একাত্তরের শহীদ বুদ্ধিজীবী ‘শহীদ সাবের’র জীবন ও জগৎ
কালাম আজাদ
“চিন্তাই কর্মের উদ্দেশ্য। যে চিন্তাকে কর্মের দিকে প্রেরণা দেয় না, সে পন্ডশ্রম। প্রবঞ্চনা মাত্র। অতএব চিন্তার সেবক যদি আমরা হয়ে থাকি, তবে কর্মেরও সেবক আমাদের হাতে হবে”। উক্তিটি মার্কসবাদের বাস্তবায়নকারী ভ. ই. লেনিনের। রাজবন্দী হিসাবে শহীদ সাবের জেলখানায় থাকাকালে তাঁর ডায়েরীতে লিখে রেখেছিলেন। তাঁর ডায়েরীতে এ উদ্ধৃতি দেখে বুঝা যায় শহীদ সাবের’র চিন্তাধারা কোন দিকে অগ্রসর হচ্ছিল; তিনি কেবল চিন্তা নয়, কর্মের সঙ্গেও যুক্ত হতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তিনি তা করতে পারেন নি। শহীদ সাবের’র সময় সমাজ বিপ্লবের অবস্থা অত্যন্ত নাজুক, মুসলিম লীগের দুর্দান্ড প্রতাপ, সমাজ বিপ্লবীদের ধরে ধরে জেল গারদে বন্দি করা হত। শহীদ সাবেরকেও বিপ্লবী সমাজতন্ত্রী ছাত্র ফেডারেশনের সাথে যুক্ত থাকায় জেলে পাঠানো হয়েছিল। শহীদ সাবের পযর্টন রাজধানী কক্সবাজারের সূর্যসন্তান। চকরিয়ার হারবাং নিবাসী সরকারী উচ্চপদস্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ ছালামত উল্লাহর ঔরসে কক্সবাজার সদর উপজেলার ঈদগাঁও মাতুতালয়ে ১৯৩০সালের ১৮ ডিসেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। সাবেরের পূর্ব পুরুষেরা ছিল এককালে পর্তুগিজ-অধ্যুষিত দিয়াং এলাকার অধিবাসী। পটিয়া ও আনোয়ারা উপজেলার সীমান্তে অবস্থিত দিয়াং। দাদা আসাদ আলী চট্টগ্রাম শহরতলীর চন্দনপুরার জনৈক ইংরেজ সাহেবের কাছ থেকে একখন্ড জমি কিনে সেখানে বাড়ি নির্মাণ করেন। পরে সাবেরের বাবা সালামতউল্লাহ হন বাড়িটির অধিবাসী। অন্যদিকে নানা হামিদুল্লাহ চৌধুরী ছিলেন ঈদগাঁর জমিদার। হামিদুল্লাহ চৌধুরীর একমাত্র কন্যা শফিকা খাতুনের সঙ্গে সালামতউল্লাহর বিয়ে হয় পারিবারিকভাবেই। তাঁদের বিয়ে পরবর্তী দাম্পত্য জীবনে প্রথমে শহীদ সাবের এবং দ্বিতীয় স্ত্রীর গর্ভে পাঁচ বছর পর মোহাম্মদ সাইফুল্লাহ, ডাকনাম পিয়ারু, আসেন পৃথিবীর আলোতে। সালামতউল্লাহকে সরকারি চাকরিসূত্রে ঘুরে বেড়াতে হত বিভিন্ন জায়গায়। কখনো দার্জিলিং, কখনো কলকাতা। ফলে সাবের বড় হতে লাগল নানা বাড়িতেই মায়ের স্নেহছায়ায়। ছোটবেলা থেকেই শান্ত-স্বভাবের ছিলেন তিনি। দামাল ছেলের দুরন্তপনা তাঁর মধ্যে ছিল না। ছেলেবেলায় ঘুড়ি, লাটাই, গুলতি আর ডা্গংুলি খেলতেন। তবে এইসব খেলার বাইরেও খুঁজে পেতে চাইতেন অন্যকিছু। ঈদগাঁর শান্তÍ -প্রকৃতির মতো একটা স্থিরতা ছিল তাঁর মজ্জাগত। আর সেই সাথে আবেগের বাহুল্য এবং ভাবপ্রবণতাই ছিল তাঁর চরিত্রের একটি বৈশিষ্ট। ঈদগাঁর প্রাইমারি স্কুলে তাঁর শিক্ষা জীবনের শুরু । নানাবাড়ির পাশেই ছিল মায়ের নিজস্ব একটি বাড়ি। সেই বাড়িতেই শৈশবের মনোরম দিনগুলো কাটিয়েছেন সাবের। সকালে কোনোদিন ঘুম থেকে তাড়াতাড়ি উঠতে পারতেন না। একজন মাস্টার ছিল বাড়ির ছেলে-মেয়েদের পড়াবার জন্য। সাবেরকে উঠাবার জন্য তিনি নানারকম ফন্দি করতেন। বলতেন, আজ ভোরবেলা যে সবার আগে উঠতে পারবে সে একটা মজার জিনিস পাবে। লজেন্স, বিস্কুট, মিষ্টি এমনি ধরনের ছোটখাটো জিনিস তিনি ওদের দিতেন। কিন্তু এইসব প্রলোভনেও কাজ হতো না। আর এজন্যে তাঁর কোনো ক্ষোভ বা লজ্জা ছিল না। তিনি ছিলেন মেধাবী ছাত্র। ঘুম থেকে পরে উঠলেও পড়ালেখায় কেউ তাঁকে ছাড়িয়ে যেতে পারত না।
