Quantcast
Channel: প্রজন্ম ফোরাম
Viewing all articles
Browse latest Browse all 15150

আদু ভাইঃ পরিচিতি পর্ব (রম্য)

$
0
0

দ্যা গ্রেট আদু ভাই, আমাদের পাড়ার বড় ভাই। পাড়ার বড় ভাই বলেছি বলে আবার ভাববেন না যে তিনি রাস্তার মোড়ের চায়ের দোকানে সারা দিন বসে বসে চা সিগারেট খান আর পাড়ার মধ্যে মস্তানি করে বেড়ান। আদু ভাই মোটেও সেরকম নন, তিনি যথেষ্ট নম্র, ভদ্র, শান্ত, বুদ্ধিমান ছেলে। যদিও কামাল চাচা (আদু ভাইয়ের বাবা) সকালে চালের আড়তে যাবার আগে প্রায়ই তাকে বিভিন্ন পশু-পাখি যেমন গাধা, বলদ, ডিমে তা দেয়া  (উমাইন্না) মুরগি, ফার্মে মুরগি এদের সাথে তুলনা করেন।

আদু ভাইয়ের নাম নিয়ে আপনাদের ভুল ধারনা হতে পারে, আপনারা ভাবতে পারেন তিনি হয়তো প্রতি বছর পরিক্ষা দিচ্ছে আর ফেল করছে, বলে আমরা তাকে খ্যাপানোর জন্য আদু ভাই বলে ডাকি। ব্যাপারটা আসলে তা না, আদু ভাইয়ের নাম নিয়ে লম্বা কাহিনী আছে। আদু ভাইয়ের পুরো নাম আহসানুল ইসলাম দুলাল, কিন্তু তার সার্টিফিকেটে আছে আসানুল ইসলাম দুলাল। স্কুলে নাম রেজিস্ট্রেশনের সময় ভুল করে Ahsanul এর  h  বাদ পরায়  Asanul  হয়ে গেছে। শুধু কি তাই, বেচারার জন্ম তারিখটা পর্যন্ত ভুল করে চলে এসেছে ১২ই মার্চ, তাও আবার তার আসল জন্ম সালের পরের বছর। ১২ই মার্চ আবার তার দাদার মৃত্যুর তারিখ। এসএসসি পরিক্ষার রেজিস্ট্রেশন কার্ড হাতে নিয়ে কামাল চাচা থমথমে গলায় আদু ভাইকে কিছুক্ষন বকাঝকা করলেন। আদু ভাই অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলেন, তিনি ভেবেই পেলেন না এখানে তার দোষটা কোথায়।  ভাবতে লাগলেন এটা কি আসলেই তার নিজের রেজিস্ট্রেশন কার্ড? তিনি কি এই ভুল পরিচয়েই বড় হবেন?

তার প্রয়াত দাদা খুব সখ করে নাতির নাম রেখে গিয়েছিলেন দুলাল, কিন্তু তিনি কি আর জানতেন যে নাতি বড় হয়ে তার দেয়া নাম খুবই অপছন্দ করবে। দুলাল  নামটা আদু ভাই মোটেও পছন্দ করেন না। একমাত্র তার পিতাজী তাকে এই নাম ডাকেন। যখন ডাকেন তখন মুখ কালো করে মাথা নিচু করে তার সামনে গিয়ে দাঁড়ান। পিতাজীকে তিনি কালো ষাঁড়ের মত ভয় পান। ছোট বেলায় এক কোরবানীর ঈদে আদু ভাইয়ের বাবা ইয়া মোটা তাজা এক কালো ষাঁড় কিনে এনে উঠানে বেধে রেখেছিলেন। আদু ভাই যেই না আনন্দে লাফাতে লাফাতে আদর করার জন্য ষাঁড়ের কাছে গেলেন অমনি ষাঁড় গুতা মেরে আদু ভাইয়ে উলটে ফেলে দিল। ভাগ্যিস ষাঁড়টার শিং ছিল বাঁকা। সেই থেকে আদু ভাই কালো ষাঁড় দেখলেই উলটা পথে দৌড় লাগান।   

যাইহোক, আদু ভাইয়ের “আদু” নাম হবার ঘটনা এবার বলি। আগেই বলেছি আদু ভাইয়ের পুরো নাম আহসানুল ইসলাম দুলাল। নাম ভুল হবার পর থেকে আদু ভাই নিজেই কনফিউজ যে তিনি “আসানুল” বলবেন নাকি “আহসানুল” বলবেন। আবার দুলাল নামটাও তিনি পছন্দ করেন না। আমরা তাই তার নামের আদ্য অক্ষর নিয়ে আদু বলে ডাকি, যদিও সেটা আইদু হবার কথা। মাঝের “ই”টা যে কি করে লোপ পেলো সেই তথ্য অবশ্য আমি জানিনা। তবে আদু নামটা তিনি বেশ পছন্দ করেন মনে হচ্ছে। কেউ তার নাম জিজ্ঞেস করলে তিনি গম্ভীর মুখে বলেন, আমি আহসানুল ইসলাম আদু। 

