অনেক অারোচনা সমালোচনা হল নিেচর লেখাটি পড়ে অনেকটাই সংকিত । অাপনারা ো প ড়েন কি বুঝলেন একটু অাোয়াজ িদয়েন ।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী: আত্বঘাতী পথ চলা।
লিখেছেন ziaul Haque ২১ জানুয়ারী ২০১২, বিকেল ০৪:১৬
পরের পোস্ট >>
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী স¤প্রতি একটা সংবাদ সম্মেলন করেছে। দেশে বিদেশে তা বিশদভাবে প্রচারও হয়েছে। এটা দেশের জন্য সর্বনাশ ডেকে আনবে। এরকম হঠকারী পদক্ষেপ চিন্তা ভাবনা না করেই নেয়া হয়নি। এটা অনেক গভীর ও সুদুর প্রসারী পরিকল্পনা ও ষড়যন্ত্রের ফসল।
জাতিসঙ্ঘ মিশন’সহ আন্তর্জাতিক, আঞ্চলিক ও আভ্যন্তরীণ যে কোন মিশনে এরপর থেকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী হবে বিতর্কিত, প্রশ্নের সম্মুখীন। জাতিসংঘ মিশনে কর্মরত বাংলাদেশ সেনাবহিনীর কোন সদস্যকে বিদেশের মাটিতে, কিংবা দেশে আসা-যাওয়ার সময়, বা দেশের মাটিতেই কোন ছল ছুতায় স্থানীয় বা আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী গ্র“পের সাথে জড়িত করে ‘গোপন সুত্রে’র বরাতে দেশী বিদেশী মিডিয়ায় দেয়া হবে “ব্রেকিং নিউজ”!
বাংলাদেশ যতই তার সেনা সদস্যের ব্যাপারে সাফাই গাইবার চেষ্টা করুক না কেন, তার কোন কথাই হালে পানি পাবে না। কারণ, তার দেশের সেনাবাহিনীর মধ্যে যে ‘উগ্র মৌলবাদী’ ‘ধর্মান্ধ’ কর্মকর্তা রয়েছে, তাদের সাথে যে সন্ত্রাসী গোষ্ঠি, বা উগ্র মৌলবাদী গোষ্ঠি হিজবুত তাহরীরের সংশ্লিষ্ঠতা রয়েছে, তাতো একটা ‘প্রতিষ্ঠিত বাস্তবতা’।
এই ‘প্রতিষ্ঠিত বাস্তবতা’রই প্রমাণ হলো, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সংবাদ সম্মেলনটি। যেখানে তারা নিজেরাই স্বীকার করছে, তাদের মধ্যে ‘উগ্র ধর্মান্ধ’ গোষ্ঠি রয়েছে, যারা হিজবুত তাহরীরের সাথে সম্পর্ক রাখে, তাদের প্রতি সহানুভূতিশীল, এবং তাদের কর্মকান্ড বাস্তবায়নে সহযোগীতাও করে।
প্রধানমন্ত্রী তনয় বেশ ক’বৎসর পূর্বে যে গবেষণাপত্র (!) তৈরী এবং আন্তর্জাতিক পত্রিকায় প্রকাশ করেছিলেন, সেখানে একথাটাই বলা হয়েছিল। এখন তার সেই গবেষণাটাই প্রতিষ্ঠিত হল। গবেষকের মা, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী পদে অধিষ্ঠিত থাকাবস্থায় গবেষণার ফলাফলটি শতকরা একশত ভাগ সত্য বলেই প্রমাণিত হলো! এটা কি কেবলই কাকতালীয় ঘটনা?
'Stemming the rise of Islamic Extremism in Bangladesh' শিরোনামে প্রধানমন্ত্রী তনয় জয় ও তার সহযোগী জনৈক Carl J. Ciovacco যৌথভাবে লিখেছিলেন; "Islamic extremism is also on the rise in Bangladesh because of the growing numbers of Islamists in the military. The Islamists cleverly began growing their numbers within the Army by training for the Army Entrance Exams at madrassas.”
আরও লিখেছিলেন “only 5 percent of military recruits came from madrasses in 2001. By 2006, at the end of the BNP's reign, madrassas supplied nearly 35 percent of the Army recruits.”