মা-বাবা শখ করে নাম রেখেছিলেন একেএম শহীদুল্লাহ। পিতৃদত্ত নাম বাদ দিয়ে তিনি লেখালেখির জগতে শহীদ সাবের নামে পরিচিত। সম্ভবত তিনি জানতেন সেক্যুলার এবং ঔপনিবেশিক শাসনের অত্যাচারে তাঁকে শহীদ হতে হবে। তাই তিনি আগে-ভাগে নাম রেখেছেন শহীদ সাবের।
তিনি ঈদগাঁও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৪র্থ শ্রেণীতে অধ্যয়নাবস্থায় বাবার কর্মসূত্রে কলকাতায় চলে যান। এ সময়ে কলকাতা থেকে প্রকাশিত ‘ছন্দশিখা’ নামক পত্রিকা সম্পাদনায় জড়িত পড়েন। পাশাপাশি সমাজ বিপ্লবীদের সংগঠন মুকুল ফৌজের সাথেও জড়িত ছিলেন। সাহিত্যিক সাবের’র সৃজনশীল বিকাশের প্রথম সিঁড়ি এখান থেকেই বলা যায়। প্রাক-প্রস্তুতি পর্বে কলকাতা হেয়ার স্কুলে অধ্যয়নকালীন সময়ে পড়ার ফাঁকে ফাঁকে তিনি সাহিত্য-সংস্কৃতি চর্চার সাথে সম্পৃক্ত হয়ে পড়েন। জড়িত পড়েন পার্ক সার্কাসের তালক্লার্ক লেনের ‘ছোটদের আসর’ এবং ‘কিশোর সংঘ’ নামে কিশোর সংগঠনের সাথে। কর্ণেল সুরেশ বিশ্বাস রোডে ছোটদের আস’র একটি ছোট গ্রন্থাগার ছিল। এ গ্রন্থাগারের গ্রন্থাগারিক ছিলেন শহীদ সাবের। পড়ালেখার পাশাপাশি কর্মকে তিনি বেছে নেন। সাথে সাথে চিন্তার সাথেও পরিচিত হন। ছোটদের আসরের গ্রন্থাগারের অন্য অনেক বইয়ের সাথে ‘ছোটদের রাজনীতি, ছোটদের অর্থনীতি’ প্রভৃতি মুক্তি চিন্তার বইয়ের পাঠ গ্রহণ করেন। আর এই দিকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ধুম্রজাল। এ যুদ্ধের পরিবেশে কিশোর সাবের’র মন-মানস গড়ে উঠতে থাকে এবং এই সময়েই শহীদ সাবের রাজনীতি সচেতন হয়ে উঠে। এ সময়ে আবুল মনসুর আহমদ সম্পাদিত ‘দৈনিক ইত্তেহাদ’ পত্রিকার সাহিত্য পাতায় শহীদ সাবের’র লেখা ‘বিষকন্যা’ ছাপিয়ে সবার দৃষ্টি কাঁড়েন। এই পত্রিকার সাহিত্য পাতা দেখতেন জহুরী সম্পাদক কবি আহসান হাবীব। তিনি শহীদ সাবের’র গল্পটি প্রকাশিত হওয়ার পর বলেন- “অমন সপ্রতিভ ছেলে আমার চোখে পড়ে নি। বয়সের তুলনায় তাঁর মানসিক পরিপক্কতা ছিল অনেক বেশী।” আহসান হাবীব’র সম্পাদনা উত্তীর্ণ হয়ে কোন লেখা প্রকাশ পাওয়া চাট্টিখানি ছিল না। সম্পাদনায় তাঁর নিবিষ্ট মন, আন্তরিকতা, মূল্যায়নের রীতি শুনে হতবাক হতে হয়। কোন লেখককেই কম মূল্য দিতেন না! তাঁর বেলায়- লেখক নয়, লেখাই মুখ্য। কোন লেখার ত্রুটি বিচ্যুতি থাকলে তা নিজের হাতে কাটছাট করতেন না। স-সম্মানে ফেরত দিয়ে দিতেন লেখককে। তাঁর প্রমাণ পাওয়া যায় নজরুল একাডেমী, ঢাকার প্রতিষ্ঠাতা কবি তালিম হোসেনের স্ত্রী তৎকালীন ‘দৈনিক আজাদ’ এবং পরবর্তীতে ‘দৈনিক পাকিস্তান’ (দৈনিক বাংলা)’র মহিলা বিভাগের সম্পাদক মাফরোহা চৌধুরীর ‘সঙ্গ-প্রসঙ্গ’ পাঠে। তিনি লিখেন- ‘আহসান হাবীবের সম্পাদনা উত্তীর্ণ হয়ে কোন লেখা সেখানে প্রকাশ পাওয়া চাট্টিখানি কথা নয়। আমি লেখা দেব, তারপর দেখে-শুনে আমার সামনের চেয়ারে এসে বসে লেখাখানি ফেরত দিবেন স-সম্মানে। বলবেন- এটা রাখুন, এর পরেরটা দিবেন। ভাবতেই খারাপ লেগেছে। এমনি দ্বিধা-সংকোচে আর লেখা দেওয়া হয়নি। পরে ‘পকিস্তানি খবর’ এ ‘চন্দন’ গল্পটি প্রকাশ হওয়ার পর তাঁর অনুরোধে ‘প্রকৃতি সংলগ্ন’ নামে ছোট গল্পটি দেই। তাও অনেক বাচ-বিচার করে ছাপেন।’’