘরের সাথে পরিচিত তা আদতে এই রুপে ছিল না।

আমরা যে কাবা শরীফ বা আল্লাহর ঘর বলে থাকি তা বাইতুল আতিক বা বাইতুল হারাম নামেও পরিচিত সবার কাছে।এর আদী নাম ছিল বাক্কায়।
http://upload.wikimedia.org/wikipedia/commons/e/e2/Kabaa.jpg

মক্কা শহরের অবস্থিত ল্যাটিচুড ২১ থেকে ২৫ ডিগ্রি নর্থ এবং লংগিচুড ৩৯ থেকে ৪৯ ডিগ্রি ইষ্ট সংযোগ স্থলে কাবা অবস্থিত। সমুদ্রপৃষ্টের ১০০০ ফুট উচ্চতায় শক্ত গ্রানাইট পাথরের ভিত্তির উপর দাড়িয়ে। কাবার বর্তমান উচ্চতা ৩৯ ফুট ৬ ইন্চি। আর ইহা আয়তন ৬২৭ স্কয়ার ফিট। ভিতরকার আয়তন ১৩×৯ মিটার। কাবার দেয়াল ১ মিটার চওড়া। আর মেঝে হাজীরা যেখানে তাওয়াফ করে তার থেকে ২.২ মিটার উচু। ছাদ দুই প্রস্তর কাঠের তৈরী যা স্টেইনলেস স্টিল দিয়ে বাধানো। আর দেয়াল সম্পুর্নটাই পাথরের।

http://upload.wikimedia.org/wikipedia/commons/b/ba/Kaaba-plan.svg

ঐতিহাসিক মতে কাবাশরীফ পাচ থেকে ১২ বার পূর্ননির্মিত হয়েছিল। নবী হজরত ইব্রাহীম আ: এর সময় কাবার দৈর্ঘ ও উচ্চতা ছিল ভিন্ন। আদিতে কাবা আয়তকার ছিল
-পশ্চিমদিকের দেয়ালের দৈর্ঘ্য ছিল ৪৮ ফিট ৬ ইন্চি 
-হাতিমের দিকটা ছিল ৩৩ ফুট
-কালো পাথর যেদিকটায় আছে তার ছিল ৩০ ফুট ও
-পুর্বদিকটায় ছিল ৪৬.৫ ফুট

http://upload.wikimedia.org/wikipedia/en/d/da/Kaba01.jpg


হযরতমহাম্মদ নবীকরীম সা: এর নবুয়তের পুর্বেই কোরাইশরা কাবার একবার সংস্কার করেছিল। এটার ইতিহার সকলেই জানেন। তারপরও সংক্ষেপে বলি। একবার প্রবল বন্যায় কাবা ঘরের দেয়াল ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছিল। কোরাইশ বংশের ৪ গোত্রের লোকেরা মিলে এটা পুর্ননির্মান করেন। কিন্তু গোল বাধে কে হাজরে আসওয়াদ বা কালো পাথর স্থাপন করবেন তা নিয়ে। ৪ গোত্রই এ্ পবিত্র কাজের দাবীদার। এ নিয়ে কলহ যখন চরমে তখন কোরাইশ বংশের প্রবীনতম ব্যাক্তি আবু উমায়রাহ প্রস্তাব করলো যে ব্যক্তি পরের দিন সকালে প্রথম মসজিদে প্রবেশ করবে সেই যে গোত্রের নাম প্রস্তাব করবে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। যথারীতি হজরত মহাম্মদ (সা:) ছিলেন সেই প্রথম ব্যাক্তি। আর তার প্রস্তাবনা অনুসারে একটি চাদরে চার গোত্রের প্রধান এই পাথরকে নিয়ে কাবার কাছে নিয়ে যান। নবী মহাম্মদ (সা:) সেই পাথর কাবাতে স্থাপন করেন। এখানে উল্লেখ্য যে কোরাইশ গোত্রের ফান্ড সল্পতার দরুন তখনকার মুল কাবাকে কিছুটা ছোট করে ফেলা হয়। যার দরুন এই প্রথম কাবা চৌকনা বা ঘনকাকৃতির আকার ধারন করে। আর যে অংশটা বাদ পড়ের যায় তা বর্তমানে হাতিম বলে পরিচিত।


হিজরী ৬৪ সনের (৬৮৩ খ্রীষ্টাব্দ) মহরম মাসে ইয়াজিদ বিন মুয়াবিয়ার নির্দেশে ইবনু যুবায়েরের সাথে যুব্ধের প্রাক্কালে সিরিয়ান আর্মি দ্বারা কাবা সম্পুর্ন ভাবে ধ্বংস হয়ে যায়। পরর্বতী হজ্বের পুর্বেই আব্দুল্লাহ ইবনে আয-যুবাইর কাবা পুনরায় এটা তৈরী করেন। আব্দুল্লাহর ইচ্ছা ছিল রসূল সা: কাবাকে যে রুপে দেখতে চেয়েছিলেন ঠিক সেভাবে তৈরী করবেন। এ ব্যাপারে একটি হাদীস আছে। ইবনে আজ-জুবায়ের বলেন " আমি আয়শা(রা:) কাছে শুনেছিলাম, রসুল (সা:) বলেন " যদি না সম্প্রতি মানুষ অজ্ঞতা(অবিশ্বাস) পরিত্যাগ করত, এবং আমার হাতে যদি কাবাকে পূর্ন:নির্মানে পযার্প্ত বিধান থাকতো, তাহলে আমি হিজরের দিকটায় আরো পাচ হাত সম্প্রসারিত করতাম। উপরোন্তু আমি আরো ২ টি দরজা তৈরী করতাম, যার একদিকে হাজীরা প্রবেশ করতো আর অন্যটা দিয়ে বের হত।" (সহি বুখারী)

"I heard Aisha (may Allah be pleased with her) say, The Prophet (sallallahu alaiyhi wassallam) said: "If your people had not quite recently abandoned the Ignorance (Unbelief), and if I had sufficient provisions to rebuild it [the kaaba], I would have added five cubits to it from the Hijr. Also, I would make two doors; one for people to enter therein and the other to exit." (Bukhari).

