Quantcast
Channel: প্রজন্ম ফোরাম
Viewing all articles
Browse latest Browse all 15150

আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ২)

$
0
0

আমার ডাইনিং এর নাম ছিল "মিলার ডাইনিং হল"। মন্টানা স্টেট ইউনিভার্সিটিতে এটাই সবচেয়ে বড় আর ব্যস্ত ডাইনিং। এখানে একসাথে ৩৫০+ ছাত্র একসাথে বসতে পারত। আমার ডর্ম নর্থ হেজেস আর পাশের সাউথ হেজেস এর ঠিক মধ্যখানে এর অবস্থান। কাছাকাছি হওয়ায় আমি বেশিরভাগ সময়ে এখানেই খেতাম। শুরু করেছিলাম কনডো বা সালাদ বার এ যেখানে পরিচয় হয় মন্টানায় থাকাকালীন সময়ের সবচেয়ে ভালো বন্ধু সর্বন এর সাথে। তাজিকিস্তান এর ছেলে। মন্টানায় থাকার প্রতিটা পদে পদে ও আমাকে যে উপকার, সাহায্য আর মানসিক শক্তি জুগিয়েছে, তার কৃতজ্ঞতা জানানোর ভাষা আমার জানা নেই। আর বন্ধুদের কৃতজ্ঞতা জানানোর প্রয়োজনও হয়ত নেই। আজ পর্যন্ত এই বন্ধুত্বে দাগ পরেনি এতটুকু। এছাড়া সব চেয়ে বেশি সময় কাজ করেছি ফ্লোটার হিসেবে। অর্থাৎ যেই ডিপার্টমেন্ট এ যেই দিন কেউ অনুপস্থিত থাকে তার কভার দেয়া। সাধারনত এই কাজ টা কেউ নিতে চায় না কারণ এইটা খুবই ঝামেলার। নতুন ছাত্ররাই এই কাজটা পায়। ডিশওয়াশার, পট্স এন্ড প্যানস, লাইন, মপার, বেভারেজ গাই, বার্গার বার, টেবিল ক্লিনার, প্লেট এন্ড গ্লাস সাপ্লায়ার সব গুলো ডিপার্টমেন্টএই কাজ করতে হয়েছে। একটা ভালো দিক ছিল যে মোটামুটি সবাইকেই চিনতাম, বন্ধু হয়েছিল অনেক। ডিশওয়াশার এর কাজটা ছিল একঘেয়ে। আমাদের ডাইনিং এ আমার কাজ ছিল বিকাল থেকে সন্ধা। সব চেয়ে ব্যস্ত সময়। ৫০০-৬০০ প্লেট ক্রমাগত স্প্রে করে যেতাম। একসময় হাত চলত অটোমেটিক। তবে এই একঘেয়েমিতা অনেকটাই দূর হয়ে যেত টাইলার আর কনোর এর জন্য। অসম্ভব প্রানশক্তিতে ভরপুর দুইটা ছেলে। পুরো ডিশরুম মাতিয়ে রাখত এরা দুইজন। অন্যদের সাথে ওয়াটার ফাইট, প্লেট দিয়ে ফ্রিজবি খেলা, কৌতুক, গান কি না করত ওরা........ম্যানেজারকে পর্যন্ত কয়েকবার দুষ্টুমি করে ভয় দেখাইছে ওরা। ভার্সিটি জীবনের প্রায় শেষ প্রান্তে থাকা এই দুইজনকে অনেক পুরানো এমপ্লয়ী হওয়ায় আর অন্য যে কারো থেকে ভালো কাজ করায় ম্যানেজমেন্ট ও বেশ ছাড় দিত। ডিশরুমের কাজটা একটু স্ট্রেসফুল আর একঘেয়ে হওয়ায় একমাত্র এখানেই কাজের সময় মিউজিক চালানোর পারমিশন ছিল। মিউজিক এর তালে তালে কাজের একইসাথে টাইলার আর কনোর এর ডুয়েট ব্রেকডান্স দেখে হাসে নাই এমন কেউ নাই। আমেরিকান কালচার এর সাথে পরিচিত হতেও এরা আমাকে হেল্প করেছে প্রচুর। পট্স এন্ড প্যানস এ বড় বড় হাড়ি পাতিল গুলো ধুতে হত তবে এটায় ফ্রি থাকা যেত। পুরো শেষ হওয়ার পর তা পট্স এন্ড প্যানস এ আসত। এগুলো ধোয়া মানে একটা চৌবাচ্চা টাইপ জায়গায় গরম পানিতে ভিজিয়ে রেখে, স্ক্রাব করে ডিশওয়াশিং মেশিনে দিয়ে দেওয়া। এখানে পরিচয় হলো মেক্সিকান বংশোদ্ভুত এঞ্জেলো'র সাথে। সরলের চেয়ে সরল ছিল ছেলেটা। প্রিজন ব্রেক এর সুকরে'র নকল করে আমি ওকে ডাকতাম "পাপি" বলে......