বইঃ দ্যা প্রিন্স HQ পিডিএফ
লেখকঃ নিকলই ম্যাকিয়াভেলি
স্ক্যান ও এডিটঃ গোলাম মাওলা
https://www.pdf-archive.com/2017/05/08/the-prince/
https://www.pdf-archive.com/2017/05/08/the-prince/
ম্যাকিয়াভেলি সম্পর্কে প্রথমে পড়েছিলাম ছাত্রজীবনে। যত সম্ভব বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় এ সমাজ বিজ্ঞানের কি জেন এক সংজ্ঞায় তার নাম দিয়ে পড়েছিলাম ম্যাকিয়াভেলি বলেছেন-----
অনেক পরে পড়েছিলাম---- মানুষ জন্মগতভাবেই নাকি শঠ, প্রতারক আর বিশৃঙ্খল – ডাণ্ডা ছাড়া ঠাণ্ডা থাকে না। ইতিহাস নাকি শুধুই বিজয়ীদের সৃষ্টি। ধার্মিকতার চেয়ে ভাণ ধরে থাকা নাকি অধিক গুরুত্বপূর্ণ!
নৈতিকতার সাথে শাসনের কর্তৃত্ব ওতপ্রোতভাবে জড়িত। শাসন তিনিই করবেন যিনি নিজে সৎ। দেশ শাসন করতে গেলে নীতিবান হতে হবে, সৎ হতে হবে। প্রতিশ্রুতি ও বাস্তবায়নের সাথে থাকতে হবে মিল। এটা অত্যন্ত প্রচলিত একটি বিশ্বাস যে, সততা ও নৈতিকতা দিয়েই জনসাধারণের শ্রদ্ধা ও আনুগত্য আদায় করা যায়। ম্যাকিয়াভেলি ঠিক এবিষয়টিতেই সজোরে আঘাত করেছেন তার দ্য প্রিন্স গ্রন্থের মাধ্যমে। নিজ দেশের শাসককে দেশ চালানোর জন্য সাদামাটা কিছু প্রায়োগিক জ্ঞান দেয়াই ছিল দ্য প্রিন্স-এর মূল উদ্দেশ্য, সাহিত্যচর্চা নয়। তার মতে শাসনক্ষমতার বৈধতা কোন নৈতিকতার মাপকাঠিতে আবদ্ধ নয়; কর্তৃত্ব আর ক্ষমতাই এখানে মূল বিষয়। যার ক্ষমতা আছে সে-ই শাসন করবে, নৈতিকতা কাউকে ক্ষমতায় বসায় না। সততা ও নৈতিকতার সম্পূর্ণ বিপরীতমুখে বসে ম্যাকিয়াভেলি বলছেন যে, ক্ষমতা অর্জন আর ক্ষমতা রক্ষা করাই রাজনীতির মূল নীতি। ক্ষমতার উপযুক্ত ব্যবহার দিয়েই জনগণের আনুগত্য অর্জন করতে হয়। রাজনীতি মানেই হলো ক্ষমতা ‘গ্রহণ আর প্রয়োগের’ নীতি। শাসকের প্রতি জনগণের ভালবাসা এবং জনগণের ভয় দুটোই থাকতে হবে। যদি দুটোই না থাকে সেক্ষেত্রে ভয়টি অন্তত থাকতে হবে। দেশের আইনশৃঙ্খলা বলতে বুঝাবে উপযুক্ত সংখ্যক সৈন্য বা আইনপ্রয়োগকারীর উপস্থিতি। নিরঙ্কুশ ক্ষমতা ছাড়া শাসনের অধিকারের কোনই মূল্য নেই ম্যাকিয়াভেলির কাছে।
ম্যাকিয়াভেলিয়ান শাসকের পাঁচটি বৈশিষ্ট্য থাকে:
১) ভয় বা ভালবাসা সৃষ্টিকারী তবে ঘৃণিত হবেন না; ২) জনগণের সমর্থন থাকবে; ৩) ব্যক্তিগত গুণাবলীর প্রকাশ থাকবে; ৪) অস্ত্র অর্থাৎ শক্তির প্রয়োগ থাকবে এবং ৫) বুদ্ধিমত্তা থাকবে।
