Quantcast
Channel: প্রজন্ম ফোরাম
Viewing all articles
Browse latest Browse all 15150

অবশেষে পর্ব-৩

$
0
0

অবশেষে পর্ব-১
অবশেষে পর্ব-২

আগের পর্বের শেষের কিছু অংশ হতে...

তক্ষুণি মনে পড়ে যায় – আরে, সে তো অচেনাকে চিনতেই আজ বের হয়েছে। কিন্তু কোথায় পাওয়া যাবে তাকে? প্রায় কিছুই জানা নেই শুধু চুরি করে মোবাইলে তোলা ছবিগুলো ছাড়া। অনুমতিহীন তোলা হয়েছে – ক্ষমাও চাওয়া উচিত। কোথায় থাকে কে জানে? টুনির কথাই ঠিক – ক্যালাস! দরকারি ইনফরমেশনগুলো নেয়ার কথা তার কখনোই মনে থাকতে চায় না। এখন কী করা যায়? আচ্ছা, ঐ শপিং মলটায় আবার গেলে কেমন হয়? এমনও তো হতে সে ওখানেই কোথাও কাজ করে। দুর্বল আইডিয়া – নিঃসন্দেহে! কিন্তু আপাতত এটাকেই বেশ ভালো হেড স্টার্ট বলে মনে হচ্ছে!
ভাবতে ভাবতেই দেখলো যে বাসখানায় উঠবে ভেবেছিলো তা বাই বাই জানিয়ে কেটে পড়ছে – ধুস! শালা! 



পর্ব- ৩

‘ভাইজান, এখানে দাঁড়ায় আছেন ক্যান? বাস ফেল করছেন, না? হয়, হয় এমুন হয়। অনেকদিন অভ্যাস নাই। আসেন, বলেন কোথায় যাবেন, পৌঁছায় দেই?’ বিগলিত হাসি হাসতে থাকে শফিকুল।

   ড্রাইভার শফিকুল কে দেখে রাদিনের মেজাজ সপ্তমে চড়ে গেলো। ঝা চকচকে একখানা সাদা ফিয়াট ধীর গতিতে ওকে অনুসরণ করছে।

   ‘এক চড়ে তোর সব দাঁত উপড়ে ফেলবো। ফাজিল কোথাকার! পেছনে টিকটিকি লেগেছিস? গিয়ে মিসেস রহমান কে বলবি – আমার এ সবের কোনো দরকার নেই; আবার যদি দেখি তাহলে একেবারে জানে মেরে ফেলবো’

   ‘রাগেন ক্যান ভাইজান, আমার কি দুষ? আমি অর্ডার ফলো করতাছি......’

   ‘দাঁড়া, তোর অর্ডার ফলো করা দেখাচ্ছি......’ তেড়ে যায় রাদিন। শফিকুল ভয় পেয়ে যায় – তাড়াতাড়ি পড়িমরি কেটে পড়ে। যেতে যেতে সেল এ ঘটনার বিবরণ দিতে ভুল করে না অবশ্য। ওপাশে মিসেস রহমান সবই শুনলেন, কিন্তু কিছু বললেন না। কেবল অনেকক্ষণ পর চেপে রাখা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন! 


   এদিকে খুনে মেজাজটা সামাল দিতে আপ্রাণ চেষ্টা করে রাদিন। তাছাড়া এই টিকটিকিটাকেও কাটানো দরকার। সামনেই একটা বাস হুস করে থামতেই তাতে সাত পাঁচ না ভেবেই উঠে পড়ে। যে দিকে যায় যাক।

   ফাল্গুনের বেলা। সূর্যটা অতটা জোরালো হয়ে ওঠে নি এখনও। কিন্তু রাদিন রীতিমত ঘামছে। উত্তেজনার বশেই হয়তো। কোনোমতে সেঁধিয়ে ভাড়া মিটিয়ে বসতে গিয়েই থমকে গেলো – এ কি সত্যি দেখছে সে?


   সুচি –এর সেদিনের ইভেন্টটা সত্যি সত্যিই সাকসেসফুল হয়েছিলো। ফলাফল সন্তোষজনকের চেয়েও বেশি। ডাকে আসা ব্রাউন খামে ভরা অফিসিয়্যল চিঠিটার কথাগুলো যেন বিশ্বাসই হচ্ছিলো না। ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট শাখায় তাকে তাকে ট্রেইনি হিসেবে ডাকা হয়েছে। আনন্দে হাত-পা ছুঁড়ল সারাদিন। মা জাহানারার চোখেও স্বস্তি। মায়ের গলা ধরে ঝুলতে ঝুলতে, ‘দেখো মা, আমাদের আর কোনো কষ্ট থাকবে না। চাকুরিটা আমি ঠিকই পাকা করে নেবো’

   ‘সে তো নিবিই! তোকে নিয়ে যে আমার অনেক আশা। কিন্তু মা, এবার যে বিয়েটা... জানি, তুই সেটা পছন্দ করবি না এখন...কিন্তু বেলা যে বয়ে যাচ্ছে!’

