Quantcast
Channel: প্রজন্ম ফোরাম
Viewing all 15150 articles
Browse latest View live

আইন পড়ার কি সুযোগ আছে?

$
0
0

আমি জানতে চাচ্ছি বাংলাদেশ ওপেন ইউনিভার্সিটি তে ৪ বসরের (সন্মান) আইন L.L.B পড়ার সুযোগ আছে কিনা ?? আমি উনাদের ওয়েব সাইট ভিসিট করে তথ্য পেলাম নাহ, কিন্তু ওদের ফেছবুক পেজ এ দেখলাম এই সংক্রান্ত একটি ভর্তি বিজ্ঞপ্তি সেটা ২০১৩ সাল এর দিকে, কেউ কি আমাকে এই বিষয়ে কোন ভাবে উপকার করতে পারবেন সঠিক তথ্য দিয়ে অথবা কেউ জানে এমন কারো ফোন নং অ যদি দিতেন তাহলে আমি যোগাযোগ করে নিতাম, আমার সরাসরি উন্মুক্ত ইউনিভার্সিটি তে যাওয়ার উপায় নেই কারন আমি গ্রামে থাকি, তাই আপনাদের সরনাপন্ন হলাম।  neutral


লজ্জা

$
0
0

কেও কিছু লিখলেই তাকে মেরে ফেলা হবে ?তাকে দেশের বাইরে পাটীয়ে দেওয়া হবে সেই স্বাধীনতা কে আমি বিশ্বাস করি না । এক জন মানুষের স্বাধীনতা আছে যা ইসশা টা লিখার। এক জন মানুষের ভাল বলার বা কোন কিছু কে খারাব বলার অধিকার আছে ।কিন্তু সুধু ধর্ম এর দহাই দিয়ে এক জন কে মেরে ফেলবে ? ছি । মানুষ এর জীবন কি এতো তাই সস্তা । র আমরা মুসলিম তহ শান্তির ধর্ম । তাইলে আমরা এই ভুল কেন করি ।আমরা কেন ভুলে যাই মানুষ মাত্র ভুল করে । কেন তারা তাকে না বুজিয়ে হত্যা করল । তার মা আছে বন আছে, আছে স্ত্রী , ছেলে মেয়ে । উপ নারা যারা মারলেন তারা কি তাদের কথা একবার ভাব্লেন না । সত্যি নিজেকে মুসলিম বলতে কষ্ট হই । শান্তির ধর্ম কে আপনারা অশান্তির ধর্ম বানিয়ে দিতসেন।  sad sad sad sad sad sad angry

নতুন গ্রাফিক্স কার্ড ও ওয়েব ক্যাম কেনার পরামর্শ

$
0
0

জীবনের প্রথম গ্রাফিক্স কার্ডটি কিছু দিন আগে কিনলাম। SAPPHIRE Readon HD 5450 2gb জঘণ্য। DDR3 এতো জঘণ্য হইতে পারে আমার জানাছিল না। তাও আবার ২ জিবি sad বড় গেম গুলো এক্সট্রাক্ট হলে ভালোই চলে। কিন্তু ইন্সটল করা বড় গেম গুলো স্মুথলি চলে না। যেমন ডেভিল মে ক্রাই-৪,৫ একসট্রাক্ট করা তাই তাই দারুন চলে কিন্তু এসাসিন ক্রিড ইন্সটল করতে হয় আর সেটাই চলে না। তবে পেক্ষাকৃত ছোট যেমন টম রাইডার, কমান্ডো ভালোই চলে। গ্রাফিক্স কার্ড এর কনফিগারেশন বুঝি না। কনফিগার করতে গেলে আরো খারাপ ফল দেয়। এবার জানালা ৭ কে ৬৪ বিট করে দেখবো। না হলে অন্য আরেকটা কার্ড কিনবো।
এইবার বাজেট দশ হাজার টাকা।
সি পি উ কনফিগারেশন
Processor : INTEl(R) Premium(R)CPU G645 @ 2.90GHZ
Rm: 4gb DDR3
Motherboad: Foxconn H6IMXE-V

আরেকটা ওয়েব ক্যাম কিনবো। বাজেট দুই হাজার টাকা।

পাল্টে যাচ্ছে যুব সমাজের দৃশ্যপট

$
0
0

শিক্ষা জাতির মেরুদন্ড, শিক্ষা ছাড়া একটা দেশের উন্নয়ন সম্ভব নয়। আর এই শিক্ষার সাথেই অধিকাংশ যুব সমাজ জড়িত। প্রাইমারী স্কুল থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত সব খানেই যুবদের বিচরন। বিশেষ করে “আইসিটি” শিক্ষা। এক্ষেত্রে যুব সমাজ এনেছে এক উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন- যুবকদের মধ্যে কেউ লিখছে আবার কেউবা শেখাচ্ছে। আর এটাই পাল্টে দিয়েছে যুব সমাজের দৃশ্যপট। আগে রাস্তার অলি-গলি বা রাস্তার মোড়ে মোড়ে যুবকদের দেখা যেতো হয় তারা আড্ডা দিচ্ছে বা মেয়েদের উত্যক্ত করছে অথবা বিভিন্ন ভাবে মাদকে আসক্ত হচ্ছে। কিন্তু সেই দৃশ্য এখন একেবারেই অচেনা। এখন আর যুবকরা রাস্তার অলি-গলি বা মোড়ে মোড়ে আড্ডা দেয় না। তারা এখন ব্যস্ত লেখাপড়া বা প্রযুক্তি নিয়ে। অদ্ভুত সুন্দর এই পরিবর্তন। ভাবতে ও খুব ভাল লাগে আমাদের ছেলেরা ড্রোন বা রোবট বানাচ্ছে, বিভিন্ন মোবাইল অ্যাপস্ তৈরি করছে। আজ ভাবতে অসম্ভব ভাল লাগে যে আমাদের ছেলেদের তৈরি এক কোটি মোবাইল অ্যাপস্ আগামী ২০২০ সালের মধ্যে বিদেশে রপ্তানী হবে? এছাড়াও খেলে গেছে আউট সোর্সসিং এক উন্মুক্ত বিশাল দরজা, লক্ষ-লক্ষ যুবকরা জরিত হচ্ছে এক্ষত্রে, আয় করছে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা। আর আগামী ১০ বছরের মধ্যে এ খাত ছাড়িয়ে যাবে গার্মেন্টস্ সেক্টরকেও। ভাবতে খুব ভাল লাগে এক্ষেত্রে এগিয়ে আছে আমাদের যুব-সমাজ। আজ আমাদের কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা পড়ালেখার পাশাপাশি আউট সোর্সসিং এর মাধ্যমে উপার্জন করে নিজের পড়ালেখা চালাচ্ছে এবং পরিবারকেও সাহায্য করছে। আজ আমাদের যুব-সমাজ তাদের পড়ালেখার পাশাপাশি অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে এক বিশাল অবদান রাখছে যা আমাদের দেশকে তুলে ধরছে এক নতুন মাত্রায়। তাই আমাদের যুব-সমাজ এখন আর সমাজের বোঝা নয়, নিজেদেরকে তৈরি করছে মানব সম্পদ হিসেবে, আজ যারা বিদেশে কাজ করছে তাদের অধিকাংশই এই যুব-সমাজের অংশ। তাই আমাদের যুব-সমাজ আজ শুধু তাদের দৃশ্যপটকেই পাল্টায় নাই- পাল্টে দিয়েছে পুরা দেশের দৃশ্যপটকে আর তাই অভিবাদন জানাই আমাদের যুব-সমাজকে।

মানিবুকার্স (স্কীরল) থেকে ইসলামী ব্যাংকে টাকা উত্তোলন করতে কী কোন সমস্

$
0
0

মানিবুকার্স (স্কীরল) থেকে ইসলামী ব্যাংকে টাকা উত্তোলন করতে কী কোন সমস্যা হচ্ছে। মানিবুকার্স (স্কীরল) থেকে ইসলামী ব্যাংকে টাকা আসতে কোন ধরনের সমস্যা হচ্ছে কী?

