Quantcast
Channel: প্রজন্ম ফোরাম
Viewing all articles
Browse latest Browse all 15150

একজন নারী ভ্যানচালক তিথির গল্প

$
0
0

কথায় আছে, পরিশ্রম সৌভাগ্যের প্রসূতি। আর একটি বিষয় হল, প্রয়োজন কখনো বাঁধা মানেনা। তাই লোকলজ্জা, সমাজের মানুষের মুখ বাঁকানো কথা, পিছুটান কোনো কিছুই দমাতে পারেনি তিথিকে। দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে কিছুই আর করার থাকে না দেয়াল ভাঙা ছাড়া। সেই দেয়াল ভেঙেই সামনের দিকে এগিয়ে চলেছে তিথি। জীবন যুদ্ধের সৈনিক এখন তিথি। জীবিকার জন্য হাতের মুঠোয় শক্ত করে ধরেন ভ্যানের হ্যান্ডেল। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত গ্রামের পিচ ঢালা পথের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত যাতায়াত করেন। মানুষকে গন্তব্যে পৌঁছান। ভ্যানের পেডেলে নারীদের পা না মানালেও তিথির পায়ের নিচে এখন সেই পেডেল শোভা পাচ্ছে। অনেকটা বাধ্য হয়েই অনেক পরিশ্রমের ওই কাজটি শেষ পর্যন্ত পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছে তিথি। ঘরে তার অসুস্থ মা। তিন বেলা ঠিকমতো খাবার খেতে না পারার যন্ত্রণার পাশাপাশি অসুখের ওষুধ, পথ্যি সব কিছু তিথির মাথায় চিন্তা হয়ে সারক্ষণ ঘুরে বেরায়, তাড়া করে তিথিকে। বাবার অনুপস্থিতি মায়ের জন্য আরো বেশি বেদনার কারণ হয়েছে। অসুস্থ হয়ে কিছু দিন আগে তিথির বাবা মারা যায়। মায়ের শরীরের অবস্থা সেই থেকে আরো খারাপের পথে। ঘর থেকে বের হলে মায়ের সেবা করার কোনো মানুষ থাকে না। আর তিথি ভ্যান নিয়ে রাস্তায় না নামলে খাবারের জোগাড় হয় না। বড় ভাইরা বিয়ে করে নিজের সংসার নিয়ে আলাদা। মা বোনকে দেখাশোনা করে না কেউ। অনেকটা বাধ্য হয়ে মাকে বাঁচাতে এবং নিজে বাঁচতে তিথি এখন ভ্যান ড্রাইভার। জীবন যুদ্ধের সংগ্রামী তরুণী তিথি সত্যিই দুর্গম পথের যাত্রী। তিথি প্রতিদিন নন্দীগ্রাম ও নাটোরের সিংড়া উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকার রাস্তায় অটোভ্যান চালায়। প্রতিদিন ২শ’ থেকে ৩শ’ টাকা রোজগার করেন তিথি। রোজগারের একটা বড় অংশ ভ্যানের মালিককে প্রতিদিন পরিশোধ করতে হয়। বাকি টাকায় কোনো রকম চলে তার পরিবার। পারিবারিক অসচ্ছলতায় তিথি লেখাপড়া করতে পারেনি। যার ফলে কোনো অফিস বা প্রতিষ্ঠানে চাকরি করার সুযোগও নেই তার। সব দিক চিন্তা করেই তিথি হাতে তুলে নেয় ভ্যানের স্টাইকার। প্রত্যেক নারীর স্বপ্ন থাকে নিজের একটা সংসার হবে। স্বামী সন্তান নিয়ে সামাজিক ভাবে জীবন যাপন করবে। তিথিরও তেমন স্বপ্ন চোখের চারিদিকে ঘুরপাক খায়। নিভৃত রাতের অন্ধকারে টলটলে চোখে পানি ঝরিয়ে সেও তেমনটাই ভাবে। কিন্তু বাস্তবতা তার সেই স্বপ্নকে আঁধারে ঢেকে দিয়েছে। সকালের সূর্য আকাশে ওঠার আগেই তাকে রাস্তায় নামতে হয় যুদ্ধ করতে। দিন শেষে শরীরের ঘাম মুছতে মুছতে বৃদ্ধ মায়ের ঘরে ফিরে আসেন তিথি। এভাবেই কাটছে তরুণী তিথির দিনকাল। তিথিরও স্বপ্ন আছে সুন্দর একটি সচ্ছল সংসার গড়ার। তবে একটি অটোভ্যানের মালিক না হওয়া পর্যন্ত ওসব নিয়ে ভাবছে না সে। নিজের একটি অটোভ্যান হবে আর বৃদ্ধা মা’র সংসারে অভাবের দিন শেষ হবে সেজন্য দিনের পর দিন পরিশ্রম করে যাচ্ছে তিথি। আজ আমরা কেন এই তিথির মত পরিশ্রমী নই।


Viewing all articles
Browse latest Browse all 15150

Trending Articles



<script src="https://jsc.adskeeper.com/r/s/rssing.com.1596347.js" async> </script>