Quantcast
Viewing all articles
Browse latest Browse all 15150

আমি এবং আমরাঃ অল্প করে কিছু কথা। (২)

ফোরামের আরেকটা ছেলে আছে, যার মনে একটা ছোটখাট আক্ষেপ আছে,  সে ফোরামের বটগাছে কিছুতেই চড়তে পারে না। সবসময়ই নাকি আমি, দক্ষিনের মাহবুহ আর উদাসীন ভাই বাদরের মতো গাছে উঠে ঝুলে থাকি (With due respect to everyone mentioned)। প্রথম দিকে এর টেকনিক্যাল কথাবার্তা দেখে ভড়কাইতাম, কথা কইতাম "সাইফ ভাই সাইফ ভাই" বলে।  তারপর একদিন দেখা গেল যারে আমি বিশাল কিছু মনে করসি সে আসলে নেহায়েত পিচ্চি ( মা খা এ ন) ক্লাশ সেভেন এ পড়ে তখন। সারাদিন কাঁধে একটা পতাকা নিয়া হাটাহাটি করে আর এমন সব টেকনিক্যাল ডায়ালগ দেয় যে মাঝে মধ্যে আমি তব্দা খেয়ে বসে থাকি। এত পিচ্চি কেমনে এত কিছু জেনে ফেললো সেইটা ভেবে আবারো দুঃখে বাসার ছাদ থেকে লাফ দিয়ে মরতে ইচ্ছা হইলো। কিন্তু আবিস্কার করলাম তখন যে বাসাটায় আমি থাকি ওইটা মাত্র একতলা। লাফ দিয়ে মরা যাবে না। আপাতত ঐ প্রজেক্ট বাদ দিতে হলো।
ছেলেটাকে অবশ্য মিস করতে হয় না। সময়ের স্রোত ঠেলে যারা এখনও টিকে আছে ফোরামে, তাদের একজন হচ্ছে, সাইফ দ্যা ফরম্যাট বস।  হ্যাটস অফ টু ইউ বস! ইউ'ভ বিন এ গ্রেট ইন্সপাইরেশন।

ফোরামে আরো মিস করি কণিষ্কদাকে। উনাকে আমি প্রায় সময়ই দেখতাম ভোর বেলা অনলাইনে। মানুষ এত ভোরে কিভাবে উঠে ফোরামিং করতে পারে জিনিসটা কখনও বুঝতে পারতাম না। পরে হিসেব কষে দেখলাম ফোরামের প্রতি কি পরিমান টান থাকলে সারাদিনের ব্যাস্ততার কথা ভেবে সকালে খানিক্ষন সময় দিয়ে যেতে পারে কেউ। অবশ্য চা জুড়ানো আড্ডাগুলোতে অবশ্য ঠিকই সময় বের করে আনতেন। দিন বদলেছে, ব্যাস্ততাও বেড়েছে, আর আমার মিস করার আরেকজন লোকও বেড়েছে।

ইনভারব্রাস ভাই সম্পর্কে কিছু বলার নাই। বহুবারই বলার চেষ্টা করেছি এবং প্রতিবারই মনে হয়েছে, কিছুই বলা হয় নি। লোকটি যে কেবল টেকনিক্যাল লেখার জন্যই ফেমাস তাই না, তার লেখার ধরনটাও জম্পেশ ছিল। একদম কাচাগোল্লার মত। দেখলেই টপাটপ গিলতে ইচ্ছে করে।

ফোরামের প্রারম্ভিক দিকে, অর্থাৎ আমি আসার প্রথমদিকে আরেকজনের লেখায় আমি মুগ্ধ হয়ে যেতাম, উন্মাতাল তারুন্য ওরফ শাবাব ভাই। একটা মানুষ কিভাবে এত চমৎকার করে সব জায়গায় তাল মিলিয়ে কথা কইতে পারে, তারে না দেখলে বোঝা দুষ্কর। যাইহোক, একটা সময়ে এসে যখন লিনাক্স-উইন্ডোজ ইস্যুটা থিতু হয়ে গেল, উনিও আস্তে আস্তে তল্পি গুটালেন। এখন ফোরামে দেখাই পাওয়া যায় না, মাঝে মধ্যে টুইটারে খোচাখুচি করা হয় তাও খুব কম।

ফোরামিক হিসেবে আরেকজনকে মিস করি যিনি হচ্ছেন  বেঙ্গলবয়। সম্পর্কে প্রায় নিজের ভাইয়ের মতই হয়ে গেছে এখন। শুধু ফোরামেই যোগাযোগ নেই। চ্যাটে, টুইটারে আর কখনো সখনো দেখা হয়ে গেলেই শুরু হয় আমাদের গুতাগুতি। দুইজনেই এখন সমান তালে ব্যাস্ত নিজেদের পড়াশুনা নিয়ে।

