দ্বিতীয় পর্ব লিখতে একটু বেশি দেরী হয়ে গেল। মাফ করবেন।সমস্যা নাই, এটাই শেষ পর্ব। আগের পর্বের লিংক দিয়ে দিলামঃ
http://forum.projanmo.com/topic33975.html
ওরা কেউই পাকা অভিনেতা না। অন্তত আমার চোখকে ফাঁকি দেয়ার ক্ষমতা রিফাতের থাকলেও অপার নেই। আড্ডা দিচ্ছিলাম তিনজন মিলে, মজার আড্ডা। এমনি কপাল, বাবুলের দোকানের মিষ্টির স্বাদ আজ একটু বেশিই খারাপ। রিফাতের বোঝার বাঁকি নেই কিছুই, কেন আমি এই “বাবুলের দোকান”এর কথা বলেছিলাম। কথা বলতে বলতে লক্ষ্য করলাম, রিফাত বারবার তাকাচ্ছে অপার দিকে। মনে হচ্ছে ওর মনটা বেশ খারাপ। আর অপা খুব বেশি রকমের চুপচাপ। আমি জানি, এত চুপচাপ সেভাবের মেয়ে ও না। সেদিন রাতে কিছুতেই যেতে দিলাম না রিফাতকে। অনেক রাত পর্যন্ত আড্ডা দিলাম। এগারোটার পরে আর কিছুতেই জেগে থাকতে চাইল না অপা, যদিও এত সকাল সকাল ও কখোনই ঘুমায় না। কিন্তু আজকের অবস্থা আলাদা। আমি আর রিফাত প্রায় রাত একটা পর্যন্ত আড্ডা দিলাম। রিফাতের শোয়ার বন্দবস্ত অপা আগেই করে রেখেছিল। তাই আড্ডা শেষে, ওকে গুড নাইট জানিয়ে আমিও শুতে গেলাম।
যা ভেবেছিলাম, তাই; অপা তখনও জেগে। আর পারলাম না। সরাসরি ওকে জিজ্ঞাসা করলাম,
আমিঃ ঘুমাওনি কেন এখনও?
অপাঃ ঘুম আসেছে না।
আমিঃ উঠে আসলেই পারতে। আরো কিছুক্ষণ গল্প করতে পারতাম।
অপাঃ এত গল্প করার কী আছে? রিফাত যতটা না তোমার ভাল বন্ধু, তার চেয়ে বেশি তুমি দেখাচ্ছ। কী মনে কর তুমি? আমি কিছুই বুঝি না??
বুঝতে পারলাম অপা রেগে আছে আমার উপর। আর কোন কথা বলতে চাইলাম না। তারপরও নিজেকে ধরে রাখতে পারলাম না। বিয়ের পর থেকে যে প্রশ্নটা করব করব করেও কোনদিন করতে পারিনি সেই প্রশ্নটা আজ আর না করে আর থাকতে পারলাম না,
আমিঃ অপা, সত্যি করে একটা কথা বলবে আমাকে??
অপাঃ আমি আবার মিথ্য কথা কবে বললাম তোমাকে?
আমিঃ আচ্ছা বেশ।তাহলে, আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বল, তুমি সত্যি ভালবাস আমাকে?
অপাঃ বাসি।
আমিঃ সত্যি?
অপাঃ সত্যি। বললামতো।কী মনে হয় তোমার? আমার ইচ্ছা না থাকলে, কারোর কথায় আমি তোমাকে বিয়ে করতাম?
নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারলাম না। অপাকেও না। মনে হলো, সত্যটা বললে, সম্পর্কের জটিলতা বেড়ে যাবে, তাই হয়ত একথা বলল ও। আর কোন কথা হলো না আমাদের মাঝে। মনের একটা অংশ চাইল ওর কথা বিশ্বাস করতে, আরেকটা অংশ বাধা প্রবলভাবে বাধা দিতে লাগল। এভাবেই কেটে গেল সারারাত। রিফাত চলে গেল পরদিন সকালেই। জলখাবারটাও খেল না।
অনেকদিন পরের কথা। ওইদিনের পর থেকে, অপার সাথে কথা বলতে খুব অশ্বস্তি হচ্ছিল আমার। সহ্য করতে না পেরে শেষপর্যন্ত রিফাতের দ্বারস্থ হতে হল আবারো,
আমিঃ দোস্ত, জীবনেতো কম উপকার করিসনি আমার। আর একটা উপকার করবি?
রিফাতঃ এভাবে বলছিস কেন? কি হয়েছে বল না।
আমিঃ সেদিন তুই বাসায় আসার পর, আমি যখন বাইরে গেলাম মিষ্টি আনতে, তখন তোর আর অপার কী কথা হয়েছিল আমাকে বলবি?
রিফাতঃ কেন? অপা বলেনি তোকে?
আমিঃ আমি জানতে চাইনি ওর কাছে। তুই বলনা…
রিফাতঃ ওকে তাহলে শোনঃ
“ আমি অপাকে বললাম, “কেমন আছ? সত্য করে বল”।অপা বলল,”সত্যি ভালো আছি। ভালবাসার মানুষকে বিয়ে করতে পারার সৌভাগ্য কয়টা মেয়ের হয়, বল?”
আমি অবাক হয়ে বললাম, “এইটা তোমার সত্যি কথা?” ও আত্মবিশ্বাসের সাথে বলল, এইটাই ওর সত্যি কথা। তারপর বলল আসল কথা। আমাকে বলল,”তোমার প্রতি আমার উইকনেস ছিল ঠিকই, তবে সেটা অন্যকারনে। আমার ধারনা ছিল , ওর সাথে আমার সম্পর্ক আমার বাবা কোনদিন মেনে নেবে না। মনে হয়েছিল ওই উইকনেসের পরিণাম খুব খারাপ। তাই ওকে মন থেকে দূরে সরিয়ে দেয়ার জন্যই আমি তোমার সাথে অতটা মিশতাম। তোমার প্রতি কিছুটা উইকনেসের কথা ওকে বেশি বেশি করে বলতাম। আসলে, আমি অনেক আগে থেকে ওকেই ভালবাসি।” অস্বীকার করব না দোস্ত, কিছুটা খারাপ লেগেছিল কথাটা শুনে। আবার ভালোও লাগলো।তোর কথা ভেবে।”
আনন্দের আকাশে ঊড়তে ইচ্ছে করল রিফাতের কথাগুলো শুনে। জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছে করল অপাকে। আনন্দে হয়ত চোখে জলই এসে যাচ্ছিল,কিন্তু থমকে গেলাম একটা নতুন কথা ভেবে। অপা যে রিফাতকে সব সত্যি কথা বলেছে, তার প্রমান কী? এমনওতো হতে পারে, যে নিজের পারিবারিক জীবনের জটিলতাকে ঢাকতে রিফাতকেও ও মিথ্যা বলেছে! আমি আগে যা জানতাম সেটাই হয়তো সত্যি!! হায় ঈশ্বর!! কেন আমরা বিশ্বাস করতে পারি না একজন, আরেকজনকে???