৩ জনে কক্সবাজার ২ দিন থেকে ৩১০০ টাকায় ঘুরে এলাম। ২দিনের ভ্রমণ অভিজ্ঞতা এবং কিভাবে টাকা সেভ করে ঘুরে আসবেন তার একটা ছোট গাইড
দিন ১:
যাত্রা শুরু হয় ৩০ তারিখ রাতে, বাসের মাধ্যমে। আপনারা চাইলে ট্রেনে যেতে পারেন তাতে খরচ আরও কিছু কমবে।
আমরা পৌঁছালাম সকাল ১১টার দিকে।
কক্সবাজারের সবচেয়ে খারাপ জিনিস রিক্সাওয়ালা/অটোওয়ালা টাইপ লোকজন। বাস থেকে নামতে পারি নাই, সাথে সাথে আমাদের ব্যাগ নিয়ে হুড়াহুড়ি। রিক্সাওয়ালা/অটোওয়ালা সবাই ব্যাগ নিয়ে প্রায় টানাটানি শুরু করে দিয়েছে নামার সাথে সাথেই। আমরা যতই বলি আমরা আমাদের মত থাকতে চাই, সাথে ২/৩ জন ঘুরাঘুরি করছে আমাদের হোটেলে নেওয়ার জন্য। বিরক্ত হয়ে বলেছিলাম আমরা হোটেলে উঠব না, বিচেই থাকব, এতেও কাজ না হওয়ায় রায়হান বিশাল ঝাড়ি দিল যে আমরা থাকি কিংবা না থাকি এইটা আমাদের ব্যাপার, তাদের এতে মাথা ঘামানোর এত কি আছে? বহু কষ্টে এদের পিছু ছাড়ানো গেল।
কয়েকজন ঘুরে একজন রিক্সাওয়ালা পাওয়া গেল যে শুধু ঘুরাবে বলে রাজি (হোটেলে ওঠার কোন পেড়া দিবে না)। তো এই মামাকে নিয়ে "Operating Hotel Search" শুরু হল। প্ল্যান ছিল অফ সিজনে ডাবল বেড ৪০০ টাকার মধ্যে ম্যানেজ করা। প্রায় ১৫-২০টা হোটেল দেখার পর Saintmartin Resort ৬০০ টাকায় রাজি হল। কারণ যেখানে থাকব দামদর কেন করব না?
ব্যাগ আনপ্যাক করে ফ্রেশ হয়ে একটু ঘুমিয়ে দুপুরে রওনা হলাম খাওয়ার জন্য। প্রথমে ওল্ড ঝাউবনে গেলেও বন্ধ থাকায় পাশের খুপড়ি টাইপ একটা খাওয়ার দোকানে তিনজনে মাত্র ১৫০টাকায় পেটপুরে খাওয়া সেরে নিলাম।
কক্সবাজার এসে মানুষ শুধু বিচেই কাটিয়ে দেয় আমরা প্ল্যান করলাম একটু আশপাশের জিনিসগুলো দেখে আসি। তো একটা অটোভাড়া করে আমরা বেরিয়ে পড়লাম রামু বৌদ্ধ মন্দির দেখার জন্য (যেখানে হামলা হয়েছিল।) অটোওয়ালা আরেক কাঠি সরেশ। আমাদেরকে না বলেই নিয়ে এল রামু মন্দিরের একটু পাশেই ১৩০ ফুট বৌদ্ধ মূর্তির এখানে। তবে আশার পর ছেলেটাকে ধন্যবাদ দিতেই ইচ্ছা হচ্ছিল। চমৎকার বিশাল দেখার মত এক মূর্তি। পিতলে (মনেহয়!) বিকালের রোদে চমৎকার দেখাচ্ছিল বিরাট এই ভাস্কর্য।
এরপর এলাম রামু মন্দিরে। মূর্তিগুলো সম্পর্কে জানলাম এবং ওখানে নতুন করে সবকিছু আবার হচ্ছে জেনে ভাল লাগল। দুই তলায় এখানেও কিছু সুন্দর মূর্তির দেখা পাওয়া গেল। এরপর আবার অটোতো উঠে কক্সবাজার আসলাম। অটো ভাড়া নিয়েছিল ৫০০ টাকা।
ওখান থেকে আবার হোটেলে এসে ১ঘন্টা মত ঘুমিয়ে নিয়ে বিকাল ৪:৩০টার দিকে আবার শহরটা ঘুরে দেখার জন্য বের হলাম। বলা বাহুল্য যে অটোই ঠিক করেন না কেন দাম সবসময় হাফ (কিংবা তারও কম বলবেন) ৫ মিনিটের দূরত্বে কারও কারও কাছ থেকে ৭০ টাকা আদায় করতেও দেখলাম