আর একটা লোক সম্পর্কে না বলাটা খুবই অনুচিত হবে।  সেভেরাস পরবর্তী আমলে যখন রাজ্যে কেবল ভাল লোকের আধিক্য দেখা গেল তখনই সেভেরাসের অভাবটুকু পূরন করার দায়িত্ব নিয়েছিলেন আরেক গুনধর ব্যাক্তি। যদিও সেভেরাসের মত নয়, সম্পূর্ণ নিজস্ব এটিট্যুডের মাধ্যমেই নিজেকে নিয়ে এসেছেন অসাধারন এক পর্যায়ে। সাধারন ফোরামিক থেকে শুরু করে মডারেটরদের কাছে পর্যন্ত ত্রাস হিসেবে আবির্ভূত এই ব্যাক্তিটির নাম হচ্ছে "দ্যা ডেডলক"
ফোরামের লোকজন সম্ভবত ৩০% ভুল কম করে কেবলমাত্র এই লোকটির ভয়তে। বিনাবাক্যব্যায়ে  নেগেটিভ রেপুটেশন থেকে শুরু করে রিপোস্টের দায়ে সদ্য খোলা টপিকটাও হারানোর ভয়তে সবাই সচেতন এখন ফোরামে। 
এই লোকটা আমাকে মাঝে মধ্যে মেগামাইন্ড লোকটার কথা মনে করিয়ে দেয়। যতটা খারাপ লাগতো প্রথমদিকে, এখন তার পুরোটাই বিপরীত।  লোকটার মাঝে সুক্ষ রসবোধ আছে, মাঝে মাঝে তার লেখা পড়ে চরম মজা পাই। আমি মোটামুটি নিশ্চিত, উনি হালকা পাতলা যা একটু শয়তানি করেন, ওইটুকু না করে সিরিয়াস হলে এতদিনে আমার জায়গায় উনিই মডারেটর হয়ে যেতে পারতেন।

আর আহমেদ মুজতবা ? যারা এর প্রথম জীবন দেখেন নি, তারা এর পরিবর্তনটা কখনোই বুঝবেন না, আর যদি কখনো বুঝতে পারেন, তাহলে অবাক হয়ে যাবেন যে সম্পূর্ণ বিপরীত মাত্রার দুই ক্যারেক্টার একই লোকের মধ্যে কিভাবে পয়দা হয়।
মাঝে মধ্যে যখন কথা হয় মুজতবার সাথে, তখন নিজেও হেসে ফেলে বলে, ওইসময় তো বাচ্চা আছিলাম, এখন তো বুঝি। আর যখন আমার মত কেউ করে তখন হতাশ হই।  অনেকটা বাংলা সিনেমার মত, এক সময়ের ত্রাস  আজকের হাতেম তাঈ।
বেটা যদি আম্রিকা নাই যাইতি, তাইলে আজকে দুই বান্দর এক সাথে থাকতাম রে। বুঝলি না রে বুঝলি না।

আর তেমন কারো কথা বিশেষ করে মনে পড়ছে না এই মুহুর্তে। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে নানা রকম উপদেশ পেয়েছি, ইন্সপায়ার্ড হয়েছি, কণিষ্কদা, ইনভারব্রাস, রাজু ভাই, উদাসীন ভাই, মুন আপু ইত্যাদী, তাদেরকেও আমি আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানাই।  বাস্তব জীবনে যতটা বড় গ্রুপ পাই নি, তার থেকে বড় গ্রুপ পেয়েছি এই পরিবারে। আর একটা পরিবারে সবাইকেই গুরুত্বপূর্ণ হতে হবে এমনটা তো নয়। নাহয় থাকলামই সবার মধ্যে ছোট হয়ে, সবচেয়ে কমগুরুত্বপূর্ণ মানুষ হয়ে, কিন্তু সবার সাথে থাকতে পারার মজাটাই অনন্য।

সবার সম্পর্কে কত ভাল ভাল কথা বললাম, খারাপ না বললে কিভাবে হয় ? পাল্লা একদিন ভারী হয়ে সমীকরন পাল্টে দেবে তো। যাইহোক, খারাপের শুরুটা নিজেকে দিয়ে শুরু করা যায়।  তাতে করে মার খাওয়ার সম্ভাবনাটা খুব কম।