ব্যক্তিগত গুণের বিষয়ে একটি দামি কথা বলেছেন তিনি: গুণ থাকার চেয়ে গুণের ভাণ করা অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ! বুদ্ধিমত্তারও একটি আলাদা সংজ্ঞা আছে তার কাছে: জনগণের মনে ভয় এবং ভালবাসা জাগানোর মধ্যে উত্তম ভারসাম্য রক্ষা করতে পারাই হলো বুদ্ধিমত্তা।
**লেখক পরিচিতিঃ
বিশ্বখ্যাত দার্শনিক, রাজনীতিবিদ, কূটনীতিক, ইতিহাসবিদ এবং মানবতাবাদী লেখক মেকিয়াভেলির জন্ম ১৪৬৯ খ্রিস্টাব্দের ৩ মে ইতালির ফ্লোরেন্স নগরীতে । পুরো নাম নিকোলো ডি বার্নডো ডে-ই মেকিয়াভেলি । ১৫২৭ খ্রিস্টাব্দের ২১ জুন ৫৮ বছর বয়সে ফ্লোরেন্সেই তাঁর মৃত্যু হয়। তিনি ১৫০২ খ্রিস্টাব্দে মেরিয়েটা কোরসিনকে বিয়ে করেন । মেকিয়াভেলি ব্যাকরণ, অলঙ্কারশাস্ত্র এবং ল্যাটিন ভাষা-সাহিত্য অধ্যয়ন করেন। বলা হয়ে থাকে তিনি গ্রিক ভাষা পড়েননি। যদিও সেসময় ফ্লোরেন্স ছিল ইউরোপের গ্রিক পণ্ডিতদের মিলনকেন্দ্র ।
১৪৯০ খ্রিস্টাব্দে মেডেসি পরিবারকে হটিয়ে ফ্লোরেন্স স্বাধীন হয়েছিল । এই মেডেসি পরিবার প্রায় ষাট বছর ফ্লোরেন্স শাসন করে । মেকিয়াভেলি ফ্লোরেন্সের দ্বিতীয় বিচারকের অধীনে চাকরিতে যোগ দেন। তিনি ফ্লোরেন্সের দাপ্তরিক নথিপত্র পুনর্লিখনের কাজ করেন । অল্পদিনের মধ্যেই তাকে প্রধান শাসকের সচিব নিয়োগ করা হয়। ষোড়শ শতকের প্রথম দশকে দেশের পক্ষে তিনি বহু কূটনৈতিক দায়িত্ব পালন করেন। এর মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ছিল ইতালির রোমে পোপের দায়িত্ব পালন । তিনি দেখেছেন সিজার বর্জিয়া এবং তার পিতা পোপ ষষ্ঠ আলেকজান্ডারের রাজ্য বিস্তার ও প্রশাসনের কঠিন নিষ্ঠুরতা। যারা মধ্য ইতালির অধিকাংশ ভূখণ্ড নিজেদের অধিকারে নিতে সক্ষম হয়েছিলেন। বর্জিয়া রাজ্যবিস্তারে গির্জার ভূমিকার পক্ষে সাফাই গেয়েছেন। দ্বাদশ লুইস এবং সেপনিস ফোর্টের দেয়া মৃত্যুদণ্ড মেকিয়াভেলিকে রাষ্ট্রশাসক সম্বন্ধে বিশেষ করে দ্য প্রিন্স গ্রন্থ রচনায় উদ্বুদ্ধ করে ।
১৫০০ থেকে ১৫০৬ খ্রিস্টাব্দে ফ্লোরেনটাইন সেনা অভিযানে মেকিয়াভেলি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তিনি নিয়োগকৃত সেনাবাহিনীর উপর আস্থা না রেখে দেশের জনগণকে সেনাবাহিনীর সঙ্গে যুক্ত করার ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন । তার বিশ্বাস নিয়োগকৃত সেনাবাহিনী দেশের