( মাফরোহা চৌধুরী, সঙ্গ প্রসঙ্গ ১৯৯১ঃ ৫২)। এ উদ্বৃতি থেকে বুঝা যায় শহীদ সাবের’র লেখাটি কতখানি মানসম্পন্ন হয়েছিল বলে ছাপানো হয়েছে। কিন্তু ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর নিজ দেশ বাংলাদেশে ফিরে আসতে হয়। নিজ জেলা চট্টগ্রামে ফিরে এসে চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুলে ভর্তি হয়। এ স্কুলে অধ্যয়নকালীন সময়ে বামপন্থী রাজনীতির সাথে জড়িয়ে পড়লে মুসলিম লীগ’র রোষানলে পড়েন। মুসলিম লীগ সরকার বদ্ধপরিকর হয়ে ১৯৪৮-১৯৫০ সাল থেকে কমিউনিস্ট পার্টির নেতাদের উপর নির্যাতন চাপিয়ে দেয় এবং নেতা কর্মীদের গ্রেফতারের পথ বেছে নেয়। সেই পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৫০ সালে ফেব্রৃয়ারি মাসে পূর্ব বাংলার অসম্প্রদায়িক ছাত্র সংগঠন ‘ছাত্র ফেড়ারেশন’র এক কর্মী সভায় বক্তৃতারত অবস্থায় আলী আকসাজ ও সুভাষ চৌধুরীর সাথে শহীদ সাবেরকেও রাজবন্দী হিসেবে চট্টগ্রাম জেলে পাঠানো হয়। শহীদ সাবের বিদ্রোহের আগুন বুকে ধারণ করে কাটাতে থাকে জেল জীবন। ইতোপূর্বে সমগ্র পাকিস্তান ব্যাপী মুসলিম লীগ ও কমিউনিস্ট পার্টি ব্যতীত অন্য কোন রাজনৈতিক দলের অস্তিত্ব ছিল না। ১৯৪৭ থেকে ১৯৫২ সাল পর্যন্ত পাকিস্তান সরকার অন্য কোন বিরোধী দলের অস্তিত্ব কোনভাবে মেনে না নেওয়ার ব্যাপারে বদ্ধপরিকর ছিল। লিয়াকত আলী খান দ্ব্যর্থহীনভাবে ঘোষণা করেন যে, পাকিস্তানে কোন বিরোধী দল সহ্য করবেন না। শহীদ সাবের দেশ বিভাগের পর ভেবেছিল এ স্বাধীনতা শুধু ভৌগলিক স্বাধীনতা হবে না, এ স্বাধীনতা সকল মানুষের অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসার নিশ্চয়তা দিয়ে শোষক শ্রেণী কর্তৃক শোষিত শ্রেণীর মানুষের মুক্তির পথ প্রশস্ত করবে। অর্থাৎ ব্যক্তিগত মালিকানা উচ্ছেদ হয়ে সামাজিক মালিকানার মাধ্যমে দেশ শিল্পায়িত হবে। সকল মানুষ একটি সত্যিকারের গণতান্ত্রিক পরিবেশে বেড়ে উঠবে। যেখানে থাকবে না কোন ধরণের অগণতান্ত্রিক ব্যবস্থা। মার্কসীয় মতে, রাষ্ট্রশক্তি হচ্ছে শাসক শ্রেণৗর শোষণের হাতিয়ার। সেই দৃষ্টিতে শহীদ সাবের পাকিস্তান রাষ্ট্রের চরিত্র নির্ণয় করেন। চট্টগ্রাম জেল থেকেই তিনি আই.