একটি বাল্য রচনা। ডায়েরির পাতা থেকে নেয়া। অথবা অন্য কারো লেখা। ডায়েরিতে লিখে রেখেছিলাম
একদেশে ছিল এক তরমুজ। তার ৫টি ছেলে ও ৩টি মেয়ে ছিল। তা তার মোট ৮টি ছেলে মেয়ে থাকলে কি হবে, তরমুজটি নিজেকে বড় একা মনে করত। আর ভাবত, কেবল ভাবত। এবং ভাবতে গিয়েই সর্বনাশটা করল। তরমুজের কি আর মাথা আছে যে সে ভেবে টেবে কিছু বের করে নিবে। তার আছে কেবল বিচি। ডানদিকে প্রথম ৫টি বিচি হলো তার ছেলে আর বাম দিকের শেষ ৩টি বিচি হলো তার মেয়ে। আর বাকীরা নাতি-পুতি।
একদিন হল কি, ছেলে মেয়ে নাতি পুতি সকলে মিলে বায়না ধরল। বলে কিনা, বাবা ভূত এনে দাও, ভূত খাব! শুনলেতো কথা! এই বুড়ো বয়সে আমি নাকি তাদের জন্য ভূত আনতে যাব। যদিও এমন কোন কঠিন কাজ নয় তারপরও ভূত বলে কথা!!
প্রথমে না না করে ওদের আব্দারকে পাত্তাই দিলাম না। কিন্তু আদরের ছোট মেয়েটি জেদ করে বসে আছে। ভূত ছাড়া আর কিছু সে মুখেই দিবে না। শেষে কি আর করা বলে দাদা ঠাকুরের লাঠি আর বিবাহ বার্ষিকীতে বউয়ের দেয়া বোচকা নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম। হাঁটতে হাঁটতে কত গ্রাম গঞ্জ দেশ পার হলাম কিন্তু সিংঘী মামার দেখা পেলাম না। শেষে কোন এক নাম না জানা দেশের নাম না জানা জংগলে দূর থেকে হালুম হুলুম আওয়াজ শুনে ঢুকে পড়লাম। এবার ধরবই মামাকে। ছেলে মেয়েদের আব্দার বলে কথা। তারা তাদের নানার পিঠে চড়বে আর বাপ হয়ে তাদের সে সাধ মেটাতে পারবোনা এটা সহ্য করার মতো বান্দা আমি নই। তাইতো চলেছি সিংঘী মামাকে ধরতে। সত্যি বলতে মামার পিঠে চড়ার ইচ্ছে আমারও কম না। ছোটবেলা বাবার সাথে মামার পিঠে চড়েছিলাম। কি যে মজা হয়েছিল! বন্ধুরা আমাকে কলার লোভ দেখিয়েছিল, তাদেরও নাকি বাঘের পিঠে চড়তে খুব ইচ্ছে করছে। শুনে কার না রাগ হয়!! আরে বান্দরের গোষ্ঠি আমার বাবার পিঠে তোরা কেন চড়বি! তোদের কি বাপ নেই? তাদের উপর হামলে পড় না!
সে যাক। ওদিকে হল কি, আমাকে রাজদরবারে উপস্থিত হতে বলে রাজা গেল পালিয়ে। সভাসদরা ধরে বসিয়ে দিল রাজার চেয়ারে। তারপর হুজুর হুজুর করে সেলাম দেয়া শুরু করল। সেলাম নিতে নিতে আমি ক্লান্ত হয়ে পড়লেও তাদের উৎসাহে কোন কমতি দেখা গেল না। একসময় ঘুমিয়ে পড়লাম।
ঘুম থেকে উঠেই মনে হল কি যেন একটা গড়বড় হয়েছে। ভাল করে নজর বুলাতেই বুঝলাম ঘটনাটি হয়েছে চেয়ার নিয়ে। সামনের ইলেকশানে না দাঁড়ালেই নয়। চেয়ারটাই হয়তোবা হারিয়ে যাবে। আর তাকে হারালে আমি পাগল হয়ে যাব। একেবারে আমাদের পাড়ার নুরা পাগলার মত। সেও একবার চেয়ার না টেবিল কি একটা হারিয়ে মনের দুঃখে ভাত খেতে বসেছিল। ভাত খেয়ে উঠেই দেখে সে পাগল হয়ে গেছে। তারপর থেকেই সে জনে জনে বলে বেড়াতে লাগল তার পাগল হওয়ার কাহিনী। আমাকেও একবার শুনিয়েছিল। সে নাকি আসলে এক তরমুজ। তার ৫টি ছেলে ও ৩টি মেয়ে। একবার ভূত ধরতে গিয়ে তাকে এক বিরাট সিংঘী খেয়ে ফেলেছিল। তার পর থেকে সে বান্দর হয়ে গাছে ঝুলে আছে আর ২টা কলা দিয়ে বাঘ বাবার পিঠে বন্ধু বান্দরদের চড়তে দেয়।
তারপর একদিন আমিও পাগল হয়ে গেলাম। এবং নুরা পাগলার মতো একই কাহিনী সকলকে শুনাতে লাগলাম। তরমুজ হওয়ার চেয়ে পাগল হওয়াটা অনেক বেশী মজার! নয় কি?