ক্ষোভটা কোথায় তা বুঝতে অসুবিধা হবার কথা নয়। বিষয়টা পরিস্কার। অতএব সংবাদ সম্মেলনের উদ্দেশ্যটা বুঝতেও অসুবিধা হয় না। এখন ‘ইসলামপন্থী’ তকমা দিয়ে সেনাবাহিনী থেকে অফিসার বের করা হবে। এ সরকার ক্ষমতায় আসার সাথে সাথেই সেনাবহিনীকে এক দফা ‘সাইজ’ করা হয়েছে। সাতান্ন জন চৌকষ অফিসারকে শেষ করার মাধ্যমে।
আওয়ামি লীগের প্রভাবশালী নেতা রেলমন্ত্রী সুরঞ্জিত সেন ইতোমধ্যেই বলেছেন ‘জামাত ও বি এনপি জোট ব্যর্থ সেনা অভূত্থানে জড়িত’। জাতিয় প্রেস ক্লাবে আসাদ দিবস উপলক্ষে আলোচনায় প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি গত শুক্রবার এ কথা বলেন। তার মানে, বিএনপি-জামাত জোট দমনের চলমান প্রক্রিয়ায় আরও একটা নতুন মাত্রা যোগ হচ্ছে।
বাংলাদেশের মত একটা দেশের জন্য আজকের বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে এটা যে কতটা মারাত্বক আর আত্বঘাতী তা বুঝতে বিশেষ বেগ পেতে হয় না। সেনাবাহিনীর এ সংবাদ সম্মেলনটা এক কথায় বিরল, অভাবিতপূর্ব ঘটনা। তৃতিয় বিশ্বের দেশে দেশে এরকম অনাকাংখিত ঘটনা ঘটে। পাকিস্থান, তুরস্ক, মিশর সুদান, নাইজেরিয়া সহ অনেক দেশেই এরকম ঘটনা ঘটেছে, আগামিতেও ঘটতে পারে। কিন্তু সেসব দেশে সেনাবাহিনীর নিজেদের দ্বারা এরকম আত্বঘাতী সংবাদ সম্মেলন করার ঘটনা ঘটেনি। সেটাই বাংলাদেশের সেনাবাহিনীকে দিয়ে করালো স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকা প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়।
মাত্র ক’দিন আগেই এই্ সেনাবাহিনী দিয়েই সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়েছে বিরোধী দলীয় নেত্রীর বক্তব্যের প্রতিবাদে। দায়িত্বটি ছিল প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের, কিন্তু সামনে ঠেলা হয়েছে সেনাবাহিনীকে। সেখানে ভাষা ব্যবহারের ক্ষেত্রে কোনরকম ভব্যতা, শালীনতা বজায় রাখা হয় নি। প্রধান বিরোধি দলীয় নেত্রী, তিনবারের নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী এবং একজন সাবেক প্রেসিডেন্টের স্ত্রী’র বক্তব্যের জবাব যে ভাষায় দেওয়ানো হয়েছে, তা দেখে সকলেই বুঝেছেন, সেটা আসলে চরম মূখরা ও ঝগড়াটে প্রধানমন্ত্রী’র বক্তব্য, বলানো হচ্ছে সেনাবাহিনীকে দিয়ে। এ ভাবেই বিতর্কিত করা হয়েছে তাদের।
আর এরও পরে একটা সংবাদ প্রকাশ করার ঘটনায় একইরকম বিবৃতি দেওয়ানো হয়েছে ‘আমার দেশ’ পত্রিকার বিরুদ্ধে সেনাবাহিনীকে দিয়ে, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়কে আড়ালে রেখে। সেনাবাহিনী কর্তৃক আহুত সংবাদ সম্মেলনে পত্রিকাটিকে আমন্ত্রণই করা হয়নি। একটি জাতিয় পত্রিকাকে এ ভাবে সংবাদ সম্মেলনের বাইরে রাখাটাই প্রমাণ করে যে, সেনাবাহিনী বর্তমান সরকার ও ‘আমার দেশ’ পত্রিকার মধ্যে চলমান দ্বন্দে একটা পক্ষ নিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী সেনাবাহিনীকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে, বিরোধি দল নিপীড়নে ব্যবহার করছেন, একই সাথে তাঁর ‘দুই চোখের বীষ’ বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছেন। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী তাঁর কাছে কতটা প্রিয়, তা একটি ঘটনা থেকে জানা যেতে পারে।
৩রা মে, ১৯৮৫’র এক পড়ন্ত বিকেলে, ধানমন্ডী ৩২ নম্বর বাড়িতে কয়েকজন’সহ খোশগল্পে মশগুল শেখ হাসিনা। গল্পের এক পর্যায়ে ’৭১ এর মুক্তিযুদ্ধ, পাকিস্থানী ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কথা উঠলে তাদের প্রসঙ্গে শেখ হাসিনার মন্তব্য;
‘এটা একটা সেনাবাহিনী হলো? এটা একটা বর্বর, নরপিশাচ, উশৃংখল, লোভী, বেয়াদব, বাহিনী। এ বাহিনীর আনুগত্য নেই, শৃংখলা নেই, মানবিকতা নেই, মান্যগণ্য নেই, নেই দেশপ্রেম। এটা একটা দেশদ্রোহী অসভ্য হায়েনার বাহিনী। তোমরা পাকিস্থানী সেনাবাহিনীর কথা বল, সারা বিশ্বে পাকিস্থানী সেনাবাহিনীর মত এত ভদ্র, নম্র, স্বৎ বিনয়ী এবং আনূগত্যশীল খুঁজে পাওয়া যাবে না। পাকিস্থানী সেনাবাহিনীর মানবিকতাবোধের কোন তুলনাই চলে না, কি অসম্ভব সভ্য আর নম্র তারা!