বগা লেকে ৪৮ ঘন্টা

$
0
0


আমি যখন ইউনিয়ন পরিষদের সচিব পদে কর্মরত ছিলাম, তখন আমার হাতে একটি বই আসে। সে বইতে সারা বাংলাদেশের জেলা ওয়ারী  সমস্ত ইউনিয়ন পরিষদের নাম আছে। যে সমস্ত ইউনিয়নে দেখার মত স্থান আছে অর্থাৎ পর্যটন এলাকা, তার ইউ:পি: সচিবদের নিকট আমি ডাক যোগে রেজিঃ করে চিঠি দেই যে, আমি উমুক, আমার শখ এই এই, আমার পরিবেশ এই ইত্যাদি লিখি। আমি আপনার পরিবেশ, এলাকার পরিস্থিতি সমস্ত কিছুর তথ্য জানতে চাই এবং  আমি আপনার  এলাকায় বেড়াতে যাইতে ইচ্ছুক। আপনি আমার সহকর্মী ভাই, আপনি আমাকে  সার্বিক সহযোগিতা করার জন্য সবিনয় অনুরোধ করিতেছি। এভাবে অসংখ্য চিঠি দেই।  প্রায় চিঠির উত্তর পাই এবং তাঁরা তাঁদের এলাকায় বেড়াতে যাওয়ার জন্য আমাকে দাওয়াৎ দেয়। এই ভাবে আমার রুমা ও বগা লেক সফর।
২০০৪ইং সালের ১৫ জানুয়ারী, শীত কালে রুমা উপজেলা সদর ইউঃ পিঃ সচিব মি: উথ্যাইচিং মার্মার নিমন্ত্রনে আমি একাই রুমাসহ বগা লেক ভ্রমনে বের হই। ইউঃপিঃ সচিবের পাঠানো পথের তথ্য মোতাবেক চট্রগ্রাম থেকে বান্দরবান। বান্দরবান শহরে চাঁদের গাড়ীর ষ্ঠান্ডে এসে রুমা যাওয়ার জন্য  টিকেট কেটে প্রথম চাঁদের গাড়ীতে উঠলাম। অনেকক্ষন পর উপজাতি পুরুষ, মহিলা ও কয়েক জন বাংগালিসহ ঠাসা ঠাসি করে লক্কড় ঝক্কড় মার্কা চাঁদের গাড়ীটি হেলে দুলে, আঁকা বাঁকা উচু নিচু পাহাড়ী পাকা রাস্তায় রুমার পথে চলতে লাগলো। আমিও পাহাড়ী পথের সৌন্দর্য উপভোগ করতে করতে রুমার দিকে যেতে লাগলাম,অর্দ্ধেক রাস্তা আসার পর চাঁদের গাড়ী হতে নেমে শংখ নদীতে শ্যালো নৌকায় উঠতে হলো, নদীতে খবুই কম পানি এবং তা এতো স্বচ্ছ যে, নদীর তলদেশে সব কিছু দেখা যায় ও পানির তীব্র স্রোত।  কোন কোন সময় শ্যালো নৌকা বালিতে আটকে যাচ্ছিল, অনেক কশরত করে নৌকা আবার চলছিল। নৌকায় অনেকের সংগে রুমা ও বগা লেক এর পরিবেশ পরিস্থিতি নিয়ে অনেক আলাপ আলোচনা হলো। আমার ক্যামেরা ও দূরবীন দেখে অনেকের জিজ্ঞাসা, আমার বাড়ী কোথায়,কি করি, আামি রুমায় কার বাড়ীতে যাব? আমি তাদের প্রশ্নের যথারীতি উত্তর দিয়ে পথের অনেক দৃশ্যের ছবি তুললাম ও দূরবীনে দূরের দৃশ্য দেখতে দেখতে তৃপ্ত মনে এক সময় রুমায় পৌছিলাম। একজন বাংগালির সহযোগিতায় ইউ:পি সচিব উথ্যাইচিং মার্মার বাড়ীতে হাজির হলাম। তিনি, বৌদি ও  তাদের ১ ছেলে চার্লি, ১মেয়ে মিলি, আমাকে দেখে তারা সকলে তো অবাক। সকলেই আমাকে সাদর অভ্যর্থনা জানালো। প্রথম দেখায় তাদেরকে আমার খুবই ভালো লাগলো। গেষ্ট রুমে আমাকে বসতে দিয়ে,আমার আসার সংক্ষিপ্ত বিবরন জানলো।                                     
আমি তাদের জন্য সামান্য উপহার স্বরূপ আমার আনা নাস্তার প্যাকেটটি বৌদির হাতে দিলাম। সংগে সংগে বৌদি ও তাদের মেয়ে বাড়ীর মধ্যে গেল আমার চা নাস্তার ব্যবস্থা করার জন্য। কিছুক্ষনের মধ্যে আমার চা নাস্তা নিয়ে বৌদি ও তার মেয়ে  উপস্থিত। সকলে চা নাস্তা খেতে খেতে আমার পারিবারিক বিস্তারিত বিবরন জানলো ও আমিও তাদের রুমা, বগালেকসহ  সব কিছু তথ্য জানলাম। বৈকালে বাজারে ঘুরলাম, অন্যান্য  সচিবসহ সকলের সংগে পরিচয় হলো। তাদের ও আমার এলাকার  পরিবেশ, পরিস্থিতি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা হলো। তাদের আন্তরিকতা দেখে আমি মুগ্ধ। রুমাতে ২দিন থাকলাম।  উপজাতি স্থানীয় এক ইউ:পি: সচিব এক হোটেলে তার ৪/৫জন বন্ধুসহ  আমাকে রাতে খাবারের জন্য নিমন্ত্রণ করলো। যথা সময়ে আমি উক্ত হোটেলে উপস্থিত হলাম। সচিব সহ তারা সকলেই আগে এসেছেন। ৩টি টেবিলে মদের বোতল ও  গ্লাস রেডি, বাটিতে মাংস ও চানাচূর
                                                                                                            ২
পরিবেশন করা হয়েছে। আমি তো অবাক, বিনীত ভাবে বললাম,আমি জীবনে কখনও মদ খাইনি এবং আজও মদ খেতে পারবো না। উক্ত সচিবের বন্ধুদের মধ্যে মুসলিমও আছে। আমার ভুল হয়েছে,যখন উনি আমাকে নিমন্ত্রণ করলেন,তখন যদি আমি বলতাম যে, আমি মদ খাইনা। তাহলে এখন এমন পরিস্থিতির মুখে পরতাম না। সচিব ধরে নিয়েছেন যে, সমতল এলাকার জেলা হতে বেশী ভাগ লোক পাহাড়ী  এলাকায় এসে একটু মদ খেয়ে যায়। শুধু আমাকে ব্যতিক্রম দেখলেন। বাধ্য হয়ে আমাকে অন্য টেবিলে মুসলিম খাবার দেওয়া হলো। তারা সকলেই মদ, মাংস ও  অন্য খাবার খুব আনন্দে খেলো।
ইউ:পি: সচিব উথ্যাইচিং মার্মা অসুস্থ্য থাকায়, উনি আমাকে নিয়ে বগা লেকে যেতে পারবেন না । তাই আমার বগা লেকে যাওয়ার জন্য একটা গাইডের ব্যবস্থা করলেন, গাইডের নাম মি: থানজুয়ান বম। বগা লেকে থাকার জন্য সচিবের পরামর্শে বৈকালে গাইডকে সংগে নিয়ে বাজার করলাম, চাল, ডাল,ডিম,লবন, পিঁয়াজ, তেল  চিনি, চাপাতি, বিস্কুট ও কয়েল ইত্যাদি। গাইড আমার জন্য সুন্দর একটি বাঁশের লাঠির ব্যবস্থা করলেন। আমি লজ্জায় বললাম, লাঠির কি দরকার ? উনি বললেন, বগা লেকে যেতে গেলে আপনার লাঠির একান্ত প্রয়োজন পড়বে। এর মধ্যে বাজারে সংবাদ পেলাম যে, চট্রগ্রাম মেডিকেল কলেজের ৩জন ছাত্র আগামী কাল ভোরে বগা লেকে যাবে। আমি তাদের সংগে কেওক্রাডং নামে এক আবাসিক হোষ্টেলে দেখা করলাম। প্রথম দর্শনে আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে দেখি, সামনে সহাস্য বদনে টগবগে ৩ তরুন। তারা যাবে বগা লেক হয়ে কেওক্রাডং পর্যন্ত। আমি সুদূর উত্তর বঙ্গ হতে একা এই বয়সে বগা লেকে যাব শুনে তারা তো অবাক। তারা ৩জনেই চট্রগ্রাম মেডিকেল কলেজের শেষ বর্ষের ছাত্র, নাম মহিত(মুসলিম), শৈবাল(বরুয়া), পাবলো(চাকমা)। তারা একজন মুসলিম তরুন ছেলেকে গাইড হিসাবে নিয়েছে। এই দুর্গম পথযাত্রায় (ঝিরি দিয়ে) আমাকে তারা পেয়ে খুবই খুশি। মোট ৬জন আগামী কাল ভোর ৭টায় বগা লেকে রওয়ানা দিব। সচিব মহাশয় আমার বগা লেকে থাকার ও দেখা শুনার  জন্য ওখানকার কারবারির ছেলের নিকট একটি চিঠি দিলেন। কারবারির ছেলের নাম সাংলিয়াম বম। পরের দিন ভোরে সচিবেদের নিকট থেকে বিদায় নিয়ে মেডিকেলের ৩ছাত্রসহ বগালেকে ঝিরি পথে যাত্রা করলাম। ছাত্ররা আমার ক্যামেরা ও বাইনিকুলার দেখে খুবই অবাক ও আনন্দিত। তাদের সংগেও অবশ্য ভালো ক্যামেরা, তারা অনুরোধ করলো, তাদের ক্যামেরায় তাদের ছবি উঠাতে এবং আমার বাইনিকুলারে দূরের দৃশ্য দেখতে দিতে। আমি তাদের অনেক ছবি তুলে দিলাম এবং তাদেক আমার বাইনিকুলার দিলাম দূরের দৃশ্য দেখতে। তারাও আমার ক্যামেরায় আমার অনেক ছবি তুলে দিল। বেশী বয়সের জন্য আমি পাহাড়ী দুর্গম পথ চলতে খবুই কষ্ট হচ্ছিল। তাই ছাত্রদেক বললাম, তোমরা অনেক দূরের যাত্রী, তোমরা আগে আগে যাও।  বগালেক সামনে, আমি ধীরে ধীরে যাচ্ছি। তারা অনেচ্ছা স্বত্বেও আগে চলে গেল। আমি ও আমার গাইড তাদের পিছু পিছু যেতে লাগলাম। ঝিরিতে এখন পানি খুবই কম, বর্ষায় তীব্র স্রোত। তার নমুনা ঝিরিতে অসংখ্য বড় বড় গাছ ও বাঁশ পড়ে আছে। পথ দুর্গম হওয়ায় সে গুলি বছরের পর বছর পড়ে বিরাট সম্পদ পঁচে নষ্ট হচ্ছে।  পথের এক জায়গায় বড় একটি ঝর্ণা, পানি পড়ে পড়ে বিরাট একটি গভীর গর্ত্ত  হয়েছে। তার পানি খুবই স্বচছ ও কালো, দেখতে ভয়ে গা ছম ছম করে উঠে। তার পথের পার্শ্বে বিরাট পাথরের ফাঁটল দিয়ে স্বচ্ছ পানি বের হচেছ। কারা যেন উক্ত পাথরের ফাঁটলের মধ্যে একটি ৪/৫ হাত বাঁশের ফাল্টা গুঁজে মাথার দিকে একটি সরু বাঁশ দিয়ে আটকে দিয়েছে,তা দিয়ে অবিরত স্বচ্ছ ঠান্ডা পানি পড়তেছে। ক্লান্ত পথিকেরা তৃপ্তি সহকারে উক্ত স্বচ্ছ ঠান্ডা পানি পান করে, যার
                                                                                                         ৩
কোন শেষ নাই। আমরাও হাত, পা ও মুখ ধুয়ে তৃপ্তি সহকারে উক্ত স্বচ্ছ ঠান্ডা পানি পান করে সর্ব্ব শক্তিমান আল্লাহর নিকট শুকুর করলাম। পথে ঝিরির মধ্যে অসংখ্য বিরাট বিরাট পাথর পড়ে আছে, কোথাও বা গভীর জঙ্গল। ঝিরির এক পার্শ্ব দিয়ে উঁচু নিচু সুরু পায়ে চলার পথ। কোন কোন জায়গায় ঝিরির মধ্যে  তিন দিকে পাহাড় একটুক জোরে শব্দ করলে তা অনেক জোরে প্রতিধ্বনি হয়ে কানে আঘাত করে। আমিও ছেলে মানুষের মত ঐ জায়গায় জোরে জোরে শব্দ করি প্রতিধ্বনি শুনার জন্য। এরই মধ্যে গাইড বললো যে, এই জায়গায় শান্তি বাহিনী ও বাংলাদেশ সেনা বাহিনীর মধ্যে তুমূল যুদ্ধ হয়েছিল। তাতে উভয় পক্ষে অনেক ক্ষয় ক্ষতি হয়েছিল। আমি পরে রুমাতে এসে সচিবের নিকট থেকে জেনেছি যে, ঘটনাটি সত্যই ঘটেছিল। পথে অনেক জায়গায় উপজাতি নারী পুরুষ পিঠে অনেক হলুদ ও আদার বোঝা নিয়ে সহজ ভাবে পার হচ্ছিল, তারা রুমা বাজারে সেগুলি বিক্রয় করবে। অনেক বাংগালি টুরিষ্টও পার হয়ে যাচ্ছিল। পথে অনেক জায়গায় পাহাড় পার হতে হচ্ছিল, তখন পাহাড়ে উঠতে গাইডের দেওয়া লাঠিটি আমার অনেক সাহায্যে লেগেছে। লাঠির উপড় ভর দিয়ে আমার দেহটা টেনে তুলতে ও পাহাড় হতে নামতে ও পিচ্ছিল পাহাড়ী রাস্তা পাড় হতে লাঠির উপড় ভারসাম্য রক্ষা করতে ছিলাম। সময় সময় আমার মনে হয়,আমার দেহ আর চালাতে পারব না। তখন অনেকক্ষন বিশ্রাম নিয়ে আবার মনের জোরে হাঁটতে আরম্ভ করি, আর আমার গাইডের কাছে এই রাস্তা পান্তা ভাত। অসংখ্য ধন্যবাদ গাইডকে, আমাকে জোর করে লাঠিটি দেওয়ার জন্য। অনেক অনেক কষ্টের পর অবশেষে দুপুর ১২-৩০মি: বগালেকে পা রাখলাম,মনে হয় যেন আমি এভারেষ্ট জয় করলাম।
      বগা লেকটির চারি দিকে পাহাড়, মাঝখানে সবুজ নীল স্বচ্ছ গভীর পানি। চারি দিকে পানির মধ্যে অসংখ্য বড় বড় পাথর পড়ে আছে, দেখে ভয়ে গা ছম ছম করে উঠলো। পরে শুনলাম, লেকটি কেহ সাঁতরে পার হতে পারে না। যদি কেহ দু:সাহস করে সাঁতরে পার হতে চেয়েছে, লেকের মাঝ বরাবর যেয়ে  ডুবে গেছে, লাশটিও ভেসে উঠে নাই বা কোন দিন লাশটি পাওয়া যায় নাই। লেকটির পানি কোন সময় কম বা বেশী হয় না। উপজাতিরা বিশ্বাস করে যে,বড় একটি সাপ লেকের পানি মুখের মধ্যে ধরে আছে। লেকটির পানি সকলেই গোসল, রান্না, খাবার ও অন্যান্য সব কাজে ব্যবহার করে। লেকের দক্ষিণ - পশ্চিম কোনে পাহাড়ের উপড় বাংলাদেশ সেনা বাহিনীর ক্যাম্প। সেনা সদস্যরা তাদের খাবার জন্য নৌকা নিয়ে কারেট জাল দিয়ে ছোট ছোট তেলাপিয়া মাছ ধরে। বগালেকে পৌছে আমার তিন মেডিকেলের ছাত্রকে দেখতে পেলাম, তারা তখন বগা লেকের পূর্ব পার্শ্বে কারবারির দোকানে নাস্তা করতে ছিল। একটু রেষ্ট নেওয়ার পর আমরা নাস্তার অর্ডার দেওয়ার আগেই জোর করে উক্ত তিন ছাত্র আমাদের নাস্তার অর্ডার দিল। পাউরুটি, পাহাড়ী কলা, পেঁপে ও চা ছিল, নাস্তার আইটেমটা খুব ভালো লাগলো। নাস্তার পর্ব সেরে তারা কেওক্রাডং পথে রওয়ানা দিবে। বিদায়ের সময় আমাদের সকলের চোখে পানি, দোয়া করলাম, তাদেক যেন সব সময় আল্লাহ ভালো রাখেন। ওখানে  হঠাৎ দেখা ও পরিচয় আমার বাড়ীর পার্শ্বে গাইবান্দা জেলার গোবিন্দগন্জ এর ছেলে নাম ইমন, কুষ্টিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, সেও বেড়াতে এসেছে। শংকর বাবুর লিখা এপার বাংলা ওপার বাংলায় পড়েছি, নতুন জায়গায় সকলে যেন সজ্জন ও আপনজন। আমার বেলাতে দেখিছি, যেখানে গেয়েছি, সেখানেই সকলের নিকট থেকে খবুই ভাল ব্যবহার পেয়েছি। ঐ কারবারির দোকানেই তার ছেলের দেখা হলো তার নাম সাংলিয়াম বম, তাকে উথ্যাইচিং মার্মার চিঠিটি দিলাম। চিঠি পড়েই আমাদেক স্বাগতম জানালো। গাইড ও কারবারি ছেলে আমার ব্যাগেজ নিয়ে অল্প দূরে তার বাড়ীতে উঠালো। কারবারির ছেলে, তার বৌ ও তার বোনকে আমাদের আগমনের কারণ জানালো, তারা হাসি   
                                                                                                          ৪
মুখে আমাদেক বরন করে নিল। বৌদির নাম জুন সিয়াম, বোনের নাম লাল এং সিয়াম সে কলেজে পড়ে। আমি আমার খাবারের ব্যাপারে তাদেক বললাম, আমি মুসলিম, আমি মদ ও অন্য কোন মাংস খাইনা। ডিম, ডাল ও সব্জী  তা বাংগালি রান্না হলে আমার আপত্তি নেই।
      জীবন চলার পথে কোন কোন সময় আশ্চার্য ঘটনা ঘটে। কারবারির দোকানে আমার জীবনে একটা আশ্চার্য ঘটনা ঘটলো। আমার বাড়ীর পার্শ্বেই দিনাজপুর জেলার ঘোড়াঘাট উপজেলায় ওসমানপুরে একটি খৃষ্টান মিশন আছে। সেখানে উপজাতি এবং আদিবাসির গরীব ও অনাথ ছেলে মেয়েরা লিখা পড়া করে। ওখানকার প্রধান ব্যক্তি উপজাতি মি: জ্যোতিময় চাকমা আমার প্রিয় বন্ধু। সেখানে আমি প্রায় যাই। গরীব ও অনাথ ছেলে মেয়েদেক আমার খুব ভাল লাগে, তাই আমার গাছের লিচু ও ১ম বৈশাখে মিষ্টি খাওয়াই। বগালেকের ছেলে মেয়েরাও ওখানে পড়তো। এই সময় কারবারির দোকানে বগা লেকের ২টি মেয়ে আমাকে প্রথম দেখে চিনতে পেরেছে। ওখানে উপস্থিত তাদের বাবা ও মাকে তাদের ভাষায় বলতেছে যে, এই মামা ওসমানপুরে আমাদেক লিচু ও মিষ্টি  খেতে দিয়েছে এবং আমাদেক দেখাশুনা করেছে। আমি তাদের ভাষা বুঝিনা ও মেয়ে ২টিকে চিনতেও পারিনি। হঠাৎ মেয়ে ২টির বাবা ও মা এসে আমার হাত দুইটি ধরে কেঁদে উঠলো এবং বললো,বাবা আমার মেয়ে ২টিকে বহু দূরে ওসমানপুরে তুমি আদর যতœ করে লিচু ও মিষ্টি খাওয়াছ,তার সামান্য বদলী হিসাবে আজ আমাদের বাড়ীতে খাবারের দাওয়াৎ রইল। উপস্থিত সকলে তো অবাক, আর আমি প্রথমে কিছু বুঝে উঠে পারছিলাম না। শুধু বললাম, এই মাত্র তো আসলাম, দাওয়াতের জন্য আপনাদেক অশেষ ধন্যবাদ, তা পরে আপনাদেক জানাবো।
       কারবারির দোকানে সেনা বাহিনীর সদস্য এসে আমার পরিচয়, আগমনের হেতু ইত্যাদি তথ্য জেনে নিল এবং তা রেজিষ্টারে লিপিবদ্ধ করলো। কারবারির ছেলের বাড়ীতে বৈকালে ডিম ও ডাল দিয়ে ভাত খেলাম। বৈকালে বগা লেকের আশ পাশ বেড়ালাম ও অনেক ছবি উঠালাম। ঐ মেয়ে দুইটির বাবা মা আবার আমার সংগে দেখা করলো, দাওয়াতের ব্যাপারে কথা বলতে। আমরা যার বাড়ীতে আছি, সে বললো, মেয়ে দুইটির বাবা তার ভাই হয়, চাচা আপনার দাওয়াৎ খেতে কোন অসুবিধা হবে না, আপনাকে বাংগালি রান্না করে খাওয়াবে। আমি রাতে দাওয়াৎ খেতে রাজী  হলাম, তার সংগে আমার খাবার আইটেম বলে দিলাম। আমরা যে বাড়ীতে আছি সে বাড়ীর পার্শ্বে তাদের বাড়ী, বেড়াতে বেড়াতে সে বাড়ীতে গেলাম। তারা সকলেই আমাদেক সাদর
অভ্যর্থনা জানালো। কথা বলার ফাঁকে ঐ মেয়ে দুইটির বাবা মা আমার থেকে জেনে নিলো যে, আমি মোরগের মাংস খাই কিনা। আমি মোরগের মাংস খাই, তবে আমি নিজেই জবাই করে দিলে। তখন তারা বললো, এখনই মোরগটি জবাই করে দেন। আমি তাই করলাম, দেখলাম যে, তারা আমার জন্য তাদের সব চেয়ে সেরা মোরগটি জবাই করালো। আমি যে বাড়ীতে আছি তাদেরকেও দাওয়াৎ দিয়েছে।
      এদিকে সন্ধ্যায় ক্যাম্পের মেজর মি: কবীর সাহেব আমাকে দেখতে এসেছেন যে, সুদূর উত্তর বঙ্গ হতে ৫৪ বৎসরের এক বয়স্ক লোক একা এসেছেন বগা লেক দেখতে, তাও আবার উঠেছেন এক উপজাতির বাড়ীতে। আমাদের মধ্যে খোলা খুলি প্রাণবন্ত আলোচনা হলো। উনি বললেন যে, আপনি ভ্রমন ভালোবাসেন, বগা লেক থেকে ১০ গুন বড় লেক আমাদের বাংলাদেশের মধ্যে আছে লেকটির নাম পুকুর পাড়। সেখানে আপনি যেতে পারেন, লেকটি অপূর্ব সুন্দর, চারি দিকের দৃশ্য ভাষায় প্রকাশ  করা যাবে না। বিদেশের দৃশ্যাবলীও তার কাছে হার মানবে, সেখানে বাংলা দেশের সেনা বাহিনীর বড় একটি ক্যাম্প আছে। আপনি বিরতি দিয়ে দিয়ে পুকুর পাড়
                                                                                                           ৫
লেকে যেতে পারবেন। আমি বললাম যে,আমি বয়স্ক মানুষ,আমি অত দূর যেতে পারবো না। তিনি বললেন যে, এখানে সেনাবাহিনীর একটি ও উপজাতির একটি সুন্দর বাংলো আছে, সেখানে তো থাকতে পারতেন। আমি  বললাম যে, রুমার সদর ইউ:পি: সচিব আমার সহকর্মী, তাই আমি তাঁর সুপারিশে কারবারির ছেলের বাড়ীতে থাকতেছি। উনি বাড়ীর মালিককে আমার যতœ নেওয়ার কথা বলে বিদায় নিলেন।
       রাতে আমরা সকলে ঐ মেয়ে দুইটির বাড়ীতে দাওয়াৎ খেতে গেলাম। তাদের বাড়ীর প্রথম ঘরে আমাদেক বসতে দিলেন। রান্নাা একটু দেরী হবে, তাই চা খেতে দিলেন। কলেজ পড়–য়া বোনটি মোরগটি রান্না করতেছে। প্রায় ১-৩০মি: পর ভিতরের পরি পাট্টি ভাবে সাজানো গোছানো ঘরে খাবারের ডাক পরলো। তাদের তাঁতে হাতে বুনানো চাঁদর বিছে দিয়ে আমাদেক বসতে দিলো। খাবার পরিবেশন করতেছে কলেজ পড়–য় মেয়ে ও ঐ বাড়ীর বৌদি। পাহাড়ী ছোট ছোট লাল মিষ্টি আতপ চালের আটালো ভাত,  বাংগালি রান্না মোরগের মাংস ও সব্জীর তরকারি, খাওয়া খুবই ভলো হলো। সব চেয়ে আমার নিকট ভালো লেগেছে তাদের  প্রত্যেকের আন্তরিক ব্যবহার, তা জীবনে ভুলতে পারবো না।
      রাতে দাওয়াৎ খেয়ে এসে বাড়ীর মালিককে  বললাম, বগা লেকে আর কোন বেড়ানোর জায়গা নেই? সে বললো, চাচা একটু দূরে মুরং পাড়া বেড়ে আসতে পারেন। আমি বললাম, যেতে আসতে কত সময় লাগবে? সে বললো, ১ ঘন্টা সময় লাগবে। ঠিক হলো আগামী কাল ভোরে ভাত খেয়ে সেখানে যাওয়া হবে, গাইড পথ চেনে। রাতে থাকার জায়গা আমাকে দিলো খোলা জানালা বরাবর  এক মাত্র সিঙ্গেল খাটে। আমি ভয় পেয়েছি, তাই আমি বললাম আমি মেঝেতে শুইবো।্ গাইডের আপত্তি সত্বেও তাকে জানালার কাছে খাটে শুইতে দিলাম আর আমি পার্শ্বে নিচে মেঝেতে শুইলাম। শুইবার জন্য পরিস্কার ধোয়া কাঁথা বিছানার চাদর কোন কিছুর কমতি নেই।
              সকালে ঘুম থেকে উঠে হাত মুখ পরিস্কার করেই  বিস্কুট দিয়ে চা খেলাম। কিছু পরে পাহাড়ী ছোট ছোট আতপ লাল চালের আটালো মিষ্টি ভাত ও পাহাড়ী ছোট মিষ্টি কদুর ঘাটি দিয়ে বৌদি খাবার দিলো। কদু যে এতো মিষ্টি ও সুস্বাদ হয় আগে জানতাম না, রান্নার সময় কদুতে চিনি বা গুড় ব্যবহার করা হয় নাই। খাওয়ার পর আমি ও গাইড মুরং পাড়া দেখার জন্য রওয়ানা দিলাম, পাহাড়ী উঁচু নিচু আঁকা বাঁকা পায়ে চলা পথ, পাহাড়ীদের নিকট যে ৩০মি: পথ তা আমার নিকট ২- ০০ ঘন্টার পথ। পথের দৃশ্য যত দেখি তত আমার নিকট অপূর্ব লাগছে। অবশেষে কাঙ্খিত মুরং পাড়াতে পৌছিলাম, খোঁজ নিয়ে জানতে পারলাম কারবারি বাড়ীতে নেই, কাজের জন্য উপজেলা রামুতে গেছে। কারবারি ছেলে বাড়ীতে আছে, সে আমাদেক স্বাগতম জানালো, খুলে দিলো ঘরের দরজা। আমরা কাঠের সিঁরি দিয়ে উঠে ঘরে ঢুকলাম, ঢুকেই অবাক হলাম। কাঠের ও বাঁশের ঘর যে এতো বড় হয় আগে কল্পনা করতে পারি নাই। ঘর নয় যেন একটা কমপ্লেক্্র ভবন। ঘরের মধ্যে দুই ধার দিয়ে কয়েকটি ছোট ছোট ঘর ও মাঝ বরাবর হল রুম। যেন টেনিস বল বা বেডমিল্টন খেলা যাবে। দক্ষিন পার্শে রান্নার ব্যবস্থা ও কিছুটা খোলা জায়গা তাতে ধান, চাল,ঝাল, ডাল ও অন্যান্য দ্রব্য রোদে শুকাতে দেয়। ঘরটি এক মানুষ উপরে বড় বড় গোটা গাছ ও বাঁশ দিয়ে তৈরী করা, ঘরের নিচে রাতে তাদের গৃহ পালিত শুকুর,গরু বেঁধে রাখে ও বর্ষার জন্য লাকড়ি সন্চয় করে রাখে। জানা গেল, মুরংদের বৈশিষ্ট বড় বড় ঘর তৈরী করা। আমার ক্যামেরা ও দূরবীন এবং বাংগালি আমাকে দেখে পাড়ার মুরংদের ছেলে মেয়েরা ঘরের সিঁড়ি কাছে ভিড় করে মুরং ভাষায় কিচির মিচির শব্দে কথা বলিতেছে। আমি অবাক হয়ে
                                                                                                             ৬
তাকায়ে দেখলাম, মুরংদের ছেলে মেয়ে উভয়ের কান ও নাক ছিদ্র করে পাখির মোটা মোটা পালক পড়ে আছে। ক্যামেরায় তাদের অনেক ছবি উঠালাম। ঘরের মধ্যে খোলা জানালা দিয়ে দূরবীনে দূরে দেখা যাচ্ছে যে, বেটে মহিলারা বর্ষার জন্য জঙ্গল হতে কাঠ কেটে নিয়ে এসে তাদের ঘরের নিচে গুছে রাখতেছে। পাড়ার মধ্যে ঘুড়ে বেরালাম, প্রত্যেক বাড়ীতে হলুদ সিদ্ধ করে রৌদে শুকাইতেছে, পরে তা তারা রুমার বাজারে বিক্রয় করে। পাড়ার মধ্যে একটি প্রাথমিক বিদ্যলয়ও দেখলাম, তা তখন বন্দ ছিল। কারবারির ঘরে শুধু এক গ্লাস ঠান্ডা পানি খেয়ে সন্ধ্যার আগে আগে বগা লেকে ফিরে আসলাম। সে দিন আর রুমাতে ফেরৎ যেতে পারলাম না, বগা লেকে ২য় রাত কাটাচ্ছি। 
         ভোরে উঠে দেখি ভাত রেড়ি, হাত মুখ ধূয়ে ভাত খেলাম তার পর চা দিলো। এখন বিদায়ের পালা, বাড়ী আশ পাশের অনেকে এসেছে আমাকে বিদায় জানাতে। বাড়ীর মালিক ঘরের মধ্যে যেয়ে দুইটি মিষ্টি কদু এনেছে, আমাকে দেওয়ার জন্য। আমি বললাম, নিজেই রুমাতে পৌছা কঠিন আর মিষ্টি কদুর বোঝা আমি বইতে পারবো না, অবশ্য গাইড একটি কদু নিলো। আমি কিছু টাকা খটুনি ও অন্য খরচ বাবদ দিতে চাইলাম, সে কিছুতেই কোন টাকা নিবে না। বললো, চাচার নিকট থেকে কি কোন টাকা নেওয়া যায়? আমিও নাছোর বান্দা হয়ে বললাম, তোমার ছেলে ঢাকায় কলেজে লিখা পড়া করতেছে তার জন্য আমি কিছু টাকা দিচ্ছি। আমি তো আর ভি ই পি মানুষ নই যে, আমি অনেক টাকা দিতে পারবো। আমি জোর করে তাকে কিছু টাকা দিলাম। এভাবে আমার প্রায় ৪৮ ঘন্টা বগা লেকে অবস্থান।
         আবার চড়াই উৎড়াই দুর্গম পাহাড়ী পথ পাড়ি দিয়ে কোন দুর্ঘটনা  ছাড়াই  অবশেষে দুপুর ১২-০০ টায় রুমায় পৌছলাম। এদিকে সহকর্মী সচিব আমার দেরীর জন্য খুবই টেনশনে আছেন। বগা লেকের যাওয়া আসা পথিকের নিকট থেকে  আমার অনেক খোঁজ খবর নিয়েছেন। এখন বুঝতে পারলাম যে, বগা লেকে যাবার বেলায় কেন গাইডকে  বললেন, ইনার যদি কিছু হয় তখন তোমার ও আমার ফ্যামেলি সহ আমাদেক বাংলাদেশ সেনাবাহিনী অনেক টর্চার করবে। তাই খুব সাবধানে থাকবে। গোসল করার কথা সচিবকে বলায়, উনি বললেন যে, আমিও গোসল করি নাই, কিন্তু আমি শংখ নদীতে  গোসল করি। আমি বললাম, তাহলে আমিও আপনার সংগে শংখ নদীতে গোসল করবো। দুজনে নদীতে গেলাম, দেখলাম পাঁকা শান বাঁন্ধা ঘাট। নদীর পানি খুবই স্বচ্ছ তাই তলা পর্যন্ত সব কিছু দেখা যাচ্ছে। নদীতে তীব্র স্রোত এবং এক কোমর গভীর পানি, নামতেই তা গলা পর্যন্ত পানি হলো । নদীতে ছেলে মেয়ে এক সাথে গোসল করিতেছে যা মুসলিম সমাজে অবৈধ্য। বাড়ী এসে দেখি, বৌদি আমার জন্য  বাংগালি খাবার নিয়ে রেডি।
পরের দিন  খুব ভোরে বৌদি ভাত রান্না করে আমাকে খাওয়ালো। আমার জন্য তারা যে কষ্ট করলো তা জীবনে ভুলতে পারবো না। চোখের পানিতে সকলের নিকট থেকে বিদায় নিয়ে, বান্দরবান যাওয়ার জন্য রুমার লন্চ ঘাটে সকাল ৭ -০০ ঘটিকার শ্যালো নৌকায় উঠলাম।
       বান্দরবানে চট্রগ্রাম বাস ষ্টান্ডে আসলাম, ওখানে আমার জন্য আরেকটা আশ্চার্য্য চমক অপেক্ষা করতেছে। চট্রগ্রামের মেডিকেলের ঐ তিন ছাত্র অপেক্ষারত বাসের জন্য টিকেট কেটেছে। আমাকে দেখে তারা তো অবাক। তারা আমার জন্য  তারাতারি বাসের টিকেট কেটে দিলো ও সংগে সংগে ছিটের ব্যবস্থা করলো। বাসের মধ্যে আমাদের ভ্রমন নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হলো। তারা সকলেই এক বাক্যে বললো, এই ভ্রমনে আমাদের বড়  প্রাপ্তি আপনার সংগে দেখা ও পরিচয় হওয়া। তাদের মতের সংগে আমারও ১০০% এক মত।
                                                                                                             ৭
      চট্রগ্রাম এসে শৈবাল আমাকে একা ছেড়ে দিলো না। তার বাড়ীতে নিয়ে গেল, বাড়ীতে তার বাবা মা নেই। অফিসের কাজে তার মা কক্সবাজারে গেছেন , সংগে বাবাও গেছেন। মা একটি সরকারী প্রতিষ্ঠানের ডিরেক্টর, বাবা চট্রগ্রাম জেলার একটি নাম করা  কলেজের প্রিন্সিপাল। শৈবাল আমাকে পানি গরম করে দিলো গোসল করার জন্য। গোসল করার পর সে খাওয়ার
জন্য নুডুলস আনলো। তার পর আমি চট্রগ্রামে আমার এক ছাত্রের বাড়ীতে গেলাম। শৈবাল বললো, আঙ্কেল রাতে এসে এখনে  রাতের খাবার খাবেন। আমি ছাত্রের বাড়ীতে যেয়ে ভাত না খেয়ে আসতে দিলো না। রাতে শৈবালের বাড়ীতে থাকলাম। শৈবালের বাড়ীতে আমার সব চেয়ে ভালো লেগেছে তার বাবার সমৃদ্ধশালী  লাইব্রেরীটি, আমি তাকে বললাম যে, এই লাইব্রেরীটি পেলে আমি এখানে মাসের পর মাস থাকতে পারবো। আমারও একটি লাইব্রেরী এবং ফুল ও   ফলের বাগান আছে। শৈবাল, পাবলো ও মহিত কে এতো ভালবেসেছি যে, তাদের দুজনে আমাকে লিখা দুইটি চিঠি অবিকল তা এখানে ছেপে দিলাম। চিঠি দুইটি আমার নিকট শেষ্ঠ সম্পদ। চিঠি দুইটি নিম্নরূপঃ                                                                                                               
                                     ১নং চিঠি
                                                               ২১শে ফেব্র“য়ারী/২০০৪
শ্রদ্ধেয় আংঙ্কেল,
                 অনেক আগেই আপনাকে লেখার কথা। কিন্তু কি জানি কেন লেখার জন্য ঠিক সময়, ঠিক পরিবেশ আর ঠিক মুড কোনটাই ঠিকমতোন আসছিল না। তাই বলে তো আর একজন প্রিয় মানুষের কাছে যখন তখন, যেমন- তেমনভাবে লেখা যায় না। এজন্যেই এই বিলম্ব। আপনি কেমন আছেন? আমার সালাম রইল আপনার এবং চাচির প্রতি আর আপনার অসীম ভাগ্যবান ছেলের প্রতি শুভকামনা। অসীম ভাগ্যবান এই জন্য বললাম কারণ আপনার যে পরিমাণ (অকট্য অপরিময়!) ভালবাসা স্নেহ তিনি পেয়ে যাচ্ছেন তাতে ওনাকে হিংসা না করে উপায় নেই। সব বাবাই হয়তো সন্তানকে ভালবাসেন কিন্তু আপনার মতো! অসম্ভব!! আংকেল আপনাকে আমাদের মনে আছে, খুব ভালোভাবেই আপনি আমাদের মধ্যে পাকাপোক্ত একটা আসন তৈরি করে নিয়েছেন, তাই আপনি চাইলেই আপনাকে ভোলা সম্ভব নয়, আমাদের ফাইনাল পরীক্ষা সামনেই। সত্যি কথা বলি - একদম পড়া হয় না। হয়তো ফেলই করতে যাচ্ছি। আপনি দোয়া করবেন, না পাশ হওয়ার জন্য নয়, আমার মনোবলটা যাতে ভেঙ্গে না যায় সেজন্য। অনেক সময় ভাবি ভালো মানুষ হব, কখনো ভাবি হব অনেক বড়লোক- তারপর ইচ্ছা মতো এমন কিছু করব যা সবার করা উচিৎ।জানি না এসব ইচ্ছা কখনো পূরণ হবে কিনা। তবে সবচাইতে খুশী হতাম যদি শান্তি নামক বস্তুটাকে চিরদিন নিজের কাছে রাখতে পারতাম। দুঃখিত আংকেল, আকডুম, বাগডুম বলার জন্য। আসলে খুব একটা গুছিয়ে বলার বা লেখার ক্ষমতা কোনটাই নেই। আপনাকে আরও একটা খবর জানাই। আমাদের সাথে যে চাকমা ছেলেটা ছিল (পাবলো) তার ছোট ভাই দিনাজপুর মেডিকেল এ চান্স পেয়েছেন। কিছুদিন আগে সে ভাইকে ভর্তি করাতে দিনাজপুর গেল। আমাকেও বলেছিল যেতে। মানচিত্রে দিনাজপুরের নিচেই জয়পুরহাট দেখে ইচ্ছা করল এক ছুটে ঘুরে আসি। কিন্তু এখন আসলেই যাওয়া সম্ভব নয়। কিন্তু আপনি এটাও নিশ্চিত থাকেন আপনার সাথে দেখা করার জন্য আমরা তিনজন একবার যাবই। আমরা হয়তো খারাপ ছাত্র, এমনি আরো অনেক কিছুতে কিন্তু কিছু কিছু ব্যাপারে কনফিডেন্ট। তিন মাস বা তিন বছর পরে হোক আপনার গাছের লিচু খাবার জন্য তিন বান্দা হাজির হবে নিশ্চিত !!
                 ভালো থাকুন সব সময়।                                                   শৈবাল
                                                                                                       ৮
                                                      ২নং চিঠি
                                                                                 চট্রগ্রাম থেকে
                                                                                  ২৩/২/০৪
পূজনীয় চাচা/
               আমার অশেষ সালাম  গ্রহণ করবেন। শুরুতেই আপনার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি চিঠি লিখতে দেরী করার জন্য। আমার নাম আপনার মনে আছে কিনা জানি না, তবে আপনার কথা , আপনার সুমধুর বাক্যালাপ আমার মনে আছে এবং থাকবে। আমি হচ্ছি সেই তিন জনের একজন, যাদের সাথে পরিচয় হয়েছিল রুমাবাজারে কেওক্রাডং হোটেলে। ভালোবাসার টানেই আপনাকে লিখতে বসলাম।
                খুব মনে পড়ছে, আর দেখতে ইচ্ছে করছে আপনাকে। মনে পড়ছে সেই হাসি মাখা, প্রাণবন্ত পিতৃতুল্য মানুষটির কথা যার মিষ্টিমাখা মধুর কথা শুনতে শুনতে সেদিন নিজের অজান্তে ভালোবেসে ফেলেছিলাম আর অনায়াসে পাড়ি দিল াম ১২ মাইলেরও বেশী বন্ধুর পাহাড়ী পথ। বগালেকে আপনাকে ছেড়ে আসতে আমাদের দু:খ লেগেছিল। আমাদের ইচ্ছে করছিল আপনাকেও কেওক্রাডং- এ সঙ্গে নিয়ে যাই; খুব কষ্ট হচ্ছিল মনের মধ্যে। আপনার চোখের পানি দেখে কখন যে নিজের চোখ থেকে দু‘চারটে ফোঁটা গড়িয়ে পড়লো বুঝতে পারিনি; এ যেন স্বজন বিদায়ের বেদনা। কিন্তু থানছি থেকে বান্দারবান ফিরে যখন আপনাকে বাসে পেলাম তখন কি যে আনন্দ লেগেছে, তা কখনো আমি আপনাকে ভাষায় প্রকাশ করতে পারবো না।
আমি চট্রগ্রামে বাসায় ফিরে আমার বাবা-মা’কে প্রথমেই আপনার কথা বলি। তাঁরা খুব খুশী হয়েছেন। মা আমাকে বললেন “একটা ভালো জায়গার চেয়ে একজন ভালো মানুষের সাথে পরিচয় হওয়া অনেক ভালো”। তাই আামার একান্তভাবেই বিশ্বাস হয় যে, আমাদের কেওক্রাডং ভ্রমন সার্থক হয়েছে আপনার সঙ্গ লাভ করেছিলাম বলে।
                  আমি চিঠি লিখি না বললেই চলে। চিঠির ভাষা আমার সুন্দর নয়। তাই কোন ক্রটি হলে আমাকে ক্ষমা করবেন। এখন আমার মন থেকে যা আসছে তাই সোজা কথায় আপনাকে বোঝানোর অক্লান্ত প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছি। শৈবালের কাছে আপনার লেখা চিঠিটা আমি পড়েছি। আপনি খুব ভালো চিঠি লিখতে পারেন। মনে খুব ইচ্ছা জাগে Ñ যদি এরকম একটা চিঠি আপনার কাছ থেকে আমি পেতাম।
                আপনি বার বার একটা কথা বলেন Ñ সে চিঠিতে হোক বা কথায় হোক। কথাটা হলো Ñ “আমি গরীব”। আমি কিন্তু আপনার একথাটা মানতে রাজী নই একদম। যে মানুষের মন এতো সুন্দর, এতো স্বচ্ছ, সে গরীব হতেই পারে না; বরং, তার কাছে আমার নিজেকে অনেক গরীব মনে হয়। মনে হয়, তাঁর কাছ থেকে আমি কিছু ধন ধার নিই, নিজেকে সুন্দর করে গড়ে তোলার জন্য। আমরা তিন বন্ধু মিলে অনেক জায়গা ঘুরেছি। প্রতিবারেই কিছু না কিছু বিষয় আমাদেরকে খুবই অনুপ্রানিত করেছে। কেওক্রাডং ভ্রমনে আপনিই আমাদের অনুপ্রেরনা ছিলেন। খোদাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
                  আর কিছুদিন পর (মে মাসে) আমাদের ফাইনাল পরীক্ষা। অর্থাৎ, পাস করলেই পুরাদস্তুর এম.বি.বি.এস ডাক্তার। আমাদের তিনজনকে প্রাণভরে দোয়া করবেন। পরীক্ষাটা শেষ হলেই যেকোনো সময়, যেকোনো মুহুর্তে হাজির হয়ে যাবো আপনার বাড়ীর আঙ্গিনায়; তখন কিন্তু মোটেই ফিরাতে পারবেন না।
                                                                                                    ৯
                  এখন রাত ৪টা। অনেক রাত হয়েছে। কয়েকটা কাকও ডাকছে, মনে করিয়ে দিচ্ছে Ñ ঘুমাতে হবে। তাই আর কলম এগোচ্ছে না। আজ এ পর্যন্তই। আমাকে অবশ্যই চিঠি পাঠাবেন। পরিবারের বাকী সবাইকে আমার সালাম জানাবেন দয়া করে। আল্লাহ্ আপনার এবং পরিবারের সকলের মঙ্গল করুন।                                                                                                                                                                                                             
                                                                                ইতি---------                                                           
                                                                                     পাবলো
বি: দ্র: আমার ঠিকানা Ñ
পাবলো চাকমা
১৪৯৯ অলি ম্যানসন, (৩য় তলা )
ও আর নিজাম রোড, গোলপাহাঢ়, চট্রগ্রাম।
                               