এ পাশ করেন এবং চট্টগ্রাম জেলেই বসে বন্দী জীবনের কাহিনী নিয়ে লেখেন তাঁর বিখ্যাত রচনা ‘আরেক দুনিয়া থেকে’। ‘নিরাপত্তা বন্দী’ বলে স্বনামে লেখা ছাপানো সম্ভব ছিলনা। তাই জামিল হোসেন ছদ্মনামে গোপনে চট্টগ্রাম জেল হয়ে কলকাতা থেকে প্রকাশিত তৎকালিন সময়ে নামকরা ‘নতুন সাহিত্য’র চৈত্র ১৩৫৭ সংখ্যায় ছাপানো হয়। লেখাটি নিয়ে কলকাতায় ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি ও পাঠক সমাজে সমাদৃত হয়। এর পর থেকেই কথাসাহিত্যিক শহীদ সাবের’র বলিষ্ঠ সাহিত্য যাত্রা শুরু হয়। কথাশিল্পী মানিক বন্দ্যোপধ্যায় এ লেখা পড়ে মুগ্ধ হয়ে পত্রিকার সম্পাদককে চিঠি লিখে এ নতুন সাহিত্য প্রতিভাকে স্বাগত জানান। এটি পরে ১৯৫১ সালে বই প্রকাশিত হয়। রচনাটি ছিল রাজবন্দীর রোজনামচা জাতীয়। জেল দৈনন্দিন জীবনের অভিজ্ঞতা প্রসূত, জেলজীবনের নিখুঁট বর্ণনা লেখাটিকে যেমন সরস তেমনি প্রাঞ্জল করে তুলেছে। লেখকের একঘেয়েমি অতিরিক্ত দৃষ্টিভঙ্গীর কারণে ক্লান্তিকর বর্ণনা রচনাকে ভারাক্রান্ত করেননি। বরং মিঠে কড়ার অদ্ভুত আমেজ সকালের বৌদ্দ এ রচনাটি ইংরেজ কবি শোলজেনিৎ সনে’র ‘ইভান ফেনিমেভিয়ের জীবনে একদিন’কেও হার মানিয়েছে বলে বৌদ্ধামহলের ধারণা। ‘ইভান ফেনিমেভিয়ের জীবনে একদনি’ রচনাটি জেলজীবনের বিভিন্ন ত্রুটি ও সমালোচনা তীর্যকভাবে আলোড়িত হয়েছে। তবে এটি একটি উপন্যাস। কিন্তু শহীদ সাবেরর ‘আরেক দুরিয়া থেকে’রচনাটি উপন্যাস নয়-ছোটগল্প। বাস্তব জেল জীবনের ত্রুটি নিয়ে রচিত এ গল্প রচনায় প্রাণবন্ত, লেখক জীবন নিংড়ানো অনুভূতির প্রাখুর্য তীব্র। তবে মনে হয় শহীদ সাবের এ গল্পটি লেখার আগেও কোথাও ইভানফেনিমেভিয়ের জীবনে একদিন’ রচনাটি পড়েছিলেন। যা পড়ে অনুপ্রানিত হয়ে এ গল্পটি লেখেন। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে লেখকের দৃষ্টিভঙ্গী এখানে রূঢ় নয়। মুসলিম লীগ’র নির্মম অত্যাচারের মাঝেও যে তিনি প্রসন্ন মনোলোকের পরিচয় দিয়ে বাংলা সাহিত্যে আপন স্বাতন্ত্রে মহিমায় জেগে ওঠার প্রয়াস পেয়েছেন তাঁর জন্য ধন্যবাদ জানাতে হয়।
১৯৫৪ সালে জেল থেকে ছাড়া পেয়ে আজিমপুর কলোনিতে বাবার সংসারে চলে আসেন। বাবা সালামতউল্লাহ সেসময় চাকরি থেকে অবসরে গেছেন। ফলে সাংসারিক দায়-দায়িত্বের চাপে পড়ে শহীদ সাবের আজিমপুর ওয়েস্ট অ্যান্ড হাইস্কুলে যোগ দেন সহকারী শিক্ষক পদে। সেখানে কথাশিল্পী মাহমুদুল হক ছিলেন তাঁর ছাত্র। ওই সময়েই জগন্নাথ কলেজের নৈশ শাখায় স্নাতক ক্লাসে ভর্তি হন তিনি। ১৯৫৫ সালে স্নাতক পাশ করে যোগ দেন সহকারী সম্পাদক হিসেবে 'দৈনিক সংবাদে'। একই সঙ্গে সংবাদের ‘সাহিত্য পাতা’ও সম্পাদনা করতেন তিনি। তখন তাঁর লিখিত সম্পাদকীয় খুবই আকর্ষণীয় হতো- তাতে প্রকাশ পেত তীক্ষœ বুদ্ধি ও শানিত মননের দীপ্তি। তাতে উপস্থাপনা ও প্রকাশভঙ্গির মুন্সিয়ানাও ছিল লক্ষণীয়। সংবাদে কর্মরত থাকা অবস্থাতেই সাবের প্রথমে সেন্ট্রাল সুপারিয়র সার্ভিসের (সিএসএস) অন্তর্গত সিএসপি পরীক্ষায় বসেন; লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায়ও হন উত্তীর্ণ। চোখের সমস্যার অজুহাতে নিশ্চিত সরকারি চাকরি থেকে তাঁকে করা হয় বঞ্চিত। পরে ফেডারেল ইনফরমেশন সার্ভিসের পরীক্ষা দিয়ে পুরো পাকিস্তানে প্রথম স্থান অধিকার করেন। কিন্তু তিনি ছিলেন জেলখাটা কমিউনিস্ট, পুলিশ-রিপোর্ট ছিল না সন্তোষজনক। এ কারণে তাঁকে নিয়োগপত্র দেয়া হয়নি। পরে তখনকার পূর্ববঙ্গের প্রাদেশিক সরকারের মুখ্যমন্ত্রী আতাউর রহমান খানের