অনেক আগে থেকেই ঠিক করেছিলাম, এবছর মিসেস রাশ কে নিয়ে থাইল্যান্ড যাবো। ফেব্রুয়ারী মাসে দুজনের পাসপোর্ট প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সহ এজেন্টকে পঠিয়ে দিলাম। ৭ কার্জদিবসের মধ্যেই ভিসা হয়ে গেল। জনপ্রতি ভিসা ফি এজেন্ট কমিশন সহ ৩৫০০ টাকা লেগেছে। তারপর হটাৎ খুবই ব্যস্ত হয়ে গেলাম । মনে হচ্ছিল এবার আর ট্যুরটা হবে না। অবশেষে সবকিছু ম্যানেজ করে গত ৪ এপ্রিল দুজন ভুটানের ড্রুক এয়ারে চেপে বসলাম, সাদা হাতির দেশ ভ্রমনের উদ্দেশ্যে। ড্রুক এয়ারের রিটার্ন টিকিটের দাম ছিলো জনপ্রতি ২৫০০০ টাকা যা থাই এয়ারের চেয়ে এটলিস্ট ৭০০০ টাকা কম। এদের সার্ভিস ও ফুড আমার কাছে বেশ ভাল মনে হয়েছে। আড়াই ঘন্টা উড়াল দিয়ে আমরা যখন সুবর্নভূমি এয়ারপোর্টে পোছালাম তখন লোকাল সময় বিকাল ৫ টা। এয়ারপোর্ট থেকে বেরিয়ে পাতায়া যাওয়ার জন্য ১২০০ থাই বাথ দিয়ে একটা ট্যাক্সি ভাড়া করলাম। এয়ারপোর্ট থেকে পাতায়া বাসে করেও যাওয়া যায়। ভাড়া মনেহয় ২৫০/৩০০ থাই বাথ। উল্লেখ্য ১ থাই বাথ = প্রায় ৩ টাকা। প্রায় দুই ঘন্টা পর পাতায়া পোছালাম। বিচ রোডে এক ইরাকি ভদ্রলোকের হোটেলে চেকইন করে ফ্রেশ হয়ে রাত দশটা সময় বের হলাম পাতায়ার নাইট লাইফ দেখার উদ্দেশ্যে। পাতায়া সম্পর্কে আমাদের ট্যাক্সি ড্রাইভার বলেছিল "গুদ ম্যান দাইদ গো তু হ্যেবেন , ব্যাদ ম্যান দাইদ গো তু পাতায়া " । ওয়াকিং স্ট্রিট দেখে আমার মনে হয়েছে ট্যাক্সি ড্রাইভারের মতামত একদম সঠিক। পুরা ওয়াকিং স্ট্রিট সারিসারি ডিসকো, গো গো ডিসকো( হিজরা বা লেডি বয়দের ডিসকো) পানশালা, এরোটিক সেক্স শো ইত্যাদি বিচিত্র জিনিস দিয়ে সাজানো। পাতায়ার এই ওয়াকিং স্ট্রিট ঘুম থেকে জেগে উঠে রাত দশটার পর আর ঘুমতে যায় ভোর ৬ টায়। এখানে সারা দুনিয়া থেকে টুরিস্ট আসে । এদের মধ্যে রাশানরা আসে ভ্যাবসা গরম খাওয়ার জন্য, ইউরোপিয়া ও অস্ট্রোলিয়ানরা আসে কম খরচে মোজমাস্তি ও ভ্যাবসা গরম খাওয়ার জন্য। আর মধ্যপ্রাচ্যের লোকেরা কুয়ার তেল বেচে গো গো দের সাথে সেক্স করার জন্য আসে। আর আমরা গেছি বাকি সবাই কে কি করে দেখার জন্য। শুনলে অবাক হবেন যে পাতায়ার টুরিস্টের এটলিস্ট ৪০% হলো মধ্যপ্রাচ্যের মুসলমান বদগুলা। আরব,আমিরাত, দুবাই, ইরাক, ইরান, সুদান, মিশর কোন দেশের লোক নাই ! থাইল্যান্ডের সব গুরুত্বপূর্ন নিদ্দেশিকাগুলো তিন ভাষায় লেখা । এক নাম্বার হলো থাই ভাষা, দুই নম্বর এরাবিক ভাষা, তিন নম্বর হলো ইংরেজদের ভাষা। বোঝেন তাহলে! তারা দিনে হালাল রেস্টুরেন্ট এ লান্চ করে রাতে গো গো দের সাথে ডিসকো তে ডিনার করে। তাদের কারনে অবশ্য আমাদের একটা সুবিধা হয়েছে খাওয়ার ব্যাপারে। আমরা তাদের রেস্টুরেন্টগুলায় হালাল ফুড খেতাম। কারন থাই ফুড সিম্পলি ওয়াক থু ! এই কারনে আমাদের খাওয়ার পেছনে অনেক বাথ খরচ হয়েছে। যাক, অনেক প্যাচাল পারলাম। এবার কিছু ছবি দেখেন। আমি প্রচুর ছবি তুলেছি। আমার নাইকনের রিয়েল টেস্ট হয়েছে এই ট্যুরে
বাতাসের মধ্যে এই ছুড্ডু ট্রাভেলারের সাথে দেখা হয়ে গেল।
চোখের পলকে ইনি মিসেস রাশের সাথে ভাব জমায়ে ফেললো।
পরে আমার ধমক খেয়ে এই অবস্হা।
ওয়াকিং স্ট্রিট, পাতায়া।
রাতের ছবিগুলা তোলার সময় ট্রাইপডের অভাবটা বুঝতে পেরেছি।
হার্ডরক ক্যাফে
এই বস মেটালিকা, আয়রন মেইডিনের গান যা গায় না ! পুরা শেইকিং !
এত গরম আর বাতাসে হিউমিডিটি এত বেশি যে জুস, দুধ আর ঠান্ডা পানি পান করতে করতে আমার গলার অবস্হা টাইট। একটা সময় কথা বললে ডোলাল্ড ডার্কের মত ফ্যাক ফ্যাক শব্দ বের হত।
হার্ডরক ক্যাফেতে আমরা দুজন।
জোকারের সাথে মিসেস রাশ।
তুর্কিশ আইস্ক্রিমের দোকান।
এটা এক ধরনের আকুয়া ট্রিটমেন্ট। মাছগুলো আপনার শরীরের সব ডেড স্কিন নিমিষে খেয়ে ফেলবে। সত্যি এটা একটা অসাধারন এক্সপেরিয়েন্স।
এতকিছু দেখে হোটেলে ফিরলাম ভোর ৪ টায়। পরেরদিন দুপুরে গিয়েছেলাম পাতায়ার বিচ দেখতে। মনটায় খারাপ হয়ে গেল পাতায়ার বিচ দেখে, আর নিজেদের দেশের বিচের কথা ভেবে। এরা এই ছোটছোট বিচগুলা গুলা দিয়ে কোটি কোটি ডলার ইনকাম করছে। আর আমরা দুনিয়ার সবচেয়ে বড় সৈকতটাকে কতটায় না অযত্নে অবহেলায় ফেলে
রেখেছি।
আজ এটুকুই। পরের পর্বে আপনাদেরকে ফুকেট তারপর ব্যাংকক নিয়ে যাবো। ধন্যবাদ সবাইকে।