                               বেশ কয়েক দিন কোন দুর্ঘটনা ছাড়াই রুমা ও বগা লেকের ভ্রমন মোটা মুটি আনন্দে কেটেছে। তার পর চট্রগ্রাম থেকে বাসে সরাসরি পাঁচবিবি হয়ে বাড়ীতে।
                                                                       মোহাম্মদ আলী
                                                                      তারিখঃ ৭ - ৩ - ১৫ইং                                                             
                                                                মোবাইল নং ০১৭১৮ ৪৮৪১১১

জুরাছড়ির পথে - ১

$
0
0

জীবনের শেষ প্রান্তে এসে ইচ্ছা হলো, আমি যে সব জায়গা ভ্রমন করেছি এবং জীবনের যে অভিজ্ঞতা হয়েছে, তা আমার নিজের ভাষায় লিখি এবং তা নেটের মাধ্যমে প্রকাশ করি। আমার দুইটি কিডনিই রোগে আক্রান্ত, বহু বছর থেকে উচ্চ রক্তচাপ রোগে ভুগতেছি ও অন্যান্য রোগও আছে। আমি বুঝতে পারছি, আমার জীবন প্রদীপ যেকোন মুহুর্তে নিভে যাবে। এমন অবস্থায় আমার লিখাগুলি শেষ করতে পারবো কিনা তা একমাত্র সর্ব শক্তিমান আল্লাহ জানেন। আল্লাহ পাকের নিকট আমার প্রার্থনা, আমি যেন ধারাবাহিক ভাবে মনের ইচ্ছা গুলি লিখতে পারি। আমি এই লিখাগুলি ২০১৪ সালের মে মাসে লিখতে শুরু করি।
১৯৯২ সালের শীতকালে আমি ও আমার দূর সম্পর্কের এক ছোট ভাই ফেরদৌস সহ জীবনের প্রথম কক্র্বাজার,রাঙ্গামাটি ও জুরাছড়ি ভ্রমন করি। এখন শুধু জুরাছড়ির বেড়াবার অভিজ্ঞতার বিবরন লিখতে চাই।
আমি তখন ছাতিনালীস্থ ৮নং আওলাই ইউ:পি সচিবের পদে কর্মরত। একদিন অফিসে যেয়ে হঠাৎ জানালা দিয়ে দেখি, বাজারের রাস্তায় অপরিচিত সুন্দর একটি চাকমা ছেলেকে দেখতে পাই। চৌকিদার দিয়ে তাকে আমি অফিসে ডেকে আনি, প্রথমে সে ভয় পেলো, আমি তার নাম, বাড়ী কোথায়, কার বাড়ীতে এসেছো সব কিছু জেনে নিলাম। তার জন্য চা নাস্তার ব্যবস্থা করলাম। ছেলেটির নাম শংকর চাকমা, বাড়ী রাঙ্গামাটি জেলার জুরাছড়িতে। ছাতিনালীর ভুলুদাদার ভগ্নিপতি জগদিশ পুলিশের বাড়ীতে বেড়াতে এসেছে। আমি তার সংগে খাতির জমালাম। তাকে প্রতিদিন নাস্তা করাতাম, আমার শীতের গরম জামা কাপড় তাকে দিলাম। সে আমার প্রিয় বন্ধু হলো। তার জন্মস্থানের পরিবেশ,পরিস্থিতি,পারিবারিক ও সামাজিক খুটিনাটি সমস্ত তথ্য জানলাম। কয়েক মাস এখানে থাকার পর সে জুরাছড়িতে তার বাড়ীতে চলে গেল। যাবার সময় সে তার বাড়ীর ঠিকানা দিয়ে গেল। তার দেওয়া ঠিকানায় বেশ কযেক বছর চিঠিপত্র আদান প্রদান হলো। হঠৎ সে চিঠি দেওয়া বন্দ করলো। সে তার দেওয়া ঠিকানায় প্রযত্নে  ইউ:পি: চেয়ারম্যান মামার নাম দিয়েছিল। তখন আমি ঐ ইউ:পি: সচিবের ঠিকানায় বিস্তারিত বিবরন দিয়ে একটি চিঠি দিলাম। যথা সময়ে উক্ত ইউ:পি: সচিবের চিঠিসহ আমার পাহাড়ি বন্ধু শংকর চাকমার চিঠি পেলাম। তাদের সংগে অনেক বার মত বিনিময় হলো। তাদের দেওয়া তথ্য মত একদিন জুরাছড়ি বেড়াবার উদ্দেশে প্রথমবার ১৯৯২ সালের শীতকালে দুইজনে রওয়ানা দেই।প্রথমে চট্রগ্রাম শহর থেকে বাসে রাঙ্গামাটির পাহাড়ি উচু নিচু আঁকা বাঁকা পথে যাত্রা শুরু করলাম। জীবনের প্রথম এরকম পাহাড়ি পথে পথ চলা। দুচোখ ভরে অজানা অচিনা অপূর্ব দৃশ্যাবলী দেখতে দেখতে চললাম,যা আমার মত আনারির পক্ষে ভাষায় প্রকাশ করতে অক্ষম। মন প্রান আমার ভরে গেলো। আমার সংগে ভাল একটি ডিজিটাল ক্যামেরা ও একটি ভাল দামি রাশিয়ান দূরবীন ছিল। আমরা পাগলের মত অসংখ্য ছবি তুলতে লাগলাম এবং দামি দূরবীন দিয়ে দূরের দৃশ্যাবলী দেখতে লাগলাম। বারবার আক্ষেপ হচ্ছিল, কেন আগে বেড়াতে আসি নাই।
হৃদের নীল পানির উপর পাহাড়ি অপূর্ব শহর রাঙ্গামাটিতে ২দিন থাকার পর জুরাছড়ির দিকে যাত্রা করলাম। পাহাড়ি শহর রাঙ্গামাটি আমাকে মুগ্ধ করলো।

