Quantcast
Channel: প্রজন্ম ফোরাম
Viewing all articles
Browse latest Browse all 15150

চুক্তি পর্ব-৭

$
0
0

চুক্তি পর্ব-৬

গত পর্বের শেষের কিছু অংশ হতে...

কিন্তু নিশির চোখে কোনো ঘুম নেই।  অনিমিখ এমন বেরসিকের মত দ্রুত ঘুমিয়ে পড়ায় তার একটা রাগ হলো। জেগে থাকলে কি ভালো লাগতো? ইচ্ছে করছে চিমটি কেটে উঠিয়ে দেয়। কেন এরকম লাগছে? ভেতরে ভেতরে সে যে কী ভয়ানক একা, সেটা নির্লজ্জের মত আত্মপ্রকাশ করতে চাইছে!  চুক্তির অংশীদারের সাথে এই কেমন কেমন লাগাটা কি অশোভন নয়? নিশি এই ভয়ানক আত্মস্খলনে মরমে মরে যেতে থাকলো!


১৩.

কিছুদিন পর...

মঈন সাহেবের পিএস বরকত উল্লাহ দরজায় একটা হালকা টোকা মারেন।
আসবো, স্যার?
ইয়েস, কাম অন ইন।
গুড মর্নিং স্যার, একটা রিপোর্ট তৈরি করেছি। দেখাবো?
মর্নিং...কীসের রিপোর্ট?
ঐ যে অনিমিখ রহমানকে নিয়ে খোঁজ নিতে বললেন না...
ওঃ, হ্যাঁ, হ্যাঁ... রিপোর্টই তৈরি করে ফেললে? ওয়াণ্ডারফুল!
জ্বী স্যার। যে কাজ যেভাবে করা উচিত। এই যে এই ফাইলে সব ইনফো গুছিয়ে লেখা আছে। মানে আমি যতদূর খোঁজ নিতে পেরেছি, সেটুকু দিয়ে দিয়েছি।
ওয়েল ডান। তুমি যখন করেছ, তখন আমার বিশ্বাস আছে, যত্ন নিয়ে করেছ। আর ইয়ে... সিক্রেসির ব্যাপারটা মাথায় আছে তো?
হ্যাঁ, ও নিয়ে চিন্তা করবেন না, স্যার। আমি যথাসাধ্য চেষ্টা করবো।
ভেরি গুড। এখন তুমি আসতে পারো।

মঈন সাহেব ফাইলটা খুলে পড়া শুরু করলেন। এলেম আছে ছেলেটার! শুরুতেই অবশ্য একটা খটকা লেগে গেলো। অনিমিখের বাবার নামটা কি পরিচিত লাগছে? আসগর রহমান? কী একটা যেন পড়ি পড়ি করেও মনে পড়ছে না! এমন সময় তারস্বরে ফোনটা বেজে ওঠে।
রিসেপশনিস্ট মেয়েটার গলা শোনা গেলো – স্যার, আসগর রহমান লাইনে আছেন। বলেছেন আর্জেন্ট। কে এক অনিমিখের বাবা নাকি...
ওকে, পুট হিম থ্রু, প্লিস। এ তো কাকতালীয় হলো দেখি! ভাবতে থাকেন মঈন সাহেব। কোন আসগর?

হ্যালো, মঈন স্পিকিং...
সালাম আলাইকুম, আমি আসগর রহমান বলছি। আমাকে হয়তো চিনবেন না। আমি অনিমিখের বাবা।
মঈন একটা ধাক্কামত খান। চিনবেন না? কী আজব কথা! ভাইজান তাকে চিনতে পারেন নি। কিন্তু সে কীভাবে ভুলতে পারে? কিছুক্ষণ কিছুই বলতে পারলো না।

হ্যাঁ, ওয়ালাইকুম সালাম। অনিমিখের বাবা? বলেন...
আপনার কিছুটা সময় নিবো...ফোনে এসব হবে না। সামনাসামনি কথা বললে ভালো হত। একটা এপয়ন্টমেন্ট যদি দিতেন...
মরমে মরে যান মঈন। এপয়ন্টমেন্ট চাইছেন...। কিছুটা সামলে নিয়ে – হুম, ক’বে আসতে চান?
সামনের মঙ্গলবার? বেলা এগারোটা...
এক সেকেণ্ড... একটু দেখে নেই... আসলে সেই সময় একটা মিটিং থাকে। মঈন কিন্তু অবলীলায় সেই এন্ট্রিটা কেটে দেন।
হ্যাঁ, সম্ভব। আসতে পারেন।
ধন্যবাদ, তবে সাক্ষাতেই কথা হবে। খোদা হাফেজ।
ঠিক আছে। খোদা হাফেজ।

ফোন রেখে হতভম্ব হয়ে বসে থাকেন। হাতে ধরা ফাইলটা দেখার খুব একটা দরকার থাকে না। তবুও চোখ বুলিয়ে যান। কী লেখা থাকে সেখানে...সব গৌণ হয়ে যায়। অনেকদিন বাদে একটা মুচকি হাসি ফুটে ওঠে মঈন সাহেবের ঠোঁটে। কাকতালীয় আর কাকে বলে!

