রাজধানীতে চিকুনগুনিয়া (Chikunguya) রোগের আতঙ্ক বাড়ছে। সেই সঙ্গে প্রকোপ বাড়ছে মশাবাহিত এ রোগটির। বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ায় প্রচারের কারণে অনেকেই মশাবাহিত এ রোগের ব্যাপারে অনেকটা আতঙ্কিত। তারা অহেতুক ভীতিতে ভুগছেন। কিন্তু রোগটি ততটা উদ্বেগের নয়। এটাও সত্য যে, এ রোগে মৃত্যুঝুঁকি না থাকলেও জটিলতার কারণে ৫ দিন থেকে ১২ মাস পর্যন্ত ভোগান্তি হতে পারে এবং মহামারী আকারেও দেখা দিতে পারে। ভাইরাসজনিত রোগ হলেও এ রোগের কোনো প্রতিষেধক টিকা নাই। তবে মানুষকে অহেতুক আতঙ্কিত না হতে অনুরোধ জানিয়েছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। কারণ একটু সতর্ক ও যত্নবান হলে এ রোগকে খুব সহজে মোকাবিলা করা সম্ভব। মশা নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে এ রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব। রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) সূত্রে জানা গেছে, চিকুনগুনিয়া সম্পর্কে দেশের দুইশ উপজেলার স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা প্রশিক্ষণ পাচ্ছেন। রোগের চিকিৎসা সম্পর্কে চিকিৎসকদের বিস্তারিত তুলে ধরা হচ্ছে। সবাইকে এ রোগের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে বলা হচ্ছে।
চিকুনগুনিয়া একটি মশাবাহিত ভাইরাসজনিত রোগ। এটি আফ্রিকা ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার রোগ হলেও সাম্প্রতিক সময়ে ভারতেরও এর প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। আমাদের দেশের কিছু এলাকাতেও আক্রান্ত রোগীর সন্ধান মিলেছে। ঢাকার কাছে দোহার ও নওয়াবগঞ্জ এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিপগঞ্জে এ মাসের প্রথম দিকে মশাবাহিত এ রোগের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। এডিস মশার কারণে সৃষ্ট এ রোগটি আমাদের দেশে সর্ব প্রথম ধরা পড়ে ২০০৮ সালে চাঁপাইনবাবগঞ্জে। নতুন রোগ হওয়ায় চিকিৎসকরা আগে থেকে অবহিত না থাকার কারণে যথাযথ চিকিৎসা নিয়ে কিছুটা সন্দেহ প্রকাশ করছে রোগীরা। রোগটি আসলে অনেকটা ডেঙ্গুর মতো। দক্ষিণ এশিয়ায় এ রোগের ব্যাপক বিস্তার থাকলেও বাংলাদেশে এর বিস্তার খুবই কম। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের মানুষ বিভিন্ন সময়ে আক্রান্ত হয়েছে এই জ্বরে। বিশেষ করে মহারাষ্ট্র গুজরাট, কর্ণাটকের প্রায় ৪৫ শতাংশ মানুষ এ রোগ আক্রান্ত। বিশেষজ্ঞদের মতে, চিকুনগুনিয়া মশার কামড়ে ছড়িয়ে থাকে। এ রোগ নিয়ে আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তারা।
এ রোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে শিশু বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ হানিফ বলেন, ডেঙ্গুর মতোই এ রোগটি মশার মাধ্যমে ছড়ায়। সচেতনতা ও প্রতিরোধ ব্যবস্থার মাধ্যমে খুব সহজেই এ রোগ মোকাবিলা করা যায়। সাধারণ ভাইরাসজনিত জ্বরের মতো শরীরে জ্বর অনুভূত হয়। জ্বর ৪-৫ দিন স্থায়ী হতে পারে। গায়ের বিভিন্ন অংশে লালচে বর্ণ বা র্যাশ দেখা দিতে পারে। এ ছাড়া হাড়ের জোড়া ও গিঁটে ব্যথা অনুভূত হয়। মশার হাত থেকে রক্ষা পেতে ঘর-বাড়ি ও আশপাশের পরিবেশ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। বিশেষ করে শিশুদের ঘুমানোর সময় মশারি টাঙানোর ব্যাপারটা লক্ষ্য রাখতে হবে। সর্বোপরি এ রোগ নিয়ে অযথা ভীতি বা আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। একটু সচেতন হলেই এ রোগ মোকাবিলা করা সম্ভব। বারডেম হাসপাতালের অ্যান্ড্রোক্রাইনোলজিস্ট বিভাগের ডা. শাহজাদা সেলিম বলেন, আতঙ্কিত না হয়ে প্রতিরোধ করতে হবে। আক্রান্ত ব্যক্তির প্রচণ্ড জ্বর গিঁটে গিঁটে ব্যথা ও বমি বমি ভাব হতে পারে। এ রকম লক্ষণ দেখা দিলে দেরি না করে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। এ রোগে মৃত্যু না হলেও অনেক রোগী দীর্ঘদিনের জন্য কর্মক্ষমতা হারিয়ে ফেলতে পারেন।
চর্ম ও অ্যালার্জি বিশেষজ্ঞ ডা. এমআর করিম রেজা বলেন, আক্রান্ত রোগীকে কামড়ানো এডিস মশা যদি সুস্থ কাউকে কামড়ায় তাহলে এ রোগ বিস্তার লাভ করে। ২ থেকে ৫ দিনের মধ্যে প্রথমে জ্বর দেখা দেয়। ডেঙ্গু জ্বরের মতো ত্বকে লালচে র্যাশ দেখা দেয়। গিরায় গিরায় ব্যথা অনুভূত হয়। চোখ লালচে হতে পারে। ঘুম কমে যায়। সাধারণভাবে অন্যান্য ভাইরাসজনিত রোগের মতো এ রোগের কোনো অ্যান্টিবায়োটিক লাগে না। অ্যানালজেসিক দেওয়া হয়। ২ থেকে ৫ দিনের মধ্যে জ্বর চলে গেলেও গিরা ব্যথা অনেক দিন পর্যন্ত থাকতে পারে। এমনকি বয়স্কদের দুই বছর পর্যন্ত প্রয়োজনীয় চিকিৎসা নিতে হতে পারে। ভাইরাসজনিত রোগ হলেও এ রোগের কোনো প্রতিষেধক টিকা নেই। মশক নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে এ রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব। মশা যাতে কামড়াতে না পারে সে জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। আক্রান্ত রোগীকে আলাদাভাবে মশারির ভেতর রাখা উচিত। রোগটি আমাদের দেশে একেবারে নতুন বিধায়, জ্বরে আক্রান্ত হলে ভীত না হয়ে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা গ্রহণ করুন। হলি ফ্যামিলি রেডক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ডা. সজল আশফাক জানান, চিকুনগুনিয়া জ্বরের উপসর্গগুলো মোটামুটি চেনা। এ রোগে মাঝে মধ্যে জ্বর ১০৩-১০৪ ডিগ্রিতে উঠে যায়। গেঁটে গেঁটে অসহ্য ব্যথা এবং গায়ে লালচে দাগ হয়। তবে একবার রক্ত পরীক্ষায় কিছু মেলে না। রোগ নিরাময়ের পর কিছু কিছু ক্ষেত্রে শরীরের পেশিতে ব্যথা অনুভব হতে পারে। তবে আতঙ্কিত হওয়ার কারণ নেই।
আমার আম্মা এই রোগে ভুগছেন । তার বেশ কষ্ট হচ্ছে । ঠিক মত হাততে পারছেন না । তার উপর গায়ে গায়ে জ্বর । তাই আপনারা সবাই সাবধান ।