Quantcast
Channel: প্রজন্ম ফোরাম
Viewing all articles
Browse latest Browse all 15150

গল্প

$
0
0

মন্ডলবাড়ির ভূত

আল-আমীন আপেল

ভয় পেয়ে ভ্যা ভ্যা করে কাঁদছে রিতা।

''তোকে কত বার বলছি ঐ পথে সাঁঝবেলায় আসতে নেই ! তারপরও তুই ! ''

ভীষণ রেগে গেলেন রিতার মা। বাড়ির ঘর দুটিতে তখন সন্ধ্যাপ্রদীপ জ্বলছে। দোচালা একটা ঘর থেকে দাদি লাঠিতে ভর করে বেরিয়ে
আসলেন।

দাদিকে দেখে আরো জোরে কান্না জুড়ে দিল রিতা। সব কথা শুনে দাদি রিতার মাকে ঘরে পাঠিয়ে দিলেন। রিতা তখনও কাঁদছে। দাদি অনেক বলে কয়ে থামালেন ওকে।

''মা ঐ পথে চলতে নিষেধ করেছেন। আর কখনো ঐ পথে যাবি না। আর তুই তো পথঘাটও তেমন চিনিস না গ্রামের। দুদিন হলো গ্রামে এসেছিস। সেই ছোট্টবেলায় শহরে খালা বাসায় রেখে আসা হয়েছিল তোকে। সেই তুই আজ কলেজে পড়িস।''

''দাদি, এবার থামো তুমি ! আমার বাবা-মা বেঁচে থাকার পরও আমাকে কেন খালা বাসায় রেখে আসা হয়েছিল?
কেন তোমার আদর আমি সব সময় আমি পাই নি? আমার ঐ পথে চলতে নিষেধ কেন? বলো দাদি, বলো। "

আবার কাঁদতে শুরু করলো রিতা। কিন্তু, কান্নাটাকে বশে আনলো দ্রুত।

দাদি নিশ্চুপ। রিতা চেয়ে আছে দাদির মুখের দিকে। কিছুক্ষণ পর মুখ খুললেন দাদি। ''আজ না বুবু , আর একদিন। কথা দিলাম তোকে সব বলব।''

অনেকক্ষণ চুপ মেরে বসে থাকার পর মায়ের ঘরের দিকে গেলো রিতা। বাবা বাড়ি নেই। সেই সকালে ব্যবসার কাজে দুদিনের জন্য শহরে গেছেন। মা একা বসে আছেন। আর হাতে কি যেন একটা ধরে দেখছিলেন। ঠাওর করা কঠিন। ফটোর এ্যালবাম হবে হয়তো। রিতাকে আসতে দেখে মা দ্রুত জিনিসটা লুকিয়ে ফেললেন।

'মা,খুব খিদে লেগেছে, খেতে দাও।''

মা মুচকি হাসির ভান করে আড়ালে চোখ মুছে নিলেন। রিতাকে খাবার দিয়ে বাহিরে গেলেন মা। খাওয়া শেষ করে দাদির ঘরে চলে গেল রিতা।

দাদি খেয়ে নিয়েছেন আগেই। ঘুমিয়ে পড়েছেন
দাদি। ঘুমন্ত মানুষটাকে আর না জাগিয়ে ঘুমানোর জন্য দাদির পাশে শুয়ে পড়ল রিতা।
লাইটের সুইচটা অফ করল।

কিন্তু, ঘুম তো আসে না।

"কি আছে ঐ পথে? এতো দিন বাবা-মা আমাকে শহরের রেখে পড়ালেন কেন? গ্রামেও তো পড়াতে পারতেন ! "
নানা প্রশ্নে অন্ধকারটা যেন আরো গাঢ় হয়ে আসছে। সাত-পাঁচ ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়েছে
রিতা। ঘুম ভাঙল মায়ের মধুর ডাকে।

দাদিটা কেমন জানি ! আযানের সাথে জেগেছে অথচ রিতাকে ডাকে নি। যাই হোক, সকালের নাস্তা সেরে দাদির সাথে গল্প জুড়ে দিল রিতা।

