সেই প্রাচীন যুগ থেকে আজ পর্যন্ত প্রেমের আকুতি, ভালোবাসার যে আবেদন তা একটুও পাল্টায়নি। শুধু সময়ের ব্যবধানে পাল্টে গেছে এর প্রকাশভঙ্গি। ভালোবাসার বোধের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে একাধিক অনুষঙ্গ। মিডিয়ার কল্যাণে আর গ্লো**াইজেশনের ডামাডোলে রোমান্সে বিভিন্ন মাত্রা যুক্ত হয়েছে। তবু ভালোবাসা হার মানতে জানে না বলেই পাল্টে যাওয়া সময়ের নানা অনুষঙ্গের মধ্যদিয়ে ঠিকই খুঁজে নেয় তার পথ। ভালোবাসার উপহার বা কার্ডের মধ্যদিয়ে প্রেমের প্রকৃতি পৌঁছে যায় এক হূদয় থেকে আরেক হূদয়ে। তবে এতো কিছুর ভিড়েও চূড়ান্ত শক্তি কিন্তু ভালোবাসাই। তাই উপহার বা কার্ড ভালোবাসা প্রকাশের প্রতীক হতে পারে। কিন্তু সত্যিকার ভালোবাসার তুলনা শুধু ভালোবাসাই। যে ভালোবাসে আর যাকে ভালোবাসা হয় দু’জনেই ভালোবাসার উপলক্ষ খোঁজে। দুনিয়াজুড়ে ভালোবাসা দিবস সেই উপলক্ষ মাত্র। এ ধরনের পথচলায় প্রতিটি মানুষ ভালোবাসে অন্য অনেক মানুষকে। ভালোবাসে বাবা-মাকে, ভাইবোন, আত্মীয়স্বজন, বন্ধু-বান্ধব, স্ত্রী-ছেলেমেয়েকে। এর মধ্যে অনেক সম্পর্ক হয় ক্ষণস্থায়ী। আবার এমন অনেক সম্পর্ক আছে যা কেবল ভালোবাসাকে পুঁজি করে মনের মাঝে আঁচড় কেটে চলে সারাজীবন। একটা সময় ছিল যখন ভালোবাসা প্রকাশে যেমন অনেক দ্বিধা সঙ্কোচ আর ইতস্ততা ছিল, তেমনি সামাজিকভাবে ব্যাপারটি এড়িয়ে চলাই ছিল স্বাভাবিক। কিন্তু এখন সময় পাল্টেছে। এখন মনের কথা বলতে একরকম ব্যাকুল তরুণ প্রজন্ম। তাই তো এখন ঘটা করেই পালিত হয় ‘ভ্যালেন্টাইনস ডে’ মানে ভালোবাসা দিবস। জগতের সবকিছুকে পেছনে ফেলে মানুষ এখন ভালোবাসার পেছনে ছুটতে প্রস্তুত। সততাই ভালোবাসার সবচেয়ে বড় ব্যারোমিটার। তাই আপনার ভেতরের সৎ মানুষটিকে কখনও ডুবে যেতে দেওয়া চলবে না। স্বপ্ন আঁকড়ে ধরে নয়, তার বাস্তবায়নের লক্ষ্যে বর্তমানকে ভালোবাসতে হবে কল্পনাকে নয়। ভালোবাসায় জয়ী হওয়ার আগে ভালো বন্ধু হতে হবে। কেননা একজন বন্ধুই পারে সত্যিকার ভ্যালেন্টাইন হতে। ভালোবাসার পক্ষভেদ হয় না কিন্তু ভালোবাসার ধরন বদলে যেতে পারে। ছেলেদের ক্ষেত্রে যা ভাবনার বিষয় মেয়েদের ক্ষেত্রে হয়ত তা নয়। এই যুগে এসে ফেসবুক, রং নাম্বার, ক্রস কানেকশন, এসএমএস, ইয়াহু চ্যাটিং কিংবা রাস্তায় হঠাৎ দেখাতেও প্রেমের দোলা ছোঁয়া দেয় যে কারো মনে। তবে সেই দোলায় দুলে ওঠার আগে ভেবে নেওয়া উচিত। ভেবে নেওয়া উচিত অনেক কিছুই। মানুষ মাত্রই ভালোবাসা চায়। চায় ভালোবাসার মাঝে বেঁচে থাকতে। আর তাই নিজে ভালোবাসে অন্যকে বিশেষভাবে স্বামী তার স্ত্রীকে, স্ত্রী তার স্বামীকে। কিন্তু অনেকেরই বিয়ের পাঁচ-দশ বছর পর মনে হয় তারা বুঝি ভুল করেছেন। সবকিছু থেকেও মনে হয় কি যেন নেই। অনেকে নীরবে এ পরিস্থিতি মেনে নেন। আবার অনেকে ভিন্ন পথে চলতে শুরু করেন। প্রতিটি নারী বা পুরুষ চায় আরও বেশি কিছু। রোমান্স, হাসি, আনন্দ আর ভালোবাসা সম্মানে জড়িয়ে রাখুক সারাক্ষণ তা কাছে বা দূরে যেখানেই থাকুক সে। ভালোবাসার জোয়ারে আমরা মনের সব দুঃখ-গ্লানি, কলঙ্ক, পাপ, অভিশাপমুক্ত হবো, স্বার্থপরতা, নীচতা, পাশবিকতা, কুসংস্কার থেকে মুক্ত হয়ে পরস্পরের প্রতি সহানুভূতিশীল হবো, ভালোবাসার মিষ্টি আবেগে জড়িয়ে রাখার চেষ্টা করব সব ধরনের সম্পর্ককে, ভালোবাসার ছোঁয়ায় জীবনের সৌন্দর্যকে আরও উজ্জ্বল, প্রাণবন্ত ও অর্থবহ করে তুলব।
↧