High-intensity interval training (HIIT) এক ধরণের কার্ডিওভাস্কুলার এক্সারসাইয স্ট্র্যাটেজী যার মাধ্যমে খুব অল্প সময় ব্যায়াম করে বেশ ভালো পরিমাণে ওয়েট লস করানো বা লীন বডি ম্যাস বাড়ানো যায়। হীট ট্রেইনিং-এর মূলনিতী খুবই সিম্পলঃ ২০-৬০ সেকেন্ডের খুব হাই-ইন্টেন্সিটি এ্যারোবিক ওয়ার্কআউট সেশন, এবং তার পরপর ৩/৪ মিনিট (বা আরও বেশি সময়) লো-ইনটেন্সিটি (বা এমনকি পূর্ণ বিশ্রাম) ইন্টারভ্যাল সেশন - এই সাইকল ৩-৮ বার রিপিট করতে হবে। এটাই হলো হীট স্ট্র্যাটেজী। বার্স্ট... রিল্যাক্স... বার্স্ট... রিল্যাক্স... বার্স্ট... রিল্যাক্স... এ্যাণ্ড সো অন...
হীট ট্রেনিং সম্পর্কে প্রথম জেনেছিলাম সম্ভবত: ২০০৪/৫ সালের দিকে। কোনো এক সাইটে/ম্যাগাযিনে এক জাপানী প্রফেসর ইযুমী তাবাতা-র একটি রিসার্চ প্রযেক্ট সম্পর্কে পড়েছিলাম। অলিম্পিক গেইমসে জাপানীজ এ্যাথলিটদের পারফর্ম্যান্স কিভাবে বাড়ানো যায় (এবং আরো বেশি গোল্ড মেডাল বাগানো যায়) তাই ছিলো ডঃ তাবাতা রিসার্চ প্রযেক্ট। গবেষণাপত্রে প্রফেসর তাবাতা প্রকাশ করেন কিভাবে হীট স্ট্র্যাটেজীর মাধ্যমে খুব অল্প সময়ে বডির ব্যাসাল মেটাবলিক রেট বাড়িয়ে দিয়ে ওয়েট লস, ফিটনেস বাড়াতে পারে। প্রফেসর তাবাতা দেখিয়েছিলেন এক গ্রুপ সাবজেক্ট ট্র্যাডিশনাল মেথডে সপ্তাহে ১০+ ঘন্টা ব্যায়াম করে যে পরিমাণ রেজাল্ট পেয়েছে, তার চাইতে তূলনামূলক ভালো ফলাফল পেয়েছে আরেক গ্রুপ যারা মাত্র ~২.৫ ঘন্টা HIIT ট্রেনিং করেছে। আমরা সবাই কমবেশি ব্যস্ত, আধুনিক মানুষের জন্য হীট ট্রেনিং শিডিউল বেশ কাজের। হিসাব খুব সোজা - সপ্তাহে ৩ দিন মাত্র ৫ মিনিট করে (১৫ মিনিট টোটাল) হীট ট্রেনিং করে যে পরিমাণ বেনিফিট পাবেন, টানা ১ ঘন্টা ট্রেডমিল/জগিং করেও সেই একই বেনিফিট পাবেন!
হীট ট্রেনিং বেশ ভালো কাজ করে (বিগিনারদের জন্য ওয়েটলস খুব র্যাপিড হয়)। ২০০৬/৭ সালের দিকে ফাইনাল প্রফেশনাল পরীক্ষার পর টানা কয়েকমাস অবসর ছিলো - তখন ধুমিয়ে হীট, কার্ডিও, ওয়েট লিফটিং এবং অন্যান্য রেজিস্ট্যান্স ট্রেনিং করতাম। প্রথম ২৫ দিনে প্রায় ১৭.৫ কেজি লস করেছিলাম... অবাক হবার কিছু নেই। ওটা বেশ সিভিয়ার রেজিমেন ছিলো - সকাল এবং সন্ধ্যায় দুই সেশন মিলিয়ে দৈনিক প্রায় ২-২.৫ ঘন্টা জগিং/কার্ডিও + ওয়েট লিফটিং ট্রেনিং! মোটামুটি মিলিটারী ডিসিপ্লিন!