সঙ্গে সাক্ষাত্ করে বিষয়টি বিস্তারিত জানালে তিনি এ ব্যাপারে ওভাররুল করে, নিয়োগপত্র প্রদানের সরকারি নির্দেশের প্রতিশ্রুতি দেন। কিন্তু পরদিন অর্থাৎ ১৯৫৮ সালের ৮ অক্টোবর তিনি নির্দেশ দেয়ার পূর্বেই, সেই রাতেই মার্শাল ল' জারি করে জেনারেল আইয়ুব খান দখল করেন ক্ষমতা। তাতে সাবেরের পরিবারের আকাঙ্ক্ষা এবং পাকিস্তান রাষ্ট্রের গণতন্ত্র একই সঙ্গে ভেস্তে যায়। শহীদ সাবেরের লক্ষ্য, প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি ছিল সমন্বয়হীন, যা তাঁকে হতাশ করে তুলেছিল। যে সংশ্লিষ্টতা থেকে বিচ্ছিন্ন করার জন্য শহীদ সাবেরকে বিনা বিচারে চার বছর আটক করে রাখা হয়েছিল, সেই একই অপরাধে পরবর্তীতে সম্মানজনক জীবিকা অর্জনের সুযোগ থেকে তাঁকে বঞ্চিত করা হয়। তদুপরি রাষ্ট্র তাঁকে শাস্তি দিচ্ছিল। জেলে পাঠিয়ে শাস্তি দিয়েছে; শাস্তি দিয়েছে বেকার রেখে এবং শেষ পর্যন্ত শাস্তি দিল তাঁকে হত্যা করে। ৩১ মার্চ, ১৯৭১। কাকডাকা ভোর। ঢাকার রাজপথ প্রকম্পিত করে ছুটছে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর জলপাই রঙের ট্যাঙ্ক। মাঝে মাঝে গুলির শব্দ, চিৎকার- তারপরই নিঃস্তব্ধতা। একসময় কয়েকটি ট্যাঙ্ক ছুটে এল তত্কালীন প্রগতিশীল পত্রিকা 'দৈনিক সংবাদ' অফিসের দিকে। এসেই ঠা ঠা ছুড়তে লাগল গুলি। তারপর আগুন। দাউদাউ করা আগুনে দগ্ধিভূত হয়ে 'সংবাদ' অফিস আর ভেতরে থাকা একজন কমিউনিস্ট ও মানবতাবাদী মানুষ। সেই নিষ্ঠুর আগুনের লেলিহান শিখায় আর সবকিছুর সঙ্গে পুড়ে অঙ্গার হয়ে যান সেই একজন মানুষ, সম্ভাবনাময় একটি উজ্জ্বল নক্ষত্র, শহীদ সাবের।
প্রকৃত বিচারে শহীদ সাবের’র কর্ম ও সাহিত্য জীবনের সূত্রপাত হয় কৈশোরকাল থেকে। স্বল্প পরিসরে হলেও শহীদ সাবেরের সাহিত্য জীবনকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়। কৈশোর থেকে জেল জীবনের পুর্ব পর্যন্ত তাঁর প্রস্তুতি পর্ব, জেল জীবন থেকে মানসিক সুস্থতা হারানোর পুর্ব পর্যন্ত দ্বিতীয় বা সৃষ্টিশীল পর্ব এবং অপ্রকৃতস্থ থাকার গোটা সময়টা তৃতীয় বা সমাপ্ত পর্ব। এ সময়ের মধ্যে শহীদ আমাদের জন্যে অনেক কিছু সৃষ্টি করেছেন।
তাঁর প্রকাশিত গল্পগ্রন্থের মধ্যে ‘আবেগ’(১৯৫৪),এক টুকরো মেঘ (১৯৫৫), ‘ক্ষুদে গোয়েন্দার অভিযান’ (১৯৫৮)। অনুবাদ গ্রন্থের মধ্যে ‘পুশকিনের ইসকাপনের বিবি’ (১৯৫৮), গোগলের পাগলের ডাইরী (১৯৫৮) ও ক্যাথরিন ওয়েন্স পিয়ার’র ‘কালো মেয়ের স্বপ্ন’ (১৯৫৮) প্রভৃতি। ‘একটুকরো মেঘ’ গল্প গ্রন্থে তৎকালীন সমাজ ব্যবস্থার গ্রামীণ আদালতের স্বরূপ ও চিত্রকর্ষের চিত্র তুলে ধরেছেন। সেলিনা হোসেন বলেন- ‘একটুকরো মেঘ’ ছোটগল্প সংকলনে আদিগত শিল্প চাতুর্যের চুম্বক নেই বটে, কিন্তু প্রাণ আছে। যে প্রাণ সবাইকে উজ্জীবিত করে তোলে।” (সেলিনা হোসেন- ১৯৮১ ঃ ৫৯)।