আমি এইটা বলতাম আর ও হতাশ ভাবে মাথা নাড়ত। অর এই মাথা নাড়া দেখার জন্য আমি আরো বেশি করে ডাকতাম। বেভারেজ গাই আর বার্গার বার এর কাজটাও সহজই ছিল.........খালি হলে বেভারেজ এর কন্টেইনার গুলো রিপ্লেস করা আর ডিশ গুলো ফিল আপ করা........ক্লোজিং এর সময় পুরো জায়গাটা পরিস্কার করা। বেভারেজ এ যেয়ে চিনলাম ডেভি আর ডমিনিক কে.......ডোমিনিকান রিপাবলিক এর এরা দুইজন। আমার পরিচিত কালো মানুষদের মধ্যে প্রথম দিককার। ডেভি'র মধ্যে কালোদের ইয়ো স্টাইল আর ফান পুরোটাই ছিল। প্রায় হাটুর কাছে প্যান্ট পরা ডেভি কে দেখলে আমি বরাবরই আশ্চর্য হতাম এই ভেবে যে প্যান্ট টা ওখানে আটকে আছে কিভাবে !!!!! আর সেই ইউনিক একসেন্ট তো আছেই। ডমিনিক কথা বলত খুব মিষ্টি করে। কথা শেষে চোখ টিপ দিয়ে হাসা ছিল ওর আরেকটা মজার দিক। কনডো এর কাজটা ছিল সব চেয়ে মজার......বার্গার বার এর মতই খালি হলে সালাদ এর ডিশ গুলো ভরে দেয়া। কিন্তু এটায় মজা বেশি লাগত কারণ সর্বন আর আমি একই সময়ে কাজ করতাম, সাথের দুটো মেয়ে এলিজাবেথ আর দেভিনকা আমার ভালো বন্ধু ছিল। এলিজাবেথ আমেরিকান। মন্টানার লোকাল। মিলারে কাজ করা সবচেয়ে সুন্দর মেয়ে গুলার মধ্যে একজন। ওর অসম্ভব কিউট চেহারা, সোনালী চুল আর প্রতি কথার শেষে একটুকরো ভুবন ভোলানো হাসি দেখে কাইত হয় নাই এমন ছেলে কম। দেভিন্কা শ্রীলংকার। টম বয় পুরা। ওর ডায়লগ ছিল "ট্রিট মি আজ আ গ্যাংস্টার"। আরো ছিল ব্রুক। এই মেয়ের বিস্মিত হবার ক্ষমতা বিস্ময় জাগানোর মত। ওর প্রধান কাজ ছিল কনডোর ফ্রিজারের মধ্যে ঢুকে ফোনে কথা বলা। মপার এর কাজ ছিল সব চেয়ে কষ্টের। বিশাল সেই ডাইনিং এরিয়া পুরোটা মপ মানে মুছতে হত। এই শিফটটা আমি ২ সপ্তাহ পর ছেড়ে দেই লাইন অর্থাৎ যেখানে মেইন ডিশ গুলো সার্ভ করা হয় ওখানে জায়গা খালি হওয়ায়। প্রথম মাস শেষ হলো আড়াই সপ্তাহ কাজের পরে। ৩২২ ডলারের একটা চেক। টাকা দিয়ে গুন করে কি যে আনন্দ লাগছিল..............সাথে সাথে মন খারাপ ও হইছিল। মনে পরে গিয়েছিল দেশে অনেক সময় অল্প কয়টা টাকার জন্য কত জায়গায় ঠেকে গেছি, কত কিছু করতে পারি নাই..........

চলবে.........


Viewing all articles
Browse latest Browse all 15150

Trending Articles