Quantcast
Channel: প্রজন্ম ফোরাম
Viewing all articles
Browse latest Browse all 15150

লীলাবতী

$
0
0


"কাউকে ঘৃণা করে কারও কখনই ফাসি হয়নি।কিন্তু কাউকে ভালোবেসে কিন্তু হয়েছে।" কিছু বুঝলা?
-এমন গা জ্বলা কথা আপনার ছাড়া আর কারও হতে পারে না।
-আরে না না,আমার না।এই কথাটা হুমায়ুন আহমেদ বলেছেন।আমি গুছিয়ে বলতে পারিনি।উনি বেশ সুন্দর করে বলেছিলেন।
- আপনি একটা যাতা,আপনার হুমায়ুন আহমেদ ও একটা যা তা। angry
- আরে আরে।রাগ করলা নাকি? তবে রাগলে তোমাকে সুন্দরই লাগে।

মেয়েদের সুন্দর বললেই তারা কুপোকাত হয়।জহির এটা ভালোই জানে।তবে সে কিন্তু একচুল মিথ্যা বলেনি।তার সামনে বসা মেয়েটা আসলই রূপবতী।
লীলা।নামটা কেমন জানি হিন্দু হিন্দু লাগে জহিরের।কিন্তু মেয়েটা সুন্দর।বেশ সুন্দর। চোখ দুটা টানাটানা না।কেমন জানি।এমন চোখ জহির কখনই দেখেনি।গভীর জলের মত চোখ।মনে হয় ঢুবে যাবো যাবো।কোকড়ানো চুল।ভ্রুটা অন্যরকম সুন্দর।ঠোট টা সামান্য মোটা,কিন্তু গোলাপী।জহিরের মাঝে মাঝে ওই ঠোটে চুমু খাওয়ার সাধ জাগে।কিন্তু সে নিজেকে সামলায়।বিসিএস পরীক্ষা দিচ্ছে সে।ভাইবাতে টিকলেই সে ক্যাডার।আপাতত নন ক্যাডার হয়ে আছে।তার রেজাল্ট বেশ ভালো।
লীলা তার ছাত্রী।টিউশনি করাত আগে।তখন পরিচয়।যেদিন প্রথম পড়াতে আসে,সেদিন বেশ ঝড় ছিলো।পরিবেশটা ছিলো খুব সুন্দর।এমন পরিবেশে একটা রূপবতী কিশোরী লজ্জা লজ্জা মুখে সামনে বসে আছে,এ কথা ভাবতেই জহিরের কেমন জানি শিহরণ হয়।

- শুনুন,ফালতু কথা বলবেন না।রাগলে কাউকে সুন্দর লাগে? মিথ্যেবাদী কোথাকার।
-কাউকে লাগে না।রাগলে আমাকে লাগে জানোয়ার।কালো মানুষ আরো কালো লাগে।কিন্তু তোমাকে কেন জানি সুন্দর লাগে।আচ্ছা,তোমার রূপের রহস্য কি?
জহির লক্ষ্য করলো লীলা মাথা নিচু করে আছে।লজ্জায়।সে বড় ফর্সা না,বিলেতি মেয়েদের মত।শ্যামা।উজ্জল।তার গায়ের রং টা কাচা হলুদের মত।মেয়েটা আশ্চর্য রকমের সুন্দর।
লীলা অসস্থিতে পড়লো।লোকটা তাকে ভালেবাসে।সে জানে।জেনে শুনে ও সে অভিনয় করে। সে জানে সে ভালে অভিনেতা।ধরা পড়বে না।এতদিনের অভিয়নে কখনই পড়েনি।কিন্তু আজ কেন জানি তার অসস্থি লাগছে।খুব খুব।


২.
জহির আজ তার মনের কথা বলবেই।সে ছেলে হিসেবে ভালো।পড়াশুনা,চরিত্র সব দিকেই।নামাজ পড়ে ৫ ওয়াক্ত।মেয়েদের প্রতি তার কখনই কোন আসক্তি ছিলে না।কিন্তু এই মেয়েটা সে মন থেকে সরাতে পারছে না।মেয়েটা সামনে থাকলেই সে অন্যরকম দূর্বলতা অনুভব করে।মেয়েটা সব কথায় সে হার মানে।মেয়েটা কি তার এ দূর্বলতা বোঝে।বোঝে।কারণ, হুমায়ুন আহমেদ বলেছেন,
" মেয়েদের তৃতীয় নয়ন বলে কিছু আছে।যা দ্বারা সে বুঝে ছেলেরা কেমন দৃস্টিতে তাকে দেখছে।"
কি বলবে বুঝছে না।পড়ারা কথা জিজ্ঞেসা করা যাক।তাই ভালো।জহির বললো-
-পড়াশুনা হয়? তুমি যা ফাকিবাজ মেয়ে!
-আআপনি আমাকে ফাকিবাজ বললেন?
- আরে আরে,রাগলে না কি?মজা করলাম।সরি।এক্সটেমলি সরি।
-হুম।
- আমি বলছিলাম.....
- আমার লেট হচ্ছে।আসি।