স্বার্থকে যতটা না গুরুত্ব দেয়, তার চেয়ে বেশি দেয় চাকরিকে । এতে তিনি স্বার্থকতাও অর্জন করেন। তাঁর নেতৃত্বে ১৫০৯ খ্রিস্টাব্দে নাগরিক সেনারা পিসাকে পরাজিত করে । অবশ্য মেকিয়াভেলির এই পদ্ধতি দীর্ঘদিন স্থায়ী হয়নি । ১৫১২ খ্রিস্টাব্দে মেডেসি পোপ দ্বিতীয় জুলিয়াসের সহায়তায় স্প্যানিশ বাহিনী নিয়ে প্রটোতে ফ্লোরেন্টিসের দখলে নেন।
এই অভিজ্ঞতা মেকিয়াভেলিকে দেশের সেনাব্যবস্থা সম্বন্ধে লিখতে সহায়তা করে । এরপর ফ্লোরেনটিয়ান নগররাজ্য ধ্বংস হয়ে যায় । মেডেসি ১৫১২ খ্রিস্টাব্দে মেকিয়াভেলিকে তার পদ থেকে অপসারণ করেন । পরের বছর মেডেসি মেকিয়াভেলির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে তার পরিবারকে ধ্বংসের অভিযোগ আনেন এবং তাকে বন্দি করেন । কারাগারে তার ওপর শারীরিক নির্যাতন চালানো হয় । তিনি তাঁর বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ অস্বীকার করেন এবং তিন সপ্তাহ পর মুক্তি পান । এরপর রাজ্যের সকল কাজ থেকে অব্যহতি নিয়ে মেকিয়াভেলি জ্ঞানচর্চা এবং রাষ্ট্রীয় দর্শন ও রাষ্ট্রপ্ৰশাসন নিয়ে গ্ৰন্থ রচনায় মন দেন। ক্রমে তিনি দার্শনিক চিন্তাবিদ হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেন। রাজ্যশাসনব্যবস্থায় তার বাস্তব অভিজ্ঞতা নিয়ে বহু নাটক রচনা করে ফ্লোরেন্সের বিদ্যোৎসাহী মহলে তিনি স্থায়ী আসন করে নেন। এগুলো ঠিক রাজনৈতিক নাটক না-হলেও রাজনীতিসম্পূক্ত বলে বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করে। তারপরও রাজনীতি বিষয়ক গ্ৰন্থ রচনাই মূখ্য বিষয় হয়ে উঠে ।
১৫২৭ খ্রিস্টাব্দে মেকিয়াভেলির মৃত্যু হলে ফ্লোরেন্সের সান্তাক্রোজে তাকে সমাহিত করা হয়। এবং সেখানে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হয়। মেকিয়াভেলির রাজনৈতিক ইতিহাসভিত্তিক রচনার সংখ্যা এগারোটি । এর মধ্যে দ্য প্ৰিন্স অন্যতম । দ্য প্ৰিন্স প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল মেকিয়াভেলির মৃত্যুর পাঁচ বছর পর ১৫৩২ খ্রিস্টাব্দে ।