রাঙ্গামাটি শহরের রিজার্ভ বাজারের ঘাট থেকে কাপ্তাই হৃদের নীল পানির বুক চিরে আমাদের লন্চ জুরাছড়ি পথে ছুটে চললো। পথের বাঁকে বাঁকে বাংলাদেশের আর্মি,বিডিআর,পুলিশ, আনছার বাহিনীর সদস্যগন অস্ত্র সহ নিরাপত্তার কাজে নিয়োজিত। আমি বাংলাদেশের উত্তর বঙ্গে ছোট বেলা থেকে লালিত পালিত ছেলে জীবনে প্রথম যখন ঘাট থেকে লন্চে উঠলাম তখন খুব অবাক হলাম। দেখলাম লনচে বেশী ভাগ যাত্রী বিভিন্ন উপজাতির নারী পুরুষ, পরনে তাদের বিচিত্র রংগের পোষাক, তাদের মধ্যে কথা বার্তা উপজাতির ভাষায়। চারি দিকের দৃশ্যাবলী ও পরিবেশের মাঝে আমার মনে হলো, আমি যেন বিদেশী সিনেমায় দেখা কোন এক অপরিচিত দেশে আছি। লন্চে ২/৪ জন উপজাতির ছেলে মেয়ের সংগে আলাপ হলো। আমি বুঝতে পারলাম তারা খুবই মিশুক। উপজাতির অনেক ছেলে মেয়ে আমার দামি ক্যামেরা ও দূরবীন থাকায়  অল্প সময়ে তারা আমার বন্ধু হলো। তাদের অনেক ছবি তুললাম এবং তাদেক আমার দূরবীন দিয়ে দূরের দৃশ্য দেখতে দিলাম। তারা আমার নিকট থেকে জানতে চাইল, আমার বাড়ী কোথায়, নাম কি, আমি কোথায় কার বাড়ীতে যাব? আমি তাদের সব কিছুর প্রশ্নের উত্তর দিলাম। বললাম, জুরাছড়ির ইউ;পি:সচিব কিনাধন চাকমা ও বন্ধু শংকর চাকমার বাড়ীতে যাব, তারা আমার বন্ধু।
তারা আমার কথা শুনে খুব খুশি হল এবং তারা তাদের বাড়ীতে যাওয়ার জন্য দাওয়াত দিল। জুরাছড়িতে থাকার সময় তাদের বাড়ীতে দাওয়াত খেয়েছি। সুন্দর শহর রাঙ্গামাটি ছেড়ে জুরাছড়ি যাওয়ার পথে প্রথমে দুদিকে পাহাড়ের মাঝ দিয়ে সরু নদী পথে আমাদের লন্চ সুভলং এর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। সর্ব শক্তিমান আল্লাহর সৃষ্টি নদীর দুধারের পাথরের খাঁচকাটা পাহাড়ের দৃশ্যাবলী যত দেখতেছি তত অবাক হচ্ছি। ঝর্ণাগুলি অপূর্ব, বলাবাহুল্য আমরা এখানে অসংখ্য ছবি তুললাম। সুভলং ঘাট যখন ছাড়লাম তখন নদীর দক্ষিন দিকে হৃদের উপরেই একটি টিনসেডের বাড়ী দেখে খবুই সুন্দর লাগলো, মনে হলো বাড়ীটি যদি আমার হতো। কিছু দূর যেতেই সুভলংএর পূর্ব দিকে বড় একটি উচু পাহাড় চোখের সামনে ভেঁসে উঠলো। সংগে সংগে মনে হলো ওখানে যদি আমার কবর হতো, তবে আমি বঙ্গোপসাগর পার হয়ে সর্ব শক্তিমান আল্লাহর কাবা ঘর ও দয়ার মহানবীর রওজা মমাবারক দেখতে পারতাম। আল্লার মেহেরবানীতে ও মহানবীর দয়ায় ২০১২সালে জীবিত অবস্থায় সে ইচ্ছা পূরন করেছেন।এক সময় আমরা জুরাছড়িতে পৌছলাম। প্রথমে জুরাছড়ি উপজেলার নির্বাচন অফিসে কর্মরত ইউ:পি: সচিব কিনাধন চাকমার ছেলে ত্রিনয়ন চাকমার অফিসে গেলাম। সে খুব অবাক ও খুশি হল। সংগে সংগে চা-নাস্তা করালো। সে আগে থেকে আমার সম্পর্কে সমস্ত জানতো। সে তার বসের নিকট থেকে ছুটি নিয়ে তাদের বাড়ীতে আমাদেক নিয়ে আসলো। তার বাবা, মা বোনেরা আমাদেক দেখে খুবই খুশী হলো,কুশলাদি বিনিময়য়র পর কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিলাম। আমার গোসল করা প্রয়োজন হেতু কিনাধন চাকমা অর্থাৎ কাকা বাবুকে বললাম। কাকা বাবু  আমার তোয়ালা ও সাবান নিতে দিলো না । তাদের ঘরে তাঁতের তৈরী নতুন গামছা ও লাক্স সাবান নিয়ে তাদের হৃদের ঘাটের দিকে আসতে লাগলো। আমিও তার আগে আগে ঘাটে আসতে লাগলাম। ঘাটে পৌছার আগেই আমি দেখলাম, কয়েকটি অপূর্ব সুন্দরী উপজাতির কয়েকটি যুবতী মেয়ে খুবই অল্প কাপড় পড়ে গোসল করতেছে। আমি লজ্জায় চট করে কাকার দিকে ঘুরে অন্য প্রসঙ্গে অথাৎ হৃদের পানি কতটুকু এবং কি কি মাছ পাওয়া যায় ইত্যাদি কথা বলতেছি। মেয়েরা ও কাকা বাবু বুঝতে পারলো, আমি ভীষন লজ্জা পেয়েছি। মেয়েরা উচ্চ স্বরে খিল খিল করে হাসতে লাগলো ও তাদের ভাষায় আমার সম্পর্কে বলাবলি করতে লাগলো। কাকা বাবু আমাকে বলল, টেক ইট ইজি, এন্ড এডভান্স। আমি ঘুরে দেখলাম,তাদের গায়ে অল্প কাপড় দিয়েছে। কাকা বাবু তাদের ভাষায় আমার সম্পর্কে কি কি যেন বললো। আমি সহজ ভাবে গায়ের কাপড় খুলে তাদের পাশে হৃদের নীল পানিতে জীবনে প্রথম গোসল করার জন্য নেমে পরলাম। আমার মাথা ভর্ত্তি কাল লম্বা চুল ও গায়ের রং ছিল ফর্সা, আর বডি ছিল হ্যান্সাম। তারা তাদের ভাষায় আমাকে নিয়ে আলোচনা করতেছে, তা বুঝতে পারলাম যখন বলল, বাঙ্গাল ফর্সা ও সুন্দর। ঘাটে ৮/৯ বছরের ছেলে ও মেয়েরা গোসল করতে ছিল, তাদের ভাষায় বাঙ্গাল বলে গালি দিচ্ছল, তা আমি বুঝতে পারলাম। আমি হঠাৎ খোপ করে এক ছেলের হাত ধরে বললাম, তুমি কেন বাঙ্গালকে গালি দিচ্ছ? সে নির্ভয়ে গলায় হাত দিয়ে বললো, বাংগালিরা আমাদের গলা কাটে। ছোট ছেলে ও মেয়েদের প্রতিক্রিয়া দেখে আমি তো অবাক, আমি বললাম, আমি তোমাদের বন্ধু। আমি তোমাদের গলা কাটবো না বরং আদর ও ভালবাসা দিব। ওদের ঘাটে গোসল করতে যেয়ে ভালো লাগলো ও খারাপও লাগলো। কাকা বাবু সংগে বাড়ীতে এসে দেখি, আমাদের বাংগালি খাবার রেডি। ইতি মধ্যে আমার বন্ধু শংকর এসে হাজির। দেরী না করে খাবার খেলাম, কাকিমার হাতে তৈরী বাংগালি খাবার খবুই সুস্বাধু হয়েছে। খাবার পর বিছানায় লক্ষ্য করলাম, বিছানার চাদর, বালিসের ও লেপের কভার সব কিছু কাকিমার হাতে তাঁতের বুনা/তৈরী। কাকা বাবু ও কাকিমার আত্বীয় স্বজনেরা আমাদেক দেখার জন্য ঘর ভরে গেল। আমরা তাদের অনেক গুলি ছবি তুললাম। বুঝা গেল, ছবি উঠাতে সকলেই আগ্রহী। মেয়েদের মধ্যে একজনকে মনে হল, জাপানি সিনেমা দেখা নায়িকা ওশেনের মত। বৈকালে চা নাস্তা করা পর আমার বন্ধু শংকর চাকমার বাড়ীতে গেলাম। তার বাবা মা ও বোন অনুপ্রভা চাকমার সংগে আলাপ হল। আমার মনে হল, সকলেই অল্প সময়ের মধ্যে আমাদেক আপন করে নিল। রাত্রিতে ওদের ওখানে খাবারের দাওয়াত দিল। আমি বললাম আমরা বাংগালি মুসলমান, আমরা মদ খাই না, আর বাংগালি রান্না ছাড়া আপনাদের রান্না খেতে পারবো না। অনুপ্রভা হেসে বলল, দাদা বাবু আমি আপনাদেরকে খাঁটি বাংগালি রান্না করেই খাওয়াবো। প্রত্যেক উপজাতিরা রান্নায় ব্যাপক হারে নাপ্পি ব্যবহার করে। নাপ্পি ছোট মাছ ও অন্যান্য বিভিন্ন গাছ গাছরা দিয়ে পঁচে তৈরী করে, তা দেখতে আমাদের এলাকার চিটা গুড়ের মত, কিন্তু আমাদের নিকট খুবই দুর্গন্ধ লাগে।
তারা বলে, এটা রান্নায় ব্যবহার করলে রান্না সুস্বাদু হয় এবং ম্যালেরিয়া রোগ হয় না। আমরা বাজারে কিছুক্ষন বেড়ালাম। তাদের বন্ধু ও আত্বীয় স্বজনরা সকলেই চা নাস্তার দাওয়াত দিচ্ছিল। আমরা বাজারে বেড়াবার সময় জুরাছড়ির সেনা ক্যম্পে কর্মরত সেনা অফিসার আমদেক ডেকে আমদের নাম, পরিচয়, কি উদ্দে্যশে ও কার বাড়ীতে এসেছি সমস্ত কিছ জেনে নিলেন এবং বললেন, জুরাছড়ির পরিস্থিতি ভাল নয়, আপনারা আমাদের মেশিনগানের আওতার মধ্যে ঘুরাফিরা করবেন। আমাদের আগেই উপজাতির লোকেরা যখন রিজার্ভ বাজার ঘাট থেকে আপনারা লন্চে উঠেছেন তখনই তারা জানতে পেরেছে। কাকা বাবুকে সেনা ক্যাম্পে ডেকে আমাদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেছে, বলেছে আমাদের কিছু ক্ষতি হলে কাকা বাবুরাই দায়ী হবেন। বাড়ী এসেই কাকাবাবু, তার ছেলে ও আমার বন্ধু শংকর আমাদেক বলল, আপনারা কিছুতেই ভয় পাবেন না, এটা আমাদের এলাকা। জুরাছড়িতে ৪/৫ দিন অবস্থান করলাম। প্রতি বাড়িতেই মদ তৈরী হয়,  প্রায় উপজাতি নারী পুরুষ ঘরের তৈরী মদ পান করে। শুধু কাকা বাবুর ছেলে ত্রিনয়ন চাকমা কোন প্রকার মদ বা ধুম পান করে না। আমাদেক সংগে করে ত্রিনয়ন চাকমা ও বন্ধু শংকর চাকমা জুরাছড়ির দক্ষিনে দূরে তাদের এক উপাশনালয়ে বেড়াতে নিয়ে গেল। সেখানে অনেক ছবি তোলা ও দূরবীন দিয়ে সকলে দূরের দৃশ্য দেখা হল। সেখানে অনেক সময় কেটে পথে জুরাছড়ির প্রবেশ দ্বারে পূর্ব থেকে থানার ওসির দেওয়া নাস্তার দাওয়াত খেলাম,অনেক সময় আলাপ আলোচনা করে সন্ধ্যার অনেক পর সকলের নিকট থেকে বিদায় নিয়ে কাকা বাবুর বাসায় আসলাম। বাসায় এক মাষ্টার কাকা বাবুর মেয়েদেক পড়াচ্ছিল। মাষ্টার বাবুর সংগে পরিচয় ও আলাপ হল এবং পরের দিন তিনার স্কুলে দাওয়াত দিলেন। যথারীতি পরের দিন তাঁদের স্কুলে দেখা করতে গেলাম। স্কুলের সমস্ত শিক্ষকেরা আমাদেক স্বসন্মানে সাদর অভ্যর্থনা জানালেন। সকলের সংগে পরিচয় পর্ব শেষ করে চা নাস্তা করালেন। তাঁরা সকলেই জানতে পারলেন যে, আমরা কোন নিরাপত্তা সংস্থার সদস্য নই। তাই তারা নির্ভয়ে পাহাড়ী এলাকার ও আমাদের উত্তর বঙ্গের পরিবেশ, সামাজিক পরিস্থিতি নিয়ে বিস্তারিত প্রানবন্ত আলোচনা বা খোলামেলা মত বিনিময় হল, জানা গেল পাহাড়ি সমাজের মেয়েরা ছেলেদের চেয়ে বেশী লেখাপড়ায় এগিয়ে। আমরা, আমার বন্ধু শংকর চাকমা, অনুপ্রভা চাকমা, সমাপ্তি চাকমা ও আমার দেওয়া নাম ওশেন চাকমাসহ প্রতিদিন ওদের নৌকায় হৃদের নীল পানিতে দূর দিগন্তে শাপলা ফুলের মাঝ দিয়ে বেড়াতাম, কোন দিন কোন এক অজানা দ্বীপে উঠে, বিভিন্ন গল্পে মেতে উঠতাম। নৌকার  বৈঠা বাইতো শংকর ও অনুপ্রভা, তারা নৌকা চালাতে পারদর্শী। পূর্ব আকাশে পূর্নিমার চাঁদের আলোয় হৃদের নীল পানি ঝলমল করতো, শাপলা ও অজানা ফুলের গন্ধে চারি দিক মৌ মৌ করতো। এইচ হেগার্ড (অনুবাদ-নূরুদ্দিন) এর ক্লিওপেট্র্ারের বিশ্বাস ঘাতক নায়ক হারমাসিসকে      (মিশরের সম্রাট ও বিয়ে করার মিথ্যা প্রলোভন দেয়) নিয়ে ক্লিওপেট্র্া পূর্নিমার রাত্রিতে নীল নদের উপর দিয়ে ছোট নৌকায় সম্রাজ্ঞির বিশ্বাসী কয়েকজন দেহরক্ষী নিয়ে হারমাসিসের বংশের এক সম্রাটের সমাধী থেকে ধন রত্ন অপহরন করার জন্য যাচ্ছিল, সে দৃশ্যের কথা কেন যেন মনে হলো। আমি ঐ সময়ের বর্ননা ভাষায় প্রকাশ করতে অপারগ। আমি তাদেক জানালাম, আমাদের বাংগালী মুসলমান সমাজ এভাবে ছেলে মেয়েদের অবাধ মিলামিশা মেনে নিবে না। তারা বললো, আমাদের সমাজে ছেলে মেয়েরা অবাধে  মিলা মিশা করতে কোন বাধা নাই। তবে বাংগালী ছেলেদের সংগে আমাদের মেয়েদের মিলামিশা আমাদের সমাজে কঠোর ভাবে নিষেধ। আমাদের কোন মেয়ে যদি কোন বাংগালি ছেলের সংগে মিশে বা ভালোবাসে, প্রথমে ছেলেকে নিষেধ করা হবে। যদি ছেলে বা মেয়ে নিষেধ না শুনে তবে ছেলেকে চিরতরে এ পৃথিবী থেকে সরে দেওয়া হবে। আর যদি বাংগালি ছেলে উপজাতি মেয়েকে নিয়ে পাহাড়ী এলাকা ছেড়ে চলে যায়, তবে পাহাড়ী সমাজ মেয়ের পরিবারের সদস্যগনের উপর কঠোর ভাবে নির্যাতন করা হবে, মেয়েকে ফিরে আনার জন্য। তারা অকপটে স্বীকার করলো, পাহাড়ী মেয়েরা বাংগালি মুসলমান ছেলেদেক খুব পছন্দ/ভালবাসে। পাহাড়ী ছেলেরা বাংগালী ছেলেদেক ঘৃনা বা হিংসা করে। পাহাড়ি সমাজে পুরুষেরা খুব মদ খেয়ে মাতাল হয়ে পড়ে থাকে, আর মেয়েরা কঠোর পরিশ্রম করে ঘর সংসার, সন্তান লালন পালন ও ক্ষেত খামার সামাল দিতে হয়। আর বাংগালী মুসলমান সমাজের পুরুষেরা ঘরের বাহির থেকে অর্থ উপার্জন করে এবং নারীরা ঘরে থেকে সংসার দেখা শুনা করে ও সন্তান লালন পালন করে। বাংগালী সমাজের এই রীতি নীতি পাহাড়ী সমাজের অনেক নারীকে আকর্ষন করে, আবার অনেকে এটাকে নারীকে বন্দী করে রাখার রীতিনীতি মনে করে। আমার বন্ধুর মত, পাহাড়ী সমাজে নারী পুরুষ অবাধ মিলামিশার জন্য পাহাড়ী মেয়েদের মধ্যে ১% কুমারী মেয়ে পাওয়া কঠিন। আমি তাদেক বললাম, এই যে কয়েক দিন থেকে আমরা দুইজন বাংগালী ছেলে তোমাদের সংগে বৈধ ভাবে মিলামিশা ও গল্প করতেছি, এটাকে তোমাদের পাহাড়ী সমাজে এই ছোট বাজারে বা জনপদে কোন প্রতিক্রিয়া হয়নি? তারা এক সংগে বলল, প্রতিক্রিয়া হয়েছে, কিন্তু বাবা অর্থাৎ আমাদের কাকা বাবু , ত্রিনয়ন দাদা ও শংকর দাদা সমাজের নেতাদেক বলেছে, তারা আমাদের বন্ধু ও ভালো লোক এবং কোন নিরাপত্তা বাহিনী সদস্য নয়। তারা আমাদের বা আমাদের মেয়েদের কোন ক্ষতি করবে না ,আমরা তাদেক পরীক্ষা করেছি। দাদা বাবু, নচেৎ আপনাদের সংগে আমরা বেড়াতে বা গল্প করতে পারতাম না, আর আপনাদের চরম ক্ষতি হতো। পাহাড়ী সমাজের মধ্যে অনেক দল আছে, তাই আমরা খুব সাবধানে থাকলাম।
কাকা বাবু ও কাকিমা বার বার মানা করা সত্বেও আমি প্রায় বাজার করে দিতাম। কোন দুর্ঘটনা ছাড়াই  জুরাছড়িতে ৪/৫ দিন আনন্দে কাটালাম, অনেক ছবি তোলা হল, অনেক অনেক স্মৃতি নিয়ে, জুরাছড়িতে আবার আসার প্রতিশ্রুতি দিয়ে সকলের নিকট থেকে চোখের পানিতে বিদায় নিলাম। ইতি-
                                                                        মোহাম্মদ আলী
                                                                মোবাইল নং ০১৭১৮ ৪৮৪১১১