‘ক্ষুদে গোয়েন্দার অভিযান’ ছোটগল্পটি ৯টি ছোটগল্পের একটি সরস সংকলন। গল্পগুলোতে আছে নির্মল কৌতুক রসের সঙ্গে একটুখানি নীতিকথার স্পর্শ-বাস্তব রূঢ় ছবি-নিত্যদিনের না পাওয়ার বেদনা তাঁকে কুরে কুরে জ্বালাতন করেছে। গল্পের উপাদানকে ব্যবহৃত করে নীতিকথা তাঁর প্রাণরসকে হরণ করেনি। দু’একটি ছোট গল্প ছাড়া বাকীসব ছোটগল্পে লেখক কচিমনের একটি সারিতে দাঁড়িয়ে নিজের বয়সের হিসেব ভুলে গিয়ে কৈশোরের অনাবিল মাদকতায় মেতে উঠেছেন। আবার কোথাও তিনি উচ্চকিত হতে গিয়েও পারেন নি। দারিদ্রের কশাঘাত তাঁর অন্তরকে বেদনাহত করে তুলেছে। ছোটগল্পে নিজের কাহিনীকে তিনি চিত্রিত করেছেন। তিনি তা পেরেছেন কেবল সামাজিক চেতনাবোধের বদৌলতে। শহীদ সাবের’র গল্প সংকলনের বিভিন্ন গল্প ক্ষুদে চরিত্রে কৈশোরবোধ চিত্রিত হয়েছে কিন্তু কল্পনার আশ্রয় এতে স্থান পায়নি। রূঢ় বাস্তবের সাথে তুলনা করে ছোটগল্পের প্রাণরস দিয়ে বাংলা ছোট গল্পে এক অসামান্য অবদান রেখে গেছেন।
শহীদ সাবেরের সাহিত্য জীবনের তৃতীয় বা শেষ পর্বটি তাঁর জীবনের বাস্তব করুণ পরিণতি। এ সময়ে তিনি মূলত অসংখ্য কবিতা লিখেছেন কিন্তু কোন কাব্যগ্রন্থ প্রকাশ করা সম্ভব হয়নি তাঁর জীবদ্দশায়। বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকীতে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে বিক্ষিপ্ত ভাবে। বাংলা একাডেমী, মুহাম্মদ ইদরিস আলী, মাফরোহা চৌধুরী কিছু কিছু কবিতা সংগ্রহ করে তাদের সংকলনে স্থান দিয়েছে। আর কিছু কবিতা একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের ভয়াবহতায় ‘দৈনিক ইত্তেফাক’ ও ‘দৈনিক সংবাদ’ অফিস আগুনে পুড়ে ভষ্ম হয়ে যাওয়ায় সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি। সেলিনা হোসেন সম্পাদিত ‘শহীদ সাহেব রচনাবলী’তে শহীদ সাবেরের ২১টি এবং মাফরোহা চৌধুরী ‘সঙ্গ প্রসঙ্গ’ (১৯৯১)সংকলনে ২টি কবিতা রয়েছে। তাঁর বেশির ভাগ কবিতায় ভাবের গ্রন্থে শিথিল হয়েছে এলোমেলোভাবে ও খাপছাড়া ভাবে। তবু ও এ মানের পংক্তির স্বকীয়তায় আশ্চর্য উজ্জল্যে বলিষ্ট ও প্রানবন্ত তাঁর কবিতার স্বর। চেতনার ভাবনাগুলো নিদির্ষ্ট আকাশে ডানা মেলেছে বারংবার। কিন্তু মাঝে মাঝে থমকে দাঁড়াতে চেয়েছে। মনে হয় এখানেই শহীদ সাবের হারিয়ে গেছে। হারিয়ে গেছে সাহিত্যের কাছে। তাঁর কবিতার মধ্যে সবচেয়ে বেশি আলোড়ন সৃৃষ্টি করেছেন ‘শোকার্ত মায়ের প্রতি’ কবিতাটি। এ কবিতাটি চট্টগ্রাম জেলে বসেই লিখেছেন। এ কবিতায় তৎকালীন রাজনৈতিক সহিংসতার বিবরণ শব্দ শিল্পের মাধ্যমে তুলে ধরেছেন। এতে সাঁওতাল নেত্রী ইলামিত্রের গ্রেফতার ও জেল অভ্যন্তরে অমানবিক নির্যাতনের কাহিনী চিত্রিত হয়েছে। রাজশাহীর সাঁওতাল নারীনেত্রী ইলামিত্র তাঁর আপন গোত্রের কৃষকদের আত্মপ্রতিষ্ঠার আন্দোলন পুর্ব বাংলার মধ্যমণি ছিল। ইলামিত্রের গ্রেফতারের পর মুসলিম লীগ সরকার তাঁর উপর যে অমানবিক নির্যাতন চালিয়েছে তা সেই সময়ে টক অব দি কিংবদন্তিতে পরিণত হয়েছিল। এই অমানবিক অত্যাচার শহীদ সাবেরের অন্তরে গভীরভাবে নাড়া দেয়। শহীদ সাবের’র প্রচন্ড আবেগে রচিত এবং তাঁর একক বিদ্রোহী কণ্ঠ মুসলিম লীগের অত্যাচারের বিরুদ্ধে দারুণ সোচ্চার। কবিতার প্রতিটি লাইনে শহীদ সাবের নিজের আত্মাকে আবিস্কার করে যায় বলে প্রতীয়মান হয়- “মাগো ক্যাপ্টেন ভের্ণর কি বুঝবো বলো/কেন তুমি যোগ দিয়েছ গেরিলা দলে/স্বদেশ প্রেমের আগুন কত জ্বলে/পররাজ্য লোভী নাৎসীরা কি বুঝবে তা/গতকালকে রাতে তুমি যে সব হস্তে দিয়েছ উড়িয়ে/ইউক্রেনের সেই পুলটি/জার্মানদের দেবন মাঝে এক হয়নি সব হারাদের জমি/............