বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এখন অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি। প্রায় এক কোটির মতো বাংলাদেশী নাগরিক বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থান করছেন। এই প্রবাসীরা কঠোর পরিশ্রম করে বৈদেশিক মুদ্রা পাঠাচ্ছেন। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, বিগত সময়ের তুলনায় চলতি অর্থবছরে প্রবাসীদের অর্থ পাঠানোর পরিমাণ কমে গেছে। চলতি ২০১৬-১৭ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) তারা পাঠিয়েছেন তিন হাজার ২৩২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। বিগত অর্থবছরের একই সময়ে এই আয়ের পরিমাণ ছিল তিন হাজার ৯৩৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। অথচ গত কয়েক বছরে প্রবাসে বাংলাদেশী নাগরিক যাওয়ার পরিমাণ বেড়েছে। এর পরও আয় বাড়েনি। বর্তমানে বাংলাদেশের অর্থনীতি যে ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে আছে, তাতে প্রবাসীদের আয় একটা প্রধান শক্তি হিসেবে কাজ করছে। কিন্তু এখন আন্তর্জাতিক পরিস্থিতিতে একধরনের অস্থিরতা বিরাজ করছে। গভীর উদ্বেগের বিষয় হলো, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে উগ্র জাতীয়তাবাদী শক্তিগুলো সংহত হচ্ছে। এরা অব্যাহতভাবে অভিবাসী বা বিদেশী নাগরিকদের বিরুদ্ধে প্রচারণা চালাচ্ছে এবং তাদের কাজের সুযোগ সীমিত করার দাবি তুলছে। এমনকি তাদের ওপর হামলার ঘটনাও ঘটেছে। একই সাথে, এসব দেশে প্রবাসীদের জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে গেছে। সব মিলিয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছেন প্রবাসীরা। বাংলাদেশের প্রবাসী আয়ের প্রধান খাত হচ্ছে, সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো। কিন্তু জ্বালানি তেলের দাম কমে যাওয়ায় এসব দেশে এখন অর্থনৈতিক স্থবিরতা দেখা যাচ্ছে। মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে যুদ্ধপরিস্থিতি বিরাজ করছে। ফলে সিরিয়া, ইরাক ও লিবিয়ার মতো কয়েকটি দেশে কোনো কাজের সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে না। স্বাভাবিকভাবে এর প্রভাব প্রবাসীদের কর্মসংস্থান ও আয়ের ওপর পড়ছে। প্রবাসী আয় কমে যাওয়ার এ শঙ্কা নিয়ে এখনই বাংলাদেশের নতুন করে ভাবতে হবে। এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের নতুন শ্রমবাজার তৈরি এবং দেশের ভেতরে শ্রমঘন শিল্প স্থাপনের দিকে নজর দিতে হবে। আফ্রিকার দেশগুলোতে কৃষি খাতে বিনিয়োগ ও কৃষিশ্রমিক পাঠানোর দিকে মনোযোগ দেয়া উচিত। আগামী দিনে নির্মাণশ্রমিকের চেয়ে কৃষিশ্রমিকের গুরুত্ব বাড়বে। প্রবাসী আয় বাড়ানোর ক্ষেত্রে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা এখনই গ্রহণ করা দরকার। না হলে হঠাৎ করে বড় ধরনের সঙ্কট সৃষ্টি হতে পারে। তাই বাস্তবতাকে সামনে রেখে দেশের অর্থনীতির চলমান গতিকে আরও গতিশীল করতে এ দিকটিকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া উচিত।
↧