১৫৫৯ খ্রিস্টাব্দে মেকিয়াভেলির রচনাসমূহ নিষিদ্ধ গ্ৰন্থতালিকাভুক্ত হয়। এর আশি বছর পর দ্য প্রিন্স এর ইংরেজি অনুবাদ প্রকাশিত হয় ১৬৪০ খ্রিস্টাব্দে । অনুবাদ ও প্রকাশ করেন এডওয়ার্ড ড্যােররেস । এরপর ক্রমে দ্য প্রিন্স বিশ্বময় ছড়িয়ে পড়ে। হতে থাকে অনুবাদের পর অনুবাদ । অনূদিত হয় নানা ভাষায়। হয়ে উঠে রাষ্ট্রবিজ্ঞান চর্চার অন্যতম আকর গ্রন্থ। এই গ্রন্থের ওপর ভিত্তি করে সৃষ্টি হয় নতুন রাজ্যশাসনতন্ত্র, মেকিয়াভেলিবাদ। সৃষ্টি হয়েছে নতুন শব্দ 'মেকিয়াভেলিয়ান' (Machiavellian)। শব্দটির বাংলা অর্থ করা হয়েছে রাজনীতিতে ন্যায় অন্যায় বিচারশূন্য কৌশলী ধূর্ত; ফ্লোরেন্সের রাষ্ট্রনীতিবিদ ম্যাকিয়াভেলির অনুকম্পাকারী। (Samsad English-Bengali Dictionary, 2007 p.653)
আর অক্সফোড এডভান্স ডিকশনারি অর্থ করেছে এভাবে : Machiavellian (adj) using clever plans to achieve what you want, without people realizing what you are doing SYN CUNNING UNSCRUPULOUS. From the name of Niccolo Machiavelli, an Italian
politician (1469-1527), who explained in his book The Prince, that it was often necessary for rulers to use immoral methods in order to achieve power and success. (Seventh Edition 2000 p. 922)
দ্য প্রিন্স থেকে সৃষ্ট মেকিয়াভেলিয়ান শব্দটির এই আভিধানিক অর্থের মধ্যেই এর অন্তর্নিহিত ভাববৈশিষ্ট উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে।
**দ্য প্রিন্স
দ্য প্রিন্স হচ্ছে নিক্কোলো মাকিয়াভেল্লি রচিত ১৫৩২ সালে প্রকাশিত একটি গ্রন্থ। গ্রন্থটি তাঁর সবচেয়ে আলোড়ন সৃষ্টিকারী এবং বহুল পঠিত গ্রন্থ। অনেক সমালোচক মনে করেন গ্রন্থখানি স্বৈরশাসক লোরেঞ্জো ডি মেডিসির নামে উৎসর্গ করার মধ্য দিয়ে তিনি মূলত লোরেঞ্জোর কৃপাদৃষ্টি কামনা করেছিলেন। কিন্তু তিনি কৃপাদৃষ্টি পাননি।
১৫১৩ সালে ম্যাকিয়াভেলি এই বইটি লিখেছিলেন ফ্লোরেন্সের তৎকালিন রাজা পিয়ারো ডি মেডিচির পুত্র প্রিন্স লরেঞ্জোর প্রতি উপদেশমূলক গ্রন্থ হিসেবে। লরেঞ্জো যদিও সেই সময় এই উপদেশ গ্রহন করেন নি; কিন্তু পরবর্তিতে দুনিয়াতে যত স্বৈরশাসক ও ডিকটেটর এসেছেন তারা সকলই দ্য প্রিন্সকে মূল উপজীব্য হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন। একথা সুবিদিত যে, মুসোলিনি 'দ্য প্রিন্স' এর এক সংস্করণে ভূমিকা পর্যন্ত লিখেছিলেন। হিটলার তাঁর শয্যাপাশে সবসময় এক খণ্ড দ্য প্রিন্স রাখতেন বলে শোনা যায়।
***নিকোলো ম্যাকিয়াভেলি’র দ্য প্রিন্স থেকে কিছু উল্লেখযোগ্য উদ্ধৃতি:
শুধুই তুলনা ও বিশ্লেষণের জন্য উদ্ধৃতিগুলো উপস্থাপন করা হলো। এর কিছু কিছু অত্যন্ত আপত্তিজনক এবং লৌমহর্ষক, তবে অধিকাংশ কথাই কিন্তু আমাদের রাজনৈতিক এবং ব্যক্তি জীবনে বিবেচনার দাবী রাখে।
