আজ ঘুম থেকে উঠতে দেরি হয়ে গেলো প্রিয়মের । উঠেই মোবাইলের ঘড়িটার দিকে তাকিয়েই বিকট চিৎকার করে উঠলো। সকাল ৮ টা বাজে । যদিও সচরাচর ১০ টার আগে ঘুম থেকে উঠা হয় না তবুও অন্যদিনের তুলনায় সময়টা একটু বেশী কারন ১০ টায় একটি কল সেন্টারে পার্ট-টাইম চাকুরির জন্য ভাইবা দিতে হবে। হাতে আছে মাত্র ২ ঘন্টা এরই মধ্যে গুলশানের অফিসে যেতে হবে ঢাকার যে জ্যামের রাস্তা নিউমার্কেট থেকে কতক্ষন যে লাগে সে ভাবতেই মনটা খারাফ হয়ে গেলো তার। ব্রাশ ,শেভ এবং গোসল করা এখনো বাঁকি সাথে প্রকৃতির ডাকেও সাড়া দিতে হবে। লাফ দিয়ে বিছানা থেকে নেমেই লকার থেকে ব্রাশে পেস্ট নিয়ে বাথরুমের দিকে দিলো দৌড় দিলো। ভাগ্য অনেক ভালো যে কোন ভিড় ছিলো না বাথরুমে একেবারে সরাসরি এন্ট্রি , ভাগ্য অনেক ভালো এজন্য ই বলা কারন ছাত্র হোস্টেলে ১-২ জনের সিরিয়াল পাওয়াটা ভাগ্যের ব্যাপার আর সরাসরি ঢুকতে পারাতো মহাভাগ্যের ব্যাপার ।
প্রিয়ম ভাইবার জন্য তৈরি হতে থাকুক ততক্ষনে তার পরিচয় টা দিয়ে নিচ্ছি কি বলেন?
প্রিয়মের আসল নাম মো: মোকলেসুর রহমান । এ নামটি এক পীর সাহেবের দেওয়া। পরপর দুটি মেয়ে হবার পর প্রিয়মের জন্ম তাই তার বাবা অনেক খুশি হয়ে বাড়ির সামনের পীর সাহেব কে অনুরোধ করলেন তাঁর একমাত্র ছেলের জন্য সুন্দর একটা নাম রাখার জন্য। পীর সাহেব এ নামটি রাখলেন। নামটি প্রিয়মের একদম পছন্দ না। তার মত এত ফর্সা হ্যান্ডসাম একটা ছেলের নাম মোকলেস সে এটা কিছুতেই মানতে পারে না , তারপরও তার সার্টিফিকেটে এ নামটি ই জ্বলজ্বল করে। দু এক জন কাছের বন্ধু ছাড়া এ নাম কেউ জানে না। সে কাউকে বলেও না । প্রিয়ম নামটা তার নিজের দেওয়া। পীরসাহেবের দেওয়া নামটি কাউকে বলে না বলে আমার খারাফ লাগে না। কেন সে অন্যের দেওয়া অপছন্দনীয় একটা নাম বহন করেবে শুধু শুধু !!
নাস্তা করার সময় নেই বলে আজ নাস্তা করা হলনা তার । দ্রুত জামা কাপড় পাল্টিয়ে সদ্য বানানো ফরমাল পেন্ট সার্ট এবং গত রাতে বন্ধুর কাছ থেকে ধার করা বেল্ট ,সু ও পরে ইন করে নিলো। রেডি হয়ে নিচে নেমে হোস্টেলের বড় আয়নায় নিজেকে দেখছে , দ্রুত শেভ করতে গিয়ে গালের কিছু অংশ কেটে ফেলেছে এখনো হালকা পানি রক্ত বের হচ্ছে গালে হাত তাই বন্ধ করার চেষ্টা করছে। তাকে আজ অদ্ভত সুন্দর লাগছে অফ-হোয়াইট সার্ট ,ঘিয়ে রংয়ের প্যান্ট, কালো রঙের বেল্ট-সু এ ইন করা অবস্থায় ।
কাটা জায়গায় রুমালটা চেপে ধরা অবস্থায় দৌড় দিলো মেইন রোডের উদ্দেশ্যে । তার হোস্টেল থেকে মেইন রোডে হেঁটে যেতে ৫ মিনিটের মত লাগে। হাঁপাতে হাপাঁতে কলেজের সামনে মেইন রোডে এসে লাফ দিয়ে চলন্ত বাসে উঠে গেল। এত দ্রুত বাসের সাথে পাল্লা দিয়ে উঠলো যে হাত একটু ফসকে গেলেই সোজা চাঁকার নিচে চলে যেত।
হেলপার সহ আসে পাশের যাত্রীরা ধমক দিয়ে বললো; এভাবে কেউ চলন্ত বাসে উঠে নাকি?
প্রিয়ম হাঁপাতে হাপাঁতে হেলপারকে বললো ; মামা খুব আরজেন্ট।
হেলপার বললো; হুমন বুজলাম খুব আরজেন্ট উপরে যাইবার শখ !!
কিছু না বলে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে এসে আসে পাশে সিট খালি পাওয়া যায় কিনা তা দেখতে পুরো বাসে একবার চোখ বুলিয়ে দেখলো কোনো সিট ফাঁকা নেই । সবাই এখনো তার দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে তাঁকিয়ে আছে দেখে ভয় লাগলো তার। সে দ্রুত চোখ নিচে নামিয়ে নিলো কারন এত অগ্নিদৃষ্টি সহ্য করা অসম্ভব বেশীক্ষন তাকালে ভষ্ম হয়ে যাওয়ার ও সমুহ সম্ভাবনা আছে।
চোখ নামিয়ে নিতে গিয়েই চোখ পড়লো তার থেকে ঠিক দু সিট পেছনের সিটটির দিকে , অদ্ভুত সুন্দর একটা মেয়ে বসেআছে।
মেয়েটি ও তার দিকে তাকালো সে ঝট করে চোখ সরিয়ে ফেললো , মেয়েটি তার দিকে তাকালো বলে নয়, আসলে এত সুন্দরের দিকে বেশিক্ষন তাকানো যায় না তাকালে কেমন জানি মাথা ঝিম ধরে যায় , বুকের মধ্যে কেমন জানি শুন্যতা অনুভূত হয় তার............।(চলবে)
২য় কিস্তিতে পাবেন বাঁকিটুকু , যদি ভালো লেগে থাকে আর নাহলে এভাবেই মৃত্যু হবে এক নতুন গল্পকারের।
বি:দ্র: এটি আমার প্রথম লিখা প্রথম কোন সম্পুর্ণ গল্প । অনেক গুলো অর্ধেক লিখে খাতায় ফেলে রেখেছি শেষ করা হয় নি। এটা হয়ত সাহিত্যের কাতারে হয়তো পড়বে না !! আসলে আমি একটা গল্পের কথক বা লেখক হবার চেষ্টা করছি ...
উৎসর্গ: আমি সাধারনত ছড়া-কবিতা লিখি, কিন্তু সে তা পড়তে খুব একটা পছন্দ করে বলে মনে হয়না না। আমি জানি সে সে গল্প পড়তে পছন্দ করে তাই এ গল্পটি লিখা।
আমাদের সাইফুল বিডি
এবং ফোরামের তার সবচেয়ে পছন্দের লেখক তার-ছেড়া-কাউয়া কে ।