এক্সারসাইয ছাড়াও তখন স্ট্রিক্টলী এ্যাটকিন্স ডায়েট (হাই প্রোটিন, লো কার্ব) ফলো করতাম। তারওপর জীবনে প্রথমবার বডির ওপর আকস্মিকভাবে এত নির্দয় হামলা। বডি শকে ছিলো তাই প্রথম প্রথম খুব র্যাপিড ওয়েট লস হয়েছিলো।
তবে ৩ সপ্তাহ পরে বডি যখন হিসাবকেতাব বুঝে নেয়া শুরু করলো তারপর থেকে ফ্যাট বার্ণিং রেট কমে গেছিলো। যাকগে, লংটার্মে এত র্যাপিড ফ্যাটলস কখনোই স্বাস্থ্যকর নয়। ঐসময় ধুমধাম ওজন কমিয়ে বহু নাচানাচি করেছিলাম, কালক্রমে পুরোটাই বডি আবার গেইন ব্যাক করেছে।
যাকগে, আমি তাবাতা প্রটোকল নিজের মত করে একটু বদলে নিয়ে ফলো করতাম। অরিজিনাল তাবাতা প্রটোকল এরকমঃ
১) ২০ সেকেন্ড ১৫০-১৭০% VO2max-এ এক্সারসাইয
২) ১০ সেকেন্ড বিশ্রাম
এভাবে বার্স্ট->রিল্যাক্স সাইকলটা সর্বমোট ৮ বার রিপিট করে পুরো সার্কিট কম্পলিট করতে হবে। টোটাল টাইমঃ ৪ মিনিট।
তবে আমি এত সিভিয়ার রেজিমেন ফলো করতে পারতাম না (এমনিতেও ওজন সমস্যা, তারওপর তখন এ্যাযমার সমস্যা ছিলো)। আমার সিস্টেম ছিলো এরকমঃ প্রথমে ৪/৫ মিনিট ওয়ার্ম আপ (হালকা জগিং)। এরপর ~৩০ সেকেন্ড খিঁচে কুত্তা-তাড়া দৌড়া লাগাতাম, তারপর ২.৫-৩ মিনিট লাগতো দম ফিরে পেতে। এই সাইকল ৮/১০ বার রিপিট করতাম - পুরো সার্কিট কম্পলিট করতে ৩০-৩৫ মিনিট সময় লাগতো।
VO2max এই শব্দটি দেখে হয়তো কৌতূহল জাগছে। জ্বী না, এটা ভ্যানাডিয়াম অক্সাইডের ভুলভাল সূত্র না। VO2max হলো প্রতি মিনিটে আপনি কি পরিমাণ অক্সিজেন শ্বাসের সাথে গ্রহণ করছেন তার হিসাব। V - volume, O2 - oxygen, max - maximum VO2max নির্দেশ করা হয় লিটার/মিনিট অথবা মিলিলিটার/কেজি বডিওয়েট/মিনিট দ্বারা - অর্থাৎ প্রতি মিনিটে কত লিটার (বা আপনার দেহের প্রতি কেজি বডিম্যাস কত মিলি) অক্সিজেন গ্রহণ করেছে। পুরুষদের VO2max সাধারণতঃ ৩৫-৪২ লিটার/মিন, নারীদের ২৭-৩০ লিটার/মিন। স্বাভাবিকভাবে এ্যাথলীটদের VO2max বেশি হয় - >৬০ লিটার/মিন।
তাবাতা রেজিমেনে আপনাকে এমন ইনটেন্স লেভেলের এক্সার্সাইয করতে হবে যেন আপনার VO2max স্বাভাবিকের চাইতে দেড় থেকে দুই গুণ বেড়ে যায়। দেশের যেকোনো নামকরা হাসপাতাল, ডায়াগনস্টিক ল্যাবে VO2 মাপার ব্যবস্থা আছে। তবে আমার মতে পয়সা খরচ করে এ্যাকুরেট ফিগার জানার কোনো প্রয়োজন নেই। বিনা খরচায় এবং খুব সহজেই হাই ইনটেনসিটি এক্সারসাইয হয়েছে আপনি কিনা নিজেই বুঝতে পারবেন: যে ধরণের এক্সারসাইযের পরে প্রচন্ড জোরে শ্বাস-প্রশ্বাস চলতে থাকবে, হৎপিন্ড লাফিয়ে পাজঁর ফুঁড়ে বেরিয়ে আসছে মনে হবে এবং কথা বলতে গেলে এক দমে পুরো বাক্য শেষ করতে পারবেন না, ২ বা অধিক নিঃশ্বাস নেয়া লাগবে পুরো বাক্য উচ্চারণ করতে - যখন এরকম বা আরো সঙ্গীন অবস্থা হবে ধরে নিতে পারেন আপনার প্রয়োজনীয় VO2max লেভেল এ্যাচীভ হয়ে গেছে।
তবে হীট সবার জন্য প্রযোজ্য না। আপনি যদি স্পৃন্টার/রানার, ফুটবল/বাস্কেটবল বা এ ধরণের লং-ডিউরেশন স্পোর্টসে যুক্ত থাকেন তাহলে আপনাকে হীট ট্রেনিং তেমন কোনো এক্সট্রা বেনিফিট দেবে না। এ ধরণের স্পোর্টসের জন্য দরকার এনডিউরেন্স বিল্ডিং এক্সারসাইয।
তবে আপনি যদি ওভারওয়েট/নরমালওয়েট (বা এমনকি আন্ডারওয়েট) ব্যক্তি হন যার দিনের বেশিরভাগ সময় কাটে ডেস্কে বা কম্পিউটারের সামনে - আপনার জন্য হীট ট্রেনিং খুব ভালো ফল দেবে।
পিন্টারেস্টে এই চমৎকার ইনফোগ্রাফিক দেখে হীটের কথা মনে পড়ে গেলো, তাই এই টপিকের অবতারণা। ইনফোগ্রাফিকটাতে খুবই সুন্দরভাবে বিভিন্ন প্রচলিত হীট রেজিমেনগুলো ব্যখ্যা করেছেঃ
তো, আপনি শুরু করছেন কবে থেকে?