১) আপনার উপস্থিতি সকলেই দেখতে পায়, প্রকৃতপক্ষে আপনি কেমন তা মাত্র কয়েকজনে বুঝে।
২) যদি কাউকে আঘাত করতেই হয়, তা এমন তীব্র করা উচিত যাতে তার প্রতিশোধপরায়নতাকে আর ভয় পেতে না হয়।
৩) বিপদের মুখোমুখী না হয়ে মহৎ কিছুই অর্জিত হয় নি।
৪) *ভালবাসার কারণ না হয়ে ভয়ের কারণ হওয়াই অধিক নিরাপদ কারণ ভালবাসার সাথে দায়বদ্ধতার সম্পর্ক আছে; মানুষের সংকীর্ণতার কারণে তা সুযোগ পেলেই লঙ্ঘিত হতে পারে। কিন্তু আপনাকে ভয় পেলে শাস্তির ভয়ে তারা তা লঙ্ঘন করতে পারে না।
৫) সত্যি কথাটি বললে যে আপনি অপমানিত হবেন না, একথাটি না জানানো পর্যন্ত মানষের তোষামোদ আপনি থামাতে পারবেন না।
৬) সকল পথই বিপদজনক, তাই বিপদকে এড়িয়ে যাওয়া বুদ্ধিমানের কাজ নয়, বিপদকে হিসেব করে সুদৃঢ়ভাবে এগিয়ে যাওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ। ভুল করে উচ্চাকাক্সক্ষা করুন, ভুল করে আলসেমি করবেন না। সাহসী কাজ করার জন্য শক্তি সঞ্চয় করুন, কষ্টভোগ করার জন্য শক্তির দরকার নেই।
৭) মানুষ প্রধানত দু’টি তাড়নায় পরিচালিত হয়: ভালবাসা অথবা ভয়।
৮) মানুষ অভ্যন্তরীণভাবে এতই সহজ এবং তাদের তাৎক্ষণিক চাহিদা দ্বারা এতই নিয়ন্ত্রিত যে, একজন প্রতারকের জন্য ঠকাবার লোকের অভাব হয় না।
৯) সিংহ ফাঁদ থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারে না এবং শেয়াল পারে না নেকড়ে থেকে নিজেকে নিরাপদে রাখতে। তাই আপনাকে শেয়াল হতে হবে যাতে ফাঁদ চিনতে পারেন, আর সিংহ হতে হবে যাতে নেকড়ে তাড়াতে পারেন।
১০) *যেহেতু ভয় আর ভালবাসা একসাথে থাকতে পারে না, আমাদেরকে অবশ্যই যেকোন একটি বেছে নিতে হয়। ভালবাসার পাত্র হওয়ার চেয়ে ভয়ের পাত্র হওয়াই অধিক নিরাপদ।
১১) ফলই উপায়কে বিচার করে।
১২) যে প্রতারণা করতে চায়, সে প্রায়ই এমন কাউকে পাবে যে প্রতারিত হতে চায় ।
১৩) ইচ্ছা যদি বড় হয়, তাহলে প্রতিবন্ধকতা বড় থাকতে পারে না।
১৪) *মানুষকে হয় আদর করা উচিত, নয়তো পিষে মারা উচিত। ছোটখাটো আঘাত করতে পরিশোধ নেবার সুযোগ নেবে, কিন্তু যদি তাকে সম্পূর্ণ অচল করে দেন তাহলে তাদের আর কিছুই করার থাকে না।