২৫শে মার্চের রাতে তারা (পাকিস্থানি বাহিনী) এলো, এসে আব্বাকে (বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানকে) সেলুট করল, মা’কে সেলুট করল, আমাকেও সেলুট করল। সেলুট করে তারা বলল স্যার, আমরা এসেছি শুধু আপনাদেরকে নিরাপত্তা দেবার জন্য। অন্য কোন কিছুর জন্য নয়। আপনারা যখন খুশি, যেখানে খুশি যেতে পারবেন। যে কেউ আপনার এখানে আসতে পারবে। আমরা শুধু আপনাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করব। আপনারা বাইরে গেলে আপনাদের নিরাপত্তার জন্য আমরা আপনাদের সঙ্গে যাব। কেউ আপনাদের এখানে এলে আমরা তাকে ভালভাবে তল্লাশি করে তারপরে ঢুকতে দেব। এসবই করা হবে আপনাদের নিরাপত্তার জন্য। সত্যিই পাকিস্থানী সেনাবাহিনী যা করেছে তা সম্পূর্ণ আমাদের নিরাপত্তার জন্যই করেছে। ২৬শে মার্চ দুপুরে যখন আব্বাকে (শেখ মুজিব) পাকিস্থান আর্মিরা নিয়ে যায়, তখন জেনারেল টিক্কা খান নিজে এসে আব্বাকে ও মা’কে সেলুট দিয়ে আদবের সাথে দাঁড়িয়ে বিনয়ের সাথে আব্বাকে (শেখ মুজিব) বলে, ‘স্যার আপনাকে প্রেসিডেন্ট ইয়াহইয়া খান আলোচনার জন্য নিয়ে যেতে বলেছেন। আমি আপানকে নিয়ে যেতে এসেছি। আপনাকে নেওয়ার জন্য বিশেষ বিমান তৈরী (স্পেশাল ফ্লাইট রেডি)। আপনি তৈরী হয়ে নেন, এবং আপনি ইচ্ছা করলে ম্যাডাম (বেগম মুজিব)সহ যে কাউকে সংগে নিতে পারেন।’ আব্বা মা’র সঙ্গে আলোচনা করে একাই গেলেন। পাকিস্থান আর্মি যতদিন ডিউটি করেছে এসে প্রথমেই সেলুট করেছে।
শুধু তাই নয়, আমার দাদীর সামান্য জ্বর হয়েছিল পাকিস্থানীরা হেলিকপ্টার করে টুঙ্গিপাড়া থেকে দাদীকে ঢাকা এনে পি জি হাসপাতালে চিকিৎসা করিয়েছে। জয় (শেখ হাসিনার ছেলে) তখন পেটে। আমাকে প্রতি সপ্তাহে সি এম এইচ (সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল) নিয়ে চেক আপ করাত। জয় হওয়ার এক মাস আগে আমাকে সি এম এইচ-এ ভর্তি করিয়েছে। ’৭১ সালে জয় জন্ম হওয়ার পর পাকিস্থানী আর্মিরা খুশীতে মিষ্টি বাটোয়ারা করেছে। এবং জয় হওয়ার সমস্ত খরচ পাকিস্থানীরাই বহন করেছে। আমরা যেখানে খুশী যেতাম। পাকিস্থানীরা দুই জিপ করে আমাদের সাথে যেত। নিরাপত্তার জন্য পাহারা দিত।
আর বাংলাদেশের আর্মিরা জানোয়ারের দল, অমানুষের দল, এই অমানুষ জানোয়ারেরা আমার বাবা মা, ভাই সবাইকে মেরেছে-এদের যেন ধ্বংস হয়।” (মতিউর রহমান রেন্টুর ‘আমার ফাঁসি চাই’ বই এর ৯৮-৯৯ পৃষ্ঠা দ্রষ্টব্য।)
শেখ হাসিনা যখন প্রধানমন্ত্রী ছিলেন না, তখন তিনি এই সেনাবাহিনীর ধ্বংস কামনা করেছেন। তাঁর হাতে ক্ষমতা ছিল না, তাই বদদোয়া করাই ছিল সম্বল! আজ তিনি ক্ষমতাসীন, অনেক কিছুই করতে পারেন তারা বাবা-মা-ভাই সবাইকে মেরে ফেলেছে যে জানোয়ারের দল (তাঁর ভাষায়), তাদের ধ্বংসে। আর সেটাই তিনি করে দেখাচ্ছেন।