আমি ব্যাক্তিগত ভাবে খুবই অলস এবং স্বার্থপর মানুষ। আমার যদি ইচ্ছে না হয় তাহলে আমাকে দিয়ে কিছুই করানো সম্ভব না। একটা সময় লিনাক্স নিয়ে খুব উৎসাহী ছিলাম। এখন সেই উৎসাহ নেই। কারন বাস্তব দৃষ্টিপট অনেকটাই ভিন্ন। এখানে সবকিছু আবেগ দিয়ে চলে না, সবকিছু লিগ্যাল, ইলিগ্যালের ভিত্তিতে চলে না। যে দেশের মানুষ ৩ বেলা ঠিকমত খেতে পায় না সেই দেশের মানুষ পাইরেসী বাদ দিয়ে অতিভদ্র হয়ে যাবে সেটাও বাস্তবে সম্ভব না। আর লিগ্যাল ইলিগ্যাল ?  পুরো দেশের সবকিছুই ইলিগ্যাল, এখন কেউ লিগ্যাল কিছু করতে গেলে বরং সেইটা ইলিগ্যাল।  আর এতসব ইলিগ্যালের মধ্যে আমার মনের মত একটা জায়গা হলো প্রজন্ম ফোরাম। ঠিক যেমনটি চাই তেমনটি পেয়েছি এখানে। শ্রদ্ধাবোধ, ভালবাসা দুই মিলিয়ে ফোরামের প্রতি সবসময়ই একটা দায়িত্ববোধ থাকতো।


যাহোক, মূল কথায় ফিরি, আমার ছোট বেলা থেকেই এ্যাডাপ্টিবিলিটি খুব ভাল। কোন কিছু একবার পছন্দ হলে সেটা অটোমেটিক্যালী নিজের মধ্যে চলে আসে। এখনও আমার মধ্যে সেই জিনিসটা আছে। যা হোক, রিসেন্টলি যে জিনিসটা খেয়াল করলাম, আমার লেখার ধরনে বিশাল রকম গন্ডগোল। আমি সবকিছুকেই  এক্সপান্ড করে ফেলছি।  আমি স্বাভাবিক ভাষা থেকে আস্তে আস্তে লোকাল দিকে বেশী ঝুকে পড়ছি। কারন খুঁজে বের করতে গিয়ে দেখি, পুরো ফোরামেই এক্সপান্ডেড ভাষা চর্চা চলছে। আমি অবাক! জিনিসটা মজার, কিন্তু ক্রমাগত ব্যাবহার খুবই দৃষ্টিকটু। এখানে দৃষ্টিকটু হওয়ার তো পরের ব্যাপার। আমি আবিস্কার করলাম, এই ধরনের এক্সপান্ডেড লেখাজোকা দেখলেই আমি ফোরাম বন্ধ করে ফেলছি।  টপিক পড়ার আগ্রহই পাচ্ছি না। একরকমের বিদ্রোহ অনুভব করি মনের ভিতর। এই সেই করতে করতে আমার আনাগোনা কমতে থাকলো ফোরামে। ইলিয়াস ভাইয়ের অভিযোগ, "আপনারে দেখা যায় না ক্যান" আমি আর কি বলবো!  বলতে তো পারি না যে শ্বাস বন্ধ হয়ে যাচ্ছে আমার ওখানে। সাহিত্য চর্চা ভাল জিনিস, আর্টের খাতিরে আমরা ভাষা বিভিন্ন সময়ে বিকৃত করি ঠিকই। কিন্তু এখানে বিকৃতিটা ঠিক আর্ট না। অনেকটা বলিউডের মুভি গুলোর মতো হয়ে গেছে, রোমান্স কম, বডি শো অফ বেশি। আর, এটাতো তো স্বাভাবিক বিষয়, প্রজন্ম ফোরাম কোন সিক্রেট কিছু নয়। প্রতিদিন কয়েকশ মানুষ আছে যারা নিবন্ধিত নন, তারা এত পরিমান বিকৃত ভাষা চর্চা দেখে খানিকটা হলেও উৎসাহ হারাতে পারেন। কিংবা আমাদের জুনিয়র যারা আছে তাদের উপরেও একটা এফেক্ট পড়তেই পারে।

যাহোক, এটা সম্পূর্ণই নিজস্ব মতামত, আমার কথাগুলো অন্য কারো পছন্দ নাই বা হতে পারে। কেউ না কেউ আহত হবেন আমার কথাতে। কিন্তু আমি কথাগুলো বলতে চাই, আমিও ফোরামে আহত।  আমি যাদের পছন্দ করি তাদের ভুল নিয়ে কথা বলার পূর্ণ অধিকার আমি রাখি।