   ‘বেলা বয়ে যাচ্ছে না কি? গেলেও আমার বয়েই গেছে!’ ঠোঁট উল্টে ফেলে ফের হাসতে থাকে। কী চমৎকার হয়েছে মেয়েটা – কী সুন্দর হাসি! একদম ওর বাবার মত – লোকটা আজ বেঁচে থাকলে কি খুশীটাই না হতো! সহসাই চোখে কোথা থেকে যেন জলের তোড় নেমে আসে।

   ‘আহ, মা! কী ফ্যাঁচফ্যাঁচ কাঁদতে লাগলে? বাবার কথা মনে হয়েছে বুঝি? দেখো মা, আমি নিজের পায়ের নীচের মাটি টা শক্ত না হলে কিছুতেই ঐ পথ মাড়াচ্ছি না। আমাকে স্বাবলম্বী হতে হবে সবার আগে। তারপর না হয় ও সব ভাবা যাবে। তাতে যদি বেলা ডুবে যায়, তাতেও আমার আপত্তি নেই। বলে হাসতে হাসতেই কী করে জানি চোখটা টলমল করে ওঠে।

   ‘কী কথার ছিরি! আবার কাঁদতে লাগলি কেন?’ জাহানারা তাঁর এই একমাত্র কন্যাটিকে মাঝে মাঝেই ঠিক বুঝে ওঠেন না – কখনো কখনো একদম আনপ্রেডিক্টেবল হয়ে যায়। কী করবে কিচ্ছু বোঝার উপায় থাকে না!

   সুচি আজ বেশ খুশী। একটু রোমাঞ্চিতও – আবার একটু ভয়ভয়ও কি লাগছে না? আজকে ওর জয়েন করবার দিন। বেশ সুন্দর করে সেজেছে – প্রসাধনের আড়ম্বড় না করেও যে স্নিগ্ধ হওয়া যায় কেউ তাকে দেখে শিখুক! স্পটলেস মুখশ্রী এমনিতেই সুন্দর, সেখানে চিবুকের ডানপাশের একাকী তিলটি বাড়তি কমনীয়তা এনে দিয়েছে। হালকা কাজল টানা চোখে অতলান্তের বাঁধভাঙ্গা রহস্যের হাতছানি। একখানা ঢাকাই জামদানী পরিমিত চড়াই-উতরাই –এর উপর দিয়ে যেমন গ্রেসফুলি বয়ে গিয়ে অনবদ্য দেহ-সৌষ্ঠবের জয়গান গাইছে, তাতে এর ভাস্কর কে বিস্ময়-মিশ্রিত ধন্যবাদ জ্ঞাপন না করাটা নিতান্ত অশোভনই বটে!

   সে যাক। ফুরফুরে মেজাজে থাকা সুচির মনের পালে উদাত্ত হাওয়াটা হঠাত একটু দমে গেলো কি? এ কী...এ যে সেই অসভ্য লোকটা। আরে এদিকেই আসছে তো...যন্ত্রণা আর কাকে বলে?

   ধপাস করে পাশের আসনটিতে বসে পড়লো রাদিন। মুখে একটা অদ্ভুত বিছুটি হাসি – পেয়েছি, একে আমি পেয়েছি।

   ‘কী ম্যাডাম, চিনতে পারছেন? হা হা হা। কাকতালেরও একটা সীমা আছে বলে জানতাম, এখন দেখছি সেটাও নেই! আপনাকে এখানে পেয়ে যাবো স্বপ্নেও ভাবি নি’

   ‘কী? আমাকে বলছেন?’ সুচি স্রেফ না-চেনার ভাণ করে।

   ‘আপনাকেই তো বলছিলাম বলে ধারণা ছিলো। ও, বুঝেছি। চিনতে পারছেন না?’ এই বলে হাত দু’খানা সেই প্রথম দিনকার মত মেলে ধরে, ‘দিন না একটু ঘঁষে, চকচকে করে?’ মুখে গা-জ্বালানো হাসি।