/মাগো তুমি পণ করেছ, জবাব দেবে না/স্বাধিকারী পশুকে সওয়ালের/মাগো দিওনা, দিওনা/তুমি এখন জন্ম দিয়েছ একটি সন্তানের/কি দারুণ যন্ত্রণা বলে/একটি ক্ষুদ্র লাল মাংসপিন্ড আগামী দিনের/এক সর্বহারা সেনা বেরিয়ে এসে ধীরে/কাঁদছে শিশুটি পৃথিবীকে স্পর্শের আগে/কেউ কোথাও নেই/কেবল দু’টি শাস্ত্রীয় বিশ্বাসভরা চোখ/তুমি দাঁত দিয়ে টেনে টেনে ছিঁড়ে নিলে নাঁড়ী।”
এ কবিতাটি পুর্ব বাঙলার কবিতার ভান্ডারে একটি উল্লেখযোগ্য রচনা। কারণ এই কবিতার আবেদন সার্বজনীন। চিরকালের শোষিত-বঞ্চিত মানুষের কণ্ঠে এই কবিতা বিপ্লবীদের মাঝে নতুন প্রেরণা ও উদ্দীপনা যোগাবে নিঃসন্দেহে। তাকে মূল্যায়ন করতে গিয়ে তাঁর বন্ধু ‘রণেশ দাশগুপ্ত’ অসমাপ্ত শিল্পীর জীবনের কথা’ প্রবন্ধে বলেন- শিল্পীর সৃষ্টির প্রয়োজনের দিক দিয়ে এই অনুভবের অবকাশ নিশ্চয় উৎসাহ জনক। কিন্তু মনের আগুন চাপা রাখার বিপদ আছে। একটা স্বাতন্ত্রী অনেক সময় জ্বালা সহ্য করতে পারে না। অনর্থে ঘটে যায়। শহীদ সাবেরের বেলায়ও তেমন ঘটেছিল। ১৯৫০-১৯৫৮ পর্যন্ত প্রথম জীবনের ক’টা বছর তিনি লিখতে পেরেছিলেন। তারপর হতে কোন একটা সময় বিবাগী হয়ে গেছেন। হালছাড়া নৌকার মত যতদিন বেঁচেছিলেন ততদিন অনির্দিষ্ট লক্ষ্যে ভেসে চলেছিলেন। মাঝে মাঝে অবশ্য সম্বিত ফিরে আসতো এবং তখনই কবিতা লিখে ফেলতেন।
মানসিক বৈকল্যের মধ্যেও তিনি অসংখ্য সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী কবিতা লিখেছেন এবং সম্পাদকীয় কলাম লিখেছেন। এ সময়ে কবিতার পাশাপাশি রণেশ দাশগুপ্ত ও সত্যেস সেনের অনুসরণে গানও লিখেছেন তিনি। এ রকম একটি গান ‘ওরে মাঝি, নৌকা ছেড়ে দে’। গানটি গোলাম মোহাম্মদ ইদু সংগৃহীত এবং শেখ লুৎফর রহমানের সুরে বেতার ও বিভিন্ন চ্যানেলে প্রচার করা হয়েছে। পাঠকের সুবিধার্থে শহীদ সাবের’র অগ্রন্থিত গানটি পত্রস্থ করা হলো- ওরে মাঝি/দে নৌকা ছেড়ে দে, নৌকা ছেড়ে, ছেড়ে দে/ আকাশে ডাকে যদি দেয়া ঘনঘন/ঝড়ো হাওয়া অনুক্ষণ বয় শোন শোন/ব্রজ্রের গর্জন দশদিক কম্পিত লুন্ঠিত, ছিন্ন/তবু তোর পথ নেই বেয়ে চল ভিন্ন/ তুই পাড়ি দিবি আজ তোর বুক বেঁধে/ঘনাক আধাঁর তাতে ভয় কি রে/তোর ভয় কি/ পড়ে থাকা সেকি মরে থাকা নয় কি / তুই নব জীবনের নবযাত্রী/ তোর কিবা দিন কিবা রাত্রী/সম্মুখে তোর উত্তাল ঢেউ করতার গর্জাক বিদ্যুৎ চমকাক/ তুই নিৎশঙ্কায় নৌকায় দে/ পাল তুলে দে।’’
