মানুষের দৈনন্দিন জীবনের নানা অভিজ্ঞতা ও অনুভূতি সংক্ষিপ্ত কথার মাধ্যমে মুখে মুখে প্রচলিত হয়ে লোকোক্তিমূলক প্রবাদ-প্রবচনে রূপ নেয় । প্রবাদ-প্রবচনে রয়েছে অভিজ্ঞতামূলক, নীতিমূলক, মানব চরিত্রের সমালোচনা, সমাজের রীতি-নীতি সম্পর্কিত বিষয় ।
সিলেটের আঞ্চলিক ভাষায় অনেক প্রবাদ-প্রবচন আছে । সিলেট অঞ্চলে এগুলোকে ডাকের কথা, ছড়াকাটা, সিললক, ডিঠান ইত্যাদি নামে অভিহিত করা হয়ে থাকে । এ সব প্রবাদ-প্রবচন সিলেটের গ্রামাঞ্চলেই বেশী প্রচলিত । সিলেটের আঞ্চলিক প্রবাদ-প্রবচন মুখে বলা যত সহজ, লিখতে গেলে তা কিন্তু সহজ নয়-বেশ কঠিনই মনে হয় ।
যাক, এখানে সিলেট অঞ্চলের কতিপয প্রবাদ-প্রবচনের উল্লেখ করা হল ।
এসব প্রবাদ-প্রবচন পড়ার সময় সিলেটের আঞ্চলিক ভাষার উচ্চারণ রীতি অনুসরণ করে সাবলিলভাবে পাঠ করলে এবং অর্থব্যঞ্জনা অনুধাবন করতে পারলে বিদগ্ধ পাঠকের পক্ষে প্রকৃত রসাস্বাদন করা সম্ভব হবে । প্রবাদ-প্রবচনে ব্যবহৃত সিলেটের কিছু আঞ্চলিক শব্দের অর্থ এবং প্রতিটি প্রবাদ বাক্যের শেষে সংশ্লিষ্ট প্রবাদের অন্তর্নিহিত অর্থও দেয়া হলো................ আশাকরি ভাল লাগবে সবার ।
দিন দিন এই প্রবাদ প্রবচন বিলীন হয়ে যাচ্ছে । এই প্রবাদ প্রবচনগুলো আমাদের ব্যাংকের ম্যাগাজিনে ছাপা হয়েছিল । লিখেছিলেন মো: আব্দুর রউফ । মনযোগ দিয়ে পড়বেন এবং অর্থগুলোও বুঝবেন আশাকরি না পারলে আমাদের স্বপ্নীল তো আছেই সে বুঝিয়ে দিতে সক্ষম হবে ।
সিলেট অঞ্চলের কতিপয় প্রবাদ-প্রবচন..........
১। ধরা বান্ধার হাই (জোর-জবরদস্তি করে বরের অমতে বিয়ে), রাইত পোয়াইতে নাই (কোন মতে রাত কাটিয়ে ভোর বেলাতে বর দেয় চম্পট ।
[জোর-জবরদস্তি করে কাউকে কোন কাজ করাতে গেলে বিপত্তি ঘটে]
২। নিজর কাপ্ড়ে (শাড়ীতে) হেঙ্গা বওয়া (বিয়ে করা)
[অতি আগ্রহী হয়ে যেচে গিয়ে অযাচিতভাবে কোন কিছুতে নিজেকে জড়ানো]
৩। ফেন্ (ভাতের মাড়) দিয়া ভাত খাইয়া , গপ্ মারে দই
[আত্মতুষ্টি সাধনে অতিরঞ্জিতভাবে নিজেকে উপস্থাপনের প্রয়াস]
৪। চোরে চোরে আলি (বন্ধুত্ব), এক চোরে বিয়া করইন্ আরক্ চোরর্ হালি (শালিকা)
[চোরে চোরে মাসতুতো ভাই]
৫। ভাত খাও হাইঅর (স্বামীর), আর ক্কাউয়া (কাক) ডাকাও লাঙ্গরর
[আপন-জনের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে থেকে আপনজনকে অবজ্ঞা করে অপরজনের তুষ্টি সাধনে সদা তৎপর]
৬। চেঙ্গও (টাকি মাছ) উজাইন, বেঙ্গও (ব্যাঙ) উজাইন, খইয়া (খলসা) পুঁটি তাইনও উজাইন
[যোগ্যজনের সঙ্গে অযোগ্যজন তাল দিয়ে আষ্ফালন করা]
৭। ছাগিয়ে চেনাইতে (মুত্র ত্যাগের সময়) ধরইন্ না, পরে তিন বন্দ (মাঠ) দৌড়াইন্
[উপযুক্ত সময়ে কর্ম তৎপর না হলে অসময়ে কর্মতৎপর হলে বেশ বিপত্তির সম্মুখীন হতে হয়]
৮। দা'র বালি, কুড়ালর হিল (শিল), বান্দীর লাত, গোলামর কিল
[অধ:স্তনদের যুৎসই শাসনে রাখার দরকার আছে]
৯। চোরের মা'র বড় গলা, আর মাগে দুধ আর কলা
[অপরাধীর পক্ষ নিয়ে গলাবাজি করে অপরাধ ধামাচাপা দেয়ার প্রয়াস]
১০। চরে (দ্বারে দ্বারে ঘোরে) ফকির মরে না
(অলসভাবে বসে না থেকে পরিশ্রম করলে সুফল পাওয়া যায়]
==========================================================
চলবে.........
আর টাইপ করতে ইচ্ছে হচ্ছে না .......আজ এই পর্যন্ত । আশাকরি সাথেই থাকবেন ।
ভাল থাকবেন সবাই । সবার মঙ্গল কামনায় ।