কোন কথার সুযোগ না দিয়ে লীলা কফি হাউজ থেকে বের হয়ে আসে।লোকটা কে তার পছন্দ না।কেমন গাইয়া গাইয়া।আর তাছাড়া,লোকটা কি বলবে সে জানে।বলবে,"লীলা তোমাকে ভালেবাসি।বিয়ে করতে চাই"।
ঢং।।

৩.আজকের দিন টা জহিরের জন্য বেশ ভালো একটা দিন।বিসিএস এর রেজাল্ট দিয়েছে।সে টিকে গেছে।পুলিশ ভেরিফিকেশন হলেই তার চাকরি।আজ সে শান্তির নিশ্বাস ফেলতে পারবে।সে লীলকে কথা দিয়েছে।বিসিএস পাস করেই সে আসবে তার বাসায় তার আগে না।তাই দীর্ঘদিন কোন খোজ নেই লীলার।আজ সে যাবে।উফ্।কত্তকাজ।লীলার পছন্দের ফুল কিনতে হবে।পড়ানোর কালে সে হলুদ গোলাপ চেয়েছিলো।দেওয়া হয়নি।আজ সে নিয়ে যাবে।অবশ্যই নিয়ে যাবে।

টক টক।বাসার দরজায় নক হচ্ছে।মিসেস মাহমুদ বিরক্ত।ভর দুপুরে কে আসলে আবার।ছোট মেয়ে নীলাকে বললেন-
" যা,দেখ তো কে আসলো অসময়ে?"
নীলা টিভি দেখছিলো।বিরক্তি নিয়ে সে উঠে গেলো।দরজা খুলেই দেখে জহিরকে।তার বিরক্তি আরও বাড়লো।লীলার চেয়েও ১০ গুন বেশি অপছন্দ করে সে এই লোকটাকে।কারণ,এই লোকটা তাকে পড়া না পাড়ায় মেরেছিলো।উফ্।কি যে লেগেছিলো।নীলা বললো,আসুন।
জহিরের মন ভালো ছিলো।সে নীলাকে বললো-
- কি খবর?(ছোট শালী,অবশ্য মনে মনে বলেছিলো)
হাই তুলতে তুলতে নীলা বললো- ভালো।নীলা হাই তোলা মানে সে বিরক্ত।জহির এর এখন এসব বোঝার সময় নেই।সে ঘরে ঢুকেই লীলাকে খুজতে লাগলো।
নীলা বললো-
- আপু বাসায় নেই।কলেজ গেছে।আসুক।বসেন আপনি।আমি মা কে ঢাকি।
ছিমছাম বসার ঘর।জহির আগেও বহুবার এসেছে।সে বসে আছে।বসার ঘরে লীলার পরিবারের একটা ছবি আছে।আগের,তবে লীলাকে বেশ সুন্দরই লাগছে।গোলাপী ফ্রক পড়ে,চুল ছাড়া।হাসছে।প্রণবন্ত হাসি।ভালো লাগে।
- কি ব্যাপার জহির? অনেকদিন পর,কি মনে করে?
- আন্টি,বিসিএস এর রেজাল্ট দিয়েছে।আমি টিকেছি।দোয়া করবেন।
- আলহামদুলিল্লাহ্‌। বসো বসো।মিস্টি খাও।তোমাকেও একটা সুখবর দেই।
- সুখবর? কিসের?
- আগে মিস্টি মুখ করো।এত ভালো রেজাল্ট করলে।এই নীলা,যা তোর স্যারের জন্য মিস্টি নিয়ে আয় তো।

মিস্টি এসেছে।লাড্ডু।লীলার খুব পছন্দ।জহির খুব আনন্দ নিয়ে খাচ্ছে।
- তা আন্টি,এখন সুখবর টা দিন।
- সুখবর হলো লীলার বিয়ে ঠিক হলো কালকে।ছেলে ভালো।ডাক্তার।তুমি ত জানই, আমার শখ ছিলো ডাক্তার ছেলের সাথে মেয়ের বিয়ে দিবো।অবস্থা ভালো।তারাও লীলাকে পছন্দ করেছে।ঈদের পরই বিয়ে।

জহিরের মনে হলো সে মিস্টি না বিষ খাচ্ছে।গলায় আটকে আছে।বুকে প্রচন্ড যন্ত্রনা দিচ্ছে।জহির বললো-
- পানি খাবো।
- নীলা,যা পানি নিয়ে আয় ত।


হলুদ গোলাপগুলি কালো হয়ে যাচ্ছে।সব কিছু নোংরা লাগছে জহিরের।আজ তার খুব আনন্দের দিন।তার লীলা সুখি হচ্ছে।


Viewing all articles
Browse latest Browse all 15150

Trending Articles



<script src="https://jsc.adskeeper.com/r/s/rssing.com.1596347.js" async> </script>