মিরানা বেগম অনিমিখের এই হঠাত বিয়ের ব্যাপারটা ঠিক মেনে নিতে পারেন নাই। বলা নেই, কওয়া নেই, হঠাত কোত্থেকে এক মেয়েকে নিয়ে এসে হাজির হলো। ঘটনায় অস্বাভাবিকতা একটা আছে। কিন্তু কী সেটা, ঠিক বুঝতে উঠতে পারছেন না। বুঝি বুঝি করেও ফস্কে যাচ্ছে! আর সেই মেয়েকেও ঠিক কিছু বলা যাচ্ছে না। কিছু বলতে যাবেন, তখন এমন মায়াকাড়া মুখ করে তাকায়, মিরানার মত কঠিন হৃদয়ের মহিলাও নিদারুণ সংকোচে পড়ে যাচ্ছেন। এ তো মহা মুশকিল হলো। এদের আর কী! সব যন্ত্রণা তো তাঁরই...এই সংসারটা যে কোন ঠেলাগাড়িতে চলছে, তা যদি এরা কেউ বুঝতো!

নিদেনপক্ষে তাঁর স্বামী লোকটাও যদি বোঝার চেষ্টা করতো... এ ক’দিনেই নতুন বৌমার ন্যাওটা হয়ে গেছে। সকালবেলাটায় রাজ্যের আদিখ্যেতা শুরু হয়ে যায়। বসে বসে গুটুর গুটুর গল্প না করলে তাঁর আর চলছে না! অবসরে যাওয়া লোক একটা অভিশাপ!

এমনি সময়ে আসগর রহমান ঘরে ঢুকলেন। তাঁকে দেখেই মিরানা ফোঁস করে উঠলেন।
খুব তো আড্ডা পিটিয়ে দিন শুরু করছো। ভালোই আছো...
আসগর হেসে ফেললেন – হিংসা হচ্ছে? তুমিও তো জয়েন করতে পারো।
আমার অত ফুরসত নাই। তুমিই প্যাঁচাল পাড়ো।
তা এটাই তো প্যাঁচাল করার বয়স! সারাদিন বসে থাকি। আমি আর করবোটা কী, হ্যাঁ?
করার কিছু নাই? বেশ কিছুদিন তো গেলো...একটা খোঁজও নিলে না। ছেলেমেয়েরা যা করুক, আমাদের একটা দায়িত্ব আছে না? নিশির বাবা-মায়ের সাথে আমাদের কথা বলা দরকার।
ওঃ, এই কথা! সে তো ফোনে কথা বলেই এলাম। এপয়ন্টমেন্ট করতে হলো। ভয় হচ্ছে বুঝলে, মিরানা?
কীসের ভয়?
তেল আর জল না মেশার ভয়। ওরা যে অত বড়লোক, সেটা নিশিকে দেখে বোঝার উপায়ই নেই! একটুও অহংকার কিংবা গরিমা নেই। অনিটা কী করে এরকম করলো, ঠিক বুঝে উঠতে পারছি না!
না মিশলে না মিশবে। তুমি অত চিন্তা করছো কেন? আমাদের কর্তব্যটুকু পালন করা নিয়ে কথা! বাকীটা আল্লাহর হাতে।
কী জানি, দেখি কথা বলে... আগ বাড়িয়ে কথা বলতে যাচ্ছি। ওদের থেকেও কাউকে না কাউকে তো প্রথমে যোগাযোগ করা উচিত ছিলো। সে নিয়ে মাথাব্যথাই নেই!
ওসব বড়লোকদের মতিগতি...আমরা কি আর অত বুঝবো? আমার রাগ হচ্ছে অনিমিখের উপর। আমাদের না জানিয়ে এরকম একটা কাজ সে করতে পারলো কী করে?
কিছু একটা ফাঁক আছে, মিরানা। ধরতে পারছি না, এই যা।
আশ্চর্য আমারও তাই মনে হয়!
তুমি এবার নিশিকে এগুলো নিয়ে বিব্রত করতে যেও না...
আমি কি তোমার বুদ্ধিতে চলি নাকি? আমার যা করার তা করবোই...

মর্মাহত চোখে স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে থাকলেন আসগর সাহেব।

১৪.

অনেক বেলা হলেও অনিমিখ উঠছে না। একটু আজবই! আর অন্যদিনে সকাল সকাল বেরিয়ে যায়। ফেরে সেই গভীর রাত্রে। বলা ভালো পালিয়েই যায় বোধহয়। অস্পৃশ্য নিশির সঙ্গ ভালো লাগবে কেন? একটা বুক মোচড়ানো প্রত্যাশার রিক্ততা নিয়ে একভাবে অনিমিখের ঘুমন্ত আকারটির দিকে তাকিয়ে থাকে নিশি। তখনি হঠাত কাণ্ডটা ঘটে যায়।

