Quantcast
Viewing all articles
Browse latest Browse all 15150

সাতসকালের সারপ্রাইজ

রাত দেড়টার সময় মিয়া-বিবি রান্নাবান্না শেষ করে ঘুমিয়ে পড়লাম। ভোরে মেহমান আসবে ঢাকা থেকে। আমার গিন্নীর বোন ও দুলাভাই। ওনারা আগে আমার বাসায় আসেননি। ঘন্টা তিনেক ঘুমিয়ে ভোর পাঁচটার আগেই উঠে পড়লাম। ভায়রা ভাইকে আগেই ফোনে বলে রেখেছিলাম যাতে ওনারা সিলেটে নামার পর আমাকে একটা কল দেয়। তাহলে স্ট্যান্ড থেকেই ওনাদেরকে নিয়ে আসতে পারবো। পাঁচটা পার হয়ে প্রায় সাড়ে পাঁচটার দিকে কল আসলো। কল দিয়েই আমাকে জিজ্ঞসা করলো,
-    এই তোমাদের বাসা এগারো তলায় না?
আমি হ্যাঁ বলতেই দেখি দারোয়ানকে ধরিয়ে দিলো। দারোয়ান বললো,
-    স্যার, আপনাদের মেহমান আসছে।
-    আচ্ছা, আমি নিচে আসছি।
নিচে নামার পরে দেখি কেউ নেই। আমাদের দারোয়ান আর কেয়ারটেকার সবে মাত্র উঠেছে। আমি সাথে সাথে কাহিনী বুঝে গেলাম। দৌড়ে দৌড়ে গলির মাথায় গিয়ে দেখি যা ভয় পেয়েছিলাম ঠিক তাই হয়েছে। ওনারা দুজন আরেকটা বিল্ডিং থেকে হাসতে হাসতে বেরিয়ে আসছেন। আমাকে দেখে হাসতে হাসতেই বললেন,
-    আর বইলো না, অন্য বিল্ডিং এ চলে গিয়েছিলাম। গিয়ে বললাম যে, জামান সাহেবের বাসায় যাবো। দারোয়ান জিজ্ঞেস করলো কয় তলায়? বললাম এগারো তলায়। দারোয়ান জানালো যে, এগারো তলায় জামান স্যার থাকেনা, জামাল স্যার থাকেন। আমি ভাবলাম যে, মনেহয় দারোয়ানের জানায় ভুল আছে। তাই জামানকেই জামাল ভাবছে।
আমি আতঙ্কিত হয়ে বললাম,
-    আরতো কিছু হয়নি? তারপর কি আমাকে মোবাইলে কল দিয়েছিলেন?
-    আরে না। আমি আরেকটু সিওর হবার জন্যে বললাম যে তুমি ভার্সিটিতে চাকুরী করো। সেটাও মিলে গেলো। তুমি আগে থেকে ওদের বলে রাখো নাই ভেবে, তখন আমি তোমাকে কল দিলাম। 

আমি হাফ ছেড়ে বাঁচলাম। বললাম,
-    যাক, বাঁচলাম। আর কিছু হওয়ার আগেই আমি চলে এসেছি। ঐ বিল্ডিং এর এগারো তলাতে বিএ ডিপার্টমেন্টের এক সিনিয়র টিচার থাকেন। ওনার নাম জামাল।
আমার কথা শুনে ওনার মুখের হাসি অনেকখানি চওড়া হয়ে গেলো। বললেন,
-    কে বলেছে আর কিছু হয় নাই? তোমার সাথে মোবাইলে কথা বলতে বলতেই দেখি তোমাদের আপু দারোয়ানকে দিয়ে ইন্টারকমে কল দেয়াচ্ছে। একজন মহিলা ঘুমঘুম কন্ঠে ফোন ধরতেই তোমাদের আপু নাটকীয় ভঙ্গিতে বলা শুরু করলো, “এই! আমি তোমার বোন না? আমাদের বাসায় ঢুকতে দিবা না? এই বৃষ্টির মধ্যে তাহলে আমরা কোথায় যাবো বলো?” ঐ মহিলা হতভম্ব হয়ে যখন উত্তর দিয়েছে যে, “আমারতো কোন বোন নাই।” তখন তোমার আপু বুঝতে পেরেছে যে ওটা আরেকজনের কন্ঠ। আমরা দারোয়ানকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে ভিতর থেকে দৌড়ায় দৌড়ায় বের হয়ে এসেছি।
আমি আর কি বলবো? শুধু বললাম,
-    ভোরবেলা যদি আমাদের সারপ্রাইজ দেয়ার চক্করে না থেকে শুধু একটা কল দিতেন, তাহলেই আর এতো ভোগান্তি হতো না।
উনি দেখি আবারও হাসতে হাসতে বললেন,
-    আরে মিয়া এইটা কি সারপ্রাইজ? গতকালতো তোমাদের আপুর কথা শুনে আমি আরও বেশি সারপ্রাইজড হয়ে গিয়েছি।
-    কি কথা?
-    তোমাদের আপু আমাকে বললো, “আচ্ছা, আমরা যে সিলেট থেকে শ্রীমঙ্গলে যাবো, তুমি আমাদের পাসপোর্টে ভিসা লাগালে না?”
-    মানে?!!
ভায়রা ভাই আর কিছু বলতে পারেনা। হাসতে হাসতে রাস্তার মধ্যেই প্রায় উল্টে পড়ছে। পিছন থেকে আপু চিৎকার করে প্রতিবাদ করতে থাকে,
-    আমি কি করবো? আমি শীলং আর শ্রীমঙ্গল গুলিয়ে ফেলছিলাম। হাসবানা খবরদার!
সুবহে সাদিকে এতো সারপ্রাইজ আর সহ্য হচ্ছিলো না। আমি শুধু বললাম,
-    ভাই, কাঠাল আনছেন সাথে?
-    কেন?!!
-    নাহ, থাকলে ভালো হতো। আপনাদের সারপ্রাইজের চক্করে আমার মাথা চক্কর মারতেছে। কাঁঠাল থাকলে আমার মাথায় ভেঙ্গে খাইতে পারতেন।
আমার কথা শুনে আরেক প্রস্থ হাঁসির রোল পড়লো। আমি ওনাদেরকে নিয়ে বাসার দিকে হাটা ধরলাম।


Viewing all articles
Browse latest Browse all 15150

Trending Articles



<script src="https://jsc.adskeeper.com/r/s/rssing.com.1596347.js" async> </script>