নামের মতই ছাত্রজীবনও আদু ভাইকে নানা যন্ত্রনার মধ্য দিয়ে যেতে হয়ে ছিল।   প্রথম বার এসএসসি পরিক্ষা আগে টেস্ট পরিক্ষায় সাধারণ বিজ্ঞান, হিসাববিজ্ঞান, বাণিজ্যিক ভূগোল, ব্যবসায় পরিচিতি, ইসলাম শিক্ষা এই পাঁচ বিষয়েই ফেল করে বসেন। সবাই গণিত, ইংরেজিতে ফেল করলেও তিনি এই দুই বিষয়ে বেশ ভাল নম্বর পেয়েছিলেন। রেজাল্ট দেখে তার বাবা লাঠি দিয়ে দৌড়ানি না দিয়ে, কান ধরে টান না দিয়ে,  কড়া গলায় ঝাড়িও না দিয়ে চিন্তিত মুখে নিশি বৈদ্যকে ডেকে এনে তাকে নিম পাতার ডাল দিয়ে ঝেড়ে, এক কোপে একটা কলাগাছ কেটে, মাথা ন্যাড়া করে, মন্ত্র পড়ে সোনা-রুপার পানি দিয়ে গোছল করিয়ে, তাবিজ পড়িয়ে কালো সুতা দিয়ে তাবিজ কোমড়ে বেঁধে তার পরে শান্ত হন। নিশি বৈদ্য বলে দিয়েছেন তাকে জাদু-টোনা দিয়ে ক্ষতি করা হচ্ছে যেন পরিক্ষায় সে পাশ না করতে পারে। যতদিন না তার পড়াশুনা পুরোপুরি শেষ হবে ততদিন পর্যন্ত এই তাবিজ তার কোমড়ে বেঁধে রাখতে হবে।

সেবছর পরিক্ষা দিতে না পারলেও পরের বছর সাইকেল চালিয়ে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে বাসা থেকে আড়াই কিলোমিটার দূরে নন্দ স্যারের বাসায় গিয়ে ইসলাম শিক্ষা ব্যতিত বাকি সব বিষয় পড়ে কঠিন প্রস্তুতি নিয়ে এসএসসি পরিক্ষায় বসেন। এর পরে একে একে এইচএসসি, বিবিএ, এমবিএ পরিক্ষা দিয়ে প্রতিবার চিন্তিত মুখে ঘুরতে লাগলেন ফেল করেন কিনা সেই চিন্তায়। কিন্তু তাবিজের জোড়েই হোক কিংবা অন্য কোন কারনেই হোক প্রতিবার ফেল করতে করতে কোন রকমে বেঁচে গিয়ে কি করে যেন টেনেটুনে পাশ করে ফেলেন।

আদু ভাই বছর তিনেক আগে এমবিএ পাশ করে কোমড়ের তাবিজ ছিঁড়ে চুলোর আগুলে পুড়ে এখন ঘরে বসে বিভিন্ন উচ্চ মানের চিন্তা ভাবনা করে সময় পার করছেন। চাকরীর চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলেছেন। তার ধারনা CV-তে তার রেজাল্ট দেখেই নিয়োগ কর্তা CV ছিঁড়ে টুকরো টুকরো করে ময়লার ঝুড়িতে ফেলে দিয়ে, ডেটল সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে, হাত জীবাণু মুক্ত করে নিবেন। মাঝে মাঝে আদু ভাই দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলেন, ইসস কেন যে আগে আগে জন্ম নিলাম। ৫-৬ বছর পরে জন্ম নিলে এখন পরিক্ষা দিলেই নিশ্চিত এ+ পেয়ে যেতাম। 

কামাল চাচা প্রতি সপ্তাহে একবার করে আদু ভাইয়ে নিয়ে বসেন এবং গম্ভীর মুখে বলে, দুলাল তোমার তো পড়াশুনা শেষ। আর কতদিন উমাইন্না মুরগির মতো ঘরে বইসা থাকবা? আড়তে গিয়াও তো ব্যবসাপাতি দেখা শুনা করতে পারো। ব্যবসাতো তোমারই ধরা লাগবো, তাই না? ব্যবসাপাতি ভাল না লাগলে একখান  চাকরী বাকরী কিছু তো করতে পারো। তুমি তো হইছো একটা বলদ। তাও আবার সারাদিন উমাইন্না মুরগির মতো থাকো বইসা। বয়স তো কম হইলো না, বিয়া শাদি তো করা লাগবে, তাই না?  উমাইন্না মুরগির কাছে কেউ মাইয়া বিয়া দেয়? 
আদু ভাই মাথা নাড়ান। মাথা নাড়িয়ে উওর দেন, বাবা মন স্থির করেছি, এইবার কিছু একটা করবো।

হ্যা, আদু ভাই অনেক কিছুই করেন। যার গুরুত্ব কেবল আমরা বুঝি। যদিও তাতে টাকা উপার্জন হয় না, তাই কামাল চাচা সেটাকে কাজ হিসেবেও মূল্যায়ন করেন না। আদু ভাই কি কি করেন তা আজ থাক, আপনাদের আরেকদিন জানাবো।


Viewing all articles
Browse latest Browse all 15150

Trending Articles



<script src="https://jsc.adskeeper.com/r/s/rssing.com.1596347.js" async> </script>