অনিমিখ চট করে চোখ মেলে সেই ভূবন ভোলানো হাসিটা হেসে বলে – কী দেখছেন, বলেন তো!
তাড়াতাড়ি সামলে উঠে নিশি – না, কী দেখবো আবার? এ আবার কীরকম কথা?
আরেব্বাস, দেখতে থাকবেন আবার বললে ক্ষেপে যাবেন...তা তো হবে না।
হ্যাঁ, চোখ বন্ধ করেও সব দেখতে পান, তাই না? ফুট কাটে নিশি।
মনের চোখ কি বন্ধ করে রেখেছি নাকি?
আচ্ছা বিচ্ছুর পাল্লায় পড়লাম তো দেখি! তা আজকে বাইরে যাওয়া হলো না কেন?
বাইরে থাকলেই খুশি হোন মনে হয়? সে যাক, ভাবলাম, বড় অন্যায় করছি... সদ্য বিয়ে করা বউকে সময় দিচ্ছি না। হানিমুন টানিমুন... এটলিস্ট বাইরে ঘুরতে যাওয়া কিছুই হচ্ছে না...আহা!
থাক, থাক ওসব নিয়ে আপনার মাথা না ঘামালেও চলবে।
কী বলছেন? আলবৎ ঘামাতে হবে।

তড়াক করে বিছানা ছেড়ে নেমে আসে অনিমিখ। জানলার পাশের দেয়ালটার ব্যাকগ্রাউণ্ডে নিশিকে বন্দী করে বিপজ্জনক দূরত্বে ঘনিষ্ঠ হয়। নিশির পাগল করা একটা মিষ্টি গন্ধ আছড়ে পড়ে অনিমিখের মুখে। ক্ষণকালের জন্য চোখে চোখ রাখে অস্বীকারি দুটো সত্তা। ঠিক ততটুকুই সময় যতটুকু লাগে এক রহস্যময় বোঝাপড়ার জন্য, যার পরে মন বদলের সেই জলছাপ পাকাপাকি হয়ে যায়! শত চেষ্টাতেও আর সেটা মোছা যায় না।

অনিমিখের বুকে আচমকা একটা ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয় নিশি। নিশি মৃদু কাঁপতে থাকে। পুরুষের ঘনিষ্ঠতা তার অজানা কিছু নয়। কিন্তু এ অন্য ব্যাপার! কিছু একটা আছে, যেটা ঠিক বুঝিয়ে বলার মত নয়।

সম্বিত ফিরে পায় অনিমিখ – মাফ করবেন। কী, খুব ভড়কে গেছেন তো! আপনি তো খুব মানুষকে চমকে দেন। সুভার কাছে শুনেছি। এখন কেমন লাগে? হা হা হা।
কী!
কিছু না! আসলে বলছিলাম কী, আমাদের বিয়ের নাটকটা আরো বিশ্বাসযোগ্য করতে হলে আমাদের একটু আধটু পাব্লিকলি প্রেম দেখাতেই হবে। না হলে সন্দেহ হতে পারে। মা কেমন সন্দেহ চোখে তাকিয়ে থাকে, খেয়াল করেন নি? আমি তো বেকার। কাজ নেই। অফুরন্ত সময়। ভাবলাম, বেড়িয়ে আসি না কেন? চলুন, একটু ঘুরে আসা যাক। আপনাকে একটা অদ্ভুত সুন্দর জায়গায় নিয়ে যাবো। আপনার ভালো লাগবে।
ওঃ, তাই বলেন!
খুব ভয় পেয়ে গেছিলেন? ম্যাক্স কি ঐভাবে...
বাব্বাহ! ম্যাক্সের কথাও দেখি মনে রেখেছেন? একবারই বলেছিলাম... চমতকার একটা মুক্তোঝরা হাসি হাসে নিশি।
হাসার কী হলো? আমার সব মনে থাকে।
তাই বুঝি?

অনিমিখ কিছু বলে না। ভাবে, আরেকটু সাহসী হতে কি পারতো না? চুম্বনের ইচ্ছেটা জাগে নি, এটা বললে নিজের সাথেই প্রতারণা করা হবে যে। কিন্তু এজন্য মরমে মরে গেলো! এ অন্যায়... চুক্তি, চুক্তিটা সামনে চলে আসে। কিন্তু শুধু চুক্তির জন্যই কি এ রকম হলো? কোনো কোনো কাজ কখনো কখনো কী ভীষণ রকমের কঠিন হয়ে যায়! ভালোবাসলে বুঝি এমন জ্বালায় পড়তে হয়? অনিমিখের গভীরে কবি সত্তাটি অনুভূতির প্রবল জোয়ারে ভেসে যেতে থাকে। এক অজানা বেদনায় ভারী হয়ে আসে মনের আকাশ।

একটা ছোট্ট দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে – বাদ দিন তো! তৈরি হয়ে নিন ঝটপট। বেড়াতে যাবো।
কোথায়?
মিনি মধুচন্দ্রিমায়।
কী!!

আরে বাবা, মিছেমিছি। খুব হাসতে থাকে অনিমিখ। নিশিও না হেসে পারে না! 

চলবে...


Viewing all articles
Browse latest Browse all 15150

Trending Articles



<script src="https://jsc.adskeeper.com/r/s/rssing.com.1596347.js" async> </script>