স্বপ্নীল ভাই, শুরুটা চমৎকার ছিল। আমি অস্বীকার করবো না। সম্ভবত আপনি ফোরামের জন্য যা করেছেন সেটা বিশাল একটা অবদান। কিন্তু একটা বিতর্কের শুরুতে আপনি যেভাবে সবার কথাকে অগ্রাহ্য করে চলে গেলেন তাতে শুধু আমি না, আরো অনেকের কাছেই আপনি প্রশ্নবিদ্ধ। আমার কাছে প্রায়ই প্রশ্ন আসে স্বপ্নীল ভাইকে ফেরানো যায় না ?  আমি তাদের কে সেভাবেই জবাব দিতে বাধ্য হই, সে কেবল নিজের কথা ভেবে যেতে পারলো, বাকিদের কথার গুরুত্ব যেখানে থাকলো না, তাকে আবার আমাদের মধ্যে জোর করে এনে কষ্ট দেয়ার মানে কি। উনি বাইরে থাকতেই পছন্দ করেন, থাকুক। 
আমি যতটা স্বার্থপর, আপনি তার থেকে বিন্দুমাত্র কম নন।

শান্ত বালক ওরফ আসিফ ভাই, এর ব্যাপারে আমি কিচ্ছুটি বলতে চাই না। ইলিয়াস ভাই সম্ভবত আপনিই জানেন আমি কি বলতে চাই। তবু্ও এতটুকু বলি, প্রজন্ম এমন একটা পরিবার, যেখানে কাউকে সদস্য ভাবতে শুরু করার পর কেউ আলাদা রাজা নয়, সবাই রাজা। সবার্‌ই ভুল হয়, সবাই সেটা ঠিক করে নেয়। যে সেটা পারে না, তাকে আমি "হারিয়েছি" বলতে রাজী নই, বরং সেই "আমাদের" হারিয়েছে। আপনার পিচ্চির জন্মের কথা শুনে আমি আপনাকে ফোন দিয়েছিলাম, কিছুতেই ফোনে না পেয়ে আরেকজনকে জিগেষ করলাম, আসিফ ভাইয়ের খবর কি, ফোনে পাই না ক্যানো, তখন সে উত্তর দিলো, আসলে ওই নাম্বার তো সে ইউজ করে না ঠিকমত। একটা নাম্বারে তাকে পাওয়া যায়, সেটা সে সবাইকে দিতে না করেছে, আপনি চাইলে নিতে পারেন কিন্তু কাউকে বলতে পারবেন না।  আমি হেসে বলেছিলাম, যে দূরে থাকতে চায় তাকে দূরে থাকতে দেয়াই ভাল।  অনাকাঙ্খিত হয়ে উপস্থিত হওয়াটা খুবই বিব্রতকর। আসলেই মিস করতে চাই না আপনাদের, তারপরও মিস করে ফেলি মাঝে মধ্যে। কি আর করা! আপনারা আপনাদের পথ বেছে নিয়েছেন, আর আমরা আমাদের।

তাহমিদ, তোমার সম্পর্কে অনেক কড়া কড়া কথা বলতে ইচ্ছে করে মাঝে মধ্যে। তারপর মনে হয় আসলে জীবন কি জিনিস এখনও বুঝতে শিখো নি। আস্তে আস্তে হবে। আমি যখন ক্লাশ ১০ এ পড়ি তখনও হরদম উল্টাপাল্টা করতাম, কোথায় কি বলা উচিত, কোনটা বলা উচিত এতসব বুঝতে চেষ্টা করতাম না।  আস্তে আস্তে বুঝতে শিখেছি।  শাহরুখের মত দু'হাত বাড়িয়ে দিয়ে গুনগুন করলেই শাহরুখ খান হওয়া যায় না, এইটা বুঝতেও মেলাদিন লেগেছে। একদিন তুমিও বুঝবে। শুভকামনা রইলো। তবে নিশ্চিন্ত থেকো না, যখন তুমি বুঝতে পারবে, তখন তোমাকে তোমার কিছু কিছু জিনিস দেখাবো, আর গুতাবো। আর তখন তুমিও মুজতবার মত  "হে হে হে " করে খালি হাসবা।


আমার এই কথাবার্তা এখানেই শেষ। অনেকদিনের কিছু না বলা কথা বলে দিলাম। পুরোটা শেষ করে কেউ গালি দিবেন, কেউ পছন্দ করবেন কেউ আমাকে অপছন্দ করবেন। কিন্তু মুদ্রার মাত্র দুইটা পিঠই থাকে। সবাই একটা দিকই কেবল দেখবে সেটাও তো আমি আশা করি না। তবে যেদিক থেকেই দেখুন, লাভ আমারই। সেটা কিভাবে নাইবা বললাম।

সবাইকে আমার আন্তরিক শ্রদ্ধা, ভালবাসা রইলো। দোয়া করবেন যেন মানসিকতা আরো বিস্তৃতি লাভ করে, যুক্তি দিয়ে শিখতে পারি আরো কিছু, আর গালিতেই হোক কিংবা স্মৃতিতে, সবার মাঝেই থাকতে পারি।


Viewing all articles
Browse latest Browse all 15150

Trending Articles



<script src="https://jsc.adskeeper.com/r/s/rssing.com.1596347.js" async> </script>