আব্দুল্লাহ ইবনে আয-যুবাইর কাবার ভিতরে ৬ টি পিলারের বদলে সুগন্ধী কাঠের ৩টি পিলার স্থাপন করেন। নির্মানকালে তিনি পুর্ব ও পশ্চিম দিক মুখ করে ২টি ভুমি সমতল দরজা বসানো হয়। হাতিম (কাবার নিকটবর্তী নিচু চন্দ্রাকার দেয়াল) অংশও এর সাথে যুক্ত করা হয়। সেই সাথে ছাদের কাছাকাছি একটা জানালা লাগানো হয় যাতে আলো বাতাস প্রবেশ করতে পারে। আর আরো নয়হাত যোগ করে মোট বিশ হাত উচু করা হয়।


রসুলের স্বপ্ন বা ইচ্ছা অনুরুপে তৈরী এই কাবা ঘরের নতুন কাঠামো শুধুমাত্র ১০ বছর টিকে ছিল।হিজরী ৭৪ (৬৯৩ খ্রীষ্টাব্দ) আব্দুল মালিক ইবনে মারওয়ান দামেস্কের আধিপত্ত গ্রহন করেই হাজ্জাজ বিন ইউসুফকে মক্কা দখলের পাঠান। হাজ্জাজ বিন ইউসুফ আব্দুল্লাহ ইবনে আয-যুবাইরকে হত্যা করে মক্কা দখল করেন। আর কাবা গৃহকে আবার কোরাইশদের তৈরী আগের রুপে ফিরিয়ে নিয়ে যান। তিনি হাতিমকে কাবাগৃহ থেকে পৃথক করেন। পশ্চিমদিকার দরজা তিনি চিরতরে বন্ধ করে দেন, আর পর্বেরকার দরজা আরো উচু করেন।

ছোটখাটো সংষ্কার ছাড়া এরপর প্রায় ৯০০ বছর কাবাঘর প্রায় অবিকৃত থেকে যায়। ১০৩৯ হিজরীতে (১৬২৯ খ্রীষ্টাব্দ) প্রবল বন্যা হয় মক্কায়। এতে কাবাঘরের পুর্ব ও পশ্চিমের দেয়াল ধসে যায়। সুলতান মুরাদ এই কাবা গৃহের সংস্কার করেন। এবং কোরাইশদের তৈরী রীতিই অব্যহত রাখেন।

প্রায় ৪০০ বছরে কিছু ছোটখাট সংস্কার ছাড়া কাবাঘরের কোন পরিবর্তন হয়নি। শেষের দিকে সৌদী বাদশা ১৯৯৬ সালে মে মাসে কাবাকে পুর্ন: নির্মানে হাত দেন। কাবা শরীফের পুরানো পাথর বাদে সব কিছুই পরিবর্তন করা হয়। এর পিলার, কাঠের তৈরী ছাদ সবকিছুই। বর্তমান কাবাঘরের ভিতরে দুইটি পিলার(কারো মতে ৩টি), একটি টেবিল যেখানে সুগন্ধী রাখা হয়, দুইটি হারিকেন টাইপের বাতি আছে। আর দেয়াল ও ফ্লোর মার্বেল পাথরের তৈরী। এই হল কাবা সষ্কারের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস।

পুনশ্চ: কিছু প্রশ্ন আমার এখনো থেকে গেছে। আমরা ছোটবেলায় পড়েছি চতুর্থ আকাশে আকীক পাথরে নির্মিত 'বায়তুল মা'মূর' নামক একটি পবিত্র মসজিদ রয়েছে । ফেরেশ্তাগণ এ মসজিদে আল্লাহতায়ালার ইবাদত করেন । মানব জাতির পিতা হযরত আদম (আঃ) ইবাদতের জন্য এ পৃথিবীতে একটি মসজিদ নির্মাণের জন্য আল্লাহর নিকট দোয়া করেন । আল্লাহতায়ালার হুকুমে ফেরেশ্তাগণ 'বায়তূল মা'মুরের' নুরানী নকশা পৃথিবীর মধ্যস্হলে ফেলে দেন । অতঃপর হযরত আদম (আঃ) এবং উনার ছেলে হযরত শীছ (আঃ) ঐ নকশার উপর ভিত্তি করে ঐ স্হানে একটি মসজিদ নির্মাণ করেন । এটাই আমাদের বায়তুল্লাহ বা আল্লাহর ঘর । তাহলে এই নকশার বাড়ংবার পরিবর্তন কিভাবে বাইতূল মা'মুরের নকশা আনুসরন করে।

সুত্র:
http://www.missionislam.com/knowledge/kaaba.htm
http://www.techtunes.com.bd/other/tune-id/24876
http://jamiat.org.za/blog/a-short-history-of-the-kabah/
http://en.wikipedia.org/wiki/Kaaba


Viewing all articles
Browse latest Browse all 15150

Trending Articles