আগের পর্ব:ইলম (জ্ঞান) অন্বেষণের ফযীলত ও মর্যাদা
১. ইলম অন্তরকে পরিশুদ্ধ করে :
সুফিয়ান ইবন উয়াইনা রহ.- কে ইলমের ফযীলত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলো। তিনি বললেন, তোমরা কি আল্লাহর এ বাণীর প্রতি লক্ষ্য করো নি? এতে তিনি ইলম হাসিলের পর আমলের কথা বলেছেন। ইরশাদ হয়েছে :
﴿ فَٱعۡلَمۡ أَنَّهُۥ لَآ إِلَٰهَ إِلَّا ٱللَّهُ وَٱسۡتَغۡفِرۡ لِذَنۢبِكَ وَلِلۡمُؤۡمِنِينَ وَٱلۡمُؤۡمِنَٰتِۗ وَٱللَّهُ يَعۡلَمُ مُتَقَلَّبَكُمۡ وَمَثۡوَىٰكُمۡ ١٩ ﴾ [محمد : ١٩]
‘অতএব জেনে রাখ, নিঃসন্দেহে আল্লাহ ছাড়া কোনো (সত্য) ইলাহ নেই। তুমি ক্ষমা চাও তোমার ও মুমিন নারীÑপুরুষদের ত্রুটি-বিচ্যুতির জন্য। আল্লাহ তোমাদের গতিবিধি এবং নিবাস সম্পর্কে অবগত রয়েছেন। {সূরা মুহাম্মদ, আয়াত : ১৯}
এ আয়াতে আগে ইলম তথা জানার কথা বলা হয়েছে। তারপর বলা হয়েছে আমলের (ক্ষমা চাওয়ার) কথা। এই আয়াতকে সামনে রেখে ইমাম বুখারী রহ. তদীয় সহীহ গ্রন্থের একটি অধ্যায় রচনা করেছেন এমন শিরোনামে এ অধ্যায় ‘বলা ও করার আগে শেখা সম্পর্কে’। অতএব কথা ও কর্মের আগে ইলম অর্জনের অগ্রাধিকার। কারণ ইলম ছাড়া কোনো আমল শুদ্ধ হয় না। আর প্রথমেই শিখতে হবে তাওহীদ তথা আল্লাহর নিরঙ্কুশ একাত্ববাদের ইলম। একে বলা হয় সুলুকের ইলম। যাতে করে আল্লাহর পরিচয় লাভ হয়। আকীদা শুদ্ধ করা যায়। নিজেকে চেনা যায় এবং কিভাবে নিজেকে বিশুদ্ধ ও পরিশুদ্ধ করা যায় তাও জানা যায়।
২. ইলম দৃষ্টির আলো :
ইলম দৃষ্টির আলো। যা দিয়ে মানুষ বস্তুর হাকিকত ও বাস্তবতা অনুধাবন করতে পারে। তবে এ কিন্তু চোখের দৃষ্টি নয়; এ হলো অন্তরের দৃষ্টি। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ أَفَلَمۡ يَسِيرُواْ فِي ٱلۡأَرۡضِ فَتَكُونَ لَهُمۡ قُلُوبٞ يَعۡقِلُونَ بِهَآ أَوۡ ءَاذَانٞ يَسۡمَعُونَ بِهَاۖ فَإِنَّهَا لَا تَعۡمَى ٱلۡأَبۡصَٰرُ وَلَٰكِن تَعۡمَى ٱلۡقُلُوبُ ٱلَّتِي فِي ٱلصُّدُورِ ٤٦ ﴾ [الحج : ٤٦]
‘তারা কি যমীনে ভ্রমণ করে নি? তাহলে তাদের হত এমন হৃদয় যা দ্বারা তারা উপলব্ধি করতে পারত এবং এমন কান যা দ্বারা তারা শুনতে পারত। বস্তুত চোখ তো অন্ধ হয় না, বরং অন্ধ হয় বক্ষস্থিত হৃদয়। {সূরা আল-হজ্ব, আয়াত : ৪৬}
এ জন্যই আল্লাহ তা‘আলা মানুষকে দুই ভাগে বিভক্ত করেছেন : আলেম ও অন্ধ। আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন,
﴿ ۞أَفَمَن يَعۡلَمُ أَنَّمَآ أُنزِلَ إِلَيۡكَ مِن رَّبِّكَ ٱلۡحَقُّ كَمَنۡ هُوَ أَعۡمَىٰٓۚ إِنَّمَا يَتَذَكَّرُ أُوْلُواْ ٱلۡأَلۡبَٰبِ ١٩ ﴾ [الرعد: ١٩]
যে ব্যক্তি জানে তোমার রবের পক্ষ থেকে তোমার প্রতি যা নাযিল হয়েছে, তা সত্য, সে কি তার মত, যে অন্ধ? বুদ্ধিমানরাই শুধু উপদেশ গ্রহণ করে। {সূরা আর-রাদ, আয়াত : ১৯}
৩. ইলম মানুষের অন্তরে আল্লাহ ভয় সৃষ্টি করে :
যেমন আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন,
﴿ إِنَّمَا يَخۡشَى ٱللَّهَ مِنۡ عِبَادِهِ ٱلۡعُلَمَٰٓؤُاْۗ إِنَّ ٱللَّهَ عَزِيزٌ غَفُورٌ ٢٨ ﴾ [فاطر: ٢٨]
বান্দাদের মধ্যে কেবল জ্ঞানীরাই আল্লাহকে ভয় করে। নিশ্চয় আল্লাহ মহাপরাক্রমশালী, পরম ক্ষমাশীল। {সূরা ফাতির, আয়াত : ২৮}
আরেক আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ إِنَّ ٱلَّذِينَ أُوتُواْ ٱلۡعِلۡمَ مِن قَبۡلِهِۦٓ إِذَا يُتۡلَىٰ عَلَيۡهِمۡ يَخِرُّونَۤ لِلۡقَانِۤ سُجَّدٗاۤ ١٠٧ وَيَقُولُونَ سُبۡحَٰنَ رَبِّنَآ إِن كَانَ وَعۡدُ رَبِّنَا لَمَفۡعُولٗا ١٠٨ وَيَخِرُّونَ لِلۡأَذۡقَانِ يَبۡكُونَ وَيَزِيدُهُمۡ خُشُوعٗا۩ ١٠٩ ﴾ [الاسراء: ١٠٧، ١٠٩]
‘নিশ্চয় এর পূর্বে যাদেরকে জ্ঞান দেয়া হয়েছে, তাদের কাছে যখন এটা পাঠ করা হয় তখন তারা সিজদাবনত হয়ে লুটিয়ে পড়ে। আর তারা বলে, ‘পবিত্র মহান আমাদের রব ! আমাদের রবের ওয়াদা অবশ্যই কার্যকর হয়ে থাকে। আর তারা কাঁদতে কাঁদতে লুটিয়ে পড়ে এবং এটা তাদের বিনয় বৃদ্ধি করে। {সূরা বনী ইসরাঈল, আয়াত : ১০৭-১০৯}
৪. ইলম বৃদ্ধির জন্য দু‘আ করা :
আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে ইলম বৃদ্ধির জন্য প্রার্থনা করতে বলেছেন। ইলমের মর্যাদা হিসেবে এতটুকুই যথেষ্ট। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ وَقُل رَّبِّ زِدۡنِي عِلۡمٗا ١١٤ ﴾ [طه: ١١٤]
‘এবং তুমি বল, ‘হে আমার রব, আমার জ্ঞান বৃদ্ধি করে দিন।’ {সূরা ত্ব-হা, আয়াত : ১১৪} ইমাম কুরতুবী রহ. বলেন, যদি ইলম থেকে উত্তম কিছু থাকত তবে আল্লাহ তাঁর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে তা-ই বৃদ্ধির প্রার্থনা করতে বলতেন। যেমন তিনি এ আয়াতে ইলম বৃদ্ধির জন্য প্রার্থনা করতে বলেছেন।
{চলবে}