১৫) মানুষ সাধারণত ছুঁয়ে নয় দেখেই বিচার করতে চায়। এর কারণ হলো, সকলেই দেখতে পারে, কিন্তু খুব কম লোকই স্পর্শ করে অনুভব করতে পারে।
১৬) এটা মনে রাখতে হবে যে, একটি নতুন পদ্ধতি পরিকল্পনা করার মতো কঠিন কিছুই হতে পারে না; একটি নতুন পদ্ধতি সবচেয়ে বেশি সন্দেহজনক এবং একটি নতুন পদ্ধতিকে পরিচালনা দেবার চেয়েও কঠিন কিছু হতে পারে না। এর কারণ হলো, একজন অগ্রগামী উদ্যোক্তাকে রক্ষণশীলদের বৈরিতার মুখে পড়তে হয় যারা পুরাতন পদ্ধতির সুবিধাভোগী। নতুন পদ্ধতির সুবিধা প্রত্যাশী বা সমর্থনকারীর সম্ভাবনা বিরল।
১৭) ধারাবাহিকভাবে সফলতা পেতে চাইলে সময়ের সাথে আচরণ পরিবর্তন করতে হবে।
১৮) মানুষ কীভাবে জীবনধারণ করে আর কীভাবে করা উচিত – তাতে এতই ব্যবধান যে, কেউ যদি কী হচ্ছে সেটা নিয়ে অনুসন্ধান না করে, কী হওয়া উচিত সেটা নিয়ে অনুসন্ধান করে, তাহলে তার এই শিক্ষা তাকে রক্ষা না করে তাকে ধ্বংস করে।
১৯) যেমন খুশি তেমনই সাজো।
২০) *ধার্মিকতা দেখানোর চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আর কিছুই নেই।
২১) ইতিহাস লেখা হয় বিজয়ীদের দ্বারা।
২২) বুদ্ধিমানদের উচিত মহান ব্যক্তিদের পথ অনুসরণ করা এবং তাদেরকে অনুসরণ যারা উৎকর্ষ অর্জন করেছেন। এতে তাদের মহত্বটুকু না পেলেও কোনভাবে তার কিছু অংশ পাওয়া যায়।
২৩) ভালবাসা এবং ভয় দুটিই পাওয়া উত্তম। তবে দুটিই একসাথে না পেলে মানুষের ভয় পাওয়াটাই অধিকতর ভাল।
২৪) *একজন শাসকের বুদ্ধির পরিমাপ করার প্রথম পদ্ধতিটি হলো: তাঁর চারপাশের লোকগুলোর দিকে দৃষ্টি দেওয়া।
২৫) প্রয়োজনের তাগিদ না পেলে মানুষ ভাল কাজ করে না। সুযোগ পেলে তারা যা খুশি তা-ই করে, তাতে বিশৃঙ্খলা আর বিভ্রান্তি নিয়ে আসে।
২৬) যুদ্ধ, এর আকার আর উপাদান ছাড়া একজন রাষ্ট্রনায়কের আর কোন বস্তু বা চিন্তা থাকা উচিত নয়। একজন শাসকের জন্য এটিই উপযুক্ত শিল্পকলা।
২৭) *যুদ্ধ এড়ানোর কোন সুযোগ নেই। তবে স্থগিত করা যায় এবং এর সুবিধা পাবে আপনার শত্রু। ২৮) প্রত্যেকেই ‘কী হওয়া উচিত’ বুঝার জন্য ‘কী হয়েছে’ নিয়ে অনুসন্ধান করা উচিত। পৃথিবীর সকল যুগে সংঘটিত বিষয়ের প্রাচীন নিদর্শন রয়েছে।
২৯) মানুষ সম্পর্কে সাধারণভাবে এটা বলা যায়: তারা অকৃতজ্ঞ, অবাধ্য, অসৎ এবং শঠ; বিপদে আতঙ্কিত এবং লাভের প্রত্যাশী। প্রেমের বাধ্যকতা এই ঘৃণ্য প্রাণীরা সুযোগ পেলেই ভেঙ্গে ফেলে, কিন্তু শাস্তির ভয় তাদেরকে শৃঙ্খলায় বেধে রাখে।