হযরত সালমান ফরসী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত রাসূল পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ ফরমান, রামাদ্বানুল মোবারকের প্রথম দশ দিন রহমতের, মধ্যের দশ দিন মাগফেরাতের এবং শেষ দশ দিন জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাওয়ার মাস। আর যে ব্যক্তি তার অধীনস্থ কর্মচারীর উপর রামাদ্বান মাসে কাজ-কর্ম সহজ বা হ্রাস করে দেবে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দেবেন এবং জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেবেন। (বায়হাকী)
দুনিয়ার নিয়মেই অনেক মানুষ আমাদের অধীনে কাজ-র্কম করে থাকে। রামাদ্বানুল মোবারকে তাদের সাথে সহনশীল আচরণ করতে হবে। রোযার কারণে তাদের উপর অতিরিক্ত কাজের চাপ থেকে বিরত থাকতে হবে। কাজের কারণে যেন কোন কর্মচারী তাদের নামায রোযায় কোন প্রকার সমস্যার সৃষ্টি না হয় সে দিকে আমাদের সুদৃষ্টি রাখেতে হবে। অধীনস্থদের খাবারের ব্যাপারেও সজাগ থাকতে হবে। সাধ্যমত উত্তম খাবারের ব্যবস্থা করতে হবে।
এ মাসের এত বেশী বরকতময় যে, এ মাসে নফল এবাদত করলে অন্য মাসের ফরয এবাদতের সমান এবং এ মাসে একটি ফরয আদায় করলে অন্য মাসের সত্তরটি ফরয আদায়ের সামান সওয়াব প্রদান করা হয়। এ মাস ধৈর্য্যের মাস, সহনশীলতার মাস এবং জীবিকা বৃদ্ধির মাস। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ ফরমান, যে ব্যক্তি এ মাসে নফল এবাদত করবে সে যেন অন্য মাসে ফরয এবাদত করল আর যে ব্যক্তি এ মাসে একটি ফরয আদায় করবে সে যেন অন্য মাসে ৭০টি ফরয আদায় করল। এ মাস ধৈর্য্যের মাস। আর ধৈর্য্যরে পরিণাম হল জান্নাত। আর সহনশীলতার মাস এবং এ মাসের মধ্যে মুমিনের জীবিকা বৃদ্ধি করা হয়। (বায়হাকী) ইমাম ইব্রাহীম নাখঈ (রহ.) বলেন- এ মাসের একদিনের রোযা হাজার দিনের রোযার চেয়ে উত্তম, এ মাসের এক তাসবীহ হাজার তাসবীহের চেয়ে উত্তম এবং এ মাসের এক রাকাত নামায হাজার রাকাত নামযের থেকে উত্তম।
গাউছে পাক আব্দুল কাদির জিলানী (রহ.) গুনিয়াতুত্তালেবীন কিতাবে উল্লেখ করেন, রাসূল পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেন রমযানের প্রথম রাত যখন আসে আল্লাহ তায়ালা স্বীয় সৃষ্টির প্রতি দৃষ্টিপাত করেন আর যখন কোন বান্দার প্রতি আল্লাহ রহমতের নজর করেন তবে তাকে কোন আযাব দেননা। আল্লাহর নির্দেশে সহ¯্র ব্যক্তি দোযখ থেকে মুক্তি লাভ করে।
গাউছে পাক আরো উল্লেখ করেন, আল্লাহ তায়ালা রমাদ্বানুল মোবারক মাসের সূর্য উদিত হয়ো থেকে ইফতার পর্যন্ত তাঁর কিছু বান্দাকে নারী হোক বা পুরুষ জাহান্নাম থেকে মুক্তি দান করেন। প্রত্যেক আসমানে একজন আহ্বানকারী ফেরেশতা আছে যার মাথা আরশের নীচে এবং পা পৃথিবীর সাত স্তর জমিনের নীচে। তার এক পাখা পৃথিবাীর পূর্ব প্রান্তে অপরটি পশ্চিম প্রান্তে। তার মাথায় লুলু, মারজান ও জাওয়াহের পাথরের তাজ হবে। এ আহ্বানকারী ফেরেশতা এই বলে আহ্বান করে যে, কোন তওবাকারী আছে? তার তওবা গ্রহাণ করা হবে। কোন প্রার্থনা কারী আছে? তার প্রার্থনা কবুল করা হবে। কোন মযলুম অছে তার যুলুম দূরীভূত করা হবে। কোন ক্ষমা প্রার্থনাকারী আছে? তাকে ক্ষমা করা হবে। কারো কোন চাহিদা আছে? তার চাহিদা পূর্ণ করা হবে।
তাই, মাহে রামাদ্বানে বেশী বেশী তওবা, এস্তেগফার করতে হবে। সকল প্রকার যুলুম করা থেকে বিরত থাকতে হবে। মজলুম এবং আল্লাহ তায়ালার মধ্যে কোন প্রকার পর্দা থাকেনা। তাই মজলুমের বদ দোয়া থেকে বেঁচে থাকতে হবে। বিশেষ করে আমরা আমাদের অধীনস্থদের ব্যাপারে সতর্ক থাকা চাই। কারণ তারা সব সময় অমাদের কাছাকাছি থাকে তাই তারাই বেশী জুলুমের শিকার হওয়ার সম্ভাবনা বেশী থাকে। আল্লাহ পাক আমাদের কে আমাদের অধীনস্থদের সাথে যথাযথ সদ্ব্যবহার করার তৌফিক দিন। আমীন!
আজকের সেহরীর মাসনূন দোয়া- “আল্লাহুমাজ্ আলনী ফিহি মিনাল মুসতাগফিরীন, ওয়াজ্ আলনী ফিহি মিন ইবাদিকাস্ সালেহীনাল্ কানিতীন, ওয়াজ্ আলনী ফিহি মিন আউলিয়ায়িকাল্ মুর্কারাবীন, বি রাহমাতিকা ইয়া র্আহার্মা রাহিমীন!”
-হে আল্লাহ! আমাকে তোমার ক্ষমাপ্রাপ্ত এবং অনুগত নেক্কার বান্দাদের মধ্যে শামিল করে নাও। তোমার দয়ার দোহাই দিয়ে বলছি, আমাকে তোমার নৈকট্য প্রাপ্ত ওলীদের দলভুক্ত কর। তোমার অপরিসীম দয়ায়; হে সর্বশ্রেষ্ঠ দয়াবান।
↧
সবার প্রতি আমার অনুরুধ অধীনস্থদের প্রতি সদয় হোন
↧