Quantcast
Channel: প্রজন্ম ফোরাম
Viewing all articles
Browse latest Browse all 15150

চুক্তি পর্ব-৪

$
0
0

চুক্তি পর্ব-৩

গত পর্বের কিছু অংশ হতে...

নিশি, পাগলামি করবেন না। বাড়ি ফিরে যান। কয়েকটা দিন সময় দেন আমাকে। আরো ভালো করে ভেবে দেখেন। আমিও ভেবে দেখি। ঠিক তখনি খেয়াল করে নিশির সাথে একটা লাগেজ আছে। প্রস্তুতি নিয়েই সে এসেছে।
ভাবাভাবি আমি অনেক আগেই করেছি। আপনি রাজী থাকলে বলেন। ডিলটা হবে। নইলে চলে যাবো। আপনি সুযোগটা হারাবেন।
আপনি দেখছি আচ্ছা নাছোড়বান্দা! কিন্তু এখন রাতটা থাকবেন কোথায়?
মৃদু হাসে নিশি। নিশির নিশি যাপনের চিন্তা আপনার হাতে দিলাম। তাহলে ডিল?
কোনো জবাব দেয় না অনিমিখ। মাথায় হাজারো চিন্তার স্রোত বয়ে যাচ্ছে। সে একটা ট্যাক্সি থামিয়ে ফেলে।
চলুন। দেখি কী করা যায়? আপনি বড় অদ্ভুত!!


৭.

ট্যাক্সির চাপা জায়গায় প্রায় গায়ে গা লাগিয়ে বসে আছে নিশি। মুখটায় সোডিয়ামের ভূতুড়ে আলো খেলা করছে। সেখানে কোনো উদ্বেগের লেশমাত্র নেই; বরং এক ধরণের চাপা আনন্দ আছে! আচ্ছা, নিশির মাথায় গোলমাল নেই তো! প্রায় অচেনা এক যুবককে কীরকম একটা প্রস্তাব দিলো। সাহস আছে বটে! তার নিজের কথা ভেবে বেশ ছোট হয়ে গেলো অনিমিখ। ওরকম সে কি কখনো ভাবতে পারতো? আদৌ?

সে পরে ভাবা যাবে। এখন নিশিকে বাসায় নেবে কীভাবে সেই চিন্তাটা পেয়ে বসে। কী ভয়ানক গোলমালটাই হবে! বাবাকে বোঝানো গেলেও মা পাগলও হয়ে যেতে পারেন। কী বলবে সে, হ্যাঁ? বিয়ে করে ফেলেছে? নিজেরই ঠিক নাই, তো বিয়ের মত আহ্লাদ! কিন্তু পারতে হবে ওকে। আফটারঅল, ডিলটা ধীরে ধীরে বেশ ভালোই ঠেকছে। তাছাড়া, নিজের নিস্তরঙ্গ জীবনে হঠাত একটা মস্ত ঢেউ উঠি উঠি করছে। বহুদিন বাদে মনে হচ্ছে, এই রুক্ষ, পাষণ্ড পৃথিবীতে হয়ত তারও কৌতুহল উদ্দীপক কিছু করার আছে! এটা ফেলনা নয় মোটেও।

কী ভাবছেন?
চমক ভেঙ্গে অনিমিখ – ভাবছি, আপনার বড় কষ্ট হবে আমাদের বাড়িতে। গরীবের বাড়ি। আপনার অভ্যাস তো নেই ওসবে। আর মাকে যে কীভাবে সামলাবো?
আমার উপর ছেড়ে দিন। আর অমত করবেন না; লেটস ডু ইট!
ঠিক আছে। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বাইরের চলমান জনস্রোত দেখতে থাকে অনিমিখ।

রাত নয়টা বেজে একুশ মিনিট। আসগর সাহেবের বাড়িতে একটা ছোটখাট হুলুস্থুল বেঁধে গেছে। দুঃসাহসিক একটা ব্যাপার ঘটেছে। অনিমিখ আর নিশি দাঁড়িয়ে আছে অনেকটা কাঠগড়ায় দাঁড়ানোর ভঙ্গিতে। বিস্ময় ভরে চেয়ে আছেন আসগর রহমান। মিরানা মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়েছেন।

এ কি করলি অনি? মাথা কি খারাপ হয়েছে তোর? নিজের কোনো গতি নেই। তো আরেকজনের ভার নিলি কোন বিবেচনায়? ছি ছি। মাথা কাটা গেলো আমার!
মা!!
চুপ কর। শয়তান কোথাকার! তোর পেটে পেটে যে এত ছিলো, ঘুণাক্ষরেও তো বুঝতে পারি নাই! আর এই মেয়েটাইবা কেমন? এই যে মেয়ে, দেখি এদিকে আসো তো...

তা নিশি এগিয়ে গেলো। কোনো জড়তা ছাড়াই টুপ করে একটা সালাম করে ফেললো। মিরানা নিষেধ করার সময়ই পেলেন না। ঘোমটাটা সরিয়ে তিনি যেন মুগ্ধ হয়ে গেলেন! এত সুন্দর কাউকে যে দেখবেন, সে চিন্তাও তিনি করেন নি। মুখটা হা হয়ে রইলো খানিকক্ষণ।

চমৎকার চোখ মুখ। মুখে একটা স্মিত হাসি। আর চোখগুলিতে হাসির মাঝেও কেমন একটা গভীর দুঃখের বর্ণচোরা পাথর চুপটি করে বসে রয়েছে। এমন কাউকে চাইলেও রাগ দেখানো যায় না! শত চেষ্টা করেও মিরানাও পারলেন না। বরঞ্চ আজব এক প্রশ্ন করলেন।

তুমি এই গাধাটাকেই শেষমেষ পেলে! না, না এটা বড় অন্যায় হলো! ঠিক হয় নি, মোটেও ঠিক হয় নি। ঘন ঘন মাথা নাড়াতে থাকেন তিনি। বলতে নেই যদিও আমার ছেলে...বানরের গলায় মুক্তার মালা হলো।

মৃদুস্বরে আপত্তির মত একটা শব্দ করে অনিমিখ – বানরটা বেশি হয়ে গেলো, মা!

মিরানা ঝামটে ওঠেন – চুপ কর। বানরই তো! এর শাস্তি পরে পাবি তুই। পারিপার্শ্বিকতার গাম্ভীর্য ফুঁড়ে একটা চাপা হাসি শোনা গেলো। মিথি হেসে ফেলছে। মিরানা কঠিন চোখে তাকালেন।

অনিমিখের বুক থেকে যেন একটা পাথর নেমে যায়। হাঁফ ছেঁড়ে বাঁচে। একটা মস্ত বাধা পার হওয়া গেছে। মায়ের অপছন্দ হয় নি। এখন ভালোয় ভালোয় প্ল্যানটা ঠিকমত আগালেই হয়। হঠাত দেখে আসগর সাহেব তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে আছেন। অভিজ্ঞ চোখে কী একটা বুঝবার চেষ্টা করেন। সংকুচিত হয়ে যায় অনিমিখ।

বাবা, কিছু বলবে? মাফ করে দাও। তোমাদের না জানিয়ে...
তুই সব জেনেবুঝে করেছিস তো! একবার বললে তো পারতি। মেয়েটার বাবার ঠিকানা দিস। একবার কথা বলা দরকার। তারপর একটু থেমে থেকে ভারী গলায় – দেখ, দায়িত্ব নেয়ার থেকে পালন করাটা কিন্তু বেশি কঠিন। মনে রাখিস কথাটা।

মুখে কোনো উত্তর দেয় না। কেবল মাথাটা নাড়ে অনিমিখ।

নিশিকে একরকম মিরানার হাত থেকে ছিনিয়ে নিলো মিথি।
দাও, দাও ওকে আমার হাতে দাও তো, মা।
আমি মিথি। ঐ বোকাটার একমাত্র বোন। তুমি তো নিশি, তাই না?

নিশি দেখলো, চমৎকার হাসিখুশি একটা মেয়ে কেমন উজ্জ্বল চোখে তাকিয়ে আছে। বড় মায়াকাড়া ভাব। সুভার কথা মনে পড়লো। সুভাটা যদি এরকম হাসিখুশি হতো!

হ্যাঁ, আমি নিশি। কীভাবে জানলে?
আমি জানি। আমার অনেক বুদ্ধি তো। ঐ হাঁদারামটার সাথে আমাকে গুলিয়ে ফেলো না। খিলখিলিয়ে হেসে ওঠে মিথি।
হুম, তাই নাকি? তবে তো তোমাকে সমঝে চলতে হবে।
হবেই তো, ভাবী। আমি তোমার একমাত্র ননদ। বুঝেশুনে কিন্তু!
ভাবী বললে?
ওমা, তো কী ডাকবো? তোমরা সত্যি বিয়ে করেছো তো, নাকি?

তাড়াতাড়ি সামলে ওঠে নিশি – না, না কী বলছো? আগে কখনো শুনি নি তো! কেমন অদ্ভুত লাগছে! তোমাকে কিন্তু আমার খুব ভালো লাগলো, মিথি!
হু, হু লাগতেই হবে।
খুব আত্মবিশ্বাস দেখি। দু’জনেই হেসে ফেলে। গুমোট পরিবেশটা একটু একটু হালকা হতে থাকে।
তোমাকে কিন্তু আজ আমার সাথে থাকতে হবে, ভাবী।
হুম, সেই ভালো।
ভালো? চোখ টিপে চাপা হাসি হাসে মিথি। অবশ্য চাইলেও ঐ গরুটার গোয়ালঘরে থাকতে পারতে না।
মানে?
মানে হলো গিয়ে আমার এক প্রকারের সর্বনাশ। ঐ চাপা গোয়ালঘরে দু’জন আঁটবে না। ঘর অদল-বদল করতে হবে। তোমরা এমন হুট করে কথা নাই, বার্তা নাই, হাজির হবে...সে কে জানতো! কাল সব ঠিক করে দিবো, প্রমিস!
যেন আমি মরে যাচ্ছি... থাকার জন্য। আমি তোমার সাথেই থাকবো।
দেখা যাবে।
হু, দেখে নিও।

এরকম টুকটাক মেয়েলি আলাপ চলতে থাকে। দূর থেকে খেয়াল করে অনিমিখ। বেশ চালু আছে তো! মিথির মত বিচ্ছুকে প্রায় হাত করে ফেলেছে। ভালোই হলো। হঠাত মনে হলো, ভালো কি হলো? যদি কখনো মঈন সাহেবের সামনে দাঁড়াতে হয়, কী জবাব দেবে সে? এই মিথ্যের ঘরবসতি ভেঙ্গে গেলেইবা কী ঝড়টা আসবে? সেটা ভাবতেই মুখটা তেতো হয়ে যায়। 

চলবে..


Viewing all articles
Browse latest Browse all 15150

Trending Articles



<script src="https://jsc.adskeeper.com/r/s/rssing.com.1596347.js" async> </script>