Quantcast
Channel: প্রজন্ম ফোরাম
Viewing all articles
Browse latest Browse all 15150

এবং পুনশ্চ পর্ব-২

$
0
0

এবং পুনশ্চ পর্ব-১

খেলা শেষের বাশি বেঁজে উঠলো।থেমে গেলো বৃষ্টির ছেলে মানুষী খেলা।ফেলানীর খেয়াল হলো বৃষ্টি থেমে গেছে।মায়ের কথা মনে পড়তেই বড় বিরক্ত হলো ফেলানী,’মায়ে কতকন অইলো ছ্যাড়াডারে নিয়ে গরে ঢুকচে,অহনতরি বাইরে আওনের নাম নাই।বেশ দ্বন্দে ভোগে ফেলানী , ডাকবে , কি ডাকবে না তার মাকে।অবশেষে ফেলানী ডাকে –  ' মাও গো,ও মাও  '।
কোন আওয়াজ হয় না ঘরের ভেতর থেকে । ফেলানী আবার ডাক দেয় ,  ' মাও গো , ও মাও '।
‘চুপ কর হারামজাদী; কর্কশ গলায় ফেলানীর মা সালমা বিবি বলে ওঠে।ফেলানী ধীরে ধীরে তাকায় মায়ের দিকে , দরজা আধখোলা ।ঘরের ভেতরে লোকটা উপুড় হয়ে শুয়ে আছে।একটু তফাতে সালমা বিবি দাঁড়িয়ে ।লাল ছাপা শাড়িটা আজ পরেছে সালমা বিবি ।তবে এই মূহুর্তে শুধু গায়ে জড়িয়ে আছে ।মুখে ব্যাবহৃত সস্তা প্রসাধনী ঘামে মিশে কিম্ভুত দেখাচ্ছে তাকে।সমস্ত শরীরে ক্লান্তির ছাপ।ফেলানী চোখ নামিয়ে নেয় মায়ের দিক থেকে।সালমা বিবিও যেন লজ্জা পায়।ঘরের কোনার দিকে গিয়ে কাপড় ঠিক করতে ব্যাস্ত হয়ে পড়ে।ফেলানী খুব অবাক হয়ে মায়ের কথা ভাবে।বোঝার চেষ্টা করে এই নিত্য নৈমত্তিক ঘটনা থেকে।মা প্রতিদিনই কোন না কোন লোকের সাথে ঘরে ঢুকে যায়।দিনে অথবা রাতে।ফেলানীর তখন বসে থাকতে হয় বাইরে।দিনে তেমন সমস্যা হয় না ফেলানীর তবে রাতে সে খুব ভয় পায়।ফেলানীর মনে হয় রাতের চাদর ছিড়ে দু’টো হাত তাকে চেপে ধরছে।ভয় পেতে পেতে কখনো সে ঘুমিয়েও পড়ে এক চিলতি বারান্দায়।ফেলানী কখনোই মায়ের স্বইচ্ছায় বাইরে আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে পারে না।অপেক্ষার শেষ প্রহরে এসে সে তার মাকে ডাকতে বাধ্য হয় এবং প্রতিদিনই মায়ের একই অবস্থা দেখে।এরকম ঝড়ে উড়ে আসা শুকনো পাতার মতন নির্জীব।কোন লোক সম্পর্কেই ফেলানী তার মাকে কিছু প্রশ্ন করে না।কেন লোক আসে কেন টাকা দিয়ে যায়।কারণ ফেলানী এখনো ব্যবসা বুঝে না।ফেলানী মাঝে মাঝে মায়ের কাছে খুব মজার মজার গল্প শোনে।পুলিশের গল্প , পাতিনেতার গল্প।মাঝে মাঝে এইডস ভুতেরও গল্প শোনে।একবার এক লোক তার গায়ের চাদরটা ফেলানীকে দিয়েছিল।যে চাদরটা ফেলানী এখন পরে আছে।প্রতিদিনকার মতো কিছুক্ষণ পর লোকটা বের হলো ঘর থেকে।সালমা বিবির হাতে কিছু টাকা দিল।যাওয়ার আগে ফেলানীর দিকে তাকিয়ে পান খাওয়া তরমুজের বিচির মতো দাঁত বের করে একটা হাসি দিল।শকুনের হাসিও এর থেকে সুন্দর।ফেলানীকে চুপ থাকতে দেখে সালমা বিবি ধীরে ধীরে মেয়ের দিকে এগুলো। নরম গলায় বললো “
  ' কি অইচেরে মা ? '
ফেলানীর চোখ ফেটে জল বেরিয়ে এলো ।মায়ের বুকে মাথা রেখে ফুপিয়ে ফুপিয়ে বললো ,   ' খিদা লাগছে '  । সালমা বিবির খেয়াল হলো অনেক বেলা হয়েছে।নিজেরও প্রচন্ড খিদা লেগেছে।ঘরে খাবার নেই দেখে সালমা বিবি ফেলানীর হাতে টাকা দিয়ে বললো , “ ' যা মা , তর লতিফ চাচার কাচ থাইক্যা খাওনের কিছু লইয়া আয় ” '। লতিফ মিঞার দোকান বস্তির মধ্যে হলেও ফেলানীদের ঘর থেকে একটু দূরে। ফেলানী বসে থকে ,যেতে চায় না। কিন্ত খিদা নিয়ে কতক্ষণ ।ফেলানী মায়ের দিকে তাকিয়ে আকুল কণ্ঠে বলে ,
' মাও গো , কোটে হামার গেরাম ।যেটি মোর জন্ম হচিলো । সেটি গেলে হয় না '। 
আর বসে থাকে না ফেলানী – রওনা দেয় লতিফ মিঞার দোকানের দিকে সালমা বিবি অবাক হয়ে তাকায় মেয়ের দিকে।ফেলানী বেশ বেড়ে উঠেছে ।গায়ে গোতরে ডাঙর হয়ে গেছে। ভয় পায় সালমা বিবি। বয়সতো বেশি নয় । জন্মের কথা মনে পড়ে ।গ্রামের কথা মনে পড়ে।ফেলানীর বাবা মহিউদ্দিনের কথা মনে পড়ে।গ্রামের কৃষ্ণচূড়া , পলাশ , শিমুলের কথা মনে পড়ে । গাছে গাছে ফুল , ঘাসের গালিচা , বিলের শাপলা, পদ্ম , সব বায়োস্কোপের মতো চোখের সামনে ধরা দেয়। সুখের রাত স্বামীর সোহাগ সব মনে পড়ে ।মনে পড়ে নিজের ধর্ষিত হবার রাত ।পরদিনের নাটকীয় গ্রাম্য সালিস , ঘাড় ধাক্কা দিয়ে মা মেয়েকে গ্রাম থেকে বের করে দেওয়া, মহিউদ্দিন মিঞার গলায় দড়ি দিয়ে আত্নহত্যা করার দৃশ্য।চমকে উঠে সালমা বিবি চোখ ফেটে জল বের হয় । ভয়ে গা শিউরে ওঠে যদি নিজের মেয়েকেও বেশ্যা বানাতে হয় । যদি ফেলানীও শরীর বেঁচে খায় ! ' ইতি পারে না ! কিছুতেই না '– অস্ফুটে বলে ওঠে সালমা বিবি।

( চলবে )


Viewing all articles
Browse latest Browse all 15150

Trending Articles



<script src="https://jsc.adskeeper.com/r/s/rssing.com.1596347.js" async> </script>