বিয়ের প্রায় আড়াই মাস হতে চলেছে কিন্তু তৃপ্তির সাথে মিউচুয়াল আন্ডারস্ট্যান্ডিংটা এখনো ভালো হচ্ছে না আমার।
এটা কি আমার দোষ? নাকি তৃপ্তির? কমতিটা আসলে কোথায়? - এসব প্রশ্নেরই জবাব খুঁজে বেরাচ্ছি আমি কিছুদিন ধরে। সুখী একটা পরিবার, সুখী একটা পরিবেশের স্বপ্ন আমিও দেখি বাকি সবার মত করে। তৃপ্তিও এর ব্যতিক্রম বলে আমার মনে হয় না। তাহলে?....
তৃপ্তির সাথে বলা যায় হুট করেই বিয়ে করি আমি। করি বললে ভুল হবে, করায় বলাই ভালো। বাবার পছন্দে বিয়ে।
আমাকে ছোট বেলা থেকে বড় করেছেন আমার বাবা। মা মারা গেছেন ছোট বেলাতেই। আমার পছন্দ অপছন্দের সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছেন তিনি জীবনভর। তাই ভেবেছিলাম বাবার পছন্দের গুরুত্ব এবার আমার দেওয়ার সময় এসেছে, আর যদি বাবার পছন্দে বিয়ে না করি তাহলে হয়তো নিকটাত্মীয়দের কথা শুনতে হবে যে ছেলে বড় হয়ে বাইরে পড়াশুনা করে বাবার অবাধ্য হয়ে এসেছে, বেয়াদব হয়েছে, এই ভাবনা থেকেই বাবার বন্ধুর মেয়ে তৃপ্তিকে বিয়ে করা।
আমার বাবা আমার খারাপ চাননি কখনো। আমি আমার মুখ দিয়ে ভুলেও একথা উচ্চারণ করতে পারবো না যে বাবার পছন্দ খারাপ। তৃপ্তি মেয়েটা যেমন ভালো দেখতে, তারচেয়েও ভালো মনের দিক থেকে। এত কেয়ারিং মেয়ে আজকাল পাওয়াই মুশকিল। তাহলে এমন হচ্ছে কেন? তার মানে কমতিটা কি আমারই?
যদি আমারই সমস্যা হয়ে থাকে তাহলে সেটার খুব দ্রুত সমাধান প্রয়োজন। আমি বুঝতে পারি একে অপরকে বুঝতে পারার এই ফারাক ওকে অনেক কষ্ট দেয়। এত ভালো একটা মেয়েকে কষ্ট দেওয়ার তো কোন অধিকার আমার নেই!
কাওকে দুঃখ দিয়ে নাকি নিজে সুখী হওয়া যায় না। আজ থেকে প্রায় আড়াই বছর আগের ঘটনাটাই কি দায়ী? আড়াই বছর আগে যেদিন সুমি পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছিল সমাজের আর ভালোবাসার পরষ্পর বিপরীতমুখী চাপ একসাথে সামলাতে না পেরে।
তৃপ্তি যতই ভালো মেয়ে হোক, যতই কেয়ারিং হোক না কেন, ওর প্রতিটা আচার ব্যাবহার সবই সুমির স্মৃতির নিচে চাপা পড়ে যায়। তৃপ্তির হাতের স্পর্শ কখনোই সুমির হাতের মত শান্তির অনুভূতি দেয় না, তৃপ্তির কপালে চুমু এঁকে দেওয়া ও সুমিকে দেওয়া চুম্বনের কথা মনে করায়।
তৃপ্তি, তুমি অনেক খারাপ। মৃত্যুর পরও শান্তিতে থাকতে দিচ্ছ না আমাকে। অনেক খারাপ তুমি।
- আর এভাবেই আরেকবার নির্লজ্জের মত নিজের সব দোষও তোমার উপর চাপিয়ে দিলাম, যেমন দিয়েছি আগে প্রতিবার; নিশ্চই এবারো বিনা প্রতিবাদে গ্রহণ করবে আমার দেওয়া অপবাদ, তাই না?