Quantcast
Channel: প্রজন্ম ফোরাম
Viewing all articles
Browse latest Browse all 15150

প্রান্তিক কৃষকের আয় বৃদ্ধির নতুন উৎস

$
0
0

ষাটের দশকের সবুজ বিপ্লবে বাংলাদেশের কৃষি রাসায়নিক সার, কীটনাশক, হাইব্রিড বীজ, কলের লাঙ্গল পেলেও হারিয়েছে এ জনপদের আবহমান কাল থেকে ব্যবহৃত আদি কৃষির অনেক উপকরণ। সময়ের সাথে সাথে মাটির উৎপাদনশীলতার জন্য ক্ষতিকারক নানা কৃত্রিম উপকরণের অব্যাহত ব্যবহার কৃষির জন্য এখন ক্রমশঃ গলার কাঁটা হয়ে উঠেছে। ভূমি হতে উৎপাদিত প্রায় সকল ফসলই এখন বিষযুক্ত। রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের ব্যবহারে ভূমি এখন মৃতপ্রায়। সমস্যাটি বিজ্ঞানীদের গোচরীভূত থাকলেও কৃষকরা অনেকটাই উদাসীন। এর দায়ভার আমাদেরই কেননা আমরা সবাই কৃষি ভূমিকে মৃতপ্রায় ভেবে কেবলমাত্র উদ্ভিদ কেন্দ্রিক কৃষি উপকরণ ব্যবহার করি। কিন্তু এখানেই গলদ, একটি উদ্ভিদের আঁধার হচ্ছে ভূমি যার মূখ্য উপাদান জৈব পদার্থ। এই জৈব পদার্থে বসবাসকারী অনুজীব গাছে পুষ্টি উপাদান সরবরাহ করে। কিন্তু বাংলাদেশের বেশিরভাগ স্থানে এখন এই জৈব পদার্থ ১ শতাংশেরও নিচে। এই অশনিসংকেত মোকাবেলা ও পরিস্থিতি উন্নয়নের উদ্যোগ কৃষকদেরই নিতে হবে। তবে এমন ভাবনা ভাবা ও তার জন্য কাজ করা মানুষের সংখ্যা খুবই কম। এমনই একজন মানুষ নীলফামারী জেলার ডোমার উপজেলার রামনিবাস আগরওয়ালা। এ উদ্যোক্তা দীর্ঘ ১৯ বছরের অধিক সময় ধরে জৈবসার উৎপাদন, এর ব্যবহারে কৃষকদের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধি ও সরবরাহ নিয়ে কাজ করছেন। এ উদ্যোক্তাই প্রথম বাংলাদেশে বাণিজ্যিকভাবে জৈবসার উৎপাদনের প্রয়োজনীয়তার কথা চিন্তা করেন এবং দীর্ঘ গবেষণার পরে ২০০০ সালে জৈবসার বাণিজ্যিকভাবে বাজারজাত করার জন্য প্রথম রাষ্ট্রপতির অনুমোদন লাভ করেন। পরবর্তীতে  ২০০৬ সালে সার অধ্যাদেশ পরিবর্তন হলে তিনিই প্রথম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের নিবন্ধনপ্রাপ্ত হয়ে জৈবসার বাজারজাত শুরু করেন। তিনি বিভিন্ন ধরনের জৈব বর্জ্য যেমন - গোবর, কচুরিপানা, খৈল, হাড়চূর্ণ, শিংচূর্ণ, কাষ্টচূর্ণ, হাস-মুরগির বিষ্টা ইত্যাদি বিশেষ ধরনের অনুজীবের ব্যবহার করে পচন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে জৈবসারের উৎপাদন শুরু করেন এবং কেঁচো সারের একটা অংশ তার এই সারে যোগ করেন। তিনি তার মিশ্রণকৃত কেঁচো সারের প্রায় ৫০০ টনের বেশি অংশ সংগ্রহ করেন তারই সৃষ্ট ও প্রশিক্ষিত প্রান্তিক কৃষকদের কাছ থেকে। তিনি নীলফামারীর ৩০০-এর অধিক কৃষক পরিবারকে এ কাজের জন্য উপকরণ, প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ প্রদান করে তাদেরই গৃহস্থালি বর্জ্য ব্যবহার করে কিভাবে উন্নত মানের জৈবসার তৈরি, ব্যবহার ও ব্যবসা করা যায় তা শিখিয়ে মাইল ফলক সৃষ্টি করেছেন। এসব প্রান্তিক কৃষকেরা প্রত্যেকেই এখন কোন বিনিয়োগ ছাড়া গৃহস্থালি বর্জ্য দিয়ে কেঁচো সার তৈরী করে প্রতি মাসে ৩-৪ হাজার টাকা আয় করছেন। তার উৎপাদিত জৈবসার এখন বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিভিন্ন শাখার প্রজনন বীজ উৎপাদন কেন্দ্র্র, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের আইএপিপি, আইএফএমসি প্রকল্প, ব্র্যাক আলু বীজ উৎপাদন কর্মসূচি-বিরল, দিনাজপুর, ফেরদৌস বায়োটেক-ঢাকা, সুপ্রিম সীডসহ রংপুর অঞ্চলের বিভিন্ন উপজেলাগুলোতে সাধারণ কৃষকেরা ব্যবহার করে ভালো ফলাফল পাচ্ছেন। বিবিধ কারণে দেশে বর্তমানে কৃষি জমি হ্রাস পাচ্ছে। অন্যদিকে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ বিনির্মাণে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য ফসলের নিবিড়তা ও বহুবিধকরণ দিনের পর দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। মাটির স্বাস্থ্য রক্ষা ও পরিবেশ ঠিক রেখে সুষম কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধিতে জৈবসার গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে সক্ষম। জৈবসারের এই অবদান অক্ষুণ রাখতে সরকারসহ সকল পক্ষ এর উন্নতিতে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করলেই আগামীতে এটি হয়ে উঠবে দেশের প্রান্তিক কৃষকের আয় বৃদ্ধির নতুন উৎস।


Viewing all articles
Browse latest Browse all 15150

Trending Articles