বাংলা সাহিত্যের সপ্রতিভ সাহিত্যিক এবং একাত্তরের অন্যতম শহীদ বুদ্ধিজীবী শহীদ সাবেরকে আমরা যেন ভুলে গেছি। তাকে নিয়ে তেমন একটা মাতামাতি হয়না। হয় শুধু কবিতা ব্যাপারি নিয়ে। আবার কক্সবাজারের সুর্যসন্তান হিসেবে শহীদ সাবেরকে কক্সবাজারের অনেক লোক চেনেনা। কোন শহীদকে ভুলে যাওয়া উচিত নয়। যাদের কেহ নেই, যাদের সম্পর্কে রাজনীতি-বিধ লেখক-সাহিত্যিক গণ তাদের কলমের ভাষায় কথা বলেন না তারাও বিপ্লবের স্মৃতি থেকে ভুলে যাবার নয়। আমলাতান্ত্রিক রাষ্ট্রযন্ত্রকে বিলুপ্ত করা না হলে, জনগণের পরাধীন শৃঙ্খল মুক্ত হবেনা। জনগণকে ভাবতে হবে নিজেদের স্বাধীনতা কোথায় আবদ্ধ? এক শহীদকে নিয়ে বিচ্ছিন্নভাবে আমরা ভাবতে চাইনা। সব শহীদদের সমষ্টির মধ্যে খুজব আমরা শহীদ সাবেরকে।
বাংলা সাহিত্যে তাঁর অবদানের ইতিহাসে অম্লান রাখতে বাংলা থেকে সেলিনা হোসেন সম্পাদনায় ‘শহীদ সাবের রচনাবলী’ (জুন ১৯৮১) এবং মুহম্মদ ইদরীস আলী প্রণীত বাংলা একাডেমী জীবনী গ্রন্থমালা ‘শহীদ সাবের (ফেব্রুয়ারী ১৯৮৯) নামক গ্রন্থ উপহার দেয়। যা শহীদ সাবেরকে জানতে যথেষ্ট সহায়তা করবে। অভাজন নিবন্ধকার’র ‘শহীদ সাবের : জীবন ও সাহিত্য’ নামক গ্রন্থ প্রকাশের পথে।
একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম শহীদ এবং প্রতিভাবান কথাশিল্পী সৃজনশীল সাহিত্যে অবদানের স্বীকৃতি স্বরুপ বাংলা একাডেমী পুরষ্কার (মরনোত্তর, ১৯৭২, ছোটগল্প), কক্সবাজার সাহিত্য একাডেমী পুরস্কার-২০০৩ (মরনরোত্তর), কক্সবাজার পদক-২০০৪ (মরনোত্তর) প্রদান করা হয়। ২০০৮ সালে তাঁর স্মৃতিকে ধরে রাখার উদ্দেশ্যে তাঁর নিজ জেলা কক্সবাজার সদরের ঈদগাঁওতে জাতিসত্তার কবি মুহম্মদ নুরুল হুদা, হুমায়ুন ছিদ্দিকী ও মনির ইউসুফ’র তত্ত্বাবধানে ‘শহীদ সাবের পাঠাগার’ প্রতিষ্টা করা হয়।
সংক্ষিপ্ত সময়ে আর বিস্তারিত না বলে এই মুহূর্তে আমি সিরাজুল ইসলাম চৌধূরী’র ‘শুধু আপনার ছেলে নয়, সমাজেরও’ প্রবন্ধের উদ্বৃতি দিয়ে শেষ করতে চাই- “বুকের ভেতর আগুন ছিল, ছিলেন অত্যন্ত মেধাবী। অপচয় ঘটলো উভয়েরই। তাঁর নিজের কারণে নয়। রাষ্ট্রের দৌরাত্ম্যে।
রাষ্ট্রের দৌরাত্মের শিকার শহীদ সাবের এর চেতনার অনুসারি হয়ে আমরা সাম্প্রদায়িক সকল রাজনৈতিক দল শক্তি (জামায়াত-শিবির) নিষিদ্ধ করে একটি অসম্পদ্রায়িক ও জঙ্গীবাদ মুক্ত বাংলাদেশ গঠনে এগিয়ে আসি।
ঋনী
১) সেলিনা হোসেন (স); শহীদ সাবের রচনীবলী, জুন ১৯৮১, বাংলা একাডেমী,ঢাকা।
২) ইদ্রিস আলী, শহীদ সাবের, ফেব্রয়ারি ১৯৮৯. বাংলা একাডেমী।
৩) মালেকা বেগম, ইলামিত্র, দ্বিতীয় সংস্করণ ১৯৮৯, জ্ঞান বিতরণী, ঢাকা
৪) মাফরোহা চৌধুরী; সঙ্গ-প্রসঙ্গ, ফেব্রুয়ারি ১৯৯১, ঢাকা।
৫) মালিক সোবহান; কক্সবাজার চরিত-কোষ, জুলাই ২০০৭, কক্সবাজার সাহিত্য একাডেমী, কক্সবাজার ।
৬) মযহারুল ইসলাম বাবলা; শহীদ সাবেরের আরেক দুনিয়া, ৪ এপ্রিল ২০০৮, দৈনিক প্রথম আলো।
৭) কালাম আজাদ; বাংলা সাহিত্যে শহীদ সাবের, ৫ মার্চ ২০১০, বর্ষ-৫০,সংখ্যা-১৭২, দৈনিক আজাদী।/ কালাম আজাদ, মুক্তিযুদ্ধে কক্সবাজার: জানা অজানা তথ্য, বিজয় (বিজয়ের ৪২তম প্রকাশনা) জেলা প্রশাসন, কক্সবাজার, ১৬ ডিসেম্বর ২০১২।
(নোট : এ প্রবন্ধটি ৩১ মার্চ ২০১৩ গরাণ শিল্প সাহিত্য সভা আয়োজিত শহীদ বুদ্ধিজীবী শহীদ সাবের’র ৪২ তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত স্মরণ সভায় মূল প্রবন্ধ হিসেবে পঠিত )
০১৮১৪৪৯৫৪৬৬,
↧
সাহিত্য-সংস্কৃতি
↧