কক্সবাজার বিচ দেখে তেমন কোন ফিলিংস হয় নাই। এভারেজ টাইপ। পানির রং প্রায় ধূসর-কালো। বিচের মধ্যে কিছুক্ষণ আঁকিবুকি করে কিছু সেলফি তুলে বন্ধুরা পাশের বার্মিজ মার্কেটে চলে গেল কেনাকাটা করতে (বার্মিজ জিনিস আমার কাছে খুবই সস্তা ধরণের মনে হয় তাই এ বিষয়ে আমার আগ্রহ শূণ্যের কাছাকাছি)। এরপর বাকি সময়টা বিচের চেয়ারে বসে সমুদ্র দেখতে দেখতে কাটিয়ে দিলাম। বাতাসটা বেশ ভাল। মন ভাল করার মত ভাল।
সন্ধ্যায় এবার গেলাম লাইভ ফিশ ফ্রাই এর দিকে। এখানেও আগের মতই, সেরকম দামদর করতে হবে। নাহলে গলাকাটা দাম রেখে দিবে। একটা রূপচাঁদা চায় ২৪০ আমরা নিয়েছিলাম মনে হয় (+-)১২০ দিয়ে। আমরা মোট ৫টা মাছ নিয়েছিলাম, রূপচাঁদা, স্যামন, অক্টোপাস, স্কুইড এবং লবস্টার। সব মিলিয়ে ৫০০ নিয়েছিল।
এরপর রাতের জন্য কিছু খাবার হোটেলে নিয়ে এসে ১১:৩০ টার দিকে অল্প একটু ঘুমিয়ে নিই।
______________
দ্বিতীয় দিন:
এদিন ৯:৩০টায় উঠে সব গোছগাছ করে হোটেল চেক আউট করি এবং টেকনাফের জন্য বাসে রওনা দিই। গ্রুপ থেকে টেকনাফ বিচ সম্পর্কে জানতে পারি এবং আগ্রহী হই এটার সম্পর্কে! সো থ্যাংকস TOB!
কক্সবাজার থেকে অটোতে বাস স্ট্যান্ডে আসি এবং ভাড়া নেয় ৪০টাকা। টেকনাফ কক্সবাজার থেকে ভালই দূর। ১০:৩০ টায় ছাড়া বাস টেকনাফ শহর এসে পৌছায় ১টার দিকে। এখান থেকে আবার অটোতে টেকনাফ বিচ যেতে সময় লাগে আরও ৪৫ মিনিট মত।
তবে জার্নিটা আসলেও worth it. টেকনাফ বিচ আসলেও অনেক সুন্দর। ছিমছাম আসল বিচ যেটাকে এখনও কক্সবাজারের মত কৃত্তিম করে ফেলা হয় নি। আমরা তিনজন বিচে নেমে পড়ি এবং জীবনের সেরা কিছু ঘণ্টা এখানে কাটাই। পানির মধ্যে দাপাদাপি করতে করতে প্রায় দেড় দুই ঘন্টা সময় চলে যায়। এরপর পাশের এক কলের নিচে বসে মাথা/হাতপা ধুয়ে বালি ঝেড়ে ফেলি। তারপর টেকনাফ বাজারে এসে আবার এক রাস্তার হোটেলে তিনজনে ১৭০টাকায় পেটপুরে খাওয়া দাওয়া সেরে নিই এবং কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পরি।
কক্সবাজার এসে আবার বিচে কিছুক্ষণ এবং বার্মিজ মার্কেটে কিছুক্ষণ থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়ি।
_____
পুরো ট্যুরে বাসভাড়া সহ ৩জনের খরচ হয়েছে ৯৩০০ (এক একজনের ৩১০০ টাকা)
তবে ইচ্ছা করলে আরো কমানো যেত যদি
১) ৩ জনের জায়গায় ৪ জন যাওয়া হয়।
২) বাসের বদলে ট্রেনে যাওয়া হয়
৩) শুধু কক্সবাজারে থাকা হয় (মন্দিরগুলো না দেখা হয়)
৪) কাছাকাছি দূরত্বগুলো হেঁটে যাওয়া হয়।
তবে কক্সবাজার মোটামুটি হলেও বন্ধুদের সাথে যে এক্সপেরিয়েন্স - সেটা ছিল শতভাগ খাঁটি এবং অসাধারণ
কিভাবে যাবেন?
# বাসে গেলে ঢাকার সায়েদাবাদ থেকে বাসে ওঠা ভাল। এতে ঢাকার ইন্টার্নাল জ্যামটা পরিহার করা যাবে। আমরা ভুলে গাবতলি থেকে উঠেছিলাম।
# কক্সবাজার যাওয়ার পর অটো তে সব জায়গায় যেতে পারবেন। অবশ্যই দামদর করে উঠবেন।
# কক্সবাজার থেকে টেকনাফ রাস্তায় বিজিবি প্রশ্ন করতে পারে। তাই মানিব্যাগে সবসময় আইডিকার্ড এবং National ID টা রাখা ভাল।