জুরাছড়িপথে---২

$
0
0

জুরাছড়িতে প্রথমবার ভ্রমনের কয়েক বছর পর কোন এক বর্ষাকালের (আগষ্ট মাসে) এবার জুরাছড়ির আশপাশের এলাকায় বেড়াবার কথা লিখতেছি। কেন যেন জুরাছড়ি এলাকাটা আমার নিকট খুবই পছন্দ, তাই বার বার সেখানে যাই।জুরাছড়ি বা অন্য কোথাও যেতে গেলে রাঙ্গামাটির রিজার্ভবাজার থেকে লন্চে উঠতে হয়। এবার জুরাছড়িতে লন্চে যাওয়া কালে অর্দ্ধেক রাস্তায় নেমে দিল, লনচ আর যেতে পারবে না, নৌকায় যেতে হবে। সেখানে অনেক নৌকা জুরাছড়িতে যাওয়ার জন্য রেডি, চাই কিছু বারতি টাকা। একটা নৌকায় উপজাতি নারী পুরুষ যাত্রীর সংগে একমাত্র বাংগালি যাত্রী আমি। আমাদের নৌকাটি নলখাগড়ার বন দিয়ে অনেক কষ্টে জুরাছড়ির কিছু আগে নেমে দিল। ওখান থেকে আমার ব্যাগ নিয়ে অনেক কষ্টে হেঁটে জুরাছড়িতে পৌছিলাম।এবার জুরাছড়ির নিকটেই ছোট পানছড়ি বেড়াবার প্রোগ্রাম হলো, বন্ধু শংকরের বাড়ীতে। বাহন জুরাছড়ির উপজেলার এক পিয়নের ছোট নৌকা, চালক উক্ত পিয়ন ও তার স্ত্রী। সেখানে তাদের ঘর ও জুম ক্ষেত আছে। যাত্রী -- কিনাধন কাকা বাবুর ছেলে ত্রিনয়ন চাকমা, সে উপজেলার নির্বাচন অফিসের কর্মকর্তা, উপজেলার সমাজসেবা কর্মকর্তা, শংকর ও আমি। ছোট পানছড়ি যাবার আগে জুরাছড়ি বাজার থেকে এক প্যাকেট কয়েল নেওয়া হলো, কারন ছোট পানছড়িতে ছোট ছোট হাতি পোকার কাঁমড় হতে বাঁচার জন্য। নলখাগড়ার জঙ্গলের মধ্য দিয়ে কয়েকটি পাহাড়ের কোল ঘেঁসে আমাদের ছোট নৌকাটি পাহাড়ি খাল বেয়ে ছোট পানছড়ির দিকে চলতে লাগলো। পথে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও বাঁকে বাঁকে পাহাড়িদের বাড়ী ঘর। নৌকায় ওদের সংগে একমাত্র বাংগালি আমাকে দেখে পাহাড়িরা অবাক, আমার সমন্ধে অনেক কথা জিজ্ঞাসা করলো। চাকমা ভাষায় শংকরা বলল, আমার বাড়ী উত্তর বঙ্গে এবং আমার বন্ধু । ছোট পানছড়িতে আমার বাড়ীতে বেড়াতে নিয়ে যাচ্ছি। পথে খালের উত্তর ধারে একটি খবুই জঙ্গল ভত্তির্ দুর্গম পাহাড় দেখলাম, জানলাম দিনের বেলাতেও ঐ পাহাড়ে কেহই যাইতে পারে না, ভূতের ভয়ে। পথের ১/২ যাওয়ার পর নৌকা হতে সকলকে নামতে হলো। এখন হাঁটা পথে অনেক বাড়ীর উঠান দিয়ে, কোন বাড়ীতে কেহ নাই, দূরে কোন এক পাহাড়ে জুম ক্ষেতে সকলে কাজ করতে গেছে। ঘরের দরজা একটা লাঠি ও দড়ি দিয়ে বাধা। ঘরের দরজা খুলে ঘর হতে পানির কলস বের করে আমারা সকলেই পানি পান করলাম। ঘরের মধ্যে যেয়ে দেখলাম, ঘরে অনেক দামী আসবাবপত্র ও কাপড় রয়েছে,অথচ অন্য কেহ চুরি করে না। দরজাটা বন্দ করা হয় যাতে জঙ্গলি জীব জন্তুরা ঘরের মধ্যে ঢুকে আসবাবপত্র যাতে নষ্ট না করে। তারা বলল, ক্ষেত খামার ও বাড়ীতে চুরি কি জিনিষ আমরা তা জানি না। উঠানে উঠানে শাক,সবজী ও বিভিন্ন ফল ধরে আছে তা কেহই চুরি করে না। এক সময় আমরা ছোট পানছড়িতে পৌছলাম। শংকর ও তার ভাইয়ের বাঁশ ও কাঠ দিয়ে বাংলো টাইপের দুইটি বাড়ী একটা টিলার উপর, পাশ্বের্ একটি খাল, অল্প দূরে একটি ঝর্ণা। কিছু দূরে বড় বড় পাহাড়। অপূর্ব দৃশ্য, আমি ভাষায় প্রকাশ করতে অক্ষম। ডাকবাংলো টাইপে তাদের বাঁশ ও কাঠের বাড়ী দুইটি খুবই সুন্দর। নীল আকাশ খুবই পরিস্কার,ভীষন রোদ উঠেছে। তাদের এক বাড়ীতে বিশ্রাম নিলাম, পানি ও মারফা এক বাঙ্গি জাতীয় ফল খেলাম। তারপর ছোট পানছড়ির ঝর্ণা দেখতে গেলাম, খুব কাছ থেকে ঝর্ণা জীবনে এই প্রথম দেখা। বিরাট এক কালো পাথর ৩/৪ তলা উচু থেকে স্বচ্ছ ঠান্ডা পানি কাল পাথরের উপড় আছড়ে পড়চ্ছে, খালের মধ্যে অনেক ছোট বড় পাথর পড়ে আছে। কি অপূর্ব দৃশ্য, আমি এখানেও ভাষায় বর্ননা করতে পারছি না। আমি ভীষন আবেগে এক পাথরের উপর থেকে আরেক পাথরে লাফ দিয়ে পার হচ্ছিলাম। ভিজা ও শেওলা ধরা পাথর যে এতো পিচ্ছিল হয়, জীবনে আগে কখনো জানতাম না, যেমন এক পাথর থেকে আর এক পাথরে পা দিলাম ওমনি আছাড় খেয়ে পড়ে গেলাম। ভাগ্য ভালো পাথরে মাথা পড়ে নাই, তা হলে কি যে হতো, আজও ভাবলে গা শিউরে উঠে। আল্লাহ্র অশেষ রহমতে সে বার বেঁচে গেছি। পাগলের মত অনেক ছবি উঠালাম। ফিরে এলাম শংকরের ডাকবাংলোতে,দেখি বড় একটি মোরগ ধরে বসে আছে শংকর, আমি যবাই করবো এই আশায়। আমি যথা রীতি ভাবে মোরগ যবাই করে দিয়ে বৌদিকে বললাম, রান্নাটা যেন বাংগালি হয়। বৌদি বললো, দাদা, আমি বাংগালি রান্না জানি। ওদিকে শংকরের দাদার ঘরে সমাজ সেবা অফিসার,পিয়ন দাদা বৌদির জন্য রান্না হচ্ছে। আমরা বাড়ীর উঠানে বসে বিভিন্ন বিষয়ে গল্প করতেছি। এরই  মধ্যে কিছু দূরের পাহাড়গুলো ধোঁয়ায় ছেয়ে গেছে, তারা বললো, এখনিই বৃষ্টি আসবে। তারা বলতেই মূষূল ধারায় বৃষ্টি যেন আছড়ে পড়লো। আমরা দৌঁড়ে ঘরে উঠলাম। মুহুর্তের মধ্যে পাহাড়ি ছোট খালটি ভরে তীব্র স্রোত গাছ,বাঁশসহ বইতে লাগলো। কি অপূর্ব পাহাড়ি দৃশ্য ! কিছু ক্ষনের মধ্যে বৃষ্টি থেমে গেলো। এদিকে রান্নাও শেষ। শংকরের উচু কাঠের ও বাঁশের ডাকবাংলোতে আমার ও ত্রিনয়নের ডাক পড়লো, বাঁকীরা শংকরের দাদার ঘরে। পাহাড়ি জুমে চাষ করা ছোট ছোট লাল আতপ চালের আটালো ভাত ও মোরগের মাংস রান্না খুবই ভাল হয়েছে,বুঝা গেল বৌদির সত্যই বাংগালি রান্নার হাত পাঁকা। শংকরের বাবা, মা ও তার ছেলে মেয়েরাসহ আমরা সকলে এক সংগে খেলাম। বৌদির খাবার পরিবেশনার আন্তরিকতায় আমি মুগ্ধ, তা চির দিন মনে থাকবে। ও ঘরে পিয়ন দাদাদের খাবারও শেষ। কিছুক্ষন বিশ্রাম নেওয়ার পর বিদায়ের পালা, এরই মধ্যে এক ফাঁকে পিয়ন দাদা তার ছোট নৌকাটি নিয়ে শংকরের ডাকবাংলোর কাছে হাজির। চোখের জলে বৌদিদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে পাহাড়ি খালের খর স্রোতে খুব তারাতারি জুরাছড়িতে পৌছিলাম। এক জায়গা থেকে আর এক জায়গা ভালো  লাগে। সেন্টমার্টিন দ্বীপে বিখ্যাত লেখক হুমায়ুন আহম্মেদ এর বাড়ীটি দেখেছি,বাড়ীটি তৈরীর কাহিনী পত্রিকায় পড়েছি। কাহিনীটি আমাকে মুগ্ধ করেছে এবং মনের গভীরে দাগ কেটে আছে। বিখ্যাত লেখক হুমায়ুন আহম্মেদের একজন অন্ধ ভক্ত হিসাবে আমি যখন কাপ্তাই হৃদের নীল পানির উপর দিয়ে বার বার যাওয়া আসা করি, তখন হৃদের নীল পানির মধ্যে ছোট ছোট দ্বীপ গুলো আমাকে স্বপ্ন দেখায়। আমার পাহাড়ী বন্ধু শংকর চাকমা বাঁশ ও কাঠ দিয়ে ডাক বাংলো টাইপে বাড়ী তৈরী করা একজন সুদক্ষ কারিগর। তাই তাকে বলি, বন্ধু তোমাদের কাপ্তাই হৃদের নীল পানির মধ্যে ছোট একটা দ্বীপ আমাকে বৈধ ভাবে লীজ দেওয়ার ব্যবস্থা করো। সেখানে জঙ্গল পরিস্কার করে তুমি আমার মনের মত দ্বীপের উপড়ে বাঁশ ও কাঠ দিয়ে খুব সুন্দর একটি ডাক বাংলো টাইপের বাড়ী তৈরী করে দিবে এবং সেই বাড়ীতে সৌর বিদ্যুৎ থাকবে। সে বাড়ীর চারি দিকে বিভিন্ন ফুলের গাছ রোপন করব, নিচের দিকে থাক করে কয়েক স্তরে উত্তর বঙ্গের বিভিন্ন ফলের গাছ লাগাবো। নিচের ঘাটে থাকবে আমার নিজস্ব একটি স্পীটবোড ও একটি শ্যালো নৌকা যোগাযোগের জন্য। এসব কাজের জন্য তুমিসহ কয়েক জন উপজাতির ছেলে মেয়ে থাকবে। সেই বাড়ী বা প্রকল্পটি বিভিন্ন জাতি গোষ্টির মিলন ক্ষেত্র হবে।প্রকল্পটির প্রধান বাঁধা নিরাপত্তা,  বাংগালি ও উপজতিদের মধ্যে বিশ্বাসের অভাব বা হানাহানি। আমি গরীব, জীবনের শেষ প্রান্তে এসে আমার দুইটি কিডনীই রোগে ক্ষতিগ্রস্ত ও হৃদ রোগে আক্রান্ত। কোন স্বপ্ন বিলাসি সৎ ধনী ব্যাক্তি কোনদিন আমার স্বপ্নের প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করে, তবে মরেও আমি শান্তি পাব।  কবি গুরু রবি ঠাকুর ছিলেন খুব ধনী জমিদার, তিনার পাক ভারতের বিভিন্ন প্রদেশে সুন্দর সু্ন্দর জায়গায় অনেক বাড়ী ছিল, প্রতি বছর বিভিন্ন জায়গায় তাঁর পছন্দের বাড়ীতে ভক্তদেক নিয়ে জন্মদিন উৎসব পালন করতেন। তাঁর সুন্দর সুন্দর অনেক বাড়ী থাকা সত্বেও শেষ বয়সে একটি কবিতা লিখলেন, যা আমার মনের গভীরে দাগ কেটে আছে। কবি গুরু রবি ঠাকুরের সেই কবিতার অংশটি মনে পড়ে, আমার কবিতার পক্তিগুলি সঠিক ভাবে মনে নাই, তবে ভাবটুকু মনে আছে। ‘‘মনে ছিল আশা, পৃথিবীর এক কোণে রইব আপন মনে, বাঁধিয়া এতোটুকু বাসা, মনে ছিল আশা।’’
এখানে উপজাতিদের বাড়ীতে খাবারের দুইটি অভিজ্ঞতা :-১.জুরাছড়িতে বেশ কয়েকবার বেড়াতে গিয়েছি। একেক বার একেক প্রকার অভিজ্ঞতা হয়েছে, তা সংক্ষিপ্তভাবে বর্ননা লিখতে চেষ্টা করলাম। কোন এক শীতকালে জুরাছড়িতে বেড়াবার কালে বন্ধু শংকরের বাবা মা আমাকে তাদের বাড়ীতে রাতের খাবারের দাওয়াত দিলো, আমি তাদের দাওয়াত কবুল করলাম। তাদের বাড়ী জুরাছড়ি থেকে পশ্চিম- উত্তর দিকে দুই পাহাড়ের পরে। সন্ধ্যার পর শংকর, তার মামাতো ভাই( ইউ:পি চেয়ারম্যানের ছেলে) ও আমি তিন জন দুইটি টসলাইট নিয়ে খালের ধার দিয়ে নলখাগড়ার বনের মধ্যে পায়ে চলা পথ দিয়ে শংকরের বাবা মার বাড়ীতে দাওয়াত খেতে চললাম। আগে আগে শংকরের মামাতো ভাই, মধ্যে আমি ও পরে শংকর, ভয়ে আমি কাঁপতে কাঁপতে শংকরের মামাতো ভাইকে অনুসরন করে পথ চলছি। হঠাৎ আমার কেন যেন মনে পড়লো এইচ.হেগার্ডের (অনুবাদ-নূরুদ্দিন) ক্লিওপ্টোরের নায়ক হারমাসিসকে নীল নদের ধারে নলখাগড়ার বন হতে হঠাৎ সিংহ বের হয়ে যেভাবে আক্রমন করেছিল, সেভাবে হঠাৎ সিংহরুপ  উপজাতি সন্ত্রাসিরা কখন যে বের হয়ে আমাকে আক্রমন করে অপহরণ করবে সে ভয়ে আমি অস্থির। শংকর ও তার মামাতো ভাই বার বার আমাকে অভয় দিচ্ছিল যে, এটা আমাদের এলাকা, ওরা এখানে এসে আক্রমন করে আপনাকে অপহরণ করার সাহস পাবে না। আমি ভাল ভাবে জানতে পেরেছি যে. ওদের মধ্যে অনেক দল আছে যারা খুবই শক্তিশালী। ভয় আমার মনের মধ্যে ডুকে গেছে, আমি ভয়কে কিছুতেই মন থেকে দূর করে দিতে পারছি না। এইভাবে চলার পর অবশেষে শংকরের বাবা মার বাড়ীতে পৌছিলাম। বিশেষ ধরনের নলকুপে পা ও হাত মুখ ধুয়ে শংকরের বাবা মার ঘরে উঠলাম। শংকরের বাবা মায়ের রান্না শেষের দিকে। আমাকে দেখার জন্য সব বয়সের ছেলে মেয়েরা শংকরের বাবা মায়ের বাড়ীতে ভিড় করে আসলো। আমরা ওখানে পৌছার পর প্রথমে আমাদেক সিদ্ধ করা পাতা কপি লবন,ঝাল,তেলে মাখা চাটনি দিয়ে খেতে দিল। আমি ওদের দেখা দেখি একটা করে সিদ্ধ করা পাতা কপি ছিঁড়ে নিয়ে চাটনি ভরে খেতে লাগলাম। জীবনে ওভাবে সিদ্ধ করা পাতা কপি খাইনি, খেতে মন্দ লাগলো না। তার পর ভাত খেতে দিল, জুম চাষের ছোট ছোট লাল আতপ চালের মিষ্টি আটালো ভাত, সংগে বাঁশের চোংগায় রান্না করা মাছ, ও বাজার হতে আমাদের মুসলিম কসাইয়ের দোকানের গরুর মাংস যা কাকিমা বাংগালি রান্না করেছেন তার স্বাদ অপূর্ব হয়েছে, কাকিমার আপ্যায়ন আমাকে মুগ্ধ করেছে, তা আমি  সারা জীবনে ভুলতে পারবো না। আমি যতক্ষন ওখানে ছিলাম, ততক্ষন অপহরনের ভয় মন থেকে দূর করতে পারিনি। কাকা, কাকিমা ও অন্য সকলের নিকট থেকে বিদায় নিয়ে, আমাকে সরাসরি পাহাড়ের উপর দিয়ে তাদের পাড়ার মধ্য দিয়ে জুরাছড়ির কিনাধন কাকার বাসায় এসে হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম। সমাপ্তি বললো, বাবার দাওয়াতে যাবার খুব ইচ্ছা ছিল, বুড়ো মানুষ অতদূর পাহাড় ও কাঁদার মধ্যে যেতে পারতো না। অবশ্য তাদের সকলের দাওয়াত ছিল। আমি বললাম, তুমি তো আমাদের সংগে যেতে পারতে? সে বললো, দাদা ও আপনি তো যাওয়ার জন্য জোর করলেন না, সত্যই বলছি আমি আপনাদের সংগে যাওয়ার ইচ্ছে ছিল। আমাদের ভুলের জন্য তাকে আমাদের সংগে নিতে পারিনি।
২.পাহাড়ি এলাকা গুলিতে বেড়াতে যেয়ে প্রতিবার বিভিন্ন অভিজ্ঞতা হয়েছে। একবার জুরাছড়িতে বেড়াতে যেয়ে কিনাধন কাকা বাবুর ছেলে ত্রিনয়ন চাকমার বাড়ীতে আমিসহ সকলের খাবারের দাওয়াত দিল। সে জুরাছড়ি উপজেলার উপরে পৃথক বাড়ীতে স্ত্রী মেয়েসহ বসবাস করে। পারিবারিক মনোমালিন্যের জন্য কেহ খেতে যাবে না। আমারও যেতে ভাল লাগছে না, আমি বুঝতে পারলাম প্রতি জাতির মধ্যে পারিবারিক সমস্যা আছে। এদিকে ত্রিনয়নের মেয়েকে আমাদেক নেওয়ার জন্য পাঠাইছে। কাকাবাবু ও কাকিমার পিড়াপিড়িতে জোর করে ত্রিনয়নের মেয়ের সংগে আমাকে ছেলের বাড়ীতে দাওয়াত খেতে পাঠালো। সব                                                                                     
বাড়ীতে দাওয়াত খেতে যাওয়ার আগে অনুরোধ করি যে, আমি বাংগালি মুসলিম, আমি মদ খাই না। শুধু ডিম, মাছ,শবজী আর বাজারের মুসলিম কসাইয়ের দোকানের গরু বা ছাগলের মাংস বা  মোরগ, মুরগী ও হাঁসের মাংস যদি আমি যবাই করে দেই এবং রান্নাটা বাংগালি হতে হবে, তবে আমি দাওয়াত গ্রহন করতে পারি। চাকমা উপজাতিরা কুকুড় বাদে সব খায়, মিজোরা কুকুড়সহ সর্বভূক। সব উপজাতিরা প্রত্যেক তরকারি নাপ্পি দিয়ে রান্না করে, তারা বলে নাপ্পি দিয়ে রান্না করলে ম্যালেরিয়া জ্বর হয় না এবং তরকারি সুস্বাদু হয়। আমার নিকট নাপ্পি খুবই দুর্গন্ধ লাগে, তাই নাপ্পি দিয়ে রান্না করা তরকারি কিছুতেই খেতে পারি না। ত্রিনয়নের বাড়ীতে টেবিল চেয়ারে আমাকে খেতে দিল সংগে ত্রিনয়নও খেতে                                                                                             বসলো, বৌদি খাবার পরিবেশন করতেছিল। গরুর মাংস, ডিম ও বাঁশের চোংগায় রান্না করা মাছ ছিল। সব রান্না বাংগালি ছিল এবং রান্না গুলি খবুই ভাল। খাবারের মাঝখানে  হঠাৎ ত্রিনয়ন বললো, দাদা আপনি কাঁকড়া খান? আমি বলরাম,আমি বা আমাদের সমাজে কাঁকড়া খাই না। তখন বললো, দাদা আমি নিতে পারি? আমি ভদ্রতার খাতিরে বললাম, হ্যাঁ হ্যাঁ আপনি নিতে পারেন। ওমনি চাকমা ভাষায় বৌদিকে কাঁকড়ার তরকারি দিতে বললো, বৌদিও সংগে সংগে এনে দিল। এক টেবিলে ত্রিনয়ন কাঁকড়া খাবার কড়মড়ে শব্দে আমার যে প্রতিক্রিয়া হবে তা আগে ভাবতে পারিনি। আমি ভয়ে কাঁকড়ার তরকারির দিকে তাকাইনি। আমার বমি হতে যাচ্ছিল, আমি খুব কষ্টে বমি চেক দিলাম, ওদেক আমার প্রতিক্রিয়ার কথা বুঝতে না দিয়ে, আমি কোন মতে খাবার শেষ করলাম। বহু বছর আগে রেডিওতে বিবিসির এক প্রোগ্রামে শুনা কলিকাতার এক ছেলের বিশ্ব ভ্রমনের কাহিনী মনে পড়লো, ছেলেটির বিশ্ব ভ্রমনের এক পর্য্যায়ে আফ্রিকার এক আদিবাসিদের রাত্রিকালিন নৈশ ভোজে অংশ গ্রহন করেছিল। উদ্দম জংলি নাচের অনুষ্ঠানের মধ্যমনি সন্মানিত মেহমান আলোচ্য ছেলেটি, ভোজের প্রথমে কড়া মদের সংগে সদ্য যবাইকৃত জংলি জন্তুর গরম রক্ত পান করতে হয়। নচেৎ উপস্থিত আদিবাসিরা অপমান মনে করে।  আমি কিন্তু উপজাতিদের বাড়ীতে মদ, নাপ্পি দেওয়া রান্না করা তরকারি, কাঁকড়া বা অন্য কিছুর মাংস খেতে পারি না।
আমি বাংলাদেশের রাঙ্গামাটি শহর, জুরাছড়ি, সুভলং, বরকল, ভূষণছড়া, মাইনিমুখ, খাগড়াছড়ি, মাটিরাঙ্গা, বান্দরবন, রুমা, বগা লেক, নাইখংছড়ি,কক্র্বাজার, মহেশখালি বাঁকে বাঁকে, তেতুলিয়া থেকে টেকনাফ,সেন্টমার্টিন, কাপ্তাই, গারো পাহাড়ের পাদদেশ নালিতাবাড়ী সহ বহু পাহাড়ি জনপদ,ঝর্ণা, নদ নদী, সাগড় চষে বেড়াইতে পেরেছি তার জন্য সর্ব শক্তিমান আল্লাহর নিকট লাখো শুকুর জানাই।
দীর্ঘ ২৫ বছর সাধনার পর ২০১০ ইং ভারতের কলিকাতা, দিল্লী,আগ্রা, আজমীর,পিংক সিটি রাজস্থানের রাজধানী জয়পুর, কালকা থেকে ট্রয় ট্রেনে পাহাড়ের মধ্য দিয়ে সুন্দর শহর সিমলা, মানালী, কুল্লু, রোডাং পাস ভ্রমন করার সৌভাগ্য হয়েছিল। কিন্তু গোলোযোগের জন্য ভূস্বর্গ কাশ্মীরে বনদ্ধ থাকায় সেখানে যেতে পারি নি। আমার ছেলে বেলা, আমার জীবনে ব্যাক্তিগন,আমার দেখা বাংলাদেশের স্বাধীনতা, আমার গ্রাম ও এলাকা, আমার কর্ম জীবন,আমার ‘‘পবিত্র কাবা ঘর ও মহানবী মুহাম্মদ মোস্তফা (সঃ) এঁর রওয়াজা মবারক জিয়ারত’’ প্রভৃতি বিষয়ে জীবনের শেষ বয়সে ধারাবারিক ভাবে নিজের ভাষায় লিখে সেগুলি বিশ্ব প্রযুক্তির মহাসড়কে নেটের মাধ্যমে ব্লগে নিয়মিত ভাবে লিখতে চাই। সর্ব শক্তিমান,মহা দয়ালু রহমানুর রহিম আল্লাহর নিকট সাহার্য চাই।
                                                                  ইতি---
                                                                        মোহাম্মদ আলী
                                                              তারিখঃ ২৪- ৭- ১৪ইং
                                                     মোবাইল নং ০১৭১৮ ৪৮৪১১১