দাদি আজ নিজে থেকেই বলছেন, ''বুবু রে তোর মনে আজ যত প্রশ্ন আছে সব প্রশ্নের উত্তর দিবো।
কুড়ি বছর আগের কথা।
তুই তখন যথেষ্ট ছোট। রিফা নামে একটা বড় আপু ছিলো তোর। মরে গেছে ঐ সেই পথের ধারের মন্ডলবাড়ির ভূতের হাতে। সাঁঝবেলায় বান্ধবির বাড়িতে খুব একটা দরকারে গিয়েছিল। আর ফেরে নি। কোন যুবতি মেয়ে ফেরে না ও বাড়ি থেকে।''

মায়ের হাতের আড়ালে লুকিয়ে ফেলা বস্তুটা যে
ফটোর এ্যালবামেই ছিল তা এখন পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে। আর ঐ ভূতের ভয়টাই তাকে দূরে সরিয়ে রেখেছি এতদিন।

''জানি তুই ভূতের কথাটা বিশ্বাস করছিস না।
এইতো সপ্তাহখানেক আগে পাশের বাড়ির হাফিজের নতুন বউ হাফিজের উপর রাগ করে বাপের বাড়ি যাবার নাম করে সাঁঝবেলায় বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেল আর ফিরে আসে নি।
বাপের বাড়িতে খোঁজ নেয়া হয়েছে। সেখানেও যায়। আত্নীয়স্বজনদের বাড়িতেও নাই। দুই একজন তাকে ঐ পথেই যেতে দেখেছিল।
কিন্তু, ভূতের ভয়ে কেউ আর সাহস করে ঐ
পথে এগিয়ে যায় নি।''

গল্পে গল্পে দুপুর গড়িয়ে আসে। বৈশাখের সূর্যে যেন আগুন আগুন খেলা ! জ্বলছে আকাশ।

স্নান সেরে খেয়ে ঘুমোতে যায় রিতা। ঘুম আসছে না।

পুরো বাড়ি যেন ঘুমিয়ে পড়েছে। মা, দাদি ঘুমাচ্ছেন। রিতা ভাবল এই সুযোগটাকে কাজে লাগাতেই হবে। চুপি চুপি মন্ডলবাড়ির পথে পা বাড়া সে।

সাহসী হলেও একটু ভয় হচ্ছে রিতার। গা ছমছম করছে। ভরদুপুরেও কিছুটা অন্ধকার পথটা। ভয় ভয় করে এসে পড়ল বাড়ির অনেক কাছে।

দাদির বর্ণনা অনুযায়ী রিতা নিশ্চিত এটাই মন্ডলবাড়ি। সেই পুরনো আমলের ভারি টিনের
বেড়ায় ঘেরা চারপাশ। দুই এক জায়গায় টিন খসে গেছে। তার ফঁাক দিয়ে দেখা যাচ্ছে একটা ঘর।

কিন্তু, তাতে দুই একজন মেয়ে মানুষ দেখা যাচ্ছে। তাহলে কি রিফা আপু বেঁচে আছে? আর হাফিজের বউ? চুপ হয়ে অবস্থা বোঝার চেষ্টা করে। হঠাৎ পাশেই কিছু মানুষের কন্ঠ শুনতে পায় সে।

''মুই এ পাপের কাম আর কইবার নেও ! ম্যালা পাপ করচো। গেরামের বহুত জুয়্যান মাইয়ার জীবন নষ্ট করচো, পাচার করচো বিদ্যাশোত।
না ! আর না ! দ্যাশোত রাইন বদলিছে।"

কিছু লোক সায় দিল।

''হ, তোমরা ঠেকে  কইচেন বাহে। মোর বেটিও বড় হইতোছে। এইগলা কতা শোনলে বেটিক কেউ বিয়াও কইরবান নেয়।থাকো তোমরা মুই নাই তোমারগুলার সাথে !

রাগে, ক্ষোভে চোখে জল আসছে রিতার।

দ্রুত বাসায় চলে আসে সে। বাড়ির লোকগুলি এখনও ঘুমে। শুধু কি বাড়ির লোক? পুরো গ্রামের লোকেই তো ঘুমিয়ে আছে। সে জন্যই তো মানুষের বেশভূষায় থাকা অমানুষদের, নারী পাচারকারীদের ভূত বলে জানে।

লেখকঃ 
শিক্ষার্থী, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর।


Viewing all articles
Browse latest Browse all 15150

Trending Articles



<script src="https://jsc.adskeeper.com/r/s/rssing.com.1596347.js" async> </script>