সমুদ্র পাড়ের শহর কক্সবাজারকে ঢেলে সাজানো হচ্ছে, নেওয়া হচ্ছে নানা পরিকল্পনা, বাস্তবায়নও হচ্ছে অনেক কিছু। বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত নিয়ে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এ শহরে প্রযুক্তিগত উন্নয়ন হচ্ছে ক্রমাগত। সম্প্র্রতি তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক কক্সবাজার সফরে যান। সেখানে তিনি লাবণী, কলাতলী ও হিমছড়ি-সংলগ্ন সালসা বিচ পয়েন্টে পৃথক পৃথক তিনটি বিনামূল্যের ওয়াইফাই সেবার উদ্বোধন করেন। দ্রুতগতির এই ইন্টারনেট সুবিধায় সৈকতের তিনটি পয়েন্টে একসঙ্গে সংযুক্ত হতে পারবে তিন হাজার পর্যটক। পর্যায়ক্রমে সমগ্র সৈকতসহ পুরো পর্যটন শহরকে ফ্রি ইন্টারনেটের আওতায় নিয়ে আসা হবে। সৈকতে বসেই পর্যটকেরা ফ্রি ইন্টারনেটের মাধ্যমে কক্সবাজারের পর্যটনকে বিশ্বব্যাপী তুলে ধরতে পারবেন। ইউরোপের কেন্দ্রবিন্দু যেমন সুইজারল্যান্ড, তেমনি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কক্সবাজারকে এশিয়ার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করতে চান। পর্যটনকে ঘিরে নেওয়া প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন হলে এটা বাস্তবে পরিণত হবে। বিশেষ করে কক্সবাজারকে ডিজিটাল সার্ফিং সিটিতে রূপ দেওয়ার কাজ চলছে। এর মাধ্যমে গতিশীল হবে দেশের পর্যটন শিল্প। কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার মাতারবাড়ি দ্বীপে তৈরি হচ্ছে কয়লাভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র। মাতারবাড়িতে করা হচ্ছে আরও একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র। পেকুয়া উপজেলার উজানটিয়া এলাকাতেও নির্মিত হচ্ছে কয়লাভিত্তিক একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র। রামু উপজেলার দক্ষিণ মিঠাছড়ি ইউনিয়নের চেইন্দা এলাকায় নির্মাণ হবে ডিজিটাল সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক (হাইটেক পার্ক)। চলছে সড়ক ও রেলপথের যোগাযোগ বৃদ্ধি ও উন্নয়নের কাজ। ফাইবার অপটিকের মাধ্যমে অত্যাধুনিক ট্রাফিক ব্যবস্থা সংযোজন করার পরিকল্পনা আছে। কক্সবাজার বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক করার কাজ চলছে। অন্যদিকে, এরমধ্যে নির্মিত হয়েছে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম এবং সমুদ্র গবেষণাকেন্দ্র। রামুতে নির্মিত হচ্ছে বিকেএসপির দ্বিতীয় ক্যাম্পাস। একই স্থানে হবে দেশের সবচেয়ে বড় ফুটবল স্টেডিয়াম। আর কক্সবাজারের কলাতলীতে হচ্ছে ভেটেরিনারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আউট রিচ ক্যাম্পাস। সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে চলছে কক্সবাজার থেকে টেকনাফ পর্যন্ত মেরিন ড্রাইভ সড়ক নির্মাণ প্রকল্পের কাজ। এর প্রথম পর্যায়ের কাজ শেষ হয়েছে। শুরু হয়েছে দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ। সড়ক বিভাগ বাস্তবায়ন করছে বেশকিছু সংযোগ সড়কের কাজ। কক্সবাজার সৈকতকে আরও আকর্ষণীয় ও দৃষ্টিনন্দন করতে বালিয়াড়ি আর ঝাউবীথির বুক চিরে নির্মিত হচ্ছে বিশ্বমানের ‘বিচ ওয়াকওয়ে’। দৃষ্টিনন্দন এই বিচ ওয়াকওয়ের দু’পাশে ফুলের টব, কফি শপ, চেঞ্জিং রুম, সাইকেল ক্যান্টিন ও বাথরুমের ব্যবস্থা থাকবে। বিকালবেলার পর্যটকদের জন্য বিনোদনব্যবস্থা গড়ে তোলার পরিকল্পনার আওতায় আনা হচ্ছে এই সড়ক। সড়কের দু’পাশে থাকছে পর্যাপ্ত লাইটিং ও নান্দনিক ল্যান্ডস্কেপিং। পর্যটকদের সুবিধা ও বিনোদনমাত্রা আরও বাড়াতে কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতের লাবণী পয়েন্ট থেকে কলাতলী সৈকত পর্যন্ত নির্মিত হচ্ছে বিকল্প এই বিচ ওয়াকওয়ে। সাগরকূল ঘেঁষে এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে পর্যটকদের বিনোদনমাত্রা আরও অনেক গুণে বাড়বে, বিদেশি পর্যটকরা আরও আকৃষ্ট হবে, সাথে সাথে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা যায়।
↧