পরিচয়

$
0
0

আমি রিফাত আরা আফরিন। ম্যাথমেটিক্স এ অনার্স করছি ইডেন থেকে। কবিতা পড়তে ভাল লাগে। একটু আকটু লিখার চেষ্টা করি। এক বন্ধু ফোরাম সম্পর্কে বলল।ঘুরে দেখলাম,ভাল লাগলো, সাইন ইন করে ফেললাম। লিখার চেষ্টা করবো, আশা করি হয়তো ভাল লাগবে। দোয়া করবেন।

লেখা বেঁচে থাক ভালবাসায়

$
0
0

লেখালেখির কাজ সাড়ি ঝটপট
যখন যেমন ইচ্ছা তাই
ভাবার সময় ভাবি না কিছু
কীবোর্ড যা বলে ভাই ।

যাচ্ছে কই রটনা ঘটনা
খেয়াল থাকে না আদৌ
লিখে আঁখি বুলিয়ে দেখি
লেখায় মাখা যে যাদু।

ছন্দ মাত্রার মিল নাই বা হলো
ঘটনা কিন্তু সত্য
জীবন টেনে লেখাতে নিয়ে
বানিয়ে নেই নিজ পথ্য ।

কবি আমি চাই না যে হতে
অথবা নামী লেখক
সাথে যেনো তোমাদেরকে পাই
তোমরাই আমার পাঠক ।

ভালবাসার মাঝে বেচে থাক
সকলের লেখালেখি
লেখার মাঝে-ই জীবন থেকে
অনেক কিছু-ই শিখি ।
https://lh3.googleusercontent.com/-OO3nFQEEs9g/VRp6-Xgmd2I/AAAAAAAADlo/NtTfV0I6edc/w426-h320/tumblr_lzv1ny6ydV1qzqnxxo1_250.gif

মোহে পড়ি হাজারবার........

$
0
0

মোহে পড়ি বার বার
এক নয় দুই নয় হাজার বার
আশ্চর্য্য হই যেনো আচম্বিতে,
খুবই তাড়াতাড়ি কেটে যায় মোহ
যেন বন্ধ চোখ খুলে দেয়া হঠাৎ...।

স্বপ্নের ঘোর থেকে মুক্তি পাওয়া মন
আলোয় এসে থমকে দাঁড়ায়...
অচেনা সব,
অজানা সব;
একাকী পাতাহীন গাছের নিচে দাঁড়িয়ে
অবশ দেহে কিছুক্ষন
ডালের ফাঁক ফোকর দিয়ে তীর্যক রোদ মুখটা জ্বালিয়ে দেয়।

অথচ বন্ধ চোখে কতই না আহরণ করেছি শান্তি, সুখ, স্বপ্ন
আঁধারের দেশে স্বপ্নীল আলো এসে রাঙ্গিয়ে দিয়েছিল আঙ্গিনা...
জোনাকিরা খেলা করছিল মনের উঠোনে
কুহক এসে হাত ধরেছিল, বলেছিল ফিরে যেওনা,
একদিনের জন্য হলেও আমার হও...।

আহ্ সেকি মোহ! কথার জালে আটকাতে চায়....
ছলে বলে বন্দি করতে চায় মোহের মাঝে।

বন্ধ চোখে থাকা যায় কাহাতক!
চোখ খুললেই কেটে যায় মোহ...
ফিরে আসি কুহকের জাল ছিন্ন করে।
মোহ তো থাকে না বেশিক্ষণ,
কেটে গেলে....
সমাপ্তি ঘটে একটি গল্পের; ডুব দেই হতাশার সাগরে।

আচানক জীবনে ফের ফিরে আসে মোহ..
এবং মোহে পড়তে সময় লাগে না...
মিষ্টি কথার দুষ্টুমিতে ভুলে আবার চোখ বন্ধ করি.....
মানুষ তো! তাই মোহ নিয়ে খেলা করি আনমনে;
যার ভাল থাকার অধিকার নেই বাস্তবে
সে মোহকে কাছে ডাকে...।

যার মন আছে, তাকে মোহে পড়তেই হয়...
বারবার না হলেও একবার...
অত:পর মোহ কেটে যায়/যাবে...
কঠিন বাস্তবের মুখোমুখি হয়ে
অনুশোচনায় ক্লান্ত মন বিষন্নতায় হারিয়ে
জন্ম দিবে একটি জীবন্ত কবিতার।
https://lh3.googleusercontent.com/-iOQv0hqQyR4/VRvRysNOyAI/AAAAAAAADnM/2wNc-CtP_lY/w426-h239/tumblr_m0tynufBLo1qar1euo4_250.gif

আমি একটাকার গ্লাস নাতো

$
0
0

এক টাকার ওয়ান টাইম ইউস গ্লাস ! দাম মাত্র একটাকা । কত কিছুই না করি এই গ্লাস দিয়ে । কোক ,চা কিংবা পানি । চায়ের তাপ কিংবা কোকের বরফ শীতল ঠাণ্ডা থেকে আপনার নরম আঙ্গুল গুলোকে বাঁচায় ।
কিন্তু কাজ শেষে এক টাকার গ্লাসটি আমরাই ছুড়ে মারি ।
ছুড়ে মারবো নাতো কি করবো ? ওটার কাজতো শেষ । যখন দরকার হবে তখন নতুন আরেকটা জোগাড় করে নিব।
আচ্ছা আপনি কিংবা আমি একটাকার গ্লাস নাতো ?

রাজনৈতিক অস্থিরতায় দাতারা মুখ ঘুরিয়ে নিয়েছে এ কথা বলার উপায় নেই।

$
0
0

বিশ্বব্যাংকের সহযোগী সংস্থা আইডার ঋণ ব্যবহারে বাংলাদেশ প্রথম সারিতে রয়েছে। উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান অনেক উপরে। গত অর্থবছরের তুলনায় চলতি অর্থবছরে অর্থছাড়ের পরিমাণ বেড়েছে প্রায় ১ কোটি ৪১ লাখ ৭০ হাজার মার্কিন ডলার। এ সময়ে সবচেয়ে বেশি অর্থছাড় করেছে বিশ্বব্যাংক। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। শুধু ফেব্রুয়ারি মাসে (এক মাসে) উন্নয়ন সহযোগীরা অর্থছাড় করেছে মোট ৯ কোটি ৭৩ লাখ মার্কিন ডলার। এর মধ্যে ঋণের পরিমাণ ৮ কোটি ৮৯ লাখ ৬০ হাজার মার্কিন ডলার এবং অনুদান হচ্ছে ৮৩ লাখ ৪০ হাজার মার্কিন ডলার। রাজনৈতিক অস্থিরতার প্রভাব এখনও সরাসরি বৈদেশিক সহায়তার ক্ষেত্রে পড়েনি বলেই সাত মাসে বৈদেশিক সহায়তা বেড়েছে। সরকারী সম্পদ ব্যবহারে সক্ষমতা বৃদ্ধি, সরকারী কর্মকর্তাদের আন্তরিকতা, নতুন নতুন দাতা দেশ যুক্ত হওয়া এবং বাংলাদেশে সহায়তার প্রয়োজনীয়তা দাতাদের বোঝাতে পারার কারণেই বৈদেশিক সহায়তা বেড়েছে। সরকারের দায়িত্বশীলদের তৎপরতা এবং অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সফল নেগোশিয়েশনের ফলেই উন্নয়ন সহযোগীদের আস্থা অর্জন সম্ভব হয়েছে। রাজনৈতিক অস্থিরতা বৈদেশিক সহায়তার ক্ষেত্রে কোন খারাপ প্রভাব ফেলতে পারেনি। তার প্রমাণ হচ্ছে হরতাল অবরোধ সত্ত্বেও দাতাদের অর্থছাড় বেড়েছে। রাজনৈতিক অস্থিরতায় দাতারা মুখ ঘুরিয়ে নিয়েছে এ কথা বলার উপায় নেই। সহায়তা বরং বাড়ছে। গত তিন বছর ধরে প্রতিবছর বিশ্ব ব্যাংকের ডিসবাসমেন্ট তার আগের বছরের চেয়ে বেশি হয়েছে। এ সকল তথ্য পর্যালোচনান্তে আশা করা জায় আগামীতে বৈদেশিক সহায়তা আরও বাড়বে।

ব্যাকডেটেড

$
0
0

হিজিবিজি সময়ে, ভেরি বিজি সকলে,
আয়োজনে জোৎস্না, তাই যায় বিফলে।

গাড়ি চড়ে বড় বাবু, লেখা পড়া কবে শেষ,
জানালায় চোখ নাই, অবিরত ফোনে বেশ!

ঘর কোণে আরামে, আলাপের চাইল-ডাইল,
গোলামীর ফোন বাজে, মিটিংএ ডাকে কাইল।

পার্ক-বন নদী-লেক, গেল নাকি ঘুরবে,
সেলফির ক্রেজ ভিড়ে, শিরে খুন চড়বে।

চিৎকার বিপদের, হেল্প হেল্প বলে কে?
মরুকগে করি ক্লিক, ফেসবুকে তুলে দে।

এলিয়েন হয়ে ভাবি, এলাম রে এ কোথা!
পুরাতন বোধ সবি, ঝেড়ে বাঁচ্ হে বোকা।

==
(রচনাকাল: ০২-এপ্রিল-২০১৫)

ক্যারিয়ার বিষয়ক কিছু প্রশ্ন জিজ্ঞাসা

$
0
0

প্রস্ন-১  বি,সি,এস এর প্রস্ততুতি শুরু করার জন্য প্রথমে কি কোন কোচিং এ ভর্তি হবার প্রয়োজন আছে?
          *যদি থাকে তবে কোন কোচিং এ ভর্তি হলে ভাল হয়?
           *যদি না থাকে তবে কিভাবে প্রস্তুতি শুরু করলে ভাল হবে?

প্রস্ন-২  বি,সি,এস এর পাশাপাশি ব্যাংক জব এর জন্য কিভাবে পড়াশোনা করলে ভাল করা যাবে?

আপনাদের সুপরামর্শ  আশা করছি।


স্বপ্নিল স্মৃতি

$
0
0

এত যেন অন্তহীন দিনগোনা, কতদিন গুনলে কেউ ক্লান্ত হয়, কতবার পরলে সব মেসেজ মুখস্ত হয়ে যায়? সময়ের মত সবসময় চলতে থাকা এই মেশিনটা যেন শুধু দুরত্বই বাড়িয়ে চললো। অপেক্ষার পালা যেন ইনফিনিট লুপে আছে শেষ হবার নামই নেই, জীবনটাই তো একটা লুপের মধ্যে, প্রতিদিন একেকটি এক্সিকিউশন  এর এধ্যে আরও কত নেস্টেড লুপ…... থাক আর এসব টেকি প্যাচালে নাই বা গেলাম!

সেদিনটি কি ছিল তা মনে নেই, সপ্তম, অষ্টম আশ্চর্যের মত তোমার ফোন পেয়ে আমি যখন নিজেকেই চিমটি কাটার চিন্তা করছিলাম তখন মায়ের কথায় ঘোর থেকে বেরিয়ে ফোনটা ধরলাম।

একটু আসবে আমার বাসার পাশে? আমি কি উত্তর দিয়েছিলাম তা মনে নেই তবে তোমার বাড়ির পাশে দাড়িয়ে ছিলাম মটর সাইকেল নিয়ে, অবাক করে দিয়ে বের হয়ে আসলে তুমি, আমিতো একভাবে মিররে তাকিয়ে তোমার চুল দেখছিলাম। এসে বসার অনুমতি চাইলে আমি উত্তর যেন মনে করতে থাকলাম ফিজিক্স প্র্যকটিকেল ভাইবার মত। তুমি বসলে, এতক্ষন পর আমার প্রশ্ন, কোথায় যাবেন ম্যডাম? উত্তর ছিল অনির্দিষ্ট গন্তব্যে, গ্রামের মেঠোপথ পেরিয়ে কোন একখানে যেখানে ছায়া সুনীবির কোন বটগাছের নীচে রাখালের বাঁশির শব্দ শোনা যায়।

আমি কোন বাঁশির শব্দ শুনতে পাই নি কিন্তু শুনতে পাচ্ছিলাম তোমার চুরির টুংটাং শব্দ, রাখালের বাঁশি শুনে মাতাল হওয়ার আর কিসের দরকার?

গ্রামের ঝাকিময় রাস্তা তোমাকে বাধ্য করে আমাকে জরিয়ে ধরতে, আমার গলা জরিয়ে ধরে যেন আমাকে ঘোরের মধ্যে চলে যেতে বাধ্য করলে তুমি, চলন্ত অবস্থায় তখন চোখ বন্ধ করে বড় নিস্বাস নেই, নিশ্বাসের মধ্যে এতকিছু আছে আগে তো জানা ছিল না!

আমি চালিয়েই যাই সেকেন্ডের সাথে, মিনিটের সাথে, ঘন্টার সাথে, সুর্য হার মেনে লুকিয়ে যেতে থাকে একসময়, লুকিয়েই যায়।

মন খারাপ করে বললাম চলো সন্ধা হয়ে গেছে তোমাকে বাড়ি পৌছে দেই, বললে না গেলে হয় না? থামিয়ে ঘুরে তাকালাম "খুব হয়" বলে অনির্দিষ্টের উদ্দেশ্যে রওনা হলাম আমরা, অনির্দিষ্টে নিজেদের গন্তব্য নির্দিষ্ট করতে।

তুমি শুধু তুমিতেই থেকে গেলে, নাম আর বলে কি হবে, সবই তো স্বপ্ন, দেখ কি তুমিও একই স্বপ্ন?

বিদ্র: গল্পের চরিত্র, ঘটনা এবং লোকেশন সবই কাল্পনিক, কারও সাথে মিলে গেলে তাহা নিছকই কাকতালীয় মাত্র।

ডাটা ইউজ নিয়ন্ত্রনের জন্য ভাল এ্যাপস দরকার

$
0
0

NoRoot Firewalll ব্যবহার করে দেখলাম, অনেক জটিল মনে হল। Mobiwol: NoRoot Firewall দেখিনাই কেমন।
আরও অনেক এ্যাপস আছে কোনটা ভাল হবে বুঝতে পারছিনা।
আপনাদের কারও জানা থাকলে শেয়ার করেন প্লিজ।

মাষ্টার অফ এস ই ও সিরিজ (দ্বিতীয়-খণ্ড) কিওয়ার্ড বিশ্লেষণ পদ্ধতি - ৩

$
0
0

এখানে আমাদের যে কাজগুলো করতে হবেঃ

  • পে পার ক্লিক (পিপিসি) ক্যাম্পেইন পরিচালনা।
    পে পার ক্লিক বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে কিওয়ার্ড পরীক্ষা।
    পে পার ক্লিক এর মাধ্যমে আপনার ব্র্যান্ড নির্মাণ করা।
    নিম্ন ক্লিক রেইট এর কিওয়ার্ড ছাঁটাই।
    কম খরচে অরগানিক রেঙ্কিং বৃদ্ধি।


পূর্বে প্রকাশিতঃ দ্বিতীয় অধ্যায়


পে পার ক্লিক (পিপিসি) / Pay Per Click (PPC) বিজ্ঞাপন ক্রয় করা আপনার এস ই ও এর একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হতে পারে। আমরা প্রথম খণ্ডেই পড়েছিলাম যে, সার্চ রেজাল্ট দুই প্রকার, অরগানিক এবং পেইড। অরগানিক রেজাল্ট আপাতদৃষ্টিতে বিনামূল্যে হয়ে থাকে। আর পেইড রেজাল্টে সাইট প্রদর্শনের জন্য সাইট এর এডমিন গুগোলকে টাকা দিয়ে থাকে। কোন একটি নির্দিষ্ট কিওয়ার্ড এর উপর যখন কোন সাইট এর এডমিন পিপিসি এড ক্রয় কর, তখন তার সাইট পেইড রেজাল্টে (Sponsored Links) প্রদর্শন করে। এই ব্যাপারটি অনেকটা সহজেই লাফ দিয়ে উঠে যাওয়ার মত।

পেইড এড কেনার জন্য আপনাকে গুগোল এডওয়ার্ডসে যেতে হবে। এড কেনার পদ্ধতিটি আপনার এই বইয়ের প্রথম খণ্ডের পঞ্চম অধ্যায়ে দেখেছি। এখানে আপনার কাঙ্খিত কিওয়ার্ড/সার্চ কুয়েরিটি নির্বাচন করে একটি ক্যাম্পেইন প্লেস করুন এবং বিড করুন। এখানে গুগোল ট্র্যাক করবে আপনার এড গুলো কতবার ইউজার এর কাছে প্রদর্শন হচ্ছে, অর্থাৎ নাম্বার অফ ইম্প্রেশন। এবং কত বার ইউজার এডে ক্লিক করছে, অর্থাৎ নাম্বার অফ ক্লিক। এভাবে Click Through Rate (CTR) নির্বাচন করবে। সিটিআর এর সুত্র হচ্ছেঃ CTR = Click / Impression ।

অর্থাৎ ধরুন আপনার সাইট এর বিজ্ঞাপনটি ১০০০ জন এর কাছে প্রদর্শন করা হোল। তাদের মধ্যে ২৩৭ জন ক্লিক করে আপনার সাইটে ঢুকল। আপনার সাইটের,

Click = 237, Impression = 1000
CTR = 237/1000 = 0.237


আবার, আরেকটি সাইটের বিজ্ঞাপন ৩২৫ জনের কাছে প্রদর্শন করা হয়েছে তাদের মধ্যে ১১২ জন ক্লিক করে সাইটে প্রবেশ করেছে। তাহলে তার সাইটের,

Click = 112, Impression = 325
CTR = 112/325 = 0.344


অর্থাৎ, তার ইম্প্রেসন এবং ক্লিক দুইটিই আপনার থেকে কম হলেও ক্লিকের হার (CTR) আপনার সাইট থেকে বেশী। যদিও, পেইড এড এর ক্ষেত্রে যে বেশী টাকা বিড করবে তার এড উপরে প্রদর্শন করবে, কিন্তু এই ক্লিক রেইট বেশী হলে আপনার অরগানিক রেঙ্কিং বৃদ্ধি পাবে।



[যদিও, এখন পর্যন্ত ক্লিক রেইট বেশী হলে গুগোল অরগানিক রেংকিং বৃদ্ধি পাচ্ছে, কিন্তু আমার  ব্যাক্তিগত ধারনা হোল, কোন এক সময় হয়তো গুগোল স্বার্থপর চিন্তা করে এই বিষয়টি না ও করতে পারে। অর্থাৎ আমি (কাজী নিশাত) গুগোল এর জায়গায় হলে যা করতাম। গুগোল চিন্তা করবে, পেইড এড সেবা গ্রহণকারীদের অরগানিক রেঙ্কিং বাড়ালে তারাতো আর পেইড বিজ্ঞাপন ক্রয় করবে না। তাই তাদের রেঙ্কিং না বাড়ালেই গুগোল আজীবন আয় করে যেতে পারবে। আমি আবারও বলছি, এটি সম্পূর্ণ আমার ব্যাক্তিগত মতামত। এর কোন তথ্যসুত্র নেই। এই মতামত এর কোন দায়ভারও আমি গ্রহন করবো না। আমি শুধুমাত্র আমার ধারনাটি আপনাদের সাথে শেয়ার করলাম]
 

আমার ইচ্ছা আছে এই সিরিজটি (মাষ্টার অফ এস.ই.ও) শেষ হলে আরেকটি নতুন সিরিজ "মাষ্টার অফ এস.ই.এম" শুরু করা। সেটিতে শুধুমাত্র সার্চ ইঞ্জিন মার্কেটিং (SEM) নিয়ে বিশদ প্রশিক্ষণ দেয়া হবে।

এই অধ্যায়ে আমরা এস.ই.এম নিয়ে শিখছি শুধুমাত্র আমাদের এস.ই.ও এর কাজে সাপোর্ট পাওয়ার জন্য।



ü      পে পার ক্লিক (পিপিসি) ক্যাম্পেইন পরিচালনা

http://1.bp.blogspot.com/-xVsqdIXoj6k/VRvAQvfF4aI/AAAAAAAABvA/zQzHU2SgXNI/s1600/Pay-Per-Click%2Bcopy.jpg


আপনার সাইটের অরগানিক রেঙ্কিং এর কিওয়ার্ড বিশ্লেষণে জন্য পিপিসি যেভাবে সাহায্য করবেঃ



১। কোন কিওয়ার্ডটি আপনার সাইটে প্রচুর কোয়ালিটি ট্রাফিক নিয়ে আসছে (কোয়ালিটি ট্রাফিক এর গুরুত্ব নিয়ে আমরা প্রথম খণ্ডে আলোচনা করেছি) সেটি বাছাই করবে।

২। কোন কিওয়ার্ড থেকে আপনি কোন ট্রাফিক পাচ্ছেন না, সেটিও বাছাই করবে।

৩। কোন কোন কিওয়ার্ড থেকে আপনি কনভার্সন পাচ্ছেন, সেটি আপনাকে জানাবে, এতে করে আপনি অরগানিক এস ই ও তে সেই কিওয়ার্ড এর উপর বিশেষ জোর দিতে পারেন।


আপনি একদম সহজে বুঝতে পারেন এভাবে, এতদিন আমরা কিওয়ার্ড এনালাইসিস করেছি যে, কোন কোন কিওয়ার্ডে ইউজাররা বেশী সার্চ করে। হ্যাঁ, এটি অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। তবে, ইউজাররা বেশী সার্চ করার অর্থ সবসময় এই দাড়ায় না যে, সেটি থেকে আপনিও বেশী ভিজিটর পাবেন। আপনি স্পেসিফিক ভাবে কোন কিওয়ার্ড এর উপর বেশী ভিজিটর পাবেন, সেটি আপনাকে নির্ণয় করে দেবে পিপিসি।



[তথ্যঃ সার্চ ইঞ্জিনের উপর বৈজ্ঞানিক গবেষণা কষ্টসাধ্য। কারণ আমরা প্রথম খণ্ডেই জেনেছি যে, সার্চ ইঞ্জিনের কার্যপ্রণালী গোপনীয় এবং তাদের এলগরিদম তারা কখনোই প্রকাশ করে না]



আপনি একই বিজ্ঞাপনটি কয়েকটি ভিন্ন ভিন্ন কিওয়ার্ড এর উপর প্লেস করে দেখতে পারেন যে, কোন কিওয়ার্ডটি আপনার জন্য বেশী কার্যকর।


আপনি পেইড এড কেনার মাধ্যমে গুগলে এডওয়ার্ড, ইয়াহু সার্চ মার্কেটিং, মাইক্রোসফট এডসেন্টার ইত্যাদির বিভিন্ন জরিপ ও এনালাইসিস টুল ব্যাবহার করতে পারবেন। এতে করে আপনি অরগানিক রেজাল্ট এর জন্যও আপনার সাইটের কন্টেন্টকে উন্নত করতে পারবেন।




একটি বিষয় সবসময় মনে রাখা দরকার। সেটি হচ্ছে, পিপিসি এডকে সবসময় মনিটরিং করতে হয়। এবং এড এর পারফর্মেন্স এর উপর ভিত্তি করে বিড এর রেইট বাড়াতে/কমাতে হয়। এছাড়াও, আপনাকে প্রতিনিয়ত কম পারফর্মেন্স এর কিওয়ার্ডগুলো বাদ দিয়ে নতুন নতুন (হাই ট্রাফিক) কিওয়ার্ড সংযুক্ত করতে হবে, এবং সেটিতে আপনার এড এর পারফর্মেন্স পরীক্ষা করতে হবে।


কোন কিওয়ার্ড এ আপনার খরচ কম হবে, কোনটিতে বেশী হবে। এবার আপনার কনভার্সন এর সাথে অনুপাত হিসাব করতে হবে। কোন কিওয়ার্ডটি আপনার কম টাকা খরচ করিয়ে বেশী মুনাফা দিচ্ছে, আর কোনটি বেশী টাকা খরচ করিয়ে কম মুনাফা দিচ্ছে। যেটি আপনাকে অল্প খরচে বেশী মুনাফা দিচ্ছে, সেই কিওয়ার্ডে আপনি বেশী বিনিয়োগ করলে আরও বেশী মুনাফা পাবেন। পাশাপাশি সেই কিওয়ার্ড দিয়ে আপনার অরগানিক এস.ই.ও চালিয়ে যাবেন।
আমরা আগেও মেনশন করেছি যে, পেইড এড কিনলে আপনি যে প্রিমিয়াম টুলগুলো ব্যাবহার করতে পারবেন, সেগুলোর সুবিধা আপনাকে পরিপূর্ণভাবে কাজে লাগিয়ে নিতে হবে। 




তবে, মনে রাখবেন, পেইড কিওয়ার্ড আপনাকে যেভাবে ফলাফল/কনভার্সন দেবে, অরগানিক রেজাল্টে ঠিক ঠিক সেরকম না ও হতে পারে। তবে পেইড এড থেকে খুব ভালভাবে ক্লু পাওয়া যায়। তাছাড়া অরগানিক রেজাল্ট এর এফেক্ট আপনার সাইটে পড়ার আগ পর্যন্ত আপনার সাইট বেকার বসে নেই, ট্রাফিক পাচ্ছে আবার কনভার্সনও হচ্ছে।



ü      ব্র্যান্ড নির্মাণ করা

http://2.bp.blogspot.com/-nrA6-Hi5yV0/VRvAiZz98yI/AAAAAAAABvI/_zhz_O6g-1w/s1600/effective-brand-strategy%2Bcopy.jpg

আপনি যদি চান যে, আপনার কোম্পানির নাম সবাই (আপনার গ্রাহক সমাজ) একনামে চিনবে, আপনার পণ্যকেও সবাই চিনবে,  সেটিকেই বলা হয় ব্রান্ড নির্মাণ/ব্র্যান্ডিং। DELL কোম্পানির নাম শুনলেই আপনার চোখের সামনে ভেসে উঠে একটি ল্যাপটপ এর ছবি। যখন আপনার কোম্পানির ব্র্যান্ডিং হয়ে যাবে, তখন আপনার কোম্পানির নামই একটি কিওয়ার্ড হয়ে যাবে। এখন যেমন, DELL লিখে অনেকেই সার্চ করে। এটি পুরাই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতার (যদি আপনার কোম্পানির নামটি ইউনিক হয়) কিওয়ার্ড। যারা এই কিওয়ার্ড ব্যাবহার করে সার্চ করবে তারা নির্দিষ্টভাবে আপনাকেই খুজছে, এবং তারা সরাসরি আপনার সাইটেই আসবে।

আপনার আপনার ব্র্যান্ডিং করতে পারেন পিপিসি এর মাধ্যমে। পেইড এড দিয়ে হলেও আপনার কোম্পানির নাম ক্লায়েন্ট সমাজে পরিচিত করে নিতে পারবেন। আর আপনার পণ্য/সেবা ভাল হলেতো মৌখিক বিজ্ঞাপনও আপনার ব্র্যান্ডিংকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। ধরুন, আপনি গ্রিনটেল নামে একটি কোম্পানি খুলেছেন, যেটিতে ইন্টারনেট মোডেম বিক্রয় করা হয়ে। এখন আপনি Internet Modem কিওয়ার্ড এর উপর পিপিসি এড কিনলেন। যখন, ইউজাররা Internet Modem লিখে সার্চ করলো, তখন পেইড এডে লেখা আসলো "গ্রিনটেল ইন্টারনেট মোডেম - হাইস্পীড ৩জি সেবা ...  ইত্যাদি ইত্যাদি" । এখন ভিজিটর (টার্গেটেড) রা জেনে গেলো যে, গ্রিনটেল নামে একটি কোম্পানি আছে, যেটি উচ্চ গতি সম্পন্ন ৩জি ইন্টারনেট সেবা প্রদান করে থাকে। এতে করে আপনি কাস্টমারও পেলেন, আবার আপনার ব্র্যান্ডিংও অনেকদূর এগিয়ে গেলো। শুধুমাত্র অরগানিক এস ই ও এর উপর নির্ভর করলে Internet Modem কিওয়ার্ড উপর প্রথম পেইজে যেতে আপনার অনেক অনেক সময় লাগতো এবং আপনার ব্র্যান্ডিং ও পিছিয়ে পড়তো। ধরুন, আপনি আর আপনার একজন কম্পিটিটর বন্ধু একসাথে এস ই ও শুরু করলো। ৬ মাস পরে তার সাইটে মাত্র ব্র্যান্ডিং শুরু হোল, আর আপনার সাইটের জন্য পিপিসিতে কিছু টাকা বিনিয়োগ করায় ততদিনে আপনার সাইটের ব্র্যান্ড অলরেডি স্থাপন করা হয়ে গেছে। সে যখন ব্যাবসা শুরু করছে, আপনি তখন পুরোদমে ব্যাবসা দাড় করিয়ে ফেলেছেন।




অরগানিক এস ই ও এর ক্ষেত্রে যদিও টাইটেলে কিওয়ার্ড অনেক গুরুত্ব পায়, কিন্তু পেইড এস ই ও তে আমি সবসময় পরামর্শ দেব আপনার কোম্পানির নামটিকে হাইলাইট করার জন্য। এমন অনেক বড় বড় কোম্পানি আছে, যাদের সাইট অরগানিক রেজাল্টেতো আসেই না, এমনকি তাদের কোম্পানির নাম লিখে সার্চ করলেও আসে না। এসব কোম্পানিকে অন্তত ওয়েব প্ল্যাটফর্মে অনুপস্থিত ব্রান্ড (Nonexistence Brand) বলা হয়। 

http://3.bp.blogspot.com/-u6qx5OhkihU/VRvA2a1T9gI/AAAAAAAABvQ/843L31KY9jk/s1600/brand-strategy%2Bcopy.jpg

যখনই আপনি আপনার ওয়েবসাইটের ব্র্যান্ডিং করতে যাচ্ছেন, তখন আপনাকে খেয়াল রাখতে হবে আপনার হোম পেইজের টাইটেল ট্যাগ এ প্রথমেই আপনার ব্র্যান্ড নেম রয়েছে। যেমন, আমার সাইট পিডিএফ টিউটোরিয়াল জোন এর সাইটে টাইটেল ট্যাগঃ



<title> PDF Tutorial Zone - Download Free English And Bangla E-Book </title>




এখানে আমার ওয়েবসাইটের নামটি প্রথমে ব্যাবহার করা হয়েছে। যদিও আমার টাইটেল ট্যাগটি কিওয়ার্ড পূর্ণ একটি বাক্য দিয়ে সাজানো হয়েছে, তথাপি সাইট নেম প্রথমে রেখে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। যাতে করে একজন ব্যাবহারকারীর মাথায় সাইট এর নামটি থাকে, এবং পরবর্তীতে সে কখনো অন্য কোন বিষয়ে সার্চ করেও এই সাইট দেখলে ক্লিক করবে, কারণ সে পূর্ব অভিজ্ঞতা থেকে জানে যে, এই সাইটটির সার্ভিস ভালো। এছাড়াও ব্রাউজার এর একটি ট্যাবে টাইটেল এর পূর্ণ অংশ অনেকসময় সাধারনভাবে প্রদর্শন করে না। ব্যাবহারকারীকে টাইটেল এর অংশটির উপর মাউস পয়েন্টার রেখে পূর্ণ টাইটেলটি দেখতে হয়, যা অনেকেই করে না। তাই টাইটেল এর প্রথম অংশে (যেটি সবাই দেখে) আপনার সাইটের নামটি থাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।



ü      নিম্ন ক্লিক রেইট এর কিওয়ার্ড বাছাই করাঃ




পিপিসি বিজ্ঞাপন খুব সহজেই আপনাকে পরীক্ষা করার সুযোগ দিচ্ছে যে, আপনার কোম্পানিটি কোন কিওয়ার্ড এর উপর মার্কেটে ভালো অবস্থানে আছে। বিজ্ঞাপনগুলো অবশ্যই মার্কেটিং কৌশল অনুযায়ী লেখা উচিত, এবং এর কিওয়ার্ডটি অবশ্যই অবশ্যই সাইটের বিষয়বস্তুর সাথে অনেক বেশী সম্পর্কযুক্ত হওয়া উচিত। আপনি সে কিওয়ার্ডগুলো নির্বাচন করতে পারবেন যেগুলো আপনাকে উচ্চ ট্রাফিক (যারা আপনার বিজ্ঞাপনে সবচেয়ে বেশী ক্লিক করছে) এবং উচ্চ কনভার্সন (যারা শুধু আপনার সাইটেই প্রবেশ করছে না, আপনার সেবাও গ্রহন করছে) দিচ্ছে। এর মাধ্যমে সহজেই আপনি আপনার লিস্ট থেকে কম ক্লিক-থ্রো-রেইট এবং কম কনভার্সন-রেইট সম্পন্ন কিওয়ার্ড গুলো ছেঁটে ফেলে দিতে পারবেন।






এত কষ্ট করে একটি কিওয়ার্ড এর উপর প্রথম পেইজে আসা অর্থহীন হয়ে যায়, যদি না আপনার সাইটে ভিজিটর ক্লিক করে প্রবেশ না করে। সিঙ্গেল কিওয়ার্ড (এক শব্দের সার্চ কুয়েরি) এর ক্ষেত্রে ট্রাফিক অনেক বেশী থাকে। তাই পিপিসি এর বিজ্ঞাপনের খরচও অনেক বেশী হয়। কিন্তু এটিতে তুলনামুলক ভাবে অনেক অনেক কম কনভার্সন হয়। যেমন, Car কিওয়ার্ডটির উপর আপনি অনেক বেশী ট্রাফিক পাবেন। কিন্তু, তাদের কেউ গাড়ির ছবি সংগ্রহ করতে সার্চ করেছে। কেউ আবার গাড়ির বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করতে, কেউ কেউ বা গাড়ির গেইম ডাউনলোড করতে। এরা কেউ আপনার সেবা গ্রহন করতে, অর্থাৎ গাড়ি/গাড়ির পার্টস কিনতে আসেনি। কিন্তু, Car Price কিওয়ার্ডটিতে Car কিওয়ার্ড থেকে অনেক কম ট্রাফিক জেনারেট করে। এটির পিপিসি বিজ্ঞাপনের ভ্যালুও কম হবে। কিন্তু কনভার্সন রেইট বেশী হবে। কারণ গাড়ির দাম যারা জানতে চায়, তাদের নিশ্চয় গাড়ি কেনার আগ্রহ আছে। আর আগে যদি একটি নির্দিষ্ট মডেলের গাড়ি সে শো-রুম এ দেখে আসে, তার থেকে কম দামে আপনার সাইটে পায়, তাহলে সে অর্ডার দিতে কার্পণ্য করবে না।



কিওয়ার্ড চর্চা করার জন্য আপনাকে শুধু পরীক্ষা পরীক্ষা আর পরীক্ষা করে যেতে হবে। আপনার বিষয়ের সাথে সংগতিপূর্ণ অনেকগুলো সার্চ কুয়েরিতে বিড করতে হবে। তাহলেই আপনি সবচেয়ে উচ্চ কনভার্সন রেইট এবং Best ROI পাবেন।

http://1.bp.blogspot.com/-IPHI9tS0kdA/VRvBDtHBzII/AAAAAAAABvY/wy5Xhfo525w/s1600/ROI.jpg


আপনার সাইটের জন্য সবচেয়ে ভালো কিওয়ার্ডটি বাছাই করতে গেলে আরো কয়েকটি বিষয় আপনার জানা দরকার। প্রয়োজন হলে কোথাও টুকেও রাখতে পারেন।


    পৃথিবীর সকল সার্চ কুয়েরির প্রায় ৫৮ শতাংশ (২০১০ এর জরিপ) হচ্ছে তিন শব্দযুক্ত



    সংক্ষিপ্ত কিওয়ার্ড (এক/দুই শব্দের) অধিকাংশ ক্ষেত্রে তথ্য সংগ্রহ করার জন্য ব্যাবহার করা হয়। এগুলোতে উচ্চ কনভার্সন পাওয়া যায় না।



    যখন ইউজার অনেক লম্বা সার্চ কুয়েরি দিয়ে সার্চ করে, তখন আরও বেশী নিশ্চিত হওয়া যায় যে তিনি কোন একটি পণ্য বা সেবা খুজছেন।



    ইউজাররা একদম সঠিক পণ্য/সেবা পাওয়ার জন্য লম্বা সার্চ কুয়েরি ব্যাবহার করে থাকে।




যখন,  আপনি উচ্চ কনভার্সন কিওয়ার্ড বাছাই করছেন, তখন আপনাকে লম্বা লেজ (Long Tail) নীতি মাথায় রাখতে হবে। [আমরা এই বইয়ের প্রথম খণ্ডের পঞ্চম অধ্যায়ে লম্বা লেজ নীতি নিয়ে আলোচনা করেছিলাম]। যে, কিওয়ার্ড আইডিয়াটি অধিক লম্বা এবং নির্দিষ্ট, সেটি বেশী কাজের।




যে কারনে আপনি লম্বা লেজ নীতি অনুসরন করে কিওয়ার্ড বাছাই করবেনঃ



    এগুলোতে বিড করতে খরচ কম হবে, কারণ কম ওয়েবসাইটই এত স্পেসিফিক কিওয়ার্ড এ বিড করে।



    বাউন্স রেইট কম হবে। কারণ, ভিজিটর যা খুজছে, তা ই আপনার সাইটে পাবে।



    কম সার্চ মানে ক্লিকও কম, অর্থাৎ আপনার খরচও কম, কিন্তু সেল বেশী।



    পিপিসি আপনাকে ভিন্ন ভিন্ন অনেকগুলো সার্চ টার্ম এ বিড করার সুযোগ দিচ্ছে।



    পিপিসি এর ফলাফল আপনি আপনার অরগানিক এস ই ও তে কাজে লাগাতে পারবেন। কারণ এগুলো আপনার সাইটের জন্য বেশী এফেক্টিভ হবে, তথাপি কম্পিটিশন কম হবে।



    লং টেইল কিওয়ার্ড ভিজিটর এর আকর্ষণ বাড়ায়।




ধরুন আপনি উপরের সব কিছু বিবেচনা করে কিওয়ার্ড বাছাই করেছেন, কিন্তু তারপরও ভিজিটর পাচ্ছেন না। তার কারণ এগুলোও হতে পারেঃ



    আপনার বিজ্ঞাপনটি সুন্দরভাবে লেখা হয়নি



    সার্চ টার্ম এর সাথে আপনার বিজ্ঞাপন সম্পর্কযুক্ত না



    আপনি যাদেরকে টার্গেট করেছেন, তাদের আপনার সেবা প্রয়োজন নেই। [ক্লায়েন্ট টার্গেট নিয়ে আমরা প্রথম খণ্ড-প্রথম অধ্যায়ে আলোচনা করেছি]




এই পদ্ধতিগুলো অনুসরন করে যখনি আপনি সঠিক কিওয়ার্ড খুজে পেয়েছেন, তখনি আপনি মার্কেটিং এর "আলাদিনের প্রদীপ" পেয়ে গেছেন। এবার সুধু অরগানিক এস ই ও উন্নয়ন করবেন। 



ü      কম খরচে অরগানিক রেঙ্কিং বৃদ্ধি

আপনার অরগানিক এস ই ও এবং পিপিসি ক্যাম্পেইন এর একটি ভালো কম্বিনেশন আপনাকে বেষ্ট রেজাল্ট এনে দিতে পারে। যেকোন একটি করার থেকে দুইটি একসাথে করা অনেক ভালো। আপনার যদি পর্যাপ্ত বাজেট থাকে, তাহলে দুইটি একসাথে চালাতে পারেন।






পিপিসি এর জন্য আপনি যে রিসার্চ করবেন, সেটি আপনার অরগানিক এস ই ও তে চরম সাপোর্ট দেবে। একটি রেজাল্ট পেইজের (SERP) দুই যায়গায় (অরগানিক রেজাল্ট এবং পেইড রেজাল্ট) যদি আপনার সাইট থাকে তাহলে আপনার ব্র্যান্ড ভ্যালু তথা ভিজিটরের এর কাছে আপনার সাইটের গ্রহণযোগ্যতা বাড়বে। নিচের চিত্রে দেখানো হল, যখন caitlinricefit.com সাইটটি একসাথে, একটি নির্দিষ্ট কুয়েরির উপর অরগানিক এবং পেইড দুই যায়গায়ই অবস্থান করছে। ইউজার এই কোম্পানিকে একটি বড়সড় কোম্পানি হিসেবে বিবেচনা করবে। যদিও তারা দুইটিই দেখবে, কিন্তু অধিকাংশ ভিজিটর অরগানিক রেজাল্টটিতেই ক্লিক করবে [আমরা প্রথম খণ্ডে  জেনেছি যে, অধিকাংশ ইউজার অরগানিক রেজাল্ট এ ক্লিক করে] তাই কম খরচে পেইড রেজাল্টটি আপনাকে সাপোর্ট দিবে। কারণ, পিপিসি বিজ্ঞাপনে এ ক্লিক না পড়লে আপনার ক্লিক এর খরচ হবে না, শুধু ইম্প্রেশন এর খরচ হবে। তাই, আপনার ক্যাম্পেইন এ ক্লিক-রেইট (CTR) তুলনামুলক কম দেখা গেলেও, আসলে কিন্তু ক্লিক (অরগানিক) বেশী হবে তথা ROI বেশী হবে।


http://3.bp.blogspot.com/-iLSZo8SIyOY/VRvBV2EnovI/AAAAAAAABvg/3W8CA0Lz1Wo/s1600/Untitled4.jpg


ধরুন, আপনি শুধু পেইড রেজাল্ট এ CTR পাচ্ছেন 10% । এর কিছুদিন পর আপনার সাইট ওই কিওয়ার্ড (যেটি দিয়ে আপনি পিপিসি ক্যাম্পেইন করেছিলেন) এ প্রথম পেইজে চলে এসেছে। আর তাই আপনি পিপিসি ক্যাম্পেইন বন্ধ করে দিয়েছেন। এখন আপনি অরগানিক এ ক্লিক রেইট পাচ্ছেন 16% । তাহলে আপনার গড়ে  CTR  13% । এখন আপনি যদি আবার পিপিসি ক্যাম্পেইন চালু করে দেন। তাহলে আপনার পিপিসি এর সাপোর্ট এর কারনে অরগানিক ক্লিক বেড়ে হয়ে যাবে ৩০%। আর পিপিসি এড এ ক্লিক কমে গিয়ে হয়ে যাবে ৮%। তাহলে আপনার গড়ে CTR  বেড়ে গিয়ে দাঁড়াচ্ছে 19% । তাহলে দেখুন, আগের থেকে (যখন আপনি শুধু পিপিসি চালাতেন) আপনার গড়ে ক্লিকও অনেক বেড়ে গেছে। আবার পরের থেকে (যখন আপনি শুধু অরগানিক চালাতেন) ও ক্লিক বেড়ে গেছে। কিন্তু, খরচ আগের থেকে কমে গেছে (যেহেতু পিপিসি এড এ ক্লিক এর পরিমান কমে গেছে)।

http://1.bp.blogspot.com/-qzxZu3UFI08/VRvBeEFQvYI/AAAAAAAABvo/rmL6b1ouLT4/s1600/Google-SEO-1%2Bcopy.jpg

http://1.bp.blogspot.com/-tcYKZZ6uukE/VRvBgTtu3_I/AAAAAAAABvw/2LOMK_rPooI/s1600/keyword_planner%2Bcopy.jpg

লেখাটি পূর্বে প্রকাশিত আমার ব্লগে

এই লেখাটি ইবুক আকারে ডাউনলোড করে নিন এখানে

গ্রামীণ গা ঘষনি

$
0
0

----গ্রামীণ গা ঘষনি---

http://abblog.net/wp-content/uploads/2015/04/IMG_20150401_150306-300x214.jpg 

গ্রাম আমাদের শিকড়। এই শিকড়ে হতে আমরা যারা শহরে এসেছি তারা আজ অনেক দূরে। সবার মাঝে এই প্রবণতা লক্ষ করা যাচ্ছে। একবার কেও শহরে এলে সে আর গ্রাম অভিমুখে  ফিরতে চায় না।
ক্লাস নাইনে না টেনের বাংলা ২য় তে একটা রচনা ছিল – চলো গ্রামে ফিরে যাই। সেই রচনায় গ্রাম গুলির বিভিন্ন দিক তুলে ধরে শহুরে মানুষদের গ্রামে ফিরে যাবার আকুতি ছিল। সেই রচনা কালের পরিক্রমায় আর পড়ানো হয় না।
তা যাউক—আজ সেই গ্রামের মানুষদের ব্যবহার করা এমন একটি জিনিশ নিয়ে আবার আমি হাজির।
গ্রামের মানুষদের জীবনযাত্রা খুব স্বাভাবিক। যদিও শহরায়নের হাওয়া গ্রামেও মানুষদের গায়েও লেগেছে। তাদের জীবনযাত্রায় এসেছে কিছু পরিবর্তন। তবুও কিছু বিষয়ে সেই আদ্যিকালেই  রয়ে গেছে গ্রামের মানুষ।
যেমন—পুকুরে গোসল। গ্রামের কি পুরুষ কি মহিলা কি বৃদ্ধ কি শিশু সকলেই গোসল করে পুকুরে। তবে সব পুকুরে আবার গোসল করা যায়না। এই জন্য গ্রামের সবচেয়ে বড় আর কিলকিলা( ঝকঝকে) পানি আছে সেই পুকুরে  দলবেঁধে গোসল করে সবাই। আবার সেই পুকুরের পানি ভাত রাধার কাজেও ব্যবহার করার চলও আছে কোথাও।
তবে গোসল করার নির্দিষ্ট কিছু টাইম আছে। মহিলাদের দুপুর ১২টার আগেই গোসল সারতে হবে। তা না হলে দুপুর ৪ টার পর। সেই সময় ঐ দিকে কোন পুরুষ ঘেষতে পারবে না। তেমনি দুপুর ১২টার পর মহিলারা ঐদিকে যেতে পারবেনা।
আর  ঘাটের পাশে থাকে--মহিলাদের জন্য চটের ঘের দেওয়া মিনি চেঞ্জরুম। 

আমাদের গাওগ্রামে এই পদ্ধতিতেই গোসল এর চল সেই আদিকাল হতে। তবে ধনিরা নিজেদের বাড়ির সঙ্গে কুড়ি( ছোট পুকুর) খুড়ে তাদের বৌ-বেটিদের গোসল করার ব্যবস্থা করে থাকে।
এই গোসল সারার একটা উপলক্ষ হল শরীরে থাকা ময়লা দূর করা। আর এই জন্য ইউনিলিভারের লাইফবয় সাবান গ্রামের মানুষের নিকট আজও প্রিয়। আর সেই সাবান দিয়ে গা ডলে ময়লা তোলার জন্য ব্যবহার করা হয় তরুই/ঝিঙ্গা এর ছোবড়া/জালিকা।
আর আজ গ্রামের মানুষের ব্যবহার করা ঝিঙ্গা/তরুই এর জালিকা/ছোবড়া নিয়েই আজকের লিখা।
----গা ঘষনি----
>>ঝিঙ্গা/তরুই এর জালিকা/ছোবড়াঃ
এই ছোবড়া/জালিকা অনেকেই নিজেদের শরীর পরিষ্কার করতে ব্যবহার করেন এই (শহরে)আধুনিক জুগেও। যারা করেননি তারা আজি একখানি সংগ্রহ করে বাথরুমে রেখে দিন। আর গোসল এর আগে সাবান মেখে উত্তম রুপে জালিকাটি দিয়ে গা ডলা দিন। বাপ বাপ করে শরীরে থাকা ময়লা পালিয়ে যাবে।


>>তৈরির প্রক্রিয়াঃ
এই বস্তুটি সাধারণত গ্রামের গৃহিণীরাই তৈরি করে থাকেন। এ জন্য তারা নিজন গাছের বড় দেখে তরই/ঝিঙ্গা বাছায় করে তাকে উত্তমরূপে পাকতে দেন। সেটি পেকে তার চামড়া কালো হয়ে গেলে তখন সেটিকে তারা গাছ হতে পাড়েন ।এর পর তারা সেটিকে পানিতে ডুবিয়ে রাখেন এক বেলা( পাট জাগ দেবার মত)। এর পর সেটিকে পানি হতে তুললে তার গায়ে লেগে থাকা চামড়া(আবরন)এবার তুলে ফেলেন। আর ভিতরের জালিকার সঙ্গে থাকা বীজ সংগ্রহ করে শুকিয়ে রেখেদেন পরের বছরের রোপণের জন্য। বীজ ও চামড়া তুলে সুন্দর একটি জালিকা/ছোবড়া গা ঘোষা/ ঘষনি হিসেবে পাওয়া যায়।
>>ব্যবহার বিধিঃ প্রথমদিকে এটি খুব খশখশে থাকে তাই সাবধানে পানিতে ভিজিয়ে ব্যবহার করিতে হয়। আর ব্যবহারের পর তা শুকনা স্থানে রাখুন।
>>কি ভাবে ব্যবহার করিবেনঃ এই জন্য প্রথমে নিজ শরীরে উত্তম রুপে সাবান মাখিয়ে নিন। তারপর জালিকা কে পানিতে ভিজিয়ে  তাতে সাবান মাখিয়ে নিন। এবার হাত দিয়ে শরীরের উপর ঘষতে থাকুন০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০ প্রয়োজন মত।
>>উপকারঃ
এটি প্রাকৃতিক এবং এতে ব্যক্টেরিয়া বা ছত্রাক জমতে পারেনা। যা প্লাস্টিকের ঘষনিতে জন্মাতে পারে। আর প্লাস্টিকের সাইড ইফেক্ট তো আছেই। তাই প্রকৃতিরর এই ঘষনি আজি সংগ্রহ করে ব্যবহার করুন।

প্রলম্বিত প্রলাপ

$
0
0

এই যে পৃথিবী... তার ইতিহাসই পার্থক্যের, বদলের, বিভেদের। স্থান, কাল, পাত্রের হিসাব... পরিবর্তনের।

একান্নবর্তী পরিবার ভাগ হইয়া 'ছোট পরিবার, সুখী পরিবার' হয়। সেই সুখী পরিবারেও অসুখ আসে, আলাদা হইয়া পরে একান্ত অসুখী মানুষ। সমাজ ভাগ হয়, দেশটারে ভাগাভাগি করে রাজনৈতিক দলাদলি, নিজেদের মধ্যে পার্থক্য খুঁইজা বেড়ায় অহর্নিশ। ধর্মের দোহাই দিয়া নিজেদেরকেই আলাদা করে মানুষ, মানুষেরই গায়ে সংখ্যালঘু তকমা চাপায় সংখ্যাগুরু তকমাধারী মানুষেরা! দশজন বাংলাদেশী একত্রে নিজেদের সাথে পার্থক্য খোঁজে দুনিয়ার, আবার তারাই নিজ জেলার মানুষ পাইলে আলাদা হয় বাকি আটজন থেকে।

ছোটবেলার বন্ধু, ইশকুলের সহপাঠী, অন্তরঙ্গ অনুজ, ঘনিষ্ঠ সহচর... সময়ের থাপ্পড়ে কে কোথায় ছিটকায়া পরে... গলাগলির বয়স পার হইলেই পার্থক্যের সমীকরণ তৈরি হয়... তৈরি হয় দলাদলি!

জীবনরে ভাগ করে বয়সের পর্যায়... শৈশব, কৈশোর, যৌবন, তারপর ফুরায়ে যাওয়ার সময়। পার্থক্য পাওয়া যায় সময়েরও... সুসময়ের সাথে দুঃসময়ের। ভালোবাসা বদলায়, ভালোবাসার সমীকরণ বদলায়, ভালোবাসার মানুষও... পুরোনো মানুষের জন্য উথালপাথাল পুরোনো আবেগে ভাগ বসায় নতুন মানুষ... নতুন আবেগ! নতুন মানুষের সাথে পুরোনো মানুষের কুটিল পার্থক্য খোঁজে জটিল মন... মনের মানুষ!

ভাগাভাগি, পার্থক্য, হিসাবের ব্যাকরণে যাপিত জীবন সবার... মানুষ, দেশ, পৃথিবী... সবকিছুই নিজ সমীকরণ মেলানোর নেশায় বুঁদ হইয়া থাকে!

Viewing all 15150 articles
Browse latest View live