   ‘ওহ, আপনি!’ অনিচ্ছাসত্বেও বলতে হলো সুচি কে।

   ‘কেন খামোখা অভিনয়ের চেষ্টা করছেন? দূর থেকে দেখেই তো মনে হলো চিনেছেন। তারপর যেভাবে দ্রুত মুখ ঘুরিয়ে নিলেন, তার মানে করলে দাঁড়ায় – এ কী আপদ! হা হা হা’

   ‘অন্তর্যামী নাকি? দেখেই সব বুঝে ফেললেন? হ্যাঁ, চিনেছি তো কী হয়েছে? আনন্দে ধেই ধেই করে নাচবো? বিশেষ করে আপনার মত একটা অসভ্য লোকের জন্য?’ হড়বড় করে বলে ফেলে সুচি।

   ‘কী! আমি অসভ্য? এ কথা বলতে পারলেন?’

   ‘হ্যাঁ, পারলাম। কতগুলি মেয়েদের সামনে কী অপদস্থটাই না করলেন?’

   ‘যাক বাবা, আমার হাত ধরে আপনিই সারা সময়টা দাঁড়িয়ে যা-তা বললেন। এখন আমাকে দোষ দিচ্ছেন? আমি না হয় একটু সৌন্দর্যে আপ্লুত হয়ে ঐ কাণ্ড করেছিলাম...তা আপনাকে এত সুন্দর হতে কে বলেছে?’

   ‘মানে?’ তীব্র কটাক্ষ হানে সুচি। রাদিন আবার মুগ্ধ হয়ে যায়। এই মেয়েটিকে এত ভালো লাগছে কেন? এমনকি এর কটাক্ষটাও কেমন মধুর লাগছে!

   ‘মানে আবার কী? যা সত্য তাই বলেছি – সত্য বলতে আমার বড়ই ভালোলাগে। আমি রাদিন রওনক। রওনক টা বাদ দিয়ে যুধিষ্ঠির বসিয়ে দিতে পারেন – রাদিন যুধিষ্ঠির, হা হা হা’

   ‘বাহ, বেশ কায়দা করে নিজের নামটি জানিয়ে দিলেন তো! কে জানতে চেয়েছে?’ সুচিও পালটা সপ্রতিভ হয়ে উঠতে চায়। রাদিন সরলভাবে হেসে ফেলে, ‘আচ্ছা দেখুন তো, তখন থেকে কী যা-তা বলে যাচ্ছি আমরা দু’জন। শান্তি, শান্তি! ফাল্গুনের এই সুন্দর দিনটাকে চলুন মাটি না করি’

   ‘দিনটা আমারই মাটি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি – আজকে আমার কাজে যোগদানের প্রথম দিন। যেমন পাল্লায় পড়ে মুডটা নষ্ট করলাম, না জানি দিনটা কেমন যায়!’ টিপ্পনীটা কেটেই সুচি উঠে দাঁড়ায় এবং দ্রুত পায়ে নেমে যায়।

   ‘শুনুন, নামটাও দিলেন না। এই রাদিন কেবল আনন্দই বয়ে এনেছে। আপনার দিনটাও ভালো যাবে, দেখে নেবেন’

   জানালায় মুখ বাড়িয়ে কথাগুলো বলেই রাদিন চুপসে গেলো। সত্যিই কি তাই? চিরকালের সত্যবাদী রাদিনের এই মিথ্যেটুকু বলার কী দরকার ছিলো? সে কি কোনোভাবে ইম্প্রেস করতে চাইছে মেয়েটিকে? এ এক নতুন অভিজ্ঞতা। না, সে তো কারো জন্যই আনন্দ বয়ে নিয়ে আসে নি। মাঝে মাঝে জন্মটাকেই আজন্মের পাপ বলে মনে হয়। মনের খুব গভীরে চাপা দেয়া সেসব অস্বস্ত দুঃখবোধগুলোকে নিমেষের জন্য ছুঁয়ে এক অকথ্য অভিমানে সে আনমনা হয়ে যায়।

   সুচরিতা কী মনে করে পেছনে তাকায় এবং দুরমনস্ক ছেলেটির বিষন্ন মুখ দেখে হঠাত বুকে কেমন একটা ধাক্কার মত খায়! কেমন একটা মায়া মায়া হতে থাকে। বুকের কোথাও পষ্টবাদি কেউ একজন বলে ওঠে – বেশ তো ছেলেটি। সজ্ঞানে সুচরিতার সেটা যে কখনোই বলবার নয়!

চলবে....


Viewing all articles
Browse latest Browse all 15150

Trending Articles



<script src="https://jsc.adskeeper.com/r